৩০ লক্ষ পোশাক শ্রমিক ঝুঁকিতে
রানা
প্লাজায় দুর্ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে আড়াই বছর৷ এই সময়ে বাংলাদেশের পোশাক
কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তাদের কাজের
পরিবেশের উন্নয়নে কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকার
রিটেইলারদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফর ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি'
এবং ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি' নামে দুটি শ্রমিক নিরাপত্তা
কর্মসূচি চালু হয়৷ এর আওতায় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর কাছে যেসব কারখানা
পোশাক রপ্তানি করে সেসব কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের
উদ্যোগ নেয়া হয়৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানায় কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ
শ্রমিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, রানা
প্লাজা ধসে ১১শর বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে
শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে কর্মসূচি নেয়া হয়, তার
চার ভাগের তিন ভাগ কারখানাই সেই কর্মসূচির আওতার বাইরে রয়েছে। এগুলোর
বেশির ভাগই ছোট কারখানা এবং এগুলো বড় বা নামীদামী কারখানার জন্য কাজ করে
থাকে। তবে গার্মেন্টস মালিকরা এমন বক্তব্য নাকচ করে বলেছেন, রপ্তানিকারক সব
কারখানাই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বলেছে,
ছোট কারখানাগুলোকেও নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। নিউইয়র্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্র্যান সেন্টার ফর বিজনেস এন্ড হিউম্যান রাইটস এর পক্ষ
থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণাটি করা
হয়েছে। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশে সাত হাজারের বেশি
গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এগুলোর একটা বড় অংশের কোনো নিবন্ধন নেই। এই
ছোট কারখানাগুলো বড় বা নামী-দামী কারখানার জন্য সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ
করে থাকে। কিন্তু এই ছোট কারখানাগুলোর নিরাপত্তার বিষয় নজরদারির আওতায়
নেই। ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠনের
নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেছেন,সরকার এবং মালিকপক্ষ, কেউই ছোট কারখানাগুলোর
নিরাপত্তার দিকে নজর দেয় না। রানা প্লাজা ধ্বসে গার্মেন্টস শ্রমিক হতাহতের
ঘটনার পরে কারখানাগুলোর শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে আসে। সেই
প্রেক্ষাপটে, ইউরাপে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাকর্ড
এবং অ্যলায়েন্স নামের দুটি ফোরাম গঠন করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস
কারখানাগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ
নেয়। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, গার্মেন্টস
কারখানার চার ভাগের মাত্র এক ভাগ কারখানাকে সেই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়
আনা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ কারখানায় ত্রিশ লাখের মতো শ্রমিক নিরাপত্তা
ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ফোরাম অ্যাল্যায়েন্সের
মেজবাহ রবিন বলছিলেন, “সরকারি হিসাব এবং বিজিএমইএ’র তালিকা অনুযায়ী সাড়ে
তিন হাজার কারখানা এখন চালু আছে। অ্যাকর্ড, এ্যালায়েন্স এবং আইএলও এর
সহায়তায় সরকারের ন্যাশনাল কর্মসূচি অধীনে, এই তিন ভাগে তালিকাভুক্ত একশ
ভাগ কারখানাকেই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।” গার্মেন্টস
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান এটা স্বীকার
করেছেন যে, ছোট কিছু কারখানা রয়েছে। তবে তার দাবি হচ্ছে, বড় কারখানাগুলো
এখন ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার কাছে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ দেয় না। তিনি আরও
বলেছেন, ছোট কারখানাগুলো দেশের ভিতরে চাহিদা মেটানোর জন্য কাজ করে। এরা
রপ্তানিকারক না হওয়ায় তারা বিজিএমইএ’র সদস্যও হতে পারে না। শ্রম
মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেছেন, কেরানীগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় ছোট
কারখানা রয়েছে। এর সংখ্যা হাজার খানেক হবে। এসব কারখানাকেও দু’বছরের
মধ্যে নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে আনা হবে। - সংবাদমাধ্যম
No comments