জাপার ঝড়ে নতুন মোড়- রওশনকে বশে রেখেই দলে নিয়ন্ত্রণ চান এরশাদ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গতকাল রাজধানীর বনানীতে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে (বাঁয়ে) দলের নতুন মহাসচিব ঘোষণা করেন l ছবি: প্রথম আলো |
পাল্টাপাল্টি
ঘোষণায় জাতীয় পার্টিতে (জাপা) সৃষ্ট ঝড় নতুন মোড় নিয়েছে। স্ত্রী রওশনকে
বশে রেখেই দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের কবজায় রাখতে চাইছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম
এরশাদ। একই সঙ্গে তিনি এখনই সরকারকে না চটানোর কৌশলও নিয়েছেন। জাপার
দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
রংপুরে দুই দিনের অবস্থান শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় ফিরেই দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহতি দিয়েছেন এরশাদ। একই সঙ্গে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবার দলের মহাসচিব নিযুক্ত করেছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ঘোষণা দেন এরশাদ। একই সঙ্গে ভাই জি এম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্তও আবার জানান তিনি।
এরশাদ ও রওশনপন্থী তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জি এম কাদেরকে এরশাদের উত্তরসূরি ও দলের কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণার বিষয়ে রওশন এখন পর্যন্ত নিজে থেকে কোনো কথা বলেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা কিছুটা ‘কৌশলী’ বলে মনে করছেন নেতারা। কারণ, এরশাদ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘোষণা দেওয়ার পর বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে স্ত্রী রওশনের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকেও অংশ নেন।
সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে অটল আছি। মরার আগ পর্যন্ত অটল থাকব।’
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই এরশাদের কাছে রওশন জানতে চান, এতগুলো সিদ্ধান্ত তিনি একা নিলেন কেন? আলোচনা করে নিলেই ভালো হতো।
জবাবে এরশাদ বলেন, অতীতেও তিনি মহাসচিব পদে পরিবর্তন করেছেন। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলেন, হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তো গঠনতন্ত্রের কথা আসেনি। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর সে ক্ষমতা আছে।
এ সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এরপরও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। জবাবে এরশাদ বলেন, দলকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের একপর্যায়ে রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেরিয়ে সংসদে নিজ কার্যালয়ে যান এরশাদ। এরপর জিয়াউদ্দিন বাবলুকে উদ্দেশ করে রওশন জানতে চান, সাংবাদিকদের ডেকে তাঁকে (রওশন) কেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলো? জবাবে বাবলু বলেন, আসলে মিডিয়া রং লাগিয়ে প্রচার করেছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক ও মসিউর রহমান, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ এ বলয়ের নেতারা এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা এরশাদের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে চেষ্টা-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাতে অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আই এম ওয়ার্কিং (আমি কাজ করছি)। আজকেও আমি কাকরাইলে অফিস করেছি। সাড়ে ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত ছিলাম।’
গতকাল সংসদীয় দলের বৈঠকের পর জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা, মহাসচিব পদে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় দলের বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান আমাদের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন।’ এ সময় জিয়াউদ্দিন বাবুল, মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাপা নেতা প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ কয়েকজন সাংসদ তাজুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাপার সাংসদ শওকত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের তার উল্টো বলেছেন।
সন্ধ্যায় এরশাদসহ দলের প্রায় সব নেতা একসঙ্গে সংসদ ভবন থেকে বের হন। এ সময় সংসদের প্রধান ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকেরা তাজুল ইসলামের বক্তব্য তুলে ধরে এরশাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। এরশাদ কিছু বলার আগেই পাশে দাঁড়ানো তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিডিয়ায় আমার বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বলেছি, স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে সংসদীয় দল একমত হয় নাই। স্যার ও ম্যাডাম (রওশন) পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রত্যাখ্যানের কথা বলিনি।’
দুপুরে বনানীতে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলুর বিরুদ্ধে। তিনি বলেছিলেন, প্রায় দুই বছর জিয়াউদ্দিন বাবলু মহাসচিব ছিলেন। একটি বর্ধিত সভা, প্রেসিডিয়ামের সভা করতে পারেননি। ৪০টি কাউন্সিল মিটিং হয়েছে, একা করতে পারেননি, এই বয়সে সবখানে তাঁকে যেতে হয়েছে।
এরশাদ বলেন, ‘সর্বশেষ আমার ঘোষণার পর আমার নির্দেশ অমান্য করে পার্টিতে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বাবলু। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে তাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দিলাম। আজ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন রুহুল আমিন হাওলাদার।’
এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘রওশন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হননি, হতে পারেন না। বাবলু ঘোষণা দিয়েছে। বাবলু কে ঘোষণা দেওয়ার?’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার স্ত্রী প্রেসিডিয়ামের কোনো বৈঠক ডাকেননি। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওনাকে দিয়ে তারা স্টেটমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তিনি দেননি। আমি একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। দুজন নেতা সেটা নিয়ে বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।’
জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণা রংপুরে দেওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। সেখানে নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়েছি।’
জাপা ভাঙছে কি না, জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘অসম্ভব। নো বডি ক্যান ব্রেক ইট (কেউ একে ভাঙতে পারবে না)। যে দুজন (আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু) দলে বিভ্রান্তির চেষ্টা করছেন, তাঁদের সঙ্গে ১০ জন লোকও নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ছেন কি না— সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে সম্মান দেখিয়েছেন। পার্টির প্রয়োজনে আমি ওনাকে অনুরোধ করব, আমাকে ছেড়ে দিন। সারা দেশ ঘুরে পার্টিকে অর্গানাইজ (সংগঠিত) করি। বিরোধের প্রয়োজন নেই।’
জাপায় ভাঙন
১৯৮৬ সাল
১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির (জাপা) আত্মপ্রকাশ। দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং মহাসচিব এম এ মতিন।
১৯৯৬ সাল
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাপা প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি (জেপি) নামে নতুন দল গঠন করেন।
২০০১ সাল
নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামে দল গঠন করেন এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যান।
২০১৩ সাল
জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর আহমদ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি-জোটে। তিনি এরশাদকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন।
রংপুরে দুই দিনের অবস্থান শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় ফিরেই দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহতি দিয়েছেন এরশাদ। একই সঙ্গে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবার দলের মহাসচিব নিযুক্ত করেছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ঘোষণা দেন এরশাদ। একই সঙ্গে ভাই জি এম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্তও আবার জানান তিনি।
এরশাদ ও রওশনপন্থী তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জি এম কাদেরকে এরশাদের উত্তরসূরি ও দলের কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণার বিষয়ে রওশন এখন পর্যন্ত নিজে থেকে কোনো কথা বলেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা কিছুটা ‘কৌশলী’ বলে মনে করছেন নেতারা। কারণ, এরশাদ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘোষণা দেওয়ার পর বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে স্ত্রী রওশনের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকেও অংশ নেন।
সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে অটল আছি। মরার আগ পর্যন্ত অটল থাকব।’
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই এরশাদের কাছে রওশন জানতে চান, এতগুলো সিদ্ধান্ত তিনি একা নিলেন কেন? আলোচনা করে নিলেই ভালো হতো।
জবাবে এরশাদ বলেন, অতীতেও তিনি মহাসচিব পদে পরিবর্তন করেছেন। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলেন, হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তো গঠনতন্ত্রের কথা আসেনি। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর সে ক্ষমতা আছে।
এ সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এরপরও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। জবাবে এরশাদ বলেন, দলকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের একপর্যায়ে রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেরিয়ে সংসদে নিজ কার্যালয়ে যান এরশাদ। এরপর জিয়াউদ্দিন বাবলুকে উদ্দেশ করে রওশন জানতে চান, সাংবাদিকদের ডেকে তাঁকে (রওশন) কেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলো? জবাবে বাবলু বলেন, আসলে মিডিয়া রং লাগিয়ে প্রচার করেছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক ও মসিউর রহমান, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ এ বলয়ের নেতারা এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা এরশাদের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে চেষ্টা-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাতে অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আই এম ওয়ার্কিং (আমি কাজ করছি)। আজকেও আমি কাকরাইলে অফিস করেছি। সাড়ে ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত ছিলাম।’
গতকাল সংসদীয় দলের বৈঠকের পর জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা, মহাসচিব পদে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় দলের বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান আমাদের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন।’ এ সময় জিয়াউদ্দিন বাবুল, মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাপা নেতা প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ কয়েকজন সাংসদ তাজুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাপার সাংসদ শওকত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের তার উল্টো বলেছেন।
সন্ধ্যায় এরশাদসহ দলের প্রায় সব নেতা একসঙ্গে সংসদ ভবন থেকে বের হন। এ সময় সংসদের প্রধান ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকেরা তাজুল ইসলামের বক্তব্য তুলে ধরে এরশাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। এরশাদ কিছু বলার আগেই পাশে দাঁড়ানো তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিডিয়ায় আমার বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বলেছি, স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে সংসদীয় দল একমত হয় নাই। স্যার ও ম্যাডাম (রওশন) পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রত্যাখ্যানের কথা বলিনি।’
দুপুরে বনানীতে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলুর বিরুদ্ধে। তিনি বলেছিলেন, প্রায় দুই বছর জিয়াউদ্দিন বাবলু মহাসচিব ছিলেন। একটি বর্ধিত সভা, প্রেসিডিয়ামের সভা করতে পারেননি। ৪০টি কাউন্সিল মিটিং হয়েছে, একা করতে পারেননি, এই বয়সে সবখানে তাঁকে যেতে হয়েছে।
এরশাদ বলেন, ‘সর্বশেষ আমার ঘোষণার পর আমার নির্দেশ অমান্য করে পার্টিতে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বাবলু। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে তাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দিলাম। আজ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন রুহুল আমিন হাওলাদার।’
এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘রওশন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হননি, হতে পারেন না। বাবলু ঘোষণা দিয়েছে। বাবলু কে ঘোষণা দেওয়ার?’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার স্ত্রী প্রেসিডিয়ামের কোনো বৈঠক ডাকেননি। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওনাকে দিয়ে তারা স্টেটমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তিনি দেননি। আমি একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। দুজন নেতা সেটা নিয়ে বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।’
জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণা রংপুরে দেওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। সেখানে নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়েছি।’
জাপা ভাঙছে কি না, জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘অসম্ভব। নো বডি ক্যান ব্রেক ইট (কেউ একে ভাঙতে পারবে না)। যে দুজন (আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু) দলে বিভ্রান্তির চেষ্টা করছেন, তাঁদের সঙ্গে ১০ জন লোকও নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ছেন কি না— সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে সম্মান দেখিয়েছেন। পার্টির প্রয়োজনে আমি ওনাকে অনুরোধ করব, আমাকে ছেড়ে দিন। সারা দেশ ঘুরে পার্টিকে অর্গানাইজ (সংগঠিত) করি। বিরোধের প্রয়োজন নেই।’
জাপায় ভাঙন
১৯৮৬ সাল
১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির (জাপা) আত্মপ্রকাশ। দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং মহাসচিব এম এ মতিন।
১৯৯৬ সাল
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাপা প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি (জেপি) নামে নতুন দল গঠন করেন।
২০০১ সাল
নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামে দল গঠন করেন এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যান।
২০১৩ সাল
জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর আহমদ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি-জোটে। তিনি এরশাদকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন।
No comments