সম্পাদক, প্রতিবেদক সবাই পথশিশু
পত্রিকার সম্পাদকীয় বৈঠক নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে একদল পথশিশু। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক নিয়ে সবার মধ্যেই বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। কারণ যেনতেন সংবাদপত্র নয়, এটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধারার একটি কাগজ। বালকনামা নামে ৮ পৃষ্ঠার এ ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রতিবেদক- সবাই পথশিশু। ২০০৩ সালে মাত্র ৩৫ জন প্রদায়ক নিয়ে দিল্লিতে যাত্রা শুরু করে বালকনামা। বর্তমানে শিশু-কিশোরদের কাছে এর জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে গেছে যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পথশিশু এখানে লেখা পাঠায়। হিন্দিতে ছাপা পত্রিকাটি প্রকাশের দায়িত্বে রয়েছে চেতনা নামে একটি অলাভজনক সংস্থা। পত্রিকা প্রকাশ হওয়ার পর তারা নামমাত্র মূল্যে সেগুলো বিক্রি করে। প্রতি কপি এক রুপিতে বিক্রির পর সামান্য যা লাভ হয়, সেগুলো তারা ব্যয় করে পথশিশুদের কল্যাণে। বালকনামায় শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতনসহ যেসব অপরাধ হাজার হাজার ভারতীয় বস্তির শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে সেসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। যেমন একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উত্তর ভারতের কনকনে শীতে শিশু কীভাবে টিকে থাকতে পারে,
তার বিশদ বিবরণ দেয়া হয়। এ শীতে কীভাবে গরম থাকা যায়, তা নিয়ে মূলধারার পত্রিকাগুলোতে প্রচুর খবর থাকে। কিন্তু যেসব শিশু রাস্তায় বা ব্রিজের নিচে ঘুমায়, তাদের বিষয়ে আসলে কিছুই বলা হয় না। কিন্তু বালকনামার প্রতিবেদনে পথশিশুদের নির্দেশনা দেয়া হয় কঠিন শীতের মধ্যে তারা কোথায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আশ্রয় পেতে পারে। এক হিসাব অনুযায়ী, ভারতে এক কোটিরও বেশি পথশিশু রয়েছে। ফলে এসব পথশিশুর একটা বড় অংশের পছন্দের পত্রিকা হয়ে উঠেছে বালকনামা। পত্রিকার একজন প্রতিবেদক ১৭ বছরের বিকাশ কুমার। তার ভাষায়, ‘যদি কোনো বলিউড তারকাকে কুকুর কামড় দেয়, সেটা ভারতের সব টেলিভিশন ও পত্রিকায় ব্রেকিং নিউজ হয়ে যায়। অথচ যদি কোনো পথশিশু রেলের প্লাটফর্মে বা দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা যায়, সেটাকে কেউ কিছু মনে করে না। আমরা চাই, পথশিশুদের অন্য সব নাগরিকের মতোই সমানভাবে বিবেচনা করা হোক। তাদের কথা যেন শোনা হয়, এজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বালকনামার সম্পাদক হিসেবে একসময় কাজ করতেন সানো। বর্তমানে তিনি এ প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। সানো বলেন, যখনই আমরা সম্পাদকীয় বৈঠকে বসি, তখন আমরা কঠোর পরিশ্রম করি প্রথম পৃষ্ঠায় কী সংবাদ ছাপা হবে, তা নির্ধারণ করতে। অন্য কোথাও যেসব খবর কাভার করা হয় না, সেসব অসাধারণ খবর আমাদের সরবরাহ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন আমাদের রিপোর্টাররা। বালকনামার সম্পাদক ১৮ বছরের চাঁদনি। এক বছর আগে তিনি যখন পত্রিকার দায়িত্ব নেন তখন প্রচার সংখ্যা ছিল চার থেকে পাঁচ হাজার কপি। আর বর্তমানে এর পাঠকসংখ্যা লক্ষাধিক। বিবিসি, আলজাজিরা।
No comments