স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে টানাপড়েন by কাজী সোহাগ
আনুমানিক
৫ হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ
কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। পাল্টাপাল্টি
অভিযোগ-অনুযোগও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে। দুইপক্ষের অনড় অবস্থানে দীর্ঘমেয়াদি
হচ্ছে সরকারের বড় রাজস্ব আয়ের ওই নিলাম। অপারেটরদের বক্তব্য নিলাম নিয়ে
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে বিটিআরসি। সিমকার্ড
প্রতিস্থাপন কর সংক্রান্ত মামলার সমাধান, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ বিধিমালার
সংস্কার, তরঙ্গ ব্যবহারে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ ঝুলে থাকা আরও কয়েকটি
বিষয়ের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা নিলামে অংশ নেবে না। এসব বিষয়ে সমাধানে
চার অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের মূল প্রতিষ্ঠান দুই
দফায় সরকারকে চিঠিও দিয়েছে। এ তালিকায় ছিলেন গ্রামীণফোনের পক্ষে টেলিনরের
প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন ফ্রেডরিক বাকসাস,
রবির পক্ষে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও দাতো শ্রি
জামালউদ্দিন ইব্রাহিম, বাংলালিংকের পক্ষে ভিম্পেলকমের সিইও জো লানডার,
এয়ারটেল বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় এয়ারটেলের চেয়ারম্যান সুনীল মিত্তাল।
অপরদিকে বিটিআরসি আরও রাজস্বের আয়ের আশায় সময়ক্ষেপণ করছে। এরই মধ্যে তিনদফা
নিলাম পেছানো হয়েছে। বিটিআরসির অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার কারণে এমনটি হয়েছে
বলে জানান টেলিকম বিশেজ্ঞরা। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল
কান্তি বোসের সঙ্গে অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করলেও
সমাধান হয়নি। মোবাইল অপারেটরদের অনীহার কারণে কয়েক দফা নিলামের তারিখ
পাল্টানো হলেও এখন বিটিআরসি বলছে নিলাম নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। এরই
আলোকে আরও দুটি মোবাইল অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। সংশোধিত
নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
বিটিআরসির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১ হাজার ৮০০ ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ
তরঙ্গের নিলাম সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের উদ্দেশে এর নীতিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ
নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জারি করা আগের নিলাম
প্রক্রিয়াটিও বাতিল করা হয়েছে। নতুন নিলামে অংশ নেয়ার তারিখ ও সংশোধিত
নীতিমালা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। বাতিল হওয়া নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার
শেষ তারিখ ছিল ৫ মে। মূলত নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে
অপারেটরদের পাঠানো চিঠির পরই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বিটিআরসির সব আয়োজন। চিঠিতে
অপারেটররা জানান, ২০১৩ সালে থ্রি-জি তরঙ্গ নিলামের সময় সরকারের পক্ষে
বিটিআরসি কয়েকটি সমস্যা সমাধানে অপারেটরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিমকার্ড প্রতিস্থাপন কর-সংক্রান্ত
মামলার সমাধান, নিলামে বিক্রি হওয়া তরঙ্গমূল্যের ওপর ধার্য করা মূল্য
সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কার, তরঙ্গ
ব্যবহারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, কর কাঠামোর সংস্কার ইত্যাদি। উল্লিখিত
সমস্যাগুলোর একটিও এখন পর্যন্ত সমাধান করা হয়নি। তাই তরঙ্গ নিলামে অংশ নিয়ে
নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। সংশ্লিষ্টরা
জানান, পুরনো নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব অপারেটরের জিএসএম ব্যান্ডের ২০
মেগাহার্টজের (৯০০ মেগাহার্টজ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ) তরঙ্গ রয়েছে তারা এ
নিলামে অংশ নিতে পারবে না। ওই নীতিমালা অনুযায়ী মোবাইল ফোন অপারেটর
গ্রামীণফোন ওই নিলামে অংশ নিতে পারতো না। অপারেটরদের মধ্যে শুধু
গ্রামীণফোনেরই ২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ রয়েছে (৩২ মেগাহার্টজ)। এদিকে
প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালায় যাদের ২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ রয়েছে তাদেরও
নিলামে অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ১ হাজার ৮০০
মেগাহার্টজের নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা
হয়েছে ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৩২ কোটি টাকা (বর্তমান বাজারদরে)। ২ হাজার
১০০ মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭০ কোটি।
জিএসএম বা টু-জির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অপারেটররা ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ও
থ্রি-জি নেটওয়ার্কের জন্য ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে।
বিটিআরসির কাছে বর্তমানে ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের বাড়তি ১০ দশমিক ৬
মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে। অন্যদিকে ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজের বাড়তি ১৫
মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে।
No comments