হত্যা মামলার আসামির পক্ষে বিলবোর্ড!
চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে বিশাল এক বিলবোর্ড। এক কোণে বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট ছবি, তার ঠিক পাশেই প্রধানমন্ত্রীর ছবি আরও ছোট। কিন্তু ডান পাশে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ছবি সে তুলনায় বিশাল। বাঁ পাশের ছবিটা বিশালতর। বিলবোর্ডের ইনিই নায়ক। এস এম শফিকুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে ওই বিলবোর্ডে। তিনি ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক’, ‘আ জ ম নাছির ভাইয়ের একনিষ্ঠ কর্মী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক, সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক’! কিন্তু চট্টগ্রামের পুলিশের ভাষ্য, এই ব্যক্তি একটা হত্যা মামলা এবং হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে নয়টা মামলার আসামি। তাঁর সম্পর্কে পুলিশের দেওয়া তথ্য ভয়ংকর। মেহেদী হাসান নামে চট্টগ্রামের যুবলীগের এক কর্মী গত ৪ জুন থানায় জিডি করে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন যে শফিকুল ও তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে খুন করাতে পারেন। ১ সেপ্টেম্বর মেহেদী সত্যিই খুন হয়ে যান। মেহেদীর স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন শফিকুলই।
শফিকুল একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে, অথচ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সেগুলো সরায়নি। বিলবোর্ডে মেয়রের ছবি আছে বলেই কি? চট্টগ্রাম নগরে অনুমোদন ছাড়াই কি যেকোনো বক্তব্যসংবলিত বিলবোর্ড যথেচ্ছ সংখ্যায় টাঙানো যায়? ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নাম ব্যবহার করে খুনি-সন্ত্রাসীদের আইনের ঊর্ধ্বে বিচরণ ও বারবার অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি পুরোনো। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তির জন্য যে এগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর, এমন উপলব্ধিও তাদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। পুলিশ বলছে, শফিকুল এখন দেশে নেই। কিন্তু হত্যা মামলাসহ ১০টা মামলার আসামি একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীকে কেন আগেই গ্রেপ্তার করা হয়নি? দলীয় বা স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থে আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটানো অন্যায়। শফিকুলের পক্ষে বিলবোর্ডগুলো আইনের শাসনকে বিদ্রূপ করছে।
No comments