দ্বিজেন শর্মা: আমাদের মানববৃক্ষ by মফিদুল হক
দ্বিজেন শর্মা |
দ্বিজেন
শর্মার বয়স বাড়ছে, আশি বছরের দুয়ার টপকেছেন বছর পাঁচেক আগে, তারপরও
বুড়িয়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ তাঁর মধ্যে নেই, ফুরিয়ে যাওয়ার তো নয়ই।
চিরতরুণ অভিধা তাঁর জন্য মানানসই, আর প্রকৃতিবিদ হিসেবে তাঁকে চিরসবুজ
সত্তারূপে অভিহিত করেন অনেকেই। পাতার উদ্গম ও ঝরে যাওয়া, আবারও পত্রপুষ্পে
বৃক্ষের পল্লবিত হওয়া—এ তো প্রকৃতির স্বভাবধর্ম, কিন্তু মানবের জীবনচক্রে
চিরসবুজ থাকতে পারা এক কঠিন সাধনা, যেটা দ্বিজেন শর্মা সম্পাদন করতে পারেন
স্বভাবধর্মের মতোই, প্রায় প্রাকৃতিকভাবে। তাঁর কাছে আশ্রয়-প্রশ্রয়-প্রেরণা
পেয়েছে নবীনেরা সবচেয়ে বেশি, প্রজন্মের পর প্রজন্মজুড়ে। এমনটি সাধারণত
দেখা যায় সফল শিক্ষকদের ক্ষেত্রে, দ্বিজেন শর্মা শিক্ষকতা করেছেন বটে, তবে
সেটা ছিল স্বল্পকালের জন্য, যৌবনের সূচনায়। নটর ডেম কলেজে যারা তাঁর ছাত্র
ছিল, তারা জীবনে কখনো তাঁকে বিস্মৃত হতে পারেনি।
সেই ছাত্ররা এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কর্মের নানা ক্ষেত্রে, তবে মতিঝিলে কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা দিঘল গাছের সারি পাতা দুলিয়ে নিরন্তর বলে চলেছে দ্বিজেন শর্মার কথা, যিনি সযত্নে রোপণ ও লালন করেছিলেন এসব গাছ। পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজেও আছে এমনই কত গাছ দ্বিজেন শর্মার রোপিত। আরও অসংখ্য গাছÿ তিনি রোপণ করেছিলেন শহরে, ভাগ্যবান বন্ধু কিংবা পরিচিতজন ষাটের দশকে যখন বিকাশমান শহরে নিজেদের আবাস নির্মাণ করেছেন, তখন গৃহসংলগ্ন জমিতে কোন কোন গাছ রোপণ করা হবে, সোৎসাহে সেই পরিকল্পনা করে দিয়েছেন তিনি। চারা এনে বপন করেছেন বৃক্ষ।
তারপর সেই গাছ বড় হয়েছে, পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে, আবাস প্রসারিত হয়েছে এবং যথারীতি কাটা পড়েছে গাছ। ষাটের দশকের সবুজ ঢাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তা কিংবা উদ্যানে পাতামেলা গাছগাছালির বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে অসাধারণ এক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি, শ্যামলী নিসর্গ। উন্নয়নের স্রোতে গা ভাসানো শহর সেসব গাছ প্রায় সবংশে নিধন করলেও নগরায়ণের বেদনা ও শ্রীহরণের দলিল হয়ে রয়েছে এই বই।
দ্বিজেন শর্মার ভালোবাসার জায়গাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়েছে নানাভাবে। সিলেটের বড়লেখায় প্রায় অরণ্যঘেরা ছিল তাঁর বাল্যজীবন, ভিষক বাবার কাছ থেকেই বুঝি পেয়েছিলেন কেবল অরণ্য নয়, অরণ্যের প্রতিটি গাছপালা তরুলতা পশুপাখির প্রতি তীব্র পর্যবেক্ষণ ও প্রবল ভালোবাসার তাগিদ। সেই অরণ্য আজ উধাও, শ্রীমন্ত পরিবেশের সামান্যই এখন পড়ে আছে, সামাজিক বিলোড়ন মানববসতির গোড়া ধরেও টান দিয়েছে। দেশভাগের ফলে উন্মূল হয়েছে কত-না মানুষ, সেই বেদনা তো অন্তর্লীন হয়ে আছে দ্বিজেন শর্মার চৈতন্যে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেখেছেন কাছের অনেক মানুষের নিষ্ঠুর প্রাণসংহার। তারপর বিজয়ী ও বিধ্বস্ত দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী সাম্যমূলক চেতনায়, দ্বিজেন শর্মাও সপরিবারে ঠাঁই গড়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত দেশে, সাম্যের স্বপ্নাবেশ নিয়ে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বদেশের সিক্ত হওয়ার প্রয়াস রক্তাক্ত আঘাতে টলে উঠল, সমাজতন্ত্র নির্মাণ প্রয়াসও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়। এমন সব বিপুল পরিবর্তনের মধ্যে আছেন দ্বিজেন শর্মা, আবার দূরত্ব বজায় রেখে অবলোকন করতে পারেন সবকিছু। ফলে জীবন ও সভ্যতার টালমাটাল পথপরিক্রমণের মধ্যে অটল রয়েছেন তিনি, জীবনবিকাশ সাধনায় কোনো ছেদ টানা বা এর থেকে অব্যাহতি নেওয়ার অবসাদ তাঁর মধ্যে দেখা যায় না, বরং আরও প্রবল জীবনবাদী হিসেবে তিনি বরণ করেন বাস্তবতা। জীবনবাদী বটে, তবে সেই সঙ্গে একধরনের নিস্পৃহতাও বহন করেন দ্বিজেন শর্মা, যে নিস্পৃহতা বিজ্ঞানীর, সবকিছু পর্যবেক্ষণ-নিরীক্ষণ-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাচাই করার মানস।
একেবারে যৌবনে, ষাটের দশকের প্রথম ভাগে, ঢাকায় তাঁর বন্ধুবৃত্ত আবদুল হালিম, আলী আনোয়ার, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ্, খ ম আখতারুজ্জামান প্রমুখ মিলে সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজতন্ত্র ইত্যাকার বিষয়ে মজে ছিলেন তুমুলভাবে। সেই সময় তাঁদের কাছে বিশেষভাবে আদৃত হয়েছিল ব্রিটিশ পদার্থবিদ ও ঔপন্যাসিক সি পি স্নোর গ্রন্থ¯টু কালচারস অ্যান্ড দ্য সায়েন্টিফিক রেভল্যুশন। সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মধ্যে দূরত্ব সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকারক, সেটা মেলে ধরে উভয় সংস্কৃতির সম্মিলন কামনা করেছিলেন সি পি স্নো। এই দুইয়ের মিলন দ্বিজেন শর্মারও আজীবনের সাধনা। এমনই সম্মিলনের অনুপম প্রকাশক তাঁর প্রথম গ্রন্থ শ্যামলী নিসর্গ, উদ্ভিদবিজ্ঞানীর হ্যান্ডবুক যখন হয়ে ওঠে সার্থকনামা সাহিত্যগ্রন্থ এবং তাঁর পরবর্তী সব বই এই চেতনারই বাহক হয়েছে।
২০১৪ সালে বিলেতে অবসর কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় দ্বিজেন শর্মা আমার জন্য নিয়ে এসেছিলেন ‘একুশ শতকের ঠিকুজি’ উপশিরোনামে প্রকাশিত হালফিল আলোচিত গ্রন্থ¯ অ্যাডাম স্মিথ ইন বেইজিং; লেখক গিওভান্নি আরিথি। বইটি তিনি নিজে পড়েছেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, পাতায় পাতায় পেনসিলের দাগ ও মার্জিনে মন্তব্য সেই সাক্ষ্য বহন করছে এবং এখন অর্পণ করেছেন আমাকে। বিশ্ব সমাজ ও অর্থনীতি যে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটা গত আড়াই শ বছরের ইতিহাসের নিরিখে বিচার করেছেন লেখক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালের উদ্ভব, কলোনি, পাশ্চাত্য বিশ্ব, সমাজতন্ত্র ও তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব এবং সবশেষে পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক সংকট বিশ্লেষ করে লেখক চীন ও পূর্ব এশিয়ার জাগরণের ভবিষ্যৎ তাৎপর্য বিচার করেছেন। লেখক হয়তো কিছুটা বাড়তি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নতুন এই বিকাশ ঘিরে, তিনি কামনা করেছেন পাশ্চাত্যের উন্নয়ন মডেলের সঙ্গে প্রাচ্যধারার সমন্বয়, যে নন-ক্যাপিটালিস্ট মার্কেট ইকোনমিতে প্রকৃতি রক্ষার বিষয় পাবে গুরুত্ব এবং যার ফলে অ্যাডাম স্মিথ কথিত বিশ্ব সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে অধিকতর সাম্য অর্জিত হবে, ওয়েলথ অব দ্য নেশনসের ভাগীদার হবে নেশনস অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
দ্বিজেন শর্মার পঠন-পাঠন ও মননের বিস্তার বুঝিয়ে দেয় পরিবর্তমান সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতায় নিজেকে সদা পাল্টে নিতে কতটা উদ্গ্রীব তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর অবলম্বন হৃদয় ও মনন, মননের চর্চায় তাঁর পরিবর্তনময়তার বিরাম নেই, আর হৃদয়বৃত্তিতে তিনি সর্বত্র সতত অপরিবর্তনীয়, একইভাবে উদার ও ভালোবাসায় আপ্লুত। তাই তো দ্বিজেন শর্মা থাকতে পারেন বৃক্ষসম চিরসবুজ। কাজটি কঠিন, কিন্তু যিনি পারেন, তিনি আপনাতেই পারেন। জয় হোক আমাদের এই মানববৃক্ষের।
মফিদুল হক: লেখক।
সেই ছাত্ররা এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কর্মের নানা ক্ষেত্রে, তবে মতিঝিলে কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা দিঘল গাছের সারি পাতা দুলিয়ে নিরন্তর বলে চলেছে দ্বিজেন শর্মার কথা, যিনি সযত্নে রোপণ ও লালন করেছিলেন এসব গাছ। পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজেও আছে এমনই কত গাছ দ্বিজেন শর্মার রোপিত। আরও অসংখ্য গাছÿ তিনি রোপণ করেছিলেন শহরে, ভাগ্যবান বন্ধু কিংবা পরিচিতজন ষাটের দশকে যখন বিকাশমান শহরে নিজেদের আবাস নির্মাণ করেছেন, তখন গৃহসংলগ্ন জমিতে কোন কোন গাছ রোপণ করা হবে, সোৎসাহে সেই পরিকল্পনা করে দিয়েছেন তিনি। চারা এনে বপন করেছেন বৃক্ষ।
তারপর সেই গাছ বড় হয়েছে, পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে, আবাস প্রসারিত হয়েছে এবং যথারীতি কাটা পড়েছে গাছ। ষাটের দশকের সবুজ ঢাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তা কিংবা উদ্যানে পাতামেলা গাছগাছালির বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে অসাধারণ এক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি, শ্যামলী নিসর্গ। উন্নয়নের স্রোতে গা ভাসানো শহর সেসব গাছ প্রায় সবংশে নিধন করলেও নগরায়ণের বেদনা ও শ্রীহরণের দলিল হয়ে রয়েছে এই বই।
দ্বিজেন শর্মার ভালোবাসার জায়গাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়েছে নানাভাবে। সিলেটের বড়লেখায় প্রায় অরণ্যঘেরা ছিল তাঁর বাল্যজীবন, ভিষক বাবার কাছ থেকেই বুঝি পেয়েছিলেন কেবল অরণ্য নয়, অরণ্যের প্রতিটি গাছপালা তরুলতা পশুপাখির প্রতি তীব্র পর্যবেক্ষণ ও প্রবল ভালোবাসার তাগিদ। সেই অরণ্য আজ উধাও, শ্রীমন্ত পরিবেশের সামান্যই এখন পড়ে আছে, সামাজিক বিলোড়ন মানববসতির গোড়া ধরেও টান দিয়েছে। দেশভাগের ফলে উন্মূল হয়েছে কত-না মানুষ, সেই বেদনা তো অন্তর্লীন হয়ে আছে দ্বিজেন শর্মার চৈতন্যে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেখেছেন কাছের অনেক মানুষের নিষ্ঠুর প্রাণসংহার। তারপর বিজয়ী ও বিধ্বস্ত দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী সাম্যমূলক চেতনায়, দ্বিজেন শর্মাও সপরিবারে ঠাঁই গড়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত দেশে, সাম্যের স্বপ্নাবেশ নিয়ে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বদেশের সিক্ত হওয়ার প্রয়াস রক্তাক্ত আঘাতে টলে উঠল, সমাজতন্ত্র নির্মাণ প্রয়াসও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়। এমন সব বিপুল পরিবর্তনের মধ্যে আছেন দ্বিজেন শর্মা, আবার দূরত্ব বজায় রেখে অবলোকন করতে পারেন সবকিছু। ফলে জীবন ও সভ্যতার টালমাটাল পথপরিক্রমণের মধ্যে অটল রয়েছেন তিনি, জীবনবিকাশ সাধনায় কোনো ছেদ টানা বা এর থেকে অব্যাহতি নেওয়ার অবসাদ তাঁর মধ্যে দেখা যায় না, বরং আরও প্রবল জীবনবাদী হিসেবে তিনি বরণ করেন বাস্তবতা। জীবনবাদী বটে, তবে সেই সঙ্গে একধরনের নিস্পৃহতাও বহন করেন দ্বিজেন শর্মা, যে নিস্পৃহতা বিজ্ঞানীর, সবকিছু পর্যবেক্ষণ-নিরীক্ষণ-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাচাই করার মানস।
একেবারে যৌবনে, ষাটের দশকের প্রথম ভাগে, ঢাকায় তাঁর বন্ধুবৃত্ত আবদুল হালিম, আলী আনোয়ার, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ্, খ ম আখতারুজ্জামান প্রমুখ মিলে সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজতন্ত্র ইত্যাকার বিষয়ে মজে ছিলেন তুমুলভাবে। সেই সময় তাঁদের কাছে বিশেষভাবে আদৃত হয়েছিল ব্রিটিশ পদার্থবিদ ও ঔপন্যাসিক সি পি স্নোর গ্রন্থ¯টু কালচারস অ্যান্ড দ্য সায়েন্টিফিক রেভল্যুশন। সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মধ্যে দূরত্ব সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকারক, সেটা মেলে ধরে উভয় সংস্কৃতির সম্মিলন কামনা করেছিলেন সি পি স্নো। এই দুইয়ের মিলন দ্বিজেন শর্মারও আজীবনের সাধনা। এমনই সম্মিলনের অনুপম প্রকাশক তাঁর প্রথম গ্রন্থ শ্যামলী নিসর্গ, উদ্ভিদবিজ্ঞানীর হ্যান্ডবুক যখন হয়ে ওঠে সার্থকনামা সাহিত্যগ্রন্থ এবং তাঁর পরবর্তী সব বই এই চেতনারই বাহক হয়েছে।
২০১৪ সালে বিলেতে অবসর কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় দ্বিজেন শর্মা আমার জন্য নিয়ে এসেছিলেন ‘একুশ শতকের ঠিকুজি’ উপশিরোনামে প্রকাশিত হালফিল আলোচিত গ্রন্থ¯ অ্যাডাম স্মিথ ইন বেইজিং; লেখক গিওভান্নি আরিথি। বইটি তিনি নিজে পড়েছেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, পাতায় পাতায় পেনসিলের দাগ ও মার্জিনে মন্তব্য সেই সাক্ষ্য বহন করছে এবং এখন অর্পণ করেছেন আমাকে। বিশ্ব সমাজ ও অর্থনীতি যে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটা গত আড়াই শ বছরের ইতিহাসের নিরিখে বিচার করেছেন লেখক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালের উদ্ভব, কলোনি, পাশ্চাত্য বিশ্ব, সমাজতন্ত্র ও তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব এবং সবশেষে পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক সংকট বিশ্লেষ করে লেখক চীন ও পূর্ব এশিয়ার জাগরণের ভবিষ্যৎ তাৎপর্য বিচার করেছেন। লেখক হয়তো কিছুটা বাড়তি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নতুন এই বিকাশ ঘিরে, তিনি কামনা করেছেন পাশ্চাত্যের উন্নয়ন মডেলের সঙ্গে প্রাচ্যধারার সমন্বয়, যে নন-ক্যাপিটালিস্ট মার্কেট ইকোনমিতে প্রকৃতি রক্ষার বিষয় পাবে গুরুত্ব এবং যার ফলে অ্যাডাম স্মিথ কথিত বিশ্ব সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে অধিকতর সাম্য অর্জিত হবে, ওয়েলথ অব দ্য নেশনসের ভাগীদার হবে নেশনস অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
দ্বিজেন শর্মার পঠন-পাঠন ও মননের বিস্তার বুঝিয়ে দেয় পরিবর্তমান সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতায় নিজেকে সদা পাল্টে নিতে কতটা উদ্গ্রীব তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর অবলম্বন হৃদয় ও মনন, মননের চর্চায় তাঁর পরিবর্তনময়তার বিরাম নেই, আর হৃদয়বৃত্তিতে তিনি সর্বত্র সতত অপরিবর্তনীয়, একইভাবে উদার ও ভালোবাসায় আপ্লুত। তাই তো দ্বিজেন শর্মা থাকতে পারেন বৃক্ষসম চিরসবুজ। কাজটি কঠিন, কিন্তু যিনি পারেন, তিনি আপনাতেই পারেন। জয় হোক আমাদের এই মানববৃক্ষের।
মফিদুল হক: লেখক।
No comments