অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি by অধ্যাপক ডা: জি এম ফারুক
অ্যালার্জিজনিত
হাঁপানি সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের হাঁপানি শ্বাস পথের
শ্লেষ্মা ঝিল্লির অতি সংবেদনশীলতার জন্য হতে পারে। শ্লেষ্মা ঝিল্লির
উত্তেজনা ঘটতে পারে নানাভাবে নানা দিক থেকে। যেমন- পরাগরেণু, নানা জাতের
ছত্রাক ও ছাতাপড়া জিনিস, ঘরের ভেতরের ধূলিকণা, কয়েক প্রকার খাবার,
পোকামাকড়ের হুলের বিষ বা তাদের শরীরের কোনো অংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়। অ্যালার্জির
কারণে হাঁপানির আক্রমণ সাধারণত শৈশবকালে ঘটে। এ ধরনের হাঁপানি স্থায়ী হতে
পারে এবং তা বংশানুক্রমে চলতে থাকে। তবে কৈশোরের দিকে তা উপশমও করা যায়। এ
ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে নাসিকা প্রদাহ (সর্দি) এবং অ্যাকজিমা হতে দেখা যায়
পরিবারে। অন্য সদস্যদের মধ্যেও তা দেখা যায়।
যেসব জিনিসের অ্যালার্জিতে হাঁপানি হতে পারে
ক. পরাগরেণু
ফুলের বা ঘাসের পরাগরেণু। পরাগরেণু থেকে হাঁপানি হতে পারে এ তথ্য স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯২০ সালে। তবে সব জাতের পরাগরেণুতে অ্যালার্জি বা হাঁপানি দেখা দেয় না। সেই রেণুতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করার উপাদান থাকা চাই। তা ছাড়া রেণু খুব হালকা হওয়া চাই, যা বাতাস সহজে বহন করতে পারে এবং পরিমাণে যথেষ্ট থাকা দরকার। কারণ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার পর যদি যথেষ্ট মাত্রার রেণু শ্বাসপথে না যায়, তাহলে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হবে না। বিভিন্ন হাঁপানি রোগীর বিশেষ বিশেষ রেণু দ্বারা হাঁপানি হয়ে থাকে। যে পরাগরেণু একজনের হাঁপানি সৃষ্টি করে, তা অন্যের কোনো ক্ষতি নাও করতে পারে। রেণুর উৎস নানা সূত্র থেকে যেমন- গাছ, গুল্ম ঘাস, ফুল প্রভৃতি। ফুলের রেণুতে যাদের অ্যালার্জি থাকে, তারা সাধারণত বিশেষ কোনো ঋতুতে অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। কারণ এক এক ফুল এক এক ঋতুতে পরাগরেণু ছড়ায়।
খ. খাদ্য
খাদ্য থেকে যে অ্যালার্জি ও হাঁপানি হয় এ তথ্য বহুকাল আগে থেকেই জানা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিরোক্রেটাসও খাদ্য থেকে অ্যালার্জির কথা বলে গেছেন। কী কী খাদ্য থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে তার তালিকা হবে অতি দীর্ঘ। যেমনÑ ডিম, চিংড়ি মাছ ও গরুর গোশত থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে, এ তথ্য বহুল প্রচারিত। এ ছাড়া আরো যেসব খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, কলা, পুঁইশাক, ডাল, গমের তৈরি খাদ্য, চাল, কমলালেবু, আপেল, আঙুর, তরমুজ, শসা, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, সজিনা ডাটা, মুলা, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, ওলকপি, চকলেট, গুড়, মধু, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার প্রভৃতি।
এখানে মনে রাখা দরকার, সব খাদ্য থেকে সবার অ্যালার্জি নাও হতে পারে। ব্যক্তি ভিন্নতায় বিভিন্ন খাদ্যে বিভিন্নজনের অ্যালার্জি হতে পারে। একই ধরনের খাবারে যে সবারই অ্যালার্জি হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য রঙিন করার যেসব রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করা হয় তার দ্বারা অনেকেরই অ্যালার্জি হতে পারে। বর্তমানে দেশে অ্যালার্জি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা ইচ্ছা করলে সবাই অ্যালার্জিকারক খাদ্য শনাক্ত করে নিতে পারে। তবে কেবল খাদ্যের জন্য অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগীর সংখ্যা খুবই কম।
গ. ধূলিকণা
বাড়ির ধূলিকণা নাকে ঢুকলে হাঁপানি হতে পারে। ঘরবাড়ির ধুলোতে বিশেষ করে কার্পেট, তোশক, লেপ, কম্বল, বালিশ, পাপোস প্রভৃতিতে এক প্রকার ‘মাইট’ (Mite) জাতীয় জীবাণু থাকে। এরা ঘরের ধূলিকণাতে মিশে থাকে। কোনো প্রকারে শ্বাসপথে এই মাইট মিশ্রিত ধূলিকণার প্রবেশ ঘটলে শরীরে অ্যালার্জি জাতীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার ফলে হাঁচি, নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়া বা হাঁপানি রোগ হতে পারে।
ঘ. পতঙ্গজনিত অ্যালার্জি
কোনো পোকা বা পতঙ্গ কামড়ালে আমরা ব্যথা পাই এবং সেই কামড়ানোর জায়গা ফুলে ওঠে। প্রায় সব প্রকার পতঙ্গের হুলে বিষ থাকে, তা কোনো ক্ষেত্রে বেশি আবার কোথাও বা কম। এ ধরনের বিষ মানুষের শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রকার অ্যালার্জেনের দ্বারা ক্ষেত্রবিশেষে হাঁপানি হতে পারে। যেসব পতঙ্গ থেকে মানুষের হাঁপানি হতে পারে তাদের সংখ্যা ও শ্রেণীর তালিকা খুবই দীর্ঘ। সাধারণত ঘরের আরশোলা, মাঠের ফড়িং, প্রজাপতি, মথ, পঙ্গপাল এমনকি মশা পর্যন্ত এ তালিকায় আসতে পারে।
ঙ. ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি
বর্ষার সময় অব্যবহৃত জুতা, ভিজে ছাতা, এমনকি ভিজে পোশাক ঠিকমতো না শুকিয়ে ফেলে রাখলে এক ধরনের হালকা ধূসর সবুজ দাগ হয়। এটিকে ছত্রাক বলে। এ ছত্রাক দ্বারা কোনো ব্যক্তি হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারে। ছত্রাকের জন্ম বিভিন্ন খাবারেও হতে পারে। যেমনÑ পাউরুটি, বাসিরুটি, কেক, আলু, পেঁয়াজ প্রভৃতি। এ ছাড়া ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, কার্পেট, ঘরের কোণে জমা করা ময়লা কাপড়ে ছত্রাক জন্মায়। বাড়ির বাইরে বাগানে বা ছাদের টবে গাছের জন্য যে জৈবসার ব্যবহৃত হয় তাতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নানা জাতের ছত্রাক পাওয়া যায়। গ্রামে গোয়ালঘরের পাশে অহরহ ছত্রাক জন্মায়। অনেক সময় বাগানের গাছে বা ফুলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। সেই ফুল ফুলদানিতে রাখলে মাুনষের দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ প্রকাশের ধরন
বেশির ভাগ হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট হঠাৎ শুরু হয়; সাথে থাকে শুকনো কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শাঁ শাঁ শব্দ (Wheeze)। অল্প পরে শ্বাসের কষ্ট আরো বেড়ে যায় এবং বুুকের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়। প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীর ব্যাস আরো সরু হয়ে যায় এবং সেই সরু নালীল মধ্যে বাতাস চলাচলের সময় বাঁশির মতো আওয়াজ শোনা যায়। এ ধরনের শ্বাসকষ্ট সাধারণত হয় রাতে এবং তখন রোগী উঠে বসে থাকে। বেশির ভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট শেষ রাতে বাড়তে দেখা যায়।
হাঁপানিকারক কারণ
১. অ্যালার্জিকারক (ঘরের ধুলো, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা পালকের আঁশ, ত্বকের মামড়ি প্রভৃতি)।
২. জ্বালাকারক বা উত্তেজক (ধোঁয়া, তীব্র গন্ধ, বিভিন্ন বস্তুর বাষ্প)।
৩. জীবাণু সংক্রমণ (নাক, গলা ও বুকে ভাইরাস সংক্রমণ)।
৪. ব্যায়াম, অতিপরিশ্রম।
৫. শীতল বায়ু, আবহাওয়ার পরিবর্তন।
৬. মানসিক চাপ ও অবসাদ।
৭. পেশাগত সংস্পর্শ (রাসায়নিক সামগ্রী, রঞ্জক, ডিটারজেন্ট প্রভৃতি)।
৮. ওষুধ (বিটা প্রতিবন্ধক, যেমন- প্রপ্রানল জাতীয় ওষুধ, ব্যথা প্রশমক, যেমন- অ্যাসপিরিন প্রভৃতি)।
৯. খাদ্যের সংরক্ষণ বা গুণগত সমৃদ্ধকারী বস্তু (মেটাবাইসালফেট)।
১০. রঙ করা খাদ্য (মেযন- হলুদ রঙের জন্য টারটারাজিন।
চ. আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি
আবহাওয়া পরিবর্তনকালে অনেকের হাঁপানি আক্রমণ হতে দেখা যায়। কারো কারো ঠাণ্ডা বাতাস লাগলে হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, আবার কখনো কখনো হাঁপানি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা পানি পান করলে, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ হয়ে থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা-গরমের তারতম্যের কারণেও কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ প্রকট হতে পারে। শিশুদের মধ্যে শীতকালেই হাঁপানি হতে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে, শীতের শেষ এবং অতিরিক্ত গরমে অ্যাজমার প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়।
ছ. ওষুধজনিত অ্যালার্জি
কোনো কোনো রোগের চিকিৎসায় অ্যালোপ্যাথিক কিছু ওষুধ শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন অ্যাড্রিনার্জিক, যা স্নায়ু শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। বিটাব্লকার বিশেষত প্রপ্রানল জাতীয় ওষুধ অ্যাড্রিনার্জিক স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে এ জাতীয় ওষুধ খেলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধও শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- টেট্রাসাইক্লিন) ও কেমোথেরাপিউটিক ওষুধ ব্যবহারে অ্যালার্জিঘটিত প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, আইএইচএমআর
মোবা : ০১৭১২৮১৭১৪৪
যেসব জিনিসের অ্যালার্জিতে হাঁপানি হতে পারে
ক. পরাগরেণু
ফুলের বা ঘাসের পরাগরেণু। পরাগরেণু থেকে হাঁপানি হতে পারে এ তথ্য স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯২০ সালে। তবে সব জাতের পরাগরেণুতে অ্যালার্জি বা হাঁপানি দেখা দেয় না। সেই রেণুতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করার উপাদান থাকা চাই। তা ছাড়া রেণু খুব হালকা হওয়া চাই, যা বাতাস সহজে বহন করতে পারে এবং পরিমাণে যথেষ্ট থাকা দরকার। কারণ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার পর যদি যথেষ্ট মাত্রার রেণু শ্বাসপথে না যায়, তাহলে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হবে না। বিভিন্ন হাঁপানি রোগীর বিশেষ বিশেষ রেণু দ্বারা হাঁপানি হয়ে থাকে। যে পরাগরেণু একজনের হাঁপানি সৃষ্টি করে, তা অন্যের কোনো ক্ষতি নাও করতে পারে। রেণুর উৎস নানা সূত্র থেকে যেমন- গাছ, গুল্ম ঘাস, ফুল প্রভৃতি। ফুলের রেণুতে যাদের অ্যালার্জি থাকে, তারা সাধারণত বিশেষ কোনো ঋতুতে অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। কারণ এক এক ফুল এক এক ঋতুতে পরাগরেণু ছড়ায়।
খ. খাদ্য
খাদ্য থেকে যে অ্যালার্জি ও হাঁপানি হয় এ তথ্য বহুকাল আগে থেকেই জানা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিরোক্রেটাসও খাদ্য থেকে অ্যালার্জির কথা বলে গেছেন। কী কী খাদ্য থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে তার তালিকা হবে অতি দীর্ঘ। যেমনÑ ডিম, চিংড়ি মাছ ও গরুর গোশত থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে, এ তথ্য বহুল প্রচারিত। এ ছাড়া আরো যেসব খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, কলা, পুঁইশাক, ডাল, গমের তৈরি খাদ্য, চাল, কমলালেবু, আপেল, আঙুর, তরমুজ, শসা, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, সজিনা ডাটা, মুলা, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, ওলকপি, চকলেট, গুড়, মধু, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার প্রভৃতি।
এখানে মনে রাখা দরকার, সব খাদ্য থেকে সবার অ্যালার্জি নাও হতে পারে। ব্যক্তি ভিন্নতায় বিভিন্ন খাদ্যে বিভিন্নজনের অ্যালার্জি হতে পারে। একই ধরনের খাবারে যে সবারই অ্যালার্জি হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য রঙিন করার যেসব রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করা হয় তার দ্বারা অনেকেরই অ্যালার্জি হতে পারে। বর্তমানে দেশে অ্যালার্জি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা ইচ্ছা করলে সবাই অ্যালার্জিকারক খাদ্য শনাক্ত করে নিতে পারে। তবে কেবল খাদ্যের জন্য অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগীর সংখ্যা খুবই কম।
গ. ধূলিকণা
বাড়ির ধূলিকণা নাকে ঢুকলে হাঁপানি হতে পারে। ঘরবাড়ির ধুলোতে বিশেষ করে কার্পেট, তোশক, লেপ, কম্বল, বালিশ, পাপোস প্রভৃতিতে এক প্রকার ‘মাইট’ (Mite) জাতীয় জীবাণু থাকে। এরা ঘরের ধূলিকণাতে মিশে থাকে। কোনো প্রকারে শ্বাসপথে এই মাইট মিশ্রিত ধূলিকণার প্রবেশ ঘটলে শরীরে অ্যালার্জি জাতীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার ফলে হাঁচি, নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়া বা হাঁপানি রোগ হতে পারে।
ঘ. পতঙ্গজনিত অ্যালার্জি
কোনো পোকা বা পতঙ্গ কামড়ালে আমরা ব্যথা পাই এবং সেই কামড়ানোর জায়গা ফুলে ওঠে। প্রায় সব প্রকার পতঙ্গের হুলে বিষ থাকে, তা কোনো ক্ষেত্রে বেশি আবার কোথাও বা কম। এ ধরনের বিষ মানুষের শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রকার অ্যালার্জেনের দ্বারা ক্ষেত্রবিশেষে হাঁপানি হতে পারে। যেসব পতঙ্গ থেকে মানুষের হাঁপানি হতে পারে তাদের সংখ্যা ও শ্রেণীর তালিকা খুবই দীর্ঘ। সাধারণত ঘরের আরশোলা, মাঠের ফড়িং, প্রজাপতি, মথ, পঙ্গপাল এমনকি মশা পর্যন্ত এ তালিকায় আসতে পারে।
ঙ. ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি
বর্ষার সময় অব্যবহৃত জুতা, ভিজে ছাতা, এমনকি ভিজে পোশাক ঠিকমতো না শুকিয়ে ফেলে রাখলে এক ধরনের হালকা ধূসর সবুজ দাগ হয়। এটিকে ছত্রাক বলে। এ ছত্রাক দ্বারা কোনো ব্যক্তি হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারে। ছত্রাকের জন্ম বিভিন্ন খাবারেও হতে পারে। যেমনÑ পাউরুটি, বাসিরুটি, কেক, আলু, পেঁয়াজ প্রভৃতি। এ ছাড়া ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, কার্পেট, ঘরের কোণে জমা করা ময়লা কাপড়ে ছত্রাক জন্মায়। বাড়ির বাইরে বাগানে বা ছাদের টবে গাছের জন্য যে জৈবসার ব্যবহৃত হয় তাতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নানা জাতের ছত্রাক পাওয়া যায়। গ্রামে গোয়ালঘরের পাশে অহরহ ছত্রাক জন্মায়। অনেক সময় বাগানের গাছে বা ফুলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। সেই ফুল ফুলদানিতে রাখলে মাুনষের দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ প্রকাশের ধরন
বেশির ভাগ হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট হঠাৎ শুরু হয়; সাথে থাকে শুকনো কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শাঁ শাঁ শব্দ (Wheeze)। অল্প পরে শ্বাসের কষ্ট আরো বেড়ে যায় এবং বুুকের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়। প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীর ব্যাস আরো সরু হয়ে যায় এবং সেই সরু নালীল মধ্যে বাতাস চলাচলের সময় বাঁশির মতো আওয়াজ শোনা যায়। এ ধরনের শ্বাসকষ্ট সাধারণত হয় রাতে এবং তখন রোগী উঠে বসে থাকে। বেশির ভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট শেষ রাতে বাড়তে দেখা যায়।
হাঁপানিকারক কারণ
১. অ্যালার্জিকারক (ঘরের ধুলো, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা পালকের আঁশ, ত্বকের মামড়ি প্রভৃতি)।
২. জ্বালাকারক বা উত্তেজক (ধোঁয়া, তীব্র গন্ধ, বিভিন্ন বস্তুর বাষ্প)।
৩. জীবাণু সংক্রমণ (নাক, গলা ও বুকে ভাইরাস সংক্রমণ)।
৪. ব্যায়াম, অতিপরিশ্রম।
৫. শীতল বায়ু, আবহাওয়ার পরিবর্তন।
৬. মানসিক চাপ ও অবসাদ।
৭. পেশাগত সংস্পর্শ (রাসায়নিক সামগ্রী, রঞ্জক, ডিটারজেন্ট প্রভৃতি)।
৮. ওষুধ (বিটা প্রতিবন্ধক, যেমন- প্রপ্রানল জাতীয় ওষুধ, ব্যথা প্রশমক, যেমন- অ্যাসপিরিন প্রভৃতি)।
৯. খাদ্যের সংরক্ষণ বা গুণগত সমৃদ্ধকারী বস্তু (মেটাবাইসালফেট)।
১০. রঙ করা খাদ্য (মেযন- হলুদ রঙের জন্য টারটারাজিন।
চ. আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি
আবহাওয়া পরিবর্তনকালে অনেকের হাঁপানি আক্রমণ হতে দেখা যায়। কারো কারো ঠাণ্ডা বাতাস লাগলে হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, আবার কখনো কখনো হাঁপানি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা পানি পান করলে, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ হয়ে থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা-গরমের তারতম্যের কারণেও কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ প্রকট হতে পারে। শিশুদের মধ্যে শীতকালেই হাঁপানি হতে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে, শীতের শেষ এবং অতিরিক্ত গরমে অ্যাজমার প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়।
ছ. ওষুধজনিত অ্যালার্জি
কোনো কোনো রোগের চিকিৎসায় অ্যালোপ্যাথিক কিছু ওষুধ শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন অ্যাড্রিনার্জিক, যা স্নায়ু শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। বিটাব্লকার বিশেষত প্রপ্রানল জাতীয় ওষুধ অ্যাড্রিনার্জিক স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে এ জাতীয় ওষুধ খেলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধও শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- টেট্রাসাইক্লিন) ও কেমোথেরাপিউটিক ওষুধ ব্যবহারে অ্যালার্জিঘটিত প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, আইএইচএমআর
মোবা : ০১৭১২৮১৭১৪৪
No comments