বৃহত্তম গণতন্ত্রে সমকামিতা অপরাধ
ইতিহাসের
চাকা উল্টে বৃহত্তম গণতন্ত্রের শীর্ষ আদালত জানাল, সমকামিতা অপরাধ৷ বদলে
গেল ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর তৈরি হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭
ধারা বিলোপের আশা৷ কোনও ব্যক্তির নিজের পছন্দ মতো যৌন সঙ্গী বেছে নেওয়ার
একান্ত মৌলিক অধিকারে সুপ্রিম কোর্টের রায় বড়সড় এক আঘাত বলেই মনে করছে
বিভিন্ন মহল৷
কারও কারও মত, শীর্ষ আদালতের রায় কার্যত ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছেই আত্মসমর্পণ৷ কারণ, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৌলবাদী সংগঠনগুলি দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতায় কোমর বেঁধেছিল৷ তারাই সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি হাইকোর্টের রায় বাতিলের আর্জি পেশ করেছিল৷ আবার এ প্রশ্নও উঠছে, ২০০৯-এ হাইকোর্টের রায়ের পর কেন্দ্রীয় সরকারই বা কেন এত দিন দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাটি বাতিলের জন্য সংসদে বিল আনেনি৷ তারও আগে ২০০০ সালে প্রকাশিত ল কমিশনের ১৭২ নম্বর রিপোর্টেও ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত সরকার এক দশকেরও বেশি সময়ে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি৷
সব মিলিয়ে উঠে আসছে সেই পুরোনো ভাবনাচিন্তা বয়ে বেড়ানোর রক্ষণশীল মানসিকতার কথাই৷ সে আদালত এবং রাজনীতিক--দুতরফেই৷ ব্রিটিশরা ৬৬ বছর আগে ভারত ছেড়ে চলে গেলেও তাদের তৈরি আইন আঁকড়েই পড়ে রয়েছে এই দেশ৷ ভিক্টোরীয় নৈতিকতা বজায় রাখতে লর্ড ম্যাকলে ১৮৬০ সালে এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন৷ দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক নিয়ম -বিরোধী যে কোনও ধরনের যৌন সংসর্গই অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ যদি পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাবাস ও জরিমানা হতে পারে৷ বুধবার শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি ও এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের আবেগকে মনে রেখেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে বহাল রাখা হচ্ছে৷ তবে প্রয়োজনে, সংসদ এই বিষয়ে, অর্থাত্ সমকামিতা অপরাধ নয়, এই মর্মে আইন আনার কথা ভাবতে পারে৷ প্রশ্ন উঠছে, সংখ্যাগুরুর আবেগের উপর আদালতের এই গুরুত্ব আরোপ নিয়েও৷ তা হলে কি গণ-হিস্টিরিয়াকেও পরোক্ষে মান্যতা দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত? রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলজিবিটি কর্মী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট আইনজীবী, সাধারণ মানুষ৷ সকলেই মনে করছেন, শীর্ষ আদালতের রায়ের ফলে সমকামী আন্দোলন বড় ধাক্কা খেল৷ ব্যক্তি স্বাধীনতার মর্মমূলেই আঘাত হানল এই রায়৷
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়েটসের কথায়, মানবাধিকারের নিরিখে পৃথিবীতে যে পরিবর্তন আসছে, সেই পরিবর্তনের পরিপন্থী এই রায়৷ এর ফলে এলজিবিটি আন্দোলন মারাত্মক পিছিয়ে গেল৷ নাজ ফাউন্ডেশশনের পক্ষে অঞ্জলি গোপালন এই সময়কে ফোনে বলেন, এর থেকে অন্ধকার দিন আমাদের আসবে না৷ যে আন্দোলনকে এতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার ভবিষ্যত্ আপাতত অনিশ্চিত৷ প্রসঙ্গত, আরও অনেকের সঙ্গে নাজ ফাউন্ডেশনও ৩৭৭ ধারা বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল৷ আইনি বিশেষজ্ঞেরা স্পষ্টই বলছেন, সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২১ ধারা ব্যক্তি মানুষের যে সমানাধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় তার পরিপন্থী৷
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংও প্রকাশ্যে বলেছেন, সংবিধানে যে মূল্যবোধের কথা বলা আছে, তাকে বিস্তৃত করার ঐতিহাসিক সুযোগ হারাল দেশ৷ সুপ্রিম কোর্ট যেখানে নানা বিষয়ে তাদের মত দেয়, এ বিষয়ে তারা নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলে ফের সংসদের কোর্টেই বল ঠেলে দিল৷
রায় মানতে পারছেন না কলকাতার এনইউজেএসের অধ্যাপক শমনদ বশিরও৷ তাঁর কথায়, আমাদের মহামান্য শীর্ষ আদালত নিজেকে নীতিবাগিশ ভিক্টোরিয়ান হিসেবে প্রতিপন্ন করল, এবং প্রমাণ করল আইনও সব সময় যুক্তি মানে না৷ ভারতে এলজিবিটি আন্দোলন বেশ কয়েক বছর ধরেই গতি পেয়েছে৷ ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনাও শুরু হয়৷ কিন্ত্ত এই রায় এ দিন সকলকেই হতাশ করেছে৷ এ বার এই আন্দোলনের দিশা কী হবে তা নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ আপাতত তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেরই সাংবিধানিক বেঞ্চে আপিল করার কথা ভাবছেন৷ শমনদ মনে করছেন, বৃহত্তর বেঞ্চে রায় বদলেও যেতে পারে৷
প্রশ্ন উঠছে বেঙ্গালুরুর প্রথম সমকামী রেডিও স্টেশন কিউ-এর ভবিষ্যত্ নিয়েও৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী এই সময়-কে বলেন, এখনও জানা নেই ভবিষ্যত্ কী হতে চলেছে৷ তবে আমরা মর্মাহত৷ সাহিত্যিক বিক্রম শেঠ থেকে শুরু করে অভিনেতা আমির খান--প্রত্যেকেই এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
তবে রায়ে খুশি আবেদনকারীরা৷ এর মধ্যে মুসলিম, হিন্দু সব সম্প্রদায়ের লোকই ছিলেন৷ তাঁরা বলছেন, এই রকম (সমকামী) সম্পর্ক সমাজ-বিরুদ্ধ৷ অন্যায়৷ কাজেই সুপ্রিম কোর্টের রায় একেবারে ঠিক৷ সমাজতাত্ত্বিক দীপঙ্কর গুপ্ত তাই মনে করছেন, আদালতের এ রকম সিদ্ধান্ত ধর্মীয় সংগঠনের কাছে আত্মসমর্পণের সামিল৷ ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শেও আঘাত৷ আর সংসদ কবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে কিছুই বলা যায় না৷
আপাতত সংসদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের যে অবস্থা, তাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা প্রায় নেই৷ তবে আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল, বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি সকলেই বলেছেন, সরকার তাঁর দায়িত্ব পালন করবে৷ সরকার সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিল নিয়ে আসবে৷ আইনমন্ত্রী কপিল সিবালের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের অধিকার হল, কোনও আইন সংবিধানসম্মত কি না তা দেখা৷ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে৷ সরকারের অধিকার হল, আইন তৈরি করা৷ সরকার তার অধিকার প্রয়োগ করবে৷ তবে সংসদ চালু থাকলে তো আইন পাশের কথা আসে৷ জয়রাম রমেশও বলেন, এই রায়ের ফলে আরও পিছিয়ে পড়লাম আমরা৷
মন্ত্রীরা এ কথা বললেও বাস্তবে নতুন করে আইন পাশ করানো বেশ কঠিন৷ কারণ, ধর্মীয় সংগঠনগুলির মনোভাব৷ ভোটের আগে কোনও রাজনৈতিক দলই তাদের চটাতে চাইবে না৷ এমন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে এগোতে চাইবে না৷ এমনকি নতুন যে সরকার আসবে, তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় বিষয়টি থাকবে, এমন কথাও হলফ করে কেউ বলতে পারছে না৷
এই আঁধারে আপাতত ফের আলোর দিশা খোঁজার চেষ্টা শুরু করছেন এলজিবিটি কর্মীরা৷
সুত্রঃ এই সময়
কারও কারও মত, শীর্ষ আদালতের রায় কার্যত ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছেই আত্মসমর্পণ৷ কারণ, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৌলবাদী সংগঠনগুলি দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতায় কোমর বেঁধেছিল৷ তারাই সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি হাইকোর্টের রায় বাতিলের আর্জি পেশ করেছিল৷ আবার এ প্রশ্নও উঠছে, ২০০৯-এ হাইকোর্টের রায়ের পর কেন্দ্রীয় সরকারই বা কেন এত দিন দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাটি বাতিলের জন্য সংসদে বিল আনেনি৷ তারও আগে ২০০০ সালে প্রকাশিত ল কমিশনের ১৭২ নম্বর রিপোর্টেও ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত সরকার এক দশকেরও বেশি সময়ে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি৷
সব মিলিয়ে উঠে আসছে সেই পুরোনো ভাবনাচিন্তা বয়ে বেড়ানোর রক্ষণশীল মানসিকতার কথাই৷ সে আদালত এবং রাজনীতিক--দুতরফেই৷ ব্রিটিশরা ৬৬ বছর আগে ভারত ছেড়ে চলে গেলেও তাদের তৈরি আইন আঁকড়েই পড়ে রয়েছে এই দেশ৷ ভিক্টোরীয় নৈতিকতা বজায় রাখতে লর্ড ম্যাকলে ১৮৬০ সালে এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন৷ দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক নিয়ম -বিরোধী যে কোনও ধরনের যৌন সংসর্গই অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ যদি পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাবাস ও জরিমানা হতে পারে৷ বুধবার শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি ও এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের আবেগকে মনে রেখেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে বহাল রাখা হচ্ছে৷ তবে প্রয়োজনে, সংসদ এই বিষয়ে, অর্থাত্ সমকামিতা অপরাধ নয়, এই মর্মে আইন আনার কথা ভাবতে পারে৷ প্রশ্ন উঠছে, সংখ্যাগুরুর আবেগের উপর আদালতের এই গুরুত্ব আরোপ নিয়েও৷ তা হলে কি গণ-হিস্টিরিয়াকেও পরোক্ষে মান্যতা দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত? রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলজিবিটি কর্মী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট আইনজীবী, সাধারণ মানুষ৷ সকলেই মনে করছেন, শীর্ষ আদালতের রায়ের ফলে সমকামী আন্দোলন বড় ধাক্কা খেল৷ ব্যক্তি স্বাধীনতার মর্মমূলেই আঘাত হানল এই রায়৷
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়েটসের কথায়, মানবাধিকারের নিরিখে পৃথিবীতে যে পরিবর্তন আসছে, সেই পরিবর্তনের পরিপন্থী এই রায়৷ এর ফলে এলজিবিটি আন্দোলন মারাত্মক পিছিয়ে গেল৷ নাজ ফাউন্ডেশশনের পক্ষে অঞ্জলি গোপালন এই সময়কে ফোনে বলেন, এর থেকে অন্ধকার দিন আমাদের আসবে না৷ যে আন্দোলনকে এতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার ভবিষ্যত্ আপাতত অনিশ্চিত৷ প্রসঙ্গত, আরও অনেকের সঙ্গে নাজ ফাউন্ডেশনও ৩৭৭ ধারা বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল৷ আইনি বিশেষজ্ঞেরা স্পষ্টই বলছেন, সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২১ ধারা ব্যক্তি মানুষের যে সমানাধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় তার পরিপন্থী৷
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংও প্রকাশ্যে বলেছেন, সংবিধানে যে মূল্যবোধের কথা বলা আছে, তাকে বিস্তৃত করার ঐতিহাসিক সুযোগ হারাল দেশ৷ সুপ্রিম কোর্ট যেখানে নানা বিষয়ে তাদের মত দেয়, এ বিষয়ে তারা নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলে ফের সংসদের কোর্টেই বল ঠেলে দিল৷
রায় মানতে পারছেন না কলকাতার এনইউজেএসের অধ্যাপক শমনদ বশিরও৷ তাঁর কথায়, আমাদের মহামান্য শীর্ষ আদালত নিজেকে নীতিবাগিশ ভিক্টোরিয়ান হিসেবে প্রতিপন্ন করল, এবং প্রমাণ করল আইনও সব সময় যুক্তি মানে না৷ ভারতে এলজিবিটি আন্দোলন বেশ কয়েক বছর ধরেই গতি পেয়েছে৷ ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনাও শুরু হয়৷ কিন্ত্ত এই রায় এ দিন সকলকেই হতাশ করেছে৷ এ বার এই আন্দোলনের দিশা কী হবে তা নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ আপাতত তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেরই সাংবিধানিক বেঞ্চে আপিল করার কথা ভাবছেন৷ শমনদ মনে করছেন, বৃহত্তর বেঞ্চে রায় বদলেও যেতে পারে৷
প্রশ্ন উঠছে বেঙ্গালুরুর প্রথম সমকামী রেডিও স্টেশন কিউ-এর ভবিষ্যত্ নিয়েও৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী এই সময়-কে বলেন, এখনও জানা নেই ভবিষ্যত্ কী হতে চলেছে৷ তবে আমরা মর্মাহত৷ সাহিত্যিক বিক্রম শেঠ থেকে শুরু করে অভিনেতা আমির খান--প্রত্যেকেই এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
তবে রায়ে খুশি আবেদনকারীরা৷ এর মধ্যে মুসলিম, হিন্দু সব সম্প্রদায়ের লোকই ছিলেন৷ তাঁরা বলছেন, এই রকম (সমকামী) সম্পর্ক সমাজ-বিরুদ্ধ৷ অন্যায়৷ কাজেই সুপ্রিম কোর্টের রায় একেবারে ঠিক৷ সমাজতাত্ত্বিক দীপঙ্কর গুপ্ত তাই মনে করছেন, আদালতের এ রকম সিদ্ধান্ত ধর্মীয় সংগঠনের কাছে আত্মসমর্পণের সামিল৷ ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শেও আঘাত৷ আর সংসদ কবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে কিছুই বলা যায় না৷
আপাতত সংসদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের যে অবস্থা, তাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা প্রায় নেই৷ তবে আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল, বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি সকলেই বলেছেন, সরকার তাঁর দায়িত্ব পালন করবে৷ সরকার সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিল নিয়ে আসবে৷ আইনমন্ত্রী কপিল সিবালের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের অধিকার হল, কোনও আইন সংবিধানসম্মত কি না তা দেখা৷ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে৷ সরকারের অধিকার হল, আইন তৈরি করা৷ সরকার তার অধিকার প্রয়োগ করবে৷ তবে সংসদ চালু থাকলে তো আইন পাশের কথা আসে৷ জয়রাম রমেশও বলেন, এই রায়ের ফলে আরও পিছিয়ে পড়লাম আমরা৷
মন্ত্রীরা এ কথা বললেও বাস্তবে নতুন করে আইন পাশ করানো বেশ কঠিন৷ কারণ, ধর্মীয় সংগঠনগুলির মনোভাব৷ ভোটের আগে কোনও রাজনৈতিক দলই তাদের চটাতে চাইবে না৷ এমন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে এগোতে চাইবে না৷ এমনকি নতুন যে সরকার আসবে, তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় বিষয়টি থাকবে, এমন কথাও হলফ করে কেউ বলতে পারছে না৷
এই আঁধারে আপাতত ফের আলোর দিশা খোঁজার চেষ্টা শুরু করছেন এলজিবিটি কর্মীরা৷
সুত্রঃ এই সময়
No comments