শেষ হলো শূন্য সুদহারের যুগ by শওকত হোসেন
জ্যানেট ইয়েলেন, চেয়ারম্যান, ফেডারেল রিজার্ভ |
শূন্য
সুদের যুগ শেষ হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রায় এক
দশক পর প্রথমবারের মতো সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর ফলে এখন
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার দাঁড়াল শূন্য দশমিক ৫০
শতাংশ।
সুদহার সামান্য বাড়লেও বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব অতটা সামান্য হবে না। এর প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকা মার্কিন অর্থনীতিকে একটু টেনে ধরার জন্যই সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে অবশ্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়বে। আর যুক্তরাষ্ট্র সেটাই চায়।
গত বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেন এই সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এর আগে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি বা এফওএমসি এ নিয়ে দুই দিন বৈঠক করেছে। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে আর এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কমিটি মনে করছে, এই অবস্থায় ফেডারেল ফান্ডের সুদহার সামান্য বাড়ানোই যথাযথ হবে।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়েই। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত। জরিপেও দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই নিশ্চিত ছিল যে এই ঘোষণা আসবে। ফলে সব পক্ষই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে এবং বাজারও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সর্বশেষ সুদের হার বাড়িয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর তা কমে ২০০৮ সালে শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছায়। সুদ হার ছিল দশমিক ২৫ শতাংশ, যাকে প্রায় শূন্যই বলা যায়। বড় ধরনের মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্র শূন্য সুদহারের নীতি নিয়েছিল। এখন দেশটি মনে করছে সেই নীতি থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের আশা, এবার প্রবৃদ্ধি আরেকটু বাড়বে, হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রায় এক দশক আগে ফেডারেল রিজার্ভের সে সময়ের চেয়ারম্যান বেন বার্নানকে সুদহার শূন্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রত্যাশা ছিল, এর ফলে মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসবে, ঋণ সস্তা হবে, উৎপাদন বাড়বে, অর্থনীতি চাঙা হবে। এটা সত্যি, তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। ইউরোপ মন্দা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে। চীন ও অন্যান্য উঠতি অর্থনীতির দেশও নানা সংকটে আছে। এ অবস্থায় মূলত ২০১৩ সাল থেকেই মুদ্রানীতি বদলের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে সুদহার বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছিল। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে বাড়ানোর কথাও হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ের অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আর এ পথে এগোয়নি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। বিশেষ করে গত আগস্টে চীন হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের দুই দফা অবমূল্যায়নের পর বিশ্বজুড়ে নতুন করে মুদ্রাযুদ্ধ শুরু হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে কিছুটা দ্বিধা থাকায় পিছিয়ে যায় ফেডারেল রিজার্ভ।
মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুদ্রানীতি পরিচালনা করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। এর একটি হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান, অন্যটি স্থিতিশীল মূল্যস্তর। সাধারণত অর্থনীতি যখন দুর্বল থাকে তখন মূল্যস্ফীতিও কমতে থাকে। আবার অর্থনীতি যখন সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের দিকে যায় তখন মজুরি বাড়ানোর চাপ তৈরি হয় এবং এতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। অর্থনীতি খুব দ্রুতগতিতে এগোতে থাকলে ফেডারেল রিজার্ভ তার বেঞ্চমার্ক সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তাতে মানুষ খরচ কমিয়ে দেয় এবং সঞ্চয় বেশি করে। এর ফলে অর্থনীতি একটু শ্লথ হয় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমে যায়। আবার অর্থনীতি বেশি শ্লথ হয়ে গেলে ফেড তখন সুদহার কমিয়ে দেয়। যেমন ২০০৮ সালের মন্দার পর কমাতে কমাতে প্রায় শূন্য হারে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ফেডারেল রিজার্ভ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি এখন কম। তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কম থাকায় চাপটি কমই থাকবে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও যথেষ্ট ভালো। সুতরাং এখন সুদহার কম থাকায় মানুষ হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে, যা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। ফলে এখনই সুদহার বাড়ানোর উপযুক্ত সময়।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুদহার বাড়ানোর ফলে শক্তিশালী থাকা ডলার আরও শক্তিশালী হবে। আর এতে অনেক দেশ ও কোম্পানি ঋণ নিতে সমস্যায় পড়বে। আর এতে ঝামেলায় পড়বে ইউরোপ। মন্দাকবলিত ইউরোপ এখন ঋণ নেওয়া আরও সহজ করতে চাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র নিল উল্টো পথ।
তবে খুব প্রত্যাশিতভাবেই ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব দেখা দিয়েছে। ইউরোপিয়ান শেয়ারের দর কিছুটা বেড়েছে। ডলারের মানও বেড়েছে। আবার লন্ডন আন্তবাজার সুদহার বা লাইবর ২০০৯ সালের পর বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ। তবে তেলের দাম কমেছে। এখন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ইউরোপ ও উঠতি অর্থনীতি আরও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তার জন্য। তবে শেষ কথা হচ্ছে সস্তায় বিনিয়োগের দিন আপাতত শেষ।
সুদহার সামান্য বাড়লেও বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব অতটা সামান্য হবে না। এর প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকা মার্কিন অর্থনীতিকে একটু টেনে ধরার জন্যই সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে অবশ্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়বে। আর যুক্তরাষ্ট্র সেটাই চায়।
গত বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেন এই সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এর আগে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি বা এফওএমসি এ নিয়ে দুই দিন বৈঠক করেছে। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে আর এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কমিটি মনে করছে, এই অবস্থায় ফেডারেল ফান্ডের সুদহার সামান্য বাড়ানোই যথাযথ হবে।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়েই। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত। জরিপেও দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই নিশ্চিত ছিল যে এই ঘোষণা আসবে। ফলে সব পক্ষই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে এবং বাজারও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সর্বশেষ সুদের হার বাড়িয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর তা কমে ২০০৮ সালে শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছায়। সুদ হার ছিল দশমিক ২৫ শতাংশ, যাকে প্রায় শূন্যই বলা যায়। বড় ধরনের মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্র শূন্য সুদহারের নীতি নিয়েছিল। এখন দেশটি মনে করছে সেই নীতি থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের আশা, এবার প্রবৃদ্ধি আরেকটু বাড়বে, হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রায় এক দশক আগে ফেডারেল রিজার্ভের সে সময়ের চেয়ারম্যান বেন বার্নানকে সুদহার শূন্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রত্যাশা ছিল, এর ফলে মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসবে, ঋণ সস্তা হবে, উৎপাদন বাড়বে, অর্থনীতি চাঙা হবে। এটা সত্যি, তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। ইউরোপ মন্দা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে। চীন ও অন্যান্য উঠতি অর্থনীতির দেশও নানা সংকটে আছে। এ অবস্থায় মূলত ২০১৩ সাল থেকেই মুদ্রানীতি বদলের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে সুদহার বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছিল। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে বাড়ানোর কথাও হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ের অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আর এ পথে এগোয়নি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। বিশেষ করে গত আগস্টে চীন হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের দুই দফা অবমূল্যায়নের পর বিশ্বজুড়ে নতুন করে মুদ্রাযুদ্ধ শুরু হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে কিছুটা দ্বিধা থাকায় পিছিয়ে যায় ফেডারেল রিজার্ভ।
মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুদ্রানীতি পরিচালনা করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। এর একটি হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান, অন্যটি স্থিতিশীল মূল্যস্তর। সাধারণত অর্থনীতি যখন দুর্বল থাকে তখন মূল্যস্ফীতিও কমতে থাকে। আবার অর্থনীতি যখন সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের দিকে যায় তখন মজুরি বাড়ানোর চাপ তৈরি হয় এবং এতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। অর্থনীতি খুব দ্রুতগতিতে এগোতে থাকলে ফেডারেল রিজার্ভ তার বেঞ্চমার্ক সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তাতে মানুষ খরচ কমিয়ে দেয় এবং সঞ্চয় বেশি করে। এর ফলে অর্থনীতি একটু শ্লথ হয় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমে যায়। আবার অর্থনীতি বেশি শ্লথ হয়ে গেলে ফেড তখন সুদহার কমিয়ে দেয়। যেমন ২০০৮ সালের মন্দার পর কমাতে কমাতে প্রায় শূন্য হারে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ফেডারেল রিজার্ভ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি এখন কম। তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কম থাকায় চাপটি কমই থাকবে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও যথেষ্ট ভালো। সুতরাং এখন সুদহার কম থাকায় মানুষ হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে, যা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। ফলে এখনই সুদহার বাড়ানোর উপযুক্ত সময়।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুদহার বাড়ানোর ফলে শক্তিশালী থাকা ডলার আরও শক্তিশালী হবে। আর এতে অনেক দেশ ও কোম্পানি ঋণ নিতে সমস্যায় পড়বে। আর এতে ঝামেলায় পড়বে ইউরোপ। মন্দাকবলিত ইউরোপ এখন ঋণ নেওয়া আরও সহজ করতে চাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র নিল উল্টো পথ।
তবে খুব প্রত্যাশিতভাবেই ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব দেখা দিয়েছে। ইউরোপিয়ান শেয়ারের দর কিছুটা বেড়েছে। ডলারের মানও বেড়েছে। আবার লন্ডন আন্তবাজার সুদহার বা লাইবর ২০০৯ সালের পর বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ। তবে তেলের দাম কমেছে। এখন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ইউরোপ ও উঠতি অর্থনীতি আরও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তার জন্য। তবে শেষ কথা হচ্ছে সস্তায় বিনিয়োগের দিন আপাতত শেষ।
No comments