জলবায়ুর পরিবর্তনে নারীর দুর্ভোগ বেশি by আয়েশা কবির
বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে, তার প্রভাব প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন স্পষ্টতই মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। এ কারণে নারী-পুরুষের সমীকরণ নতুন অনুপাতে নিতে হবে। বাংলাদেশে যেখানে জলবায়ুর পরিবর্তন একেবারে কঠিন বাস্তব এবং যেখানে নারীরা এখনো নানা বৈষম্যের শিকার, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের জেন্ডার প্রেক্ষিত এখন দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি যারা, তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। নারীরা এমনিতেই অরক্ষিত থাকেন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর তাঁরা আরও বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়েন। বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য ও নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ব্যর্থতা তাঁদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক সম্মেলনটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, জলবায়ুর ওপর এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক সম্মেলনগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সফল সম্মেলন। কিন্তু এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামাজিক যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি ছিল। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুহারা মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখনো এ বিষয়টি নারীদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। দুর্যোগ-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় নারীদের সহায়তা করতে হবে। কেননা, যেকোনো দুর্যোগে এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে নারীরাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হন।
তবে কোনো কোনো দুর্যোগে নারী ও পুরুষের ক্ষতির পরিমাণে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। যখন কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বা নদীভাঙনে ভিটেমাটি-ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় বা খরা দেখা দেয়, তখন নারী-পুরুষ–শিশুনির্বিশেষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন আলাদা করে নারীদের দুর্ভোগের মাত্রা নিরূপণ করা যায় না। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত নারীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তা নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত নীতিগুলো যত দিন সমাজের বড় একটি অংশের সমস্যা চিহ্নিত না করবে, তত দিন কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না। এটা সহজ একটা হিসাব।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যে ঘটনাটি ঘটে তা হলো, লোকজনকে বাস্তুহারা হতে হয়। তারা দেশের ভেতরে অন্য কোনো স্থানে, বা কখনো কখনো দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যখন কোথাও নদীভাঙন দেখা দেয়, তখন ওই এলাকার পুরুষেরা কাজের সন্ধানে শহরে চলে যায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখভাল করার জন্য নারীরা এলাকাতেই থেকে যায়। ঘরের কাজ ছাড়াও তাঁদের পুরুষদের কাজগুলোও করতে হয়। চাষাবাদ করা, গবাদিপশুকে খাওয়ানো, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ ইত্যাদি নানা কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যেসব পুরুষ কাজের সন্ধানে শহরে যান, তাঁরা সেখানে রিকশা চালানোসহ অন্যান্য কাজ করেন। তাঁদের কেউ কেউ সেখানে আরেকটি বিয়ে করেন এবং পুরোনো স্ত্রীকে ত্যাগ করেন। সেই স্ত্রীকে তখন নিজের সন্তানসন্ততি তো বটেই, যে স্বামী তাঁকে ত্যাগ করেছেন, তাঁর বাবা-মা, ভাইবোনদেরও দেখভাল করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি ক্ষতিকর দিক এটি। কিন্তু এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে না। তাই এগুলোর কোনো সমাধানও নেই।
ঘূর্ণিঝড়, সিডর ও আইলার ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি। যেসব এলাকায় এ দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, সেসব এলাকার একরের পর একর জমি খালি পড়ে আছে। জমি লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর গাছপালা জন্মাতে পারছে না। ওই দুটি দুর্যোগের প্রভাব লোকজন এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেকেই এখনো নানা অসুখে ভুগছে। এখনো অনেককে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়। ওই সব এলাকার গ্রামগুলোতে এখন শুধু নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা থাকেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ-পরবর্তী সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। ২০০৫ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে হারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হেনেছিল, তখন সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় মডেল হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যেসব ত্রুটি আছে, সেগুলো কারোরই চোখে পড়ছে না। দুর্যোগের পর নারীরা যেসব দুর্ভোগে পড়েন, সেগুলো উন্নয়নের নীতিনির্ধারকদের চোখ এড়িয়ে গেছে।
আমাদের দেশে বহু সাইক্লোন শেল্টার বা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে। কিন্তু সেগুলো নারীবান্ধব নয়। ওই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এগুলো নারীর জন্য বড় ধরনের বিপদ হয়ে দেখা দেয়। নারী ও পুরুষ একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকার ফলে কখনো কখনো কিশোরী ও নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন। প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য নারীরা বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে দূরের কোনো শৌচাগারে যান। কোনো কোনো পুরুষ তখন নারীর এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ধর্ষণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।
তাহলে এখন কী করতে হবে? নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের সমতা আনার ক্ষেত্রে কী কী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা যে দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন—এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? সরকার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ ও স্থানীয় এনজিওগুলোকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকেও একটি কর্মপরিকল্পনা আসতে হবে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন উইমেন এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে সবচেয়ে যেটা জরুরি, রাষ্ট্র ও সরকারকেই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। জেন্ডার ইস্যু ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করবে, যাতে নারী ও পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারে।
আয়েশা কবির: সাংবাদিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। নারীরা এমনিতেই অরক্ষিত থাকেন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর তাঁরা আরও বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়েন। বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য ও নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ব্যর্থতা তাঁদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক সম্মেলনটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, জলবায়ুর ওপর এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক সম্মেলনগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সফল সম্মেলন। কিন্তু এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামাজিক যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি ছিল। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুহারা মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখনো এ বিষয়টি নারীদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। দুর্যোগ-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় নারীদের সহায়তা করতে হবে। কেননা, যেকোনো দুর্যোগে এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে নারীরাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হন।
তবে কোনো কোনো দুর্যোগে নারী ও পুরুষের ক্ষতির পরিমাণে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। যখন কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বা নদীভাঙনে ভিটেমাটি-ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় বা খরা দেখা দেয়, তখন নারী-পুরুষ–শিশুনির্বিশেষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন আলাদা করে নারীদের দুর্ভোগের মাত্রা নিরূপণ করা যায় না। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত নারীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তা নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত নীতিগুলো যত দিন সমাজের বড় একটি অংশের সমস্যা চিহ্নিত না করবে, তত দিন কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না। এটা সহজ একটা হিসাব।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যে ঘটনাটি ঘটে তা হলো, লোকজনকে বাস্তুহারা হতে হয়। তারা দেশের ভেতরে অন্য কোনো স্থানে, বা কখনো কখনো দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যখন কোথাও নদীভাঙন দেখা দেয়, তখন ওই এলাকার পুরুষেরা কাজের সন্ধানে শহরে চলে যায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখভাল করার জন্য নারীরা এলাকাতেই থেকে যায়। ঘরের কাজ ছাড়াও তাঁদের পুরুষদের কাজগুলোও করতে হয়। চাষাবাদ করা, গবাদিপশুকে খাওয়ানো, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ ইত্যাদি নানা কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যেসব পুরুষ কাজের সন্ধানে শহরে যান, তাঁরা সেখানে রিকশা চালানোসহ অন্যান্য কাজ করেন। তাঁদের কেউ কেউ সেখানে আরেকটি বিয়ে করেন এবং পুরোনো স্ত্রীকে ত্যাগ করেন। সেই স্ত্রীকে তখন নিজের সন্তানসন্ততি তো বটেই, যে স্বামী তাঁকে ত্যাগ করেছেন, তাঁর বাবা-মা, ভাইবোনদেরও দেখভাল করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি ক্ষতিকর দিক এটি। কিন্তু এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে না। তাই এগুলোর কোনো সমাধানও নেই।
ঘূর্ণিঝড়, সিডর ও আইলার ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি। যেসব এলাকায় এ দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, সেসব এলাকার একরের পর একর জমি খালি পড়ে আছে। জমি লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর গাছপালা জন্মাতে পারছে না। ওই দুটি দুর্যোগের প্রভাব লোকজন এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেকেই এখনো নানা অসুখে ভুগছে। এখনো অনেককে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়। ওই সব এলাকার গ্রামগুলোতে এখন শুধু নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা থাকেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ-পরবর্তী সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। ২০০৫ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে হারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হেনেছিল, তখন সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় মডেল হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যেসব ত্রুটি আছে, সেগুলো কারোরই চোখে পড়ছে না। দুর্যোগের পর নারীরা যেসব দুর্ভোগে পড়েন, সেগুলো উন্নয়নের নীতিনির্ধারকদের চোখ এড়িয়ে গেছে।
আমাদের দেশে বহু সাইক্লোন শেল্টার বা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে। কিন্তু সেগুলো নারীবান্ধব নয়। ওই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এগুলো নারীর জন্য বড় ধরনের বিপদ হয়ে দেখা দেয়। নারী ও পুরুষ একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকার ফলে কখনো কখনো কিশোরী ও নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন। প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য নারীরা বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে দূরের কোনো শৌচাগারে যান। কোনো কোনো পুরুষ তখন নারীর এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ধর্ষণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।
তাহলে এখন কী করতে হবে? নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের সমতা আনার ক্ষেত্রে কী কী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা যে দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন—এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? সরকার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ ও স্থানীয় এনজিওগুলোকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকেও একটি কর্মপরিকল্পনা আসতে হবে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন উইমেন এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে সবচেয়ে যেটা জরুরি, রাষ্ট্র ও সরকারকেই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। জেন্ডার ইস্যু ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করবে, যাতে নারী ও পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারে।
আয়েশা কবির: সাংবাদিক।
No comments