বিএসএমএমইউতে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট by সিরাজুস সালেকিন
দেশে কম খরচে উন্নত সেবার নির্ভরযোগ্য
প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)
হাসপাতাল। সরকারি এ হাসপাতালের চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও ঘাটতি
রয়েছে ব্যবস্থাপনায়। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে চলাফেরা করেন চিকিৎসক ও
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রোগী পরিবহনে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না
হওয়ায় এখানে আসা রোগীদের ঘিরে তৈরি হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট।
হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা মিলে গড়ে তুলেছেন এ সিন্ডিকেট। এ
সিন্ডিকেটের বাইরে কোন অ্যাম্বুলেন্সের রোগী পরিবহনের সুযোগ নেই এ হাসপাতাল
থেকে। তাদের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলে জরিমানা হিসাবে দিতে হয় বাড়তি
টাকা। এ চক্রের কাছে অসহায় খোদ হাসপাতাল প্রশাসনও। বেশ কয়েক দফা তাদের
বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও কাজ হয়নি। বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের সচল অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে চারটি।
কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করা হয় হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের
পরিবহনের কাজে। এ ছাড়া মন্ত্রী, এমপি ও ভিআইপিদের অনুরোধে হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকে। এ অ্যাম্বুলেন্সগুলো
সাধারণ রোগীদের ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে হাসপাতালের আশপাশে অবস্থানরত
প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু এ
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। যাদের কাছে প্রতিনিয়ত
হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। নোয়াখালীর মাইজদী থেকে চিকিৎসা
নিতে এসেছিলেন সবুর মিয়া। গত সোমবার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অবস্থায়
তার মৃত্যু হয়। নোয়াখালী থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স লাশ নিতে এলে বাদ সাধে
হাসপাতালের গেটের দায়িত্বে থাকা আনসার। তার দাবি, বাইরের অ্যাম্বুলেন্স লাশ
নিতে এলে ভাড়ার অর্ধেক সিন্ডিকেটকে দিতে হবে। অথবা সিন্ডিকেটের
অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে। পরে রোগীর স্বজনরা তিন হাজার টাকা দিয়ে
নিজেদের এলাকার অ্যাম্বুলেন্সে করেই লাশ নিয়ে যান। গতকাল হাসপাতালে সরজমিন
ঘুরে একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। হাসপাতালের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এবং
উত্তরদিকে লাইন করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বগুড়া
থেকে ভাইকে নিয়ে ওই হাসপাতালে এসেছিলেন আবদুল মালেক। চিকিৎসা শেষে নিজেদের
প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স করে রোগীকে বাসায় নিতে চাইলে নিষেধ করেন
কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। তারা হাসপাতালে অবস্থানরত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স
ভাড়া করার পরামর্শ দেন। পরে একজন আনসার সদস্য নিজেই ফোন করে একজন
অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে ডেকে আনেন। পরে নয় হাজার টাকায় বগুড়া যাওয়ার জন্য
রাজি হন তাহের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ওই ড্রাইভার। ওই ড্রাইভারের সঙ্গে এ
প্রতিবেদকের কথা হয়। তার ভাষ্য, প্রত্যেকটা জায়গায় একটা সিন্ডিকেট আছে।
অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা এখানে ব্যবসা করেন। এখানে যারা চাকরি করেন তাদেরও
একটা সিন্ডিকেট আছে। আনসারদেরও একটা সিন্ডিকেট আছে। ঢাকা শহরে এক
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সকে অন্য হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি দেয় না। পিজির
গাড়ি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে রোগী বের করতে পারবে না। আবার ঢাকা মেডিক্যালের
গাড়ি পিজি থেকে রোগী বের করতে পারবে না। আর পিজির নিজস্ব যে অ্যাম্বুলেন্স
তা অফিসাররা ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। গতকাল আনসারদের গাড়ি
রেজিস্ট্র্রার খাতায় বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীর নাম ও মোবাইল
নম্বর লেখা দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে মঈন, রফিক, সাহিন, তাহেরের নাম ও তাদের
মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। এ ছাড়া কয়েকজন আনসার সদস্যের মোবাইলে এসব নম্বর
পাওয়া গেছে। যারা অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করতেই নিজের উৎসাহে ফোন দিতে শুরু
করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সক্রিয় এ
হাসপাতাল ঘিরে। ওয়ার্ড বয় থেকে গেটে দায়িত্বরত আনসার পর্যন্ত সক্রিয়
সিন্ডিকেটের বিস্তৃতি। কোন রোগী মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর গেটে
কর্তব্যরত আনসারের কাছে চলে যায়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের জানানো
হয়। ওই লাশ বাইরের কোন অ্যাম্বুলেন্স বহন করতে পারবে না। সিন্ডিকেটের বাইরে
কেউ লাশ বহন করতে চাইলে তার ভাড়ার অর্ধেক সিন্ডিকেটকে দিতে হবে। কিছুদিন
আগে এ চক্রের ১১ জন ড্রাইভারকে ধরে পুলিশে দেয় প্রশাসন। দুই মাস হাজতবাসের
পর তারা আবার ফিরে এসে ব্যবসায় নামে।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুল মজিদ ভূঁইয়া এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, অন্য হাসপাতালের মতো বিএসএমএমইউতে অ্যাম্বুলেন্সের রোগী পরিবহনের সুযোগ নেই। যে চারটি অ্যাম্বুলেন্স চালু রয়েছে, সেগুলো হরতালের দিনসহ বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পার্কিং সম্পূর্ণ নিষেধ। আনসাররা রোগীদের স্বার্থেই অ্যাম্বুলেন্সের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করে থাকে। কোন ওয়ার্ড বয় বা আনসারের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুল মজিদ ভূঁইয়া এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, অন্য হাসপাতালের মতো বিএসএমএমইউতে অ্যাম্বুলেন্সের রোগী পরিবহনের সুযোগ নেই। যে চারটি অ্যাম্বুলেন্স চালু রয়েছে, সেগুলো হরতালের দিনসহ বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পার্কিং সম্পূর্ণ নিষেধ। আনসাররা রোগীদের স্বার্থেই অ্যাম্বুলেন্সের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করে থাকে। কোন ওয়ার্ড বয় বা আনসারের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
No comments