হার্ডলাইনে সরকার by দীন ইসলাম
মানব
পাচার নিয়ে হার্ডলাইনে সরকার। এটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে নানা ফর্মুলায়
এগোনোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। এসব
নির্দেশনার ভিত্তিতে গডফাদার তালিকায় চতুর্থ নম্বরে থাকা ধলু হোসেনসহ চার
মানব পাচারকারী গডফাদার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। এখন নতুন
করে কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় কর্মরত পুলিশ, বিজিবি
ও কোস্টগার্ডের অসাধু সদস্য, বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও পাচারকারীদের ব্যাংক
হিসাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ক্রসফায়ারের ভয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন
মানব পাচারকারী গডফাদাররা। চার উপজেলায় মানব পাচারকারী গডফাদার ও তাদের
সাঙ্গপাঙ্গদের দৃশ্যমান চলাফেরা চোখ পড়ছে না। অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। এসব
কারণে বেশ অস্বস্তিতে আছেন মানব পাচারকারী গডফাদারকারীরা। স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মানব পাচারকারী গডফাদারদের সম্পর্কে খোঁজ খবর
নিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির
ভিত্তিতে পুলিশ গডফাদারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। পুলিশের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়া ধলু হোসেনের নাম
গডফাদার তালিকায় চার নম্বরে ছিল। তার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও প্রতিরোধ দমন
আইনে টেকনাফ থানায় ছয়টি ও চকরিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে। পুলিশের কাছে
পাঠানো প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ছয় কারণে মানব পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে
না। প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের আটক বা উদ্ধারের
পর তাদের ভিকটিম হিসেবে ছেড়ে দেয়ার কারণে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার বাড়ছে।
আগে ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন’- এ পাচার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে
মামলা হতো। বর্তমানে এ আইনে পাচার হওয়ার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা
নেয়া হয় না। আইন অনুযায়ী তাদের ভিকটিম হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। ফলে
মালয়েশিয়াগামী যাত্রীরা আরও বেশি এ পথে ঝুঁকছে। কারণ তারা জানে যাত্রাপথে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করলে তাদের ছেড়ে দেবে। এসব কারণে ছাড়া
পাওয়া যাত্রীরা নতুন করে এ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় কারণ
হিসেবে বলা হয়েছে, যেসব ঘাট বা পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করা হয়
ওই সব ঘাট বা পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের ব্যবস্থা নেই।
তৃতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট ঘাট বা পয়েন্টে মালয়েশিয়ায়
যাওয়ার জন্য লোকজন জড়ো হয়েছে এমন গোপন সংবাদ গোয়েন্দা সংস্থা
পুলিশ/বিজিবি/কোস্টগার্ডের স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রায় সময়ই
জানায়। এসব সংবাদের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধীনের একজন
কর্মকর্তাসহ কিছু সদস্য সেখানে পাঠায়। কিন্তু ওই ঘাট বা পয়েন্টে গিয়ে
মাঝেমধ্যে লোক দেখানোর জন্য আটক করে থাকে। বেশির ভাগ সময় এসব সংস্থার অসাধু
সদস্যরা পাচারকারীদের কাছ থেকে যাত্রী প্রতি ৩০০-১০০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে আটক
না করে যাত্রীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া পুলিশ/বিজিবি’র
কিছু অসাধু সদস্য অভিযানে যাওয়ার আগে পাচারকারীদের (যারা মাসিক ভিত্তিতে
মাসোহারা দেয়) অভিযান সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। এর ফলে তারা নিরাপদে পালিয়ে
যায়। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পাচারকারীরা মাসিক
ভিত্তিতে থানায় এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বিজিবি’র বিওপিগুলোতে মাসোহারা দিয়ে
থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মামলাভূক্ত/মামলাবহিভূর্ত পাচারকারীদের থানায়
আটক করে এনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। অশিক্ষা, বেকারত্ব,
দারিদ্র্যতা ও জনসচেতনতার অভাবের কারণে পাচারের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বেকার ও
অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষরা কম খরচে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে টাকা পরিশোধ করার
প্রলোভনে এ সুযোগ নিতে চায়। এসব নানা কারণে মানব পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না
বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,
প্রতিবেদনে পাঠানো সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। এরই মধ্যে মানব পাচারে সহায়তাকারী বিজিবিসহ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা
নেয়া হয়েছে। পাচারকারী গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান
পরিচালনা করা হচ্ছে। কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া ও মহেশখালী উপজেলার সব
বিকাশ এজেন্টদের লেনদেনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি পাচারকারীদের
হিসাব নম্বর তদন্ত করে নজরদারি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক
কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে হার্ডলাইনের ফর্মূলা দেয়ায় মানব
পাচার প্রতিরোধ করা সহজ হচ্ছে। এটার ফল ধীরে ধীরে আসছে।
No comments