নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা! by মেরি দাইয়েফস্কি
নিউ
হ্যাম্পশায়ারের ভোটাররা তুষারপাত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার মার্কিন নির্বাচনের
প্রাইমারি পর্বে ভোট দিল, আর সে সময় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ
কার্টার ২০১৭ সালে তাঁর সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব কষছিলেন। ডিক্সভিল নচে যে
সংক্ষিপ্ত নাটক হয়ে গেল, টেলিভিশনের ক্যামেরা সেটাতে বেশি নজর দিলেও
মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারটিই হয়তো শেষমেশ বেশি
গুরুত্ব পাবে। সেটা হয়তো খুব ভালো উপায়ে হবে না, অন্তত ইউরোপের ভবিষ্যতের
জন্য তা খুব একটা ভালো হবে না।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে দেওয়া এক বক্তৃতায় অ্যাশ কার্টার বলেছেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন’ ঠেকাতে ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যয় তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করবেন তিনি। অন্যদিকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যয়ও ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এই বার্তা দ্ব্যর্থহীন, তবে পেন্টাগনের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে দেখা যাবে, আইএসের চেয়ে রাশিয়াই এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা যদি পেন্টাগনের চিন্তা হয়ে থাকে, তাহলে বারাক ওবামার নীতি বদলে গেছে বলতে হবে, যেটা তাঁর শাসনামলজুড়ে একরকম ধারাবাহিকই ছিল। এমনকি তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগেই ইউরোপের অনেক মহল বলতে শুরু করেছিল, তিনি প্রকৃত অর্থেই স্নায়ুযুদ্ধোত্তর কালের প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন। তাঁর বয়স খুব বেশি না হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি তাঁর নেই, ফলে তিনি দৃষ্টিভঙ্গিতে আটলান্টিকবাদী না হয়ে অধিকতর বৈশ্বিক হবেন।
ক্ষমতায় আসার পরের দিন থেকেই ওবামাকে মনে হয়েছে, তিনি ইউরোপ ছাড়া আর সব ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি প্রেসিডেন্টের কাজই শুরু করেছিলেন কায়রোতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে, যদিও আরব বসন্ত ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের কারণে তাঁর সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছিল, যেটা আবার গত বছর ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করার মধ্য দিয়ে অংশত পুনরুদ্ধার হয়েছে। চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের ব্যাপারটি আমলে নেওয়া ছাড়া তাঁর আর উপায় ছিল না, আর কিউবার সঙ্গেও অর্ধশতকের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি মূলত ইউরোপকে নিজের মতো করেই চলতে দিচ্ছেন। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যখন লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ করল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল’। গত বছর আমাদের জানানো হলো, ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের বড় অংশই প্রত্যাহার করা হবে।
সে রকম মনোভঙ্গি অযৌক্তিক ছিল না। তুলনামূলকভাবে ইউরোপ শান্তিতেই ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একরকম ধীরেসুস্থে চলছিল, যদিও মাঝখানে গ্রিস ও ইউরো সংকটে তারা কিছুটা পিছপা হয়েছিল। এমনকি ইউক্রেনের সংকটের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন বিষয়টিকে স্থানীয় ব্যাপার হিসেবেই বিবেচনা করেছে, সেটাকে স্নায়ুযুদ্ধ মনে করেনি। সে সময় কিয়েভের মরিয়া আবেদন সত্ত্বেও ওবামা ওই দ্বন্দ্ব থেকে একরকম দূরেই ছিলেন। এমনকি কংগ্রেস সেখানে অস্ত্র পাঠানোর জন্য চাপাচাপি করলেও ওবামা প্রজ্ঞার সঙ্গেই তা নাকচ করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়।
প্রেসিডেন্টের জমানার শেষের দিকে এসে ওবামা সেই দূরত্ব আর বজায় রাখতে পারছেন না। ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করেছেন তিনি, পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে নতুন ঘাঁটি নির্মাণ ও অস্ত্র মজুত করার জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্থানীয় ন্যাটো সেনাদের অধিকতর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, আরও কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হবে।
হতে পারে যে এ বছরের জুলাইয়ে ওয়ারশতে ন্যাটোর সম্মেলনের আগে এই অতিরিক্ত ব্যয় ও যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারটা ‘সম্মুখসারির’ ইউরোপীয় দেশগুলোকে সাময়িকভাবে খুশি করার কৌশল, যারপর তার কথা সবাই নীরবে ভুলে যাবে। সেটা যদি সত্যও হয়, তাহলে সময় নির্বাচনও খুব একটা খারাপ হয়নি বলতে হয়। ফলে ইউরোপের ভবিষ্যতের প্রসঙ্গটা আবারও সামনে চলে এল।
এভাবে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে বৈরিতার বার্তা দিচ্ছে, যেটার তেমন একটা দরকার ছিল না। রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করেছে প্রায় দুই বছর হলো, আর এমএইচ ১৭ ভূপাতিত হওয়ার পরও ১৮ মাস পেরিয়ে গেল। পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধও কিছুটা থিতিয়ে এসেছে, আর সম্প্রতি রাশিয়া কিয়েভবিরোধী বিদ্রোহীদের যুদ্ধোপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছে, এমন প্রমাণও নেই। অন্তত এ সম্ভাবনা আছে যে মিনস্ক-২ চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে ইউক্রেন অখণ্ড থাকবে, যদিও কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে।
ওদিকে রাশিয়া সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে, তারা সেখানে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালু হতেও সহায়তা করেছে, আর নীতিগতভাবে এটাও মেনে নিয়েছে যে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সরে যেতে হবে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে মস্কোর ধারাবাহিক সমর্থন থাকাও জরুরি। ২০০৯ সালের দুর্ভাগা ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্কোন্নয়নের প্রথম প্রকৃত সম্ভাবনা মনে হচ্ছে শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেছে।
আরও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, নতুন ব্যয়ের ক্ষেত্র হিসেবে পোল্যান্ড ও ‘নতুন’ ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র আরও দুটি বার্তা দিচ্ছে, যাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। প্রথমটি হচ্ছে ওয়াশিংটন এসব রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব নিতে রাজি। এর ফলে ওই দেশগুলো নিজেদের শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ তো পাবেই না, এতে রাশিয়ার নিজের নিরাপত্তাহীনতার বোধও তীব্র হবে। সর্বোপরি, তাদের মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতাও যে নতুন করে শুরু হবে না, সেটাও তো বলা যায় না।
দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো এর মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পথ থেকে সরে আসবে, যেটা একসময় তাদের অবশ্যই হতে হবে। ওবামার নিরাসক্তির ফলাফল কেবলই অনুভূত হতে শুরু করেছিল। কথা হচ্ছে, ইউরোপকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, ব্যয় বাড়াতে হবে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিয়ে আন্তরিকভাবে কথা বলতে হবে, আর সাধারণভাবে তাদের বড়র মতো আচরণ করতে হবে—মনে হচ্ছে, এই ব্যাপারগুলো ব্রাসেলস থেকে শুরু করে অন্য ইউরোপীয় রাজধানীগুলো শেষমেশ বুঝতে শুরু করেছে। এবার তারা নিজেদের পুরোনো বিভাজন সৃষ্টিকারী ও শিথিল পন্থায় ফিরতে পারবে, তাদের মনে এই আত্মবিশ্বাস থাকবে যে ওবামার পর যিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তাঁর ওবামার চেয়ে কম আটলান্টিকবাদী হওয়ার সম্ভাবনা কম, যিনি শেষবারের মতো হলেও তাদের অন্তত আর একবার বাঁচিয়ে দেবেন।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে দেওয়া এক বক্তৃতায় অ্যাশ কার্টার বলেছেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন’ ঠেকাতে ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যয় তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করবেন তিনি। অন্যদিকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যয়ও ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এই বার্তা দ্ব্যর্থহীন, তবে পেন্টাগনের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে দেখা যাবে, আইএসের চেয়ে রাশিয়াই এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা যদি পেন্টাগনের চিন্তা হয়ে থাকে, তাহলে বারাক ওবামার নীতি বদলে গেছে বলতে হবে, যেটা তাঁর শাসনামলজুড়ে একরকম ধারাবাহিকই ছিল। এমনকি তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগেই ইউরোপের অনেক মহল বলতে শুরু করেছিল, তিনি প্রকৃত অর্থেই স্নায়ুযুদ্ধোত্তর কালের প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন। তাঁর বয়স খুব বেশি না হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি তাঁর নেই, ফলে তিনি দৃষ্টিভঙ্গিতে আটলান্টিকবাদী না হয়ে অধিকতর বৈশ্বিক হবেন।
ক্ষমতায় আসার পরের দিন থেকেই ওবামাকে মনে হয়েছে, তিনি ইউরোপ ছাড়া আর সব ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি প্রেসিডেন্টের কাজই শুরু করেছিলেন কায়রোতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে, যদিও আরব বসন্ত ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের কারণে তাঁর সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছিল, যেটা আবার গত বছর ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করার মধ্য দিয়ে অংশত পুনরুদ্ধার হয়েছে। চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের ব্যাপারটি আমলে নেওয়া ছাড়া তাঁর আর উপায় ছিল না, আর কিউবার সঙ্গেও অর্ধশতকের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি মূলত ইউরোপকে নিজের মতো করেই চলতে দিচ্ছেন। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যখন লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ করল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল’। গত বছর আমাদের জানানো হলো, ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের বড় অংশই প্রত্যাহার করা হবে।
সে রকম মনোভঙ্গি অযৌক্তিক ছিল না। তুলনামূলকভাবে ইউরোপ শান্তিতেই ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একরকম ধীরেসুস্থে চলছিল, যদিও মাঝখানে গ্রিস ও ইউরো সংকটে তারা কিছুটা পিছপা হয়েছিল। এমনকি ইউক্রেনের সংকটের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন বিষয়টিকে স্থানীয় ব্যাপার হিসেবেই বিবেচনা করেছে, সেটাকে স্নায়ুযুদ্ধ মনে করেনি। সে সময় কিয়েভের মরিয়া আবেদন সত্ত্বেও ওবামা ওই দ্বন্দ্ব থেকে একরকম দূরেই ছিলেন। এমনকি কংগ্রেস সেখানে অস্ত্র পাঠানোর জন্য চাপাচাপি করলেও ওবামা প্রজ্ঞার সঙ্গেই তা নাকচ করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়।
প্রেসিডেন্টের জমানার শেষের দিকে এসে ওবামা সেই দূরত্ব আর বজায় রাখতে পারছেন না। ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করেছেন তিনি, পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে নতুন ঘাঁটি নির্মাণ ও অস্ত্র মজুত করার জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্থানীয় ন্যাটো সেনাদের অধিকতর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, আরও কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হবে।
হতে পারে যে এ বছরের জুলাইয়ে ওয়ারশতে ন্যাটোর সম্মেলনের আগে এই অতিরিক্ত ব্যয় ও যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারটা ‘সম্মুখসারির’ ইউরোপীয় দেশগুলোকে সাময়িকভাবে খুশি করার কৌশল, যারপর তার কথা সবাই নীরবে ভুলে যাবে। সেটা যদি সত্যও হয়, তাহলে সময় নির্বাচনও খুব একটা খারাপ হয়নি বলতে হয়। ফলে ইউরোপের ভবিষ্যতের প্রসঙ্গটা আবারও সামনে চলে এল।
এভাবে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে বৈরিতার বার্তা দিচ্ছে, যেটার তেমন একটা দরকার ছিল না। রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করেছে প্রায় দুই বছর হলো, আর এমএইচ ১৭ ভূপাতিত হওয়ার পরও ১৮ মাস পেরিয়ে গেল। পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধও কিছুটা থিতিয়ে এসেছে, আর সম্প্রতি রাশিয়া কিয়েভবিরোধী বিদ্রোহীদের যুদ্ধোপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছে, এমন প্রমাণও নেই। অন্তত এ সম্ভাবনা আছে যে মিনস্ক-২ চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে ইউক্রেন অখণ্ড থাকবে, যদিও কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে।
ওদিকে রাশিয়া সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে, তারা সেখানে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালু হতেও সহায়তা করেছে, আর নীতিগতভাবে এটাও মেনে নিয়েছে যে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সরে যেতে হবে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে মস্কোর ধারাবাহিক সমর্থন থাকাও জরুরি। ২০০৯ সালের দুর্ভাগা ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্কোন্নয়নের প্রথম প্রকৃত সম্ভাবনা মনে হচ্ছে শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেছে।
আরও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, নতুন ব্যয়ের ক্ষেত্র হিসেবে পোল্যান্ড ও ‘নতুন’ ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র আরও দুটি বার্তা দিচ্ছে, যাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। প্রথমটি হচ্ছে ওয়াশিংটন এসব রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব নিতে রাজি। এর ফলে ওই দেশগুলো নিজেদের শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ তো পাবেই না, এতে রাশিয়ার নিজের নিরাপত্তাহীনতার বোধও তীব্র হবে। সর্বোপরি, তাদের মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতাও যে নতুন করে শুরু হবে না, সেটাও তো বলা যায় না।
দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো এর মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পথ থেকে সরে আসবে, যেটা একসময় তাদের অবশ্যই হতে হবে। ওবামার নিরাসক্তির ফলাফল কেবলই অনুভূত হতে শুরু করেছিল। কথা হচ্ছে, ইউরোপকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, ব্যয় বাড়াতে হবে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিয়ে আন্তরিকভাবে কথা বলতে হবে, আর সাধারণভাবে তাদের বড়র মতো আচরণ করতে হবে—মনে হচ্ছে, এই ব্যাপারগুলো ব্রাসেলস থেকে শুরু করে অন্য ইউরোপীয় রাজধানীগুলো শেষমেশ বুঝতে শুরু করেছে। এবার তারা নিজেদের পুরোনো বিভাজন সৃষ্টিকারী ও শিথিল পন্থায় ফিরতে পারবে, তাদের মনে এই আত্মবিশ্বাস থাকবে যে ওবামার পর যিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তাঁর ওবামার চেয়ে কম আটলান্টিকবাদী হওয়ার সম্ভাবনা কম, যিনি শেষবারের মতো হলেও তাদের অন্তত আর একবার বাঁচিয়ে দেবেন।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
মেরি দাইয়েফস্কি: লেখক ও সাংবাদিক
মেরি দাইয়েফস্কি: লেখক ও সাংবাদিক
No comments