ব্যর্থতা অনুধাবনই সাফল্যের সোপান by মো. মাহমুদুর রহমান
ক্যালেন্ডারের
পাতায় ২০১৫ সালের তারিখগুলো এখন সবার কাছে স্মৃতি। তবে হ্যাঁ, স্মৃতির
নুড়িপাথরের কোনো কোনোটি জ্বলজ্বল করবে তারার মতো। আবার কোনো কোনোটির আঘাত
মনে থাকবে অনেকদিন। প্রত্যেকেই ব্যক্তিজীবনে অনেক কিছু যেমন পেয়েছে বিগত
সালে, তেমনি অনেকে অনেক কিছু হারিয়েছেও। অর্জন-বিসর্জন, আনন্দ-বেদনা,
স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বিগত বছর অতিবাহিত হয়েছে। তবু
প্রত্যাশা, শুধুই আনন্দ আর স্বপ্ন পূরণের বছর হোক ২০১৬ সাল। এ প্রত্যাশা
পূরণের জন্য প্রয়োজন আত্মসমালোচনা। পেছনে নির্মোহভাবে ফিরে তাকানো।
ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র- সবার ক্ষেত্রেই বিষয়টি সমভাবে প্রযোজ্য।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গত বছর সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল আইএস। সিরিয়া ও
ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ ছিল না। পশ্চিমা
বিশ্ব আইএসকে মুসলিম জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চেনে। কারণ তারা নিজেদের মুসলমান
দাবি করে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা তাদের স্বপ্ন হিসেবে প্রচার
করে। কিন্তু বেশিরভাগ মুসলমান এদের ইসরাইলসৃষ্ট ইহুদি স্বার্থের পক্ষশক্তি
হিসেবে মনে করে। এদের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক
হচ্ছে। বেসামরিক মানুষ তাদের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ দিচ্ছে। বন্দিদের
শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে। ‘যৌন জিহাদ’ নামে ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ
সাংঘর্ষিক এক অদ্ভুত বিষয় আইএস যুক্ত করছে তাদের কর্মকাণ্ডে। আইএস দমনের
নামেও নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এক পক্ষের উগ্রতা অপর পক্ষের উগ্রতাকে
উসকে দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী
ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলমানদের আমেরিকায় নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। মূলধারার
একজন রাজনীতিকের এরকম সাম্প্রদায়িক বক্তব্য ভবিষ্যৎ বিশ্বের শান্তির জন্য
মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইএস উসকে দিচ্ছে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’দের,
আবার তাদের বক্তব্য শক্তিশালী করছে আইএসকে। ২০১৬ সালের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ
দুষ্টচক্র ভেদ করে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
প্রতিবেশী ভারতেও উগ্রপন্থীদের আস্ফালন শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের আরএসএস, শিবসেনাসহ কট্টর হিন্দুদের কাছে দেশটির মুসলমানদের চেয়ে গরুর মর্যাদা ছিল বেশি। গরুর মাংস খাওয়ার জন্য মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। অবশ্য ভারতের বিবেকবান মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেখার বিষয় ২০১৬ সালে গরুর চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্ব পায় কি-না!
বাংলাদেশ ২০১৫ সালকে বরণ করেছিল প্রচণ্ড এক ‘ঘূর্ণিঝড়ের’ মধ্য দিয়ে। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের নজিরবিহীন হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও সরকারের পতন ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে টলাতে ব্যর্থ হয়। এই হরতাল-অবরোধ চলাকালে জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। একদিকে যানবাহনে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়া মানুষের আর্তনাদ, অন্যদিকে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের স্বজনদের কান্না। এ সহিংস রাজনীতির বিভীষিকাময় স্মৃতি ভুলতে অনেকদিন লাগবে এ দেশের মানুষের। অন্যদিকে র্যাব-পুলিশের বুলেটের সামনে বিরোধী দলের কোনো আন্দোলনই সফল হয়নি। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছিল। গণতন্ত্রের নির্বাসন ও সুশাসনের অভাব সচেতন মানুষকে ব্যথিত করার পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতা করেছে বিচলিত। ব্লগার ও বিদেশী নাগরিকদের হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের সক্রিয় উপস্থিতি শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে সামনে এসেছে। এভাবে বিভিন্ন অপশক্তি ও সমস্যার জঞ্জাল দেশের সম্ভাবনার আকাশকে কালো মেঘে ঢেকে দিচ্ছে।
তবে এতকিছুর পরও অনেক পুরনো সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ছিটমহলবাসীর দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান হয় ২০১৫ সালে। মানবিক এ সমস্যাটি সমাধানে সরকারের উদ্যোগ এবং দেরিতে হলেও ভারতের সাড়া প্রশংসার দাবি রাখে। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও তহবিল প্রত্যাহারের পর আদৌ পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে কি-না, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। আজ সব সন্দেহের কুয়াশা কাটিয়ে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছে অশান্তি ও অস্থিরতাকে। যদিও সারা দুনিয়ার মানুষ উন্নয়নের সঙ্গী হিসেবে চায় শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে, কিন্তু বাস্তবে তা পাচ্ছে না চিন্তা ও কর্মের বৈপরীত্যের কারণে। মানুষ নিজের জন্য যা ভালো মনে করে, তা অন্যের জন্য মনে করে না। নিজে যা পেতে চায়, অন্যকে তা দিতে চায় না। মানুষের প্রতারণা, স্বার্থপরতা ও কপটতা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের সমস্যা।
মুখে গণতন্ত্র, অন্তরে স্বৈরাচারের ভূত। কণ্ঠে ধর্মের শান্তির বাণী, অথচ কর্মে সহিংসতা। মানবাধিকারের পক্ষে মুখে জপ, বাস্তবে অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তারের মতলব। ঐক্যের বদলে জাতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রচণ্ড বিভাজন। ভালোবাসার পরিবর্তে হিংসার চাষবাস। আইলান কুর্দির সাগরতীরে পড়ে থাকা মৃতদেহ যদিও সজোরে বিবেকের দরজায় ধাক্কা দিয়ে মানবতাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু প্যারিস হামলা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বন্দুক হামলার পর তা আবার হারিয়ে গেছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের কিছু মানুষ নেপাল হিন্দুরাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হলে খুশি হয়। ভারতে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে। ইউরোপ-আমেরিকার উদার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু বাংলাদেশকে বানাতে চায় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র! অন্যরা মুখে যাই বলুক না কেন, বাস্তবে প্রতিপক্ষকে নির্মূলের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি-চর্চা ছাড়া তারা অন্য কিছুতে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয় না। পুরো ২০১৫ সাল এরকম বৈপরীত্যের মধ্যে অতিবাহিত করেছে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারিতে যুগান্তরের শিরোনাম ছিল : ‘কঠিন সময়ে রাজনীতি’। সারা দেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের ওপর একই পত্রিকা বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর শিরোনাম করেছে : ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভোট : ইসির ভরাডুবি’। সময়ের হিসাবে আমরা এক বছর অতিবাহিত করলেও রাজনৈতিক অবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে, সরকারের শক্তি আরও সংহত হয়েছে। বিরোধী জোটের শক্তি খর্ব হয়েছে। ২০১৫ সালের শুরুতে বিরোধীদের আন্দোলনের যে ক্ষমতা ছিল, ২০১৬-তে তা আর নেই বলেই মনে হয়। তবুও রাজনীতিতে এক অদ্ভুত অস্বস্তি বিরাজমান।
বছর শেষে ২০১৬ সালের প্রথম দিন সব খবরের কাগজে ২০১৫ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাতে খবর এসেছে। তারা এও জানিয়েছে, ২০১৫ সালে ক্রসফায়ারে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪৬।
নতুন বছর শুরু হয়েছে। কল্পনা করুন তো, ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারিতে সংবাদপত্রের শিরোনাম কেমন হতে পারে? ‘আসক’ কি বলতে পারবে, ২০১৬-তে মানবাধিকারের আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে?
হয়তো পারবে। যদি আমরা সবাই চিন্তায় ও কর্মে স্বচ্ছ হই। মুখে ও বুকে কোনো বৈপরীত্য না থাকে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হই। ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীল হই। আমরা এমন শপথে আবদ্ধ হলে নতুন বছরে সব অশুভ শক্তি বিদায় নেবে। প্রতিটি সকাল দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য হবে শান্তি ও শুভ্রতার আলোয় ভরপুর।
মো. মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
mahmudpukra@gmail.com
প্রতিবেশী ভারতেও উগ্রপন্থীদের আস্ফালন শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের আরএসএস, শিবসেনাসহ কট্টর হিন্দুদের কাছে দেশটির মুসলমানদের চেয়ে গরুর মর্যাদা ছিল বেশি। গরুর মাংস খাওয়ার জন্য মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। অবশ্য ভারতের বিবেকবান মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেখার বিষয় ২০১৬ সালে গরুর চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্ব পায় কি-না!
বাংলাদেশ ২০১৫ সালকে বরণ করেছিল প্রচণ্ড এক ‘ঘূর্ণিঝড়ের’ মধ্য দিয়ে। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের নজিরবিহীন হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও সরকারের পতন ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে টলাতে ব্যর্থ হয়। এই হরতাল-অবরোধ চলাকালে জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। একদিকে যানবাহনে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়া মানুষের আর্তনাদ, অন্যদিকে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের স্বজনদের কান্না। এ সহিংস রাজনীতির বিভীষিকাময় স্মৃতি ভুলতে অনেকদিন লাগবে এ দেশের মানুষের। অন্যদিকে র্যাব-পুলিশের বুলেটের সামনে বিরোধী দলের কোনো আন্দোলনই সফল হয়নি। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছিল। গণতন্ত্রের নির্বাসন ও সুশাসনের অভাব সচেতন মানুষকে ব্যথিত করার পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতা করেছে বিচলিত। ব্লগার ও বিদেশী নাগরিকদের হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের সক্রিয় উপস্থিতি শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে সামনে এসেছে। এভাবে বিভিন্ন অপশক্তি ও সমস্যার জঞ্জাল দেশের সম্ভাবনার আকাশকে কালো মেঘে ঢেকে দিচ্ছে।
তবে এতকিছুর পরও অনেক পুরনো সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ছিটমহলবাসীর দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান হয় ২০১৫ সালে। মানবিক এ সমস্যাটি সমাধানে সরকারের উদ্যোগ এবং দেরিতে হলেও ভারতের সাড়া প্রশংসার দাবি রাখে। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও তহবিল প্রত্যাহারের পর আদৌ পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে কি-না, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। আজ সব সন্দেহের কুয়াশা কাটিয়ে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছে অশান্তি ও অস্থিরতাকে। যদিও সারা দুনিয়ার মানুষ উন্নয়নের সঙ্গী হিসেবে চায় শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে, কিন্তু বাস্তবে তা পাচ্ছে না চিন্তা ও কর্মের বৈপরীত্যের কারণে। মানুষ নিজের জন্য যা ভালো মনে করে, তা অন্যের জন্য মনে করে না। নিজে যা পেতে চায়, অন্যকে তা দিতে চায় না। মানুষের প্রতারণা, স্বার্থপরতা ও কপটতা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের সমস্যা।
মুখে গণতন্ত্র, অন্তরে স্বৈরাচারের ভূত। কণ্ঠে ধর্মের শান্তির বাণী, অথচ কর্মে সহিংসতা। মানবাধিকারের পক্ষে মুখে জপ, বাস্তবে অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তারের মতলব। ঐক্যের বদলে জাতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রচণ্ড বিভাজন। ভালোবাসার পরিবর্তে হিংসার চাষবাস। আইলান কুর্দির সাগরতীরে পড়ে থাকা মৃতদেহ যদিও সজোরে বিবেকের দরজায় ধাক্কা দিয়ে মানবতাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু প্যারিস হামলা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বন্দুক হামলার পর তা আবার হারিয়ে গেছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের কিছু মানুষ নেপাল হিন্দুরাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হলে খুশি হয়। ভারতে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে। ইউরোপ-আমেরিকার উদার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু বাংলাদেশকে বানাতে চায় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র! অন্যরা মুখে যাই বলুক না কেন, বাস্তবে প্রতিপক্ষকে নির্মূলের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি-চর্চা ছাড়া তারা অন্য কিছুতে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয় না। পুরো ২০১৫ সাল এরকম বৈপরীত্যের মধ্যে অতিবাহিত করেছে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারিতে যুগান্তরের শিরোনাম ছিল : ‘কঠিন সময়ে রাজনীতি’। সারা দেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের ওপর একই পত্রিকা বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর শিরোনাম করেছে : ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভোট : ইসির ভরাডুবি’। সময়ের হিসাবে আমরা এক বছর অতিবাহিত করলেও রাজনৈতিক অবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে, সরকারের শক্তি আরও সংহত হয়েছে। বিরোধী জোটের শক্তি খর্ব হয়েছে। ২০১৫ সালের শুরুতে বিরোধীদের আন্দোলনের যে ক্ষমতা ছিল, ২০১৬-তে তা আর নেই বলেই মনে হয়। তবুও রাজনীতিতে এক অদ্ভুত অস্বস্তি বিরাজমান।
বছর শেষে ২০১৬ সালের প্রথম দিন সব খবরের কাগজে ২০১৫ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাতে খবর এসেছে। তারা এও জানিয়েছে, ২০১৫ সালে ক্রসফায়ারে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪৬।
নতুন বছর শুরু হয়েছে। কল্পনা করুন তো, ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারিতে সংবাদপত্রের শিরোনাম কেমন হতে পারে? ‘আসক’ কি বলতে পারবে, ২০১৬-তে মানবাধিকারের আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে?
হয়তো পারবে। যদি আমরা সবাই চিন্তায় ও কর্মে স্বচ্ছ হই। মুখে ও বুকে কোনো বৈপরীত্য না থাকে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হই। ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীল হই। আমরা এমন শপথে আবদ্ধ হলে নতুন বছরে সব অশুভ শক্তি বিদায় নেবে। প্রতিটি সকাল দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য হবে শান্তি ও শুভ্রতার আলোয় ভরপুর।
মো. মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
mahmudpukra@gmail.com
No comments