অপেক্ষা শুধু সময়ের by মাসুদ মজুমদার
অধিকার
আদায়ের লড়াই সব সময় নিয়মতান্ত্রিক পথে এগোয় না। সময় মেপে কিংবা দিনক্ষণ
নির্ধারণ করে এর সাফল্য-ব্যর্থতার অঙ্ক মেলানো যায় না। পৃথিবীতে বহু
আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কখনো কোথাও সাফল্য-ব্যর্থতা
নিরূপণের মানদণ্ডের একক কোনো ধারণা ছিল না। আজো নেই। মাঝে মধ্যে
স্বপ্নভঙ্গের কারণও ঘটে। তবে বিজয়ীর পক্ষে ইতিহাস চর্চার ধারা এখনো সক্রিয়;
কিন্তু জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী- তা দু’দিন আগে কিংবা পরে। বাংলাদেশে
গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পক্ষে জনগণের লড়াইয়ের ইতিহাস একেবারে
সংক্ষিপ্ত নয়। স্বাধীনতার স্বপ্নভঙ্গের প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিক মওলানা
ভাসানী, জাসদ, জাতীয় লীগ, চৈনিক ধারার বামপন্থী দলসহ সব বিরোধী দল
গণতন্ত্রের দাবিটি সামনে নিয়ে আসে। সেই সময় জাতীয় সরকার গঠনের দাবিটিও
উপেক্ষিত হয়েছিল। এর প্রথম পর্বটি ছিল তেয়াত্তর থেকে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন
পর্যন্ত। রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রাক্কালে সেই আন্দোলনের ধরন ছিল ভিন্ন
মেজাজের। আওয়ামী লীগ রক্ত মাড়িয়ে ক্ষমতা পেয়েছে বা অর্জন করেছে এটা
সর্বজনস্বীকৃত। আবার রক্ত ঝরিয়ে বিদায় নিয়েছে এটাও মিথ্যা নয়। এরশাদবিরোধী
গণতন্ত্রের লড়াইয়ের আগে বাকশাল থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময়টার স্বরূপ
আলাদা। সময়টাও অনেক দীর্ঘ নয়। জিয়ার বিরুদ্ধেও ক্ষমতার লড়াই ছিল, সেটা ছিল
সামরিক ছাউনিকেন্দ্রিক, জনগণকেন্দ্রিক নয়। তিয়াত্তর-চুয়াত্তরের পর রাজপথের
গণ-আন্দোলন কার্যত শুরু হয়েছিল বিরাশি সাল থেকে। যেদিন এরশাদ নির্বাচিত
বিচারপতি সাত্তার সরকারকে বন্দুকের জোরে উপড়ে ফেলে ক্ষমতা দখল করেছিল,
কার্যত প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল সেদিন থেকে। ছিয়াশি সালে এসে সেই আন্দোলন নতুন
গতি পায়। আবার কিছু দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ-জামায়াতের নির্বাচনী ডিগবাজির
কারণে হোঁচটও খায়। কিন্তু খালেদা জিয়া ছিলেন আন্দোলনের ফলাফল নির্ণয় ও
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুফল ঘরে তোলার ব্যাপারে আপসহীন। তিনি আপস মানেননি
বলেই সেদিন গণতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব হয়েছিল। তার সেই আপসহীন অবস্থানের সুফল
জনগণ হাতে পায় নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে। গণনন্দিত তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থার বাস্তব ভ্রুণটিরও জন্ম নেয় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সরকারের
দলনিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার প্রেক্ষিতে। এখন
এরশাদও বলতে বাধ্য হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার চেয়েও বড় স্বৈরাচার।
প্রথমবার ক্ষমতাচর্চায় শেখ হাসিনা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেননি। তখনো ভুলে যাননি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। হিজাব পরা মুনাজাতরত ছবিটি জনগণ আস্থায় নিয়েছিল। যদিও সেই আমলে সৃষ্ট গডফাদারদের দায় তারও ছিল। সে সময় বিরোধী দলও সরকার পদত্যাগের আন্দোলন করেনি। দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রথম দু’বছরও কোনো আন্দোলন ছিল না। তৃতীয় বর্ষে ঠাণ্ডামাথায় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা উপড়ে ফেলার পর বিরোধী দলের বোধোদয় ঘটে। তারা হঠাৎ টের পেয়ে যায় সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তার পরও আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার পক্ষে পুনঃ জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। দাবি মানার আলটিমেটাম দেয় কমপক্ষে তিনবার। সে আন্দোলনও কোনোভাবেই সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও জননন্দিত তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন ছিল ষোলোআনা নিয়মতান্ত্রিক। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ছিল, ইস্যুভিত্তিক বক্তব্যও ছিল। কিন্তু পদত্যাগের দাবিটি ছিল দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টির কৌশল মাত্র। সরকার সেই আবেদন-নিবেদন উপেক্ষা করেছে, বিএনপি জোটও লগি-বৈঠার মতো কোনো তাণ্ডব সৃষ্টি করেনি। গানপাউডার দিয়ে মানুষ মারেনি।
সব বিরোধী দলের দাবি উপেক্ষা করে সংবিধান ও আদালতের রায়ের বরাতে জনমত উপেক্ষা করে নতুন জাতীয় নির্বাচন যখন ঘোষণা করা হলো, তখন তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি পুরোপুরি উপেক্ষিত হলো। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার গণদাবিটিও বিবেচনায় নেয়া হলো না। বিরোধী দল শেষ পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে অনুরোধ জানাল- তত্ত্বাবধায়ক নামে না হোক, নিরপেক্ষ অবয়বের একটি গ্রহণযোগ্য ধারণা অন্তত গ্রহণ করা যায়। বুদ্ধিজীবীরা বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়ার ফর্মুলাও দিয়েছিলেন। জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধি তারানকোর কয়েকটি ফর্মুলাও ছিল, যা বিরোধী দল ইতিবাচকভাবে দেখেছে, কিন্তু সরকার কারো কোনো কথায় ও পরামর্শে সামান্যতমও ছাড় দিতে রাজি হয়নি। একটি টেলিফোন ও তাৎক্ষণিক একটি আমন্ত্রণ রক্ষা করতে না পারার বিষয়টি সংলাপ না করার অজুহাত বানানো হলো। সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্বাচন পেছানোর একটা ধারণাও জনসমক্ষে ছিল, সরকার কিছুই মানেনি। জোর করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের পথ ধরে ক্ষমতা দখল করেছে।
এটা স্পষ্ট, বিশ্বসম্প্রদায় ও জনগণ কর্তৃক উপেক্ষিত হলেও আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতা দখলে রাখার বল-ভরসা পেয়েছিল ভারতীয় কংগ্রেসের কাছ থেকে। তাই বিরোধী দলকে এবং জনগণকে আমলে নেয়ার কোনো পরোয়াই করল না। বরং সব কূটনৈতিক মধ্যস্থতা উপেক্ষা করে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের দিয়ে জাতীয় পার্টিকে পোষ মানানো হলো, রওশন ও এরশাদকে ডামি বিরোধী দল বানানো হলো। যেনতেন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের পথে পা বাড়াল- এ জন্য ভারতের কংগ্রেস সরকারকে উকিলও নিয়োগ করল। সুজাতা সিং এলেন সরকারের সব অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানাতে। পঙ্কজ শরণরা খোলা ময়দানে দালালি শুরু করলেন। একতরফা নির্বাচনে বৈধতা দেয়ার আশ্বাসও দিয়ে গেলেন ভারতীয় কূটনীতিক সুজাতা সিং। তিনি এখন পতিত কূটনীতিক। আজ বিণা সিক্রিরা একেক দেশে একেক গণতন্ত্রের ফেরি করছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যায় এই বিণা সিক্রির দ্বৈতনীতি সবার চোখ খুলে দেয়ার কথা। বিণা সিক্রিরা কি ভারতের একেক রাজ্যের জন্য একেক ধরনের গণতন্ত্র চান? হিন্দুপ্রধান ভারতকে নিয়ে তারা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সবক দেন। জাত-পাতে পিষ্ট ভারতীয় সমাজে নমশূদ্ররা বঞ্চিত শ্রেণী। মুসলমানকে প্রায়ই কচুকাটা করা হয়। শিখরা ড্রাইভার ও সৈনিক হয়ে বাঁচতে চাইছে। খ্রিষ্টানদেরও পুড়িয়ে মারা হয়। এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ভারত আমাদের গেলাতে চায়। সংখ্যানুপাত বিবেচনায় নিলে কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীরাই শুধু নয়, বাংলাদেশে কথিত সব সংখ্যালঘু স্বর্গে আছেন। তাদের ধর্মকর্ম পাহারা দেয় এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও প্রকৃত আলেম ওলামারা। যাদের জঙ্গি কিংবা অন্য নামে চিহ্নিত করে তারা খুশি হয়। ভোটব্যাংক সৃষ্টিকারী গুণ্ডারা কোনো ধর্মাবলম্বীর জন্য নিরাপদ নয়। বিণা সিক্রিরা হয়তো ভাবেন বাংলাদেশ তাদের করদরাজ্য, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতীয় প্রেসক্রিপশন উপেক্ষা করেই সে সময় জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দল মত নির্বিশেষে সব বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। তাতেও আওয়ামী লীগ কর্ণপাত করেনি বরং সবাইকে অপমান করেছে। সুদখোর, কার খালু বলে ব্যঙ্গ করেছে। দুই আনার মন্ত্রী, কাজের বুয়া মর্জিনা বলে বিদ্রুsপ করেছে। তারা গুরুত্ব দেয়নি জাতিসঙ্ঘ দূত তারানকোর দূতিয়ালি এবং মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবকেও। ফলে জনগণের পক্ষে বিএনপি জোট এবং অন্যান্য বিরোধী দল একতরফা নির্বাচন বয়কট করে ও জনগণকে বয়কটের আহ্বান জানায়। সেই বয়কট শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও বাস্তবে ভোটারবিহীন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মহড়া দেয়া হয়। তাতে বৈধতার দৃষ্টিতে সরকার হয়ে দাঁড়াল আগাগোড়া প্রশ্নবিদ্ধ।
সে সময় জনপ্রতিরোধ ও রোষের মুখে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলতে বাধ্য হয়েছিলেন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন শেষে সব দলের সাথে আলোচনা করে পরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপি জোট আন্দোলন থেকে সরে এসে অপেক্ষায় থাকে। নাগরিক, সুশীল ও পেশাজীবী সমাজও প্রহর গুনতে থাকে। এই দুর্বলতার ফাঁক দিয়েই সরকার উল্টো ছোবল মারা শুরু করে। প্রশ্নবিদ্ধ সরকার নিজেদের অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি দুটোই ভুলে যেতে চেষ্টা করে। উপরন্তু বিরোধী দলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন ও নাই করে দেয়ার জন্য ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা সাজায়। এর মাধ্যমে অবশিষ্ট গণতন্ত্রটুকুও বধ করে বসে। ফলে বিএনপি জোট এক বছর অপেক্ষার পর রাজপথে প্রতিবাদী হতে গিয়ে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, গুলি, গুমসহ সব ধরনের জুলুম-পীড়নের মুখে পড়ে। দলীয় অফিস বন্ধ করে দেয়া শুরু হয়। বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানো ও গণগ্রেফতার চলে। রাজপথে মিছিল এবং মাঠে জনসভা করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। আপসহীন খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন। বালির ট্রাকের প্রাচীর, মরিচের গুঁড়া এবং কার্যত গৃহবন্দী অবস্থান থেকেও প্রমাণ করেন গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি শেষ পর্যন্তও ছাড় দেয়ার মতো নেত্রী নন।
চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা ও দলীয় নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার একক কৃতিত্ব না হলেও খালেদা জিয়ার অর্জনটাই মুখ্য। একইভাবে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে নজিরবিহীন প্রতিরোধ ও জুলুম-পীড়ন অগ্রাহ্য করে তিনি আবার গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এটা তার গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার উল্লেখযোগ্য তৃতীয়বারের মতো দৃঢ় অবস্থান। তার আপসহীন অবস্থানের প্রথম অর্জন ছিল নব্বই সালে। কালো মানুষের নেতা, সাদা মানুষের প্রেরণা ও বাদামি মানুষের জন্য উপমা ইতিহাসে কৃষ্ণ সুন্দর নেলসন ম্যান্ডেলা ছাড়া আর কোনো রাজনীতিবিদ এত দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে প্রতিবাদী অবস্থানে থাকেননি। আমরা খালেদা জিয়ার রাজনীতির অনুগত কর্মী নই। তার রাজনৈতিক কর্মকৌশল ও সাফল্য-ব্যর্থতা সমালোচনার ঊর্র্ধ্বে নয়। তাই বলে তাকে জঙ্গি, তালেবান নেত্রী, আলকায়েদার প্রতিনিধি বলা শুধু নির্লজ্জ মিথ্যাচার নয়, নায়কের বিরুদ্ধে খলনায়কের একধরনের হুঙ্কার মাত্র। অনেক দ্বিমত নিয়েও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাসড়কে থাকা একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমরা সময়ের সাক্ষ্যদাতা মাত্র। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা দুই নেত্রীর পক্ষে কলম যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এক-এগারোর সরকার দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র শুরু করলে আমরাই প্রতিবাদী হয়ে বাঁক ঘুরে দাঁড়াই। অথচ আমরা না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ। আমরা খালেদা জিয়াকে লেনসন ম্যান্ডেলার সাথে এক মাপে তুলছি না। তবে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে আপসহীন নেত্রী এবং তার আন্দোলনের সময়টাও কম দীর্ঘ নয়। তার দল পরিচালনা ও রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যাপারে সবার প্রশ্ন থাকতে পারে। তার অনেক কৌশলও সমালোচিত হতে পারে কিন্তু এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য তার অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
একে একে সব ক’টি প্রতিবাদী এবং যুক্তিবাদী কণ্ঠকেও যখন সরকার নানাভাবে আড়ষ্ট করে দিয়েছে। মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অদৃশ্য কালো হাতে। ভিন্ন মত পদদলিত। বুদ্ধিজীবীরাও যখন খামোশ হয়ে গেছেন। রাষ্ট্রশক্তি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও যখন দলকানা, পেশাজীবীরাও যখন সত্যের পথে দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষমতা হারিয়ে বসেছেন, তখনো খালেদা জিয়া মাথা নত করেননি। আজ রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট চিহ্নিত। সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক চাপও দৃষ্টিগ্রাহ্য। সরকার যে সঙ্কট স্বীকার করতে চায়নি, সে সঙ্কট এখন তাদের তাড়া করছে। সেই সঙ্কটকে দেশের জনগণ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সব মহল অংশীদারিত্বমূলক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। তবে মুখ্য ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের হয়রানি ও পরোয়ানা মাথায় বেগম জিয়া অনড় অবস্থানে স্থির না থাকলে গণতন্ত্রের স্বপ্ন, জনগণের ভোটের অধিকার ক্ষমতার পদপিষ্ট হয়ে ধুলায় গড়াগড়ি খেতেই থাকবে। সেই অবস্থা অব্যাহত রাখার সরকারি চেষ্টার এখনো অন্ত নেই। কিন্তু পাহারাদারের ভূমিকায় খালেদা জিয়ার অবস্থানও দুর্বল নয়। প্রধানমন্ত্রী আর কঠোর হবেন কোথায়! দেশের কারাগারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশের আশি শতাংশের বেশি মানুষ পরিবর্তনকামী হয়ে উঠেছে- এরা সবাই বিএনপি জোটভুক্ত নয়। সবার ধারণা, আপনি অনৈতিকভাবে ক্ষমতার জোর খাটাচ্ছেন, দেশের এত মানুষকে বিগড়ে যেতে দিয়ে আপনি ক্ষমতাচর্চা করবেন কিভাবে। কত দিনই বা সেটা সম্ভব। আপনার প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াও তো সব কিছু দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন। চার্চিল তার জাতিকে মেধা, শারীরিক যোগ্যতা ও প্রাণটাও দিতে চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া আজ যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছেন, তাতে রসিকতা করেও বলা যায়, গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে পৌরুষ নিয়ে আপসহীন অবস্থানে আছেন একজন, তার নাম খালেদা জিয়া। তাই আজকের দিনটা অঙ্ক মিলাবার নয়, সাফল্য-ব্যর্থতা পরিমাপের নয়- সঙ্কটের অর্থবহ উত্তরণ ঘটিয়ে গণতন্ত্রকে বিকশিত করার প্রতিশ্রুতিটি আরো শাণিত করার দিন।
সবশেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ভাষায় বলতে চাই- ‘জেদের ভাত কুত্তা দিয়ে আর কত খাওয়াবেন’, নথ খসাতেই হবে। তাহলে লোক হাসাচ্ছেন কেন। জনগণের সময় গোনার মধ্যে প্রতিহিংসার দাউ দাউ জ্বলা আগুন নেভান। নয়তো সবাইকে পুড়ে মরতে হবে।
প্রথমবার ক্ষমতাচর্চায় শেখ হাসিনা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেননি। তখনো ভুলে যাননি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। হিজাব পরা মুনাজাতরত ছবিটি জনগণ আস্থায় নিয়েছিল। যদিও সেই আমলে সৃষ্ট গডফাদারদের দায় তারও ছিল। সে সময় বিরোধী দলও সরকার পদত্যাগের আন্দোলন করেনি। দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রথম দু’বছরও কোনো আন্দোলন ছিল না। তৃতীয় বর্ষে ঠাণ্ডামাথায় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা উপড়ে ফেলার পর বিরোধী দলের বোধোদয় ঘটে। তারা হঠাৎ টের পেয়ে যায় সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তার পরও আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার পক্ষে পুনঃ জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। দাবি মানার আলটিমেটাম দেয় কমপক্ষে তিনবার। সে আন্দোলনও কোনোভাবেই সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও জননন্দিত তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন ছিল ষোলোআনা নিয়মতান্ত্রিক। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ছিল, ইস্যুভিত্তিক বক্তব্যও ছিল। কিন্তু পদত্যাগের দাবিটি ছিল দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টির কৌশল মাত্র। সরকার সেই আবেদন-নিবেদন উপেক্ষা করেছে, বিএনপি জোটও লগি-বৈঠার মতো কোনো তাণ্ডব সৃষ্টি করেনি। গানপাউডার দিয়ে মানুষ মারেনি।
সব বিরোধী দলের দাবি উপেক্ষা করে সংবিধান ও আদালতের রায়ের বরাতে জনমত উপেক্ষা করে নতুন জাতীয় নির্বাচন যখন ঘোষণা করা হলো, তখন তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি পুরোপুরি উপেক্ষিত হলো। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার গণদাবিটিও বিবেচনায় নেয়া হলো না। বিরোধী দল শেষ পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে অনুরোধ জানাল- তত্ত্বাবধায়ক নামে না হোক, নিরপেক্ষ অবয়বের একটি গ্রহণযোগ্য ধারণা অন্তত গ্রহণ করা যায়। বুদ্ধিজীবীরা বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়ার ফর্মুলাও দিয়েছিলেন। জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধি তারানকোর কয়েকটি ফর্মুলাও ছিল, যা বিরোধী দল ইতিবাচকভাবে দেখেছে, কিন্তু সরকার কারো কোনো কথায় ও পরামর্শে সামান্যতমও ছাড় দিতে রাজি হয়নি। একটি টেলিফোন ও তাৎক্ষণিক একটি আমন্ত্রণ রক্ষা করতে না পারার বিষয়টি সংলাপ না করার অজুহাত বানানো হলো। সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্বাচন পেছানোর একটা ধারণাও জনসমক্ষে ছিল, সরকার কিছুই মানেনি। জোর করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের পথ ধরে ক্ষমতা দখল করেছে।
এটা স্পষ্ট, বিশ্বসম্প্রদায় ও জনগণ কর্তৃক উপেক্ষিত হলেও আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতা দখলে রাখার বল-ভরসা পেয়েছিল ভারতীয় কংগ্রেসের কাছ থেকে। তাই বিরোধী দলকে এবং জনগণকে আমলে নেয়ার কোনো পরোয়াই করল না। বরং সব কূটনৈতিক মধ্যস্থতা উপেক্ষা করে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের দিয়ে জাতীয় পার্টিকে পোষ মানানো হলো, রওশন ও এরশাদকে ডামি বিরোধী দল বানানো হলো। যেনতেন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের পথে পা বাড়াল- এ জন্য ভারতের কংগ্রেস সরকারকে উকিলও নিয়োগ করল। সুজাতা সিং এলেন সরকারের সব অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানাতে। পঙ্কজ শরণরা খোলা ময়দানে দালালি শুরু করলেন। একতরফা নির্বাচনে বৈধতা দেয়ার আশ্বাসও দিয়ে গেলেন ভারতীয় কূটনীতিক সুজাতা সিং। তিনি এখন পতিত কূটনীতিক। আজ বিণা সিক্রিরা একেক দেশে একেক গণতন্ত্রের ফেরি করছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যায় এই বিণা সিক্রির দ্বৈতনীতি সবার চোখ খুলে দেয়ার কথা। বিণা সিক্রিরা কি ভারতের একেক রাজ্যের জন্য একেক ধরনের গণতন্ত্র চান? হিন্দুপ্রধান ভারতকে নিয়ে তারা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সবক দেন। জাত-পাতে পিষ্ট ভারতীয় সমাজে নমশূদ্ররা বঞ্চিত শ্রেণী। মুসলমানকে প্রায়ই কচুকাটা করা হয়। শিখরা ড্রাইভার ও সৈনিক হয়ে বাঁচতে চাইছে। খ্রিষ্টানদেরও পুড়িয়ে মারা হয়। এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ভারত আমাদের গেলাতে চায়। সংখ্যানুপাত বিবেচনায় নিলে কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীরাই শুধু নয়, বাংলাদেশে কথিত সব সংখ্যালঘু স্বর্গে আছেন। তাদের ধর্মকর্ম পাহারা দেয় এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও প্রকৃত আলেম ওলামারা। যাদের জঙ্গি কিংবা অন্য নামে চিহ্নিত করে তারা খুশি হয়। ভোটব্যাংক সৃষ্টিকারী গুণ্ডারা কোনো ধর্মাবলম্বীর জন্য নিরাপদ নয়। বিণা সিক্রিরা হয়তো ভাবেন বাংলাদেশ তাদের করদরাজ্য, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতীয় প্রেসক্রিপশন উপেক্ষা করেই সে সময় জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দল মত নির্বিশেষে সব বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। তাতেও আওয়ামী লীগ কর্ণপাত করেনি বরং সবাইকে অপমান করেছে। সুদখোর, কার খালু বলে ব্যঙ্গ করেছে। দুই আনার মন্ত্রী, কাজের বুয়া মর্জিনা বলে বিদ্রুsপ করেছে। তারা গুরুত্ব দেয়নি জাতিসঙ্ঘ দূত তারানকোর দূতিয়ালি এবং মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবকেও। ফলে জনগণের পক্ষে বিএনপি জোট এবং অন্যান্য বিরোধী দল একতরফা নির্বাচন বয়কট করে ও জনগণকে বয়কটের আহ্বান জানায়। সেই বয়কট শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও বাস্তবে ভোটারবিহীন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মহড়া দেয়া হয়। তাতে বৈধতার দৃষ্টিতে সরকার হয়ে দাঁড়াল আগাগোড়া প্রশ্নবিদ্ধ।
সে সময় জনপ্রতিরোধ ও রোষের মুখে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলতে বাধ্য হয়েছিলেন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন শেষে সব দলের সাথে আলোচনা করে পরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপি জোট আন্দোলন থেকে সরে এসে অপেক্ষায় থাকে। নাগরিক, সুশীল ও পেশাজীবী সমাজও প্রহর গুনতে থাকে। এই দুর্বলতার ফাঁক দিয়েই সরকার উল্টো ছোবল মারা শুরু করে। প্রশ্নবিদ্ধ সরকার নিজেদের অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি দুটোই ভুলে যেতে চেষ্টা করে। উপরন্তু বিরোধী দলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন ও নাই করে দেয়ার জন্য ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা সাজায়। এর মাধ্যমে অবশিষ্ট গণতন্ত্রটুকুও বধ করে বসে। ফলে বিএনপি জোট এক বছর অপেক্ষার পর রাজপথে প্রতিবাদী হতে গিয়ে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, গুলি, গুমসহ সব ধরনের জুলুম-পীড়নের মুখে পড়ে। দলীয় অফিস বন্ধ করে দেয়া শুরু হয়। বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানো ও গণগ্রেফতার চলে। রাজপথে মিছিল এবং মাঠে জনসভা করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। আপসহীন খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন। বালির ট্রাকের প্রাচীর, মরিচের গুঁড়া এবং কার্যত গৃহবন্দী অবস্থান থেকেও প্রমাণ করেন গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি শেষ পর্যন্তও ছাড় দেয়ার মতো নেত্রী নন।
চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা ও দলীয় নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার একক কৃতিত্ব না হলেও খালেদা জিয়ার অর্জনটাই মুখ্য। একইভাবে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে নজিরবিহীন প্রতিরোধ ও জুলুম-পীড়ন অগ্রাহ্য করে তিনি আবার গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এটা তার গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার উল্লেখযোগ্য তৃতীয়বারের মতো দৃঢ় অবস্থান। তার আপসহীন অবস্থানের প্রথম অর্জন ছিল নব্বই সালে। কালো মানুষের নেতা, সাদা মানুষের প্রেরণা ও বাদামি মানুষের জন্য উপমা ইতিহাসে কৃষ্ণ সুন্দর নেলসন ম্যান্ডেলা ছাড়া আর কোনো রাজনীতিবিদ এত দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে প্রতিবাদী অবস্থানে থাকেননি। আমরা খালেদা জিয়ার রাজনীতির অনুগত কর্মী নই। তার রাজনৈতিক কর্মকৌশল ও সাফল্য-ব্যর্থতা সমালোচনার ঊর্র্ধ্বে নয়। তাই বলে তাকে জঙ্গি, তালেবান নেত্রী, আলকায়েদার প্রতিনিধি বলা শুধু নির্লজ্জ মিথ্যাচার নয়, নায়কের বিরুদ্ধে খলনায়কের একধরনের হুঙ্কার মাত্র। অনেক দ্বিমত নিয়েও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাসড়কে থাকা একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমরা সময়ের সাক্ষ্যদাতা মাত্র। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা দুই নেত্রীর পক্ষে কলম যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এক-এগারোর সরকার দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র শুরু করলে আমরাই প্রতিবাদী হয়ে বাঁক ঘুরে দাঁড়াই। অথচ আমরা না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ। আমরা খালেদা জিয়াকে লেনসন ম্যান্ডেলার সাথে এক মাপে তুলছি না। তবে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে আপসহীন নেত্রী এবং তার আন্দোলনের সময়টাও কম দীর্ঘ নয়। তার দল পরিচালনা ও রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যাপারে সবার প্রশ্ন থাকতে পারে। তার অনেক কৌশলও সমালোচিত হতে পারে কিন্তু এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য তার অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
একে একে সব ক’টি প্রতিবাদী এবং যুক্তিবাদী কণ্ঠকেও যখন সরকার নানাভাবে আড়ষ্ট করে দিয়েছে। মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অদৃশ্য কালো হাতে। ভিন্ন মত পদদলিত। বুদ্ধিজীবীরাও যখন খামোশ হয়ে গেছেন। রাষ্ট্রশক্তি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও যখন দলকানা, পেশাজীবীরাও যখন সত্যের পথে দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষমতা হারিয়ে বসেছেন, তখনো খালেদা জিয়া মাথা নত করেননি। আজ রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট চিহ্নিত। সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক চাপও দৃষ্টিগ্রাহ্য। সরকার যে সঙ্কট স্বীকার করতে চায়নি, সে সঙ্কট এখন তাদের তাড়া করছে। সেই সঙ্কটকে দেশের জনগণ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সব মহল অংশীদারিত্বমূলক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। তবে মুখ্য ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের হয়রানি ও পরোয়ানা মাথায় বেগম জিয়া অনড় অবস্থানে স্থির না থাকলে গণতন্ত্রের স্বপ্ন, জনগণের ভোটের অধিকার ক্ষমতার পদপিষ্ট হয়ে ধুলায় গড়াগড়ি খেতেই থাকবে। সেই অবস্থা অব্যাহত রাখার সরকারি চেষ্টার এখনো অন্ত নেই। কিন্তু পাহারাদারের ভূমিকায় খালেদা জিয়ার অবস্থানও দুর্বল নয়। প্রধানমন্ত্রী আর কঠোর হবেন কোথায়! দেশের কারাগারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশের আশি শতাংশের বেশি মানুষ পরিবর্তনকামী হয়ে উঠেছে- এরা সবাই বিএনপি জোটভুক্ত নয়। সবার ধারণা, আপনি অনৈতিকভাবে ক্ষমতার জোর খাটাচ্ছেন, দেশের এত মানুষকে বিগড়ে যেতে দিয়ে আপনি ক্ষমতাচর্চা করবেন কিভাবে। কত দিনই বা সেটা সম্ভব। আপনার প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াও তো সব কিছু দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন। চার্চিল তার জাতিকে মেধা, শারীরিক যোগ্যতা ও প্রাণটাও দিতে চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া আজ যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছেন, তাতে রসিকতা করেও বলা যায়, গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে পৌরুষ নিয়ে আপসহীন অবস্থানে আছেন একজন, তার নাম খালেদা জিয়া। তাই আজকের দিনটা অঙ্ক মিলাবার নয়, সাফল্য-ব্যর্থতা পরিমাপের নয়- সঙ্কটের অর্থবহ উত্তরণ ঘটিয়ে গণতন্ত্রকে বিকশিত করার প্রতিশ্রুতিটি আরো শাণিত করার দিন।
সবশেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ভাষায় বলতে চাই- ‘জেদের ভাত কুত্তা দিয়ে আর কত খাওয়াবেন’, নথ খসাতেই হবে। তাহলে লোক হাসাচ্ছেন কেন। জনগণের সময় গোনার মধ্যে প্রতিহিংসার দাউ দাউ জ্বলা আগুন নেভান। নয়তো সবাইকে পুড়ে মরতে হবে।
No comments