একটি ঐতিহাসিক চুক্তি by রবার্ট ওয়াটকিন্স
গত
শনিবার কপ–২১ সম্মেলনের সমাপ্তি দিনে বিশ্বনেতারা একটি চুক্তিতে উপনীত হন,
এর মধ্য দিয়ে এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ করতে
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। যদিও আলাপ-আলোচনা
চলাকালে অনেকেই উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে যে রাষ্ট্রগুলো
একটি চুক্তিতে উপনীত হতে সক্ষম হয় কি না, কিন্তু জাতিসংঘ জলবায়ু
পরিবর্তন–বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২১তম সম্মেলনের পক্ষগুলো একটি
ঐতিহাসিক চুক্তি উপহার দিয়েছে। ১৯৬টি দেশের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে অর্জিত
প্যারিস চুক্তি হলো প্রথম সর্বজনীন জলবায়ু চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের
নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে সীমিত ও নিরসনকল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আমাদের এই সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর একটি, যা সমগ্র বিশ্ব ও সম্প্রদায়গুলোর মাঝে বর্ধিতভাবে অনুভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশে জলবায়ুর আঘাত ও চাপ সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, জীবিকার সংকোচন করেছে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশ্ব কীভাবে মোকাবিলা করবে, প্যারিসে সম্পাদিত চুক্তিটি এর একটি দিকনির্দেশক।
এই চুক্তিটি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে সীমাবদ্ধ রাখতে বিশ্বকে পথনির্দেশ করে, যেখানে দৃষ্টি থাকবে লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫-এর সুবিধাগুলো অর্জন। এ ছাড়া প্যারিস চুক্তিটি একটি উচ্চাভিলাষী, গতিশীল ও সর্বজনীন চুক্তি। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশকে ও সব ধরনের নিঃসরণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।
প্যারিস চুক্তিটি বিশ্ববাসীর কাছে একটি বার্তা প্রেরণ করে যে রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন–বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। যেখানে কিয়েটো প্রটোকলে কিছু রাষ্ট্রকে গ্যাস নিঃসরণ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে প্যারিস চুক্তি নিজেদের পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিন্নতাকে স্বীকার করেও প্রতিটি রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রগুলো সরকারিভাবে তাদের কর্মপরিকল্পনা পেশ করেছে, যাতে নিঃসরণ হ্রাসও অন্তর্ভুক্ত।
এখন দেশগুলো এসব কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ এবং যদি তারা এটি করে, তবে সেটি ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অনুমেয় হারকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এটি ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে যে বাংলাদেশের মতো উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন দেশগুলো, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব ফেলে, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পরিবর্তন, সেখানে বিশ্বের প্রতিটি দেশের অবদানই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
চুক্তিটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জাতীয় পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়াকেই আনুষ্ঠানিকতা দেয় না বরং এটি প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই পরিকল্পনার অগ্রগতিকে মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনা করতে একটি বাধ্যতামূলক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এই পদ্ধতির জন্য দেশগুলোকে ক্রমাগত তাদের প্রতিশ্রুতিগুলোর হালনাগাদ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো পশ্চাৎমুখিতা নেই। চুক্তিটি বৈশ্বিক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে একটি মূল উপকরণ হিসেবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনকে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী বর্ধিত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে।
একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলো কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থ জোগান এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত হলো প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যমান তহবিলের অর্থায়ন ২০২০ সালের পরেও চালিয়ে যাওয়া, যা ২০২৫ সাল নাগাদ আরও বৃদ্ধির লক্ষ্য সামনে রেখে করতে হবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়নের চেষ্টা করছে, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য জলবায়ু সংবেদনশীল স্থানগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা তৈরি করার জন্য। এটি নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ।
বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পৃক্তকরণে উদ্যোগ তীব্রতর করেছে, যাতে গোল ১৩-জলবায়ু ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ মূল জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এ সম্পর্কে গৃহীত চুক্তিটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোকে দেশগুলোর সহায়তায় আহ্বান জানায়, এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ উচ্চমানসম্পন্ন নীতিপরামর্শ ও কার্যক্রম সহায়তাসহ বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। প্যারিস চুক্তি পরিবর্তিত জলবায়ুতে জীবন ও জীবিকা নিরাপদ রাখার উপযোগিতা অর্জন এবং নিম্ন-কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতি গ্রহণ—বাংলাদেশের জন্য এ দুটি বিষয়ের প্রয়োজনীয়তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিম্নপর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিম্ন-কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতি গ্রহণ ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার এখনই প্রকৃত সময়। বৈশ্বিক রূপান্তর প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্যারিস চুক্তি বাংলাদেশ ও অবশিষ্ট বিশ্বের জন্য একটি অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে, যা আগামী বংশধরদের জন্য আমাদের এই ধরিত্রীকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
রবার্ট ওয়াটকিন্স: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আমাদের এই সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর একটি, যা সমগ্র বিশ্ব ও সম্প্রদায়গুলোর মাঝে বর্ধিতভাবে অনুভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশে জলবায়ুর আঘাত ও চাপ সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, জীবিকার সংকোচন করেছে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশ্ব কীভাবে মোকাবিলা করবে, প্যারিসে সম্পাদিত চুক্তিটি এর একটি দিকনির্দেশক।
এই চুক্তিটি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে সীমাবদ্ধ রাখতে বিশ্বকে পথনির্দেশ করে, যেখানে দৃষ্টি থাকবে লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫-এর সুবিধাগুলো অর্জন। এ ছাড়া প্যারিস চুক্তিটি একটি উচ্চাভিলাষী, গতিশীল ও সর্বজনীন চুক্তি। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশকে ও সব ধরনের নিঃসরণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।
প্যারিস চুক্তিটি বিশ্ববাসীর কাছে একটি বার্তা প্রেরণ করে যে রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন–বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। যেখানে কিয়েটো প্রটোকলে কিছু রাষ্ট্রকে গ্যাস নিঃসরণ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে প্যারিস চুক্তি নিজেদের পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিন্নতাকে স্বীকার করেও প্রতিটি রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রগুলো সরকারিভাবে তাদের কর্মপরিকল্পনা পেশ করেছে, যাতে নিঃসরণ হ্রাসও অন্তর্ভুক্ত।
এখন দেশগুলো এসব কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ এবং যদি তারা এটি করে, তবে সেটি ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অনুমেয় হারকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এটি ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে যে বাংলাদেশের মতো উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন দেশগুলো, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব ফেলে, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পরিবর্তন, সেখানে বিশ্বের প্রতিটি দেশের অবদানই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
চুক্তিটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জাতীয় পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়াকেই আনুষ্ঠানিকতা দেয় না বরং এটি প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই পরিকল্পনার অগ্রগতিকে মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনা করতে একটি বাধ্যতামূলক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এই পদ্ধতির জন্য দেশগুলোকে ক্রমাগত তাদের প্রতিশ্রুতিগুলোর হালনাগাদ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো পশ্চাৎমুখিতা নেই। চুক্তিটি বৈশ্বিক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে একটি মূল উপকরণ হিসেবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনকে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী বর্ধিত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে।
একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলো কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থ জোগান এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত হলো প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যমান তহবিলের অর্থায়ন ২০২০ সালের পরেও চালিয়ে যাওয়া, যা ২০২৫ সাল নাগাদ আরও বৃদ্ধির লক্ষ্য সামনে রেখে করতে হবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়নের চেষ্টা করছে, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য জলবায়ু সংবেদনশীল স্থানগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা তৈরি করার জন্য। এটি নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ।
বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পৃক্তকরণে উদ্যোগ তীব্রতর করেছে, যাতে গোল ১৩-জলবায়ু ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ মূল জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এ সম্পর্কে গৃহীত চুক্তিটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোকে দেশগুলোর সহায়তায় আহ্বান জানায়, এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ উচ্চমানসম্পন্ন নীতিপরামর্শ ও কার্যক্রম সহায়তাসহ বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। প্যারিস চুক্তি পরিবর্তিত জলবায়ুতে জীবন ও জীবিকা নিরাপদ রাখার উপযোগিতা অর্জন এবং নিম্ন-কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতি গ্রহণ—বাংলাদেশের জন্য এ দুটি বিষয়ের প্রয়োজনীয়তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিম্নপর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিম্ন-কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতি গ্রহণ ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার এখনই প্রকৃত সময়। বৈশ্বিক রূপান্তর প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্যারিস চুক্তি বাংলাদেশ ও অবশিষ্ট বিশ্বের জন্য একটি অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে, যা আগামী বংশধরদের জন্য আমাদের এই ধরিত্রীকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
রবার্ট ওয়াটকিন্স: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
No comments