জঙ্গিবাদের রাজনীতি ও একটি বিশ্লেষণ by রাশেদা বেগম হীরা
জনগণের
ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার চলমান আন্দোলনের কর্মসূচিতে পেট্রলবোমা, সব
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের
দিয়ে সংঘটিত গুম, খুন, অপহরণ, বন্দুকবাজি ও মানবতাবিরোধী অপরাধ দমনে
জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিকপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে বিএনপিসহ ২০
দল। ৫ জানুয়ারির মহাবিতর্কিত নির্বাচন সূত্রে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের ৯০
শতাংশ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি হিসেবে চিত্রিত করার জন্য আদাজল
খেয়ে লেগেছে। বিগত পাঁচ বছরে জামায়াত-শিবির ছিল এদের হাতে চরমভাবে
আক্রান্ত, বিএনপি ছিল প্রকাশ্যে দ্বিতীয় টার্গেট। কিন্তু আজ পর্যন্ত এরা
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে তা কারোই নজরে আসেনি। হেফাজতের এত বড় সমাবেশকে
যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠিন বল প্রয়োগ করে অস্ত্রের মুখে তুলে দিলো, তখন
ওরা মৃত্যুকে বরণ করেছে কিন্তু কাউকেই পুলিশের অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র
ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ দীর্ঘ দিন ধরে রাজাকারের
ফাঁসি চেয়ে চেয়ে কান্ত হয়ে গিয়েছিল, সেখানেও কেউ ছোড়েনি কোনো পেট্রলবোমা,
ফোটেনি কোনো ককটেল, যা সরকার আশা করেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার ব্যয়ভার বহন
করতে না পেরে গুটিয়ে নিলো গণজাগরণ মঞ্চ। কিন্তু তাদের এই কয়েক দিনের
শাসনামলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যেভাবে যত্রতত্র, এমনকি আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সামনেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে যাচ্ছে তার সাী এ দেশের ১৬ কোটি
জনতা। সেখানে আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীর কেউই কোনো সন্ত্রাস দেখেন না, দেখেন না
কোনো জঙ্গি। একইভাবে যখন আওয়ামী নেতাদের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের
বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ঘটে সেখানেও দেখেন না এরা কোনো সাম্প্রদায়িকতা।
বিশ্বজিতের চাচাতো ভাই নবিন দাস হিন্দু মহাজোট আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছিলেন,
‘দেশে র্যাব-পুলিশ বাহিনী থাকা সত্ত্বেও সরকারদলীয় খুনিদের রাস্তায়
নামিয়েছে। যেসব পুলিশ কিছু দূরে নীরবে দাঁড়িয়েছিল তারাও ছাত্রলীগের পুলিশ।’
একইভাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের কাছে পুলিশ ও শত শত মানুষের সামনে অভিজিৎকে হত্যা করল, তার স্ত্রী রাফহিদা আহমেদ বন্যাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করল, বিশ্বজিতের মতো অভিজিৎও কোনো সাহায্য পায়নি পুলিশের। হয়তো এরা ভেবেছিল আওয়ামী সমর্থক কেউ শিবির কিংবা বিএনপিকে কোপাচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরে চাকরি হারাতে যাবে কোন দুঃখে? এ দেশের মানুষের কপাল মন্দ বলেই আওয়ামী এই গোষ্ঠীর প্রায় সবাই চোখ থাকতে অন্ধ।
এ দেশকে একটি অকার্যকর জঙ্গি রাষ্ট্র এবং জোট সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণের জন্য ২০০১-০৬ সালেও সঙ্ঘবদ্ধভাবে তারা এক দিকে যেমন নেমেছিলেন বাকযুদ্ধে, তেমনি তাদের সাথে স্বগোত্রীয় একদল সুশীলও নেমেছিল কলমযুদ্ধে। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শের ঘাটতির কারণে তারা রাজনীতি করেন পরের ঘাড়ে বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে। বিনা ভোটে ঘোষণা দিয়ে ১৫৪ জন, এরশাদ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও অগণতান্ত্রিকভাবে তার দলের পছন্দের লোকদের বাঁদরের পিঠাভাগের মতো লোভ আর লাভ দেখিয়ে নির্বাচনে জিতিয়ে আনা, সর্ববৃহৎ একটি দল বিএনপিকে নানা কৌশলে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে যে প্রহসনের নির্বাচন তারা করেছে তা নিয়ে পাঁচ বছর মতায় টিকে থাকতে চাইলে তাদের পে সঠিক কোনো কথা বলা সম্ভব নয়।
এ দেশে জঙ্গি বিষয়টি যে আওয়ামী সম্পৃক্ত তার আরো সত্যতা মিলে সেই সময়কার বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে। সেই সফরকে তিনি ধর্মীয় সফর তথা আজমির শরিফ জেয়ারত বললেও মূলত তিনি সেখানে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ সেই সময়কালের মতাসীন ব্যক্তিদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করেন। সেই সময় ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল, এই সফরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার বিস্তারিত তথ্য মনমোহন সিংকে অবহিত করেন। তিনি যদি নিজে অবগত না থাকতেন তাহলে এ বিষয়ে অন্যকে অবহিত করেন কিভাবে? এগুলো কি প্রমাণ করে না যে, জঙ্গিবাদের সব পরিকল্পনা এদের দিয়েই সংঘটিত এবং সে সম্পর্কে তারা অবহিত ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে গ্রেনেড বিস্ফোরণে প্রথম সারির নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন জীবন হারিয়েছেন, আরো অনেকেই গুরুতর আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী সমর্থকেরা একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেয়, কর্তব্যরত রেলওয়ে গার্ড হুমায়ুন কবির আগুনে পুড়ে নিহত হন। সে সময়কার ডাকা হরতালের আগের সন্ধ্যায় একটি রাষ্ট্রীয় ডাবল ডেকার বাসে আগুন লাগিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ যাত্রীকে হত্যা করা হয়। বোমা হামলার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করে বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তথাপি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন, চিঠি লিখে বিরোধী দলের নেত্রীকে সহানুভূতি ও সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এ ধরনের সন্ত্রাস বন্ধের জন্য তার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সব কিছুই নাকচ করে সবার আগে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছিলেন। বিএনপি সরকার ২১ আগস্টের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য গঠন করেছিলেন বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন, আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা ইন্টারপুলকে ডেকে আনা হয়েছিল সে সময়। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রতিনিধিরাও এসেছিল। অপরাধীদের খোঁজ দেয়ার বিনিময়ে কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল সেদিন। কিন্তু সে দিনের বিরোধী দল এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কোনো সহযোগিতাই করেনি, উপরন্তু একটি মহল এর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে, প্রতিরা বাহিনীকে বিতর্কে ঠেলে দিয়ে দুর্বল করতে চেয়েছিল তারা। সে দিন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্তে এসে অনেক কিছুই জেনে গিয়েছিল। সে কারণে সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলকে চিঠি দিয়ে বলেছিল, বিরোধী দলের অসহযোগিতার কারণে গ্রেনেড হামলায় তিগ্রস্ত নেত্রীর গাড়িটি এফবিআই পরীা-নিরীা করতে না পারায় তারা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারেনি। অথচ সে দিন ঘটনাটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ না করলে সবাই মিলে সত্যিকারের অপরাধীদের খুঁজে বের করে এ দেশ থেকে চিরদিনের মতো সন্ত্রাস নির্মূল করা যেত।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে যখন পুরো দেশের আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রিয় মানুষের সহযোগিতায় দেশব্যাপী পরিচালিত চিরুনি অভিযানে একে একে ধরা পড়ে জেএমবি ও হুজির বহু নেতাকর্মী এবং জেএমবির মজলিসে শূরার সাত সদস্য। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৫ ধরা পড়ে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম এমপির বেয়াই আতাউর রহমান সানী, ১৮ নভেম্বর ধরা পড়ল ভাগ্নিজামাই আব্দুল আওয়াল, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ধরা পড়ে হাফেজ মোহাম্মদ। সর্বশেষ ২ মার্চ ২০০৬ সিলেটের পূর্ব শাপলাবাগ থেকে ধরা পড়ে তার ভগ্নিপতি জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান। জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই আটক হন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে। বাংলাভাই ও আবদুর রহমানের ফাঁসি হয় ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় অনেক নেতাকর্মীর। নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানও গ্রেফতার হয় বিএনপির আমলেই। তার পর থেকে এ দেশে বড় কোনো জঙ্গি তৎপরতা দেখা যায়নি। এসব থেকে এটা পরিষ্কার যে, জঙ্গি দমন নয় এ দেশের জামায়াত, হেফাজত শুধু নয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বা সুশীলসমাজ যারাই তাদের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণের সাহস করবে তাদেরই জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে দমন করা হবে, এটাই তাদের কূটকৌশল, টিকে থাকার পদ্ধতি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধীদের অনুকম্পা পাওয়ার অপরাজনীতি মাত্র। বিএনপির সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা মির্জা আজমের পরম আত্মীয় জঙ্গি এই বাংলাভাই ও শায়খ বাহিনীকে গ্রেফতার করা, বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো।
আওয়ামী লীগের প থেকে সেই সময় বলা হলো, এদের জীবিত ধরা হবে না কারণ তারা জোট সরকারের সম্পৃক্ততার কথা বলে দেবে। কিন্তু যখন সত্যিই জনগণের সহযোগিতায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অকান্ত পরিশ্রমে জীবিত ধরা হলো তখন আওয়ামী লীগের প থেকে বলা হলো এটা নাটক। এদের বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছিল জঙ্গিরা জামায়াত কিংবা বিএনপি কারো আত্মীয়স্বজন নয় বরং আত্মীয় আওয়ামী লীগের। কোটি কোটি জনতার ইসলাম ও জোট সরকার জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না, অধিকন্তু জঙ্গিবাদকে বর্জন করে আর কঠোরহস্তে বিচার করে।
‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি অপবাদে আজ আবার বাংলাদেশ আক্রান্ত। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ধরা পড়লেও এরা ছাড়া পেয়ে যায় ওপরওয়ালার নির্দেশে। বগুড়ায় ঘরে রাখা ককটেল বিস্ফোরণে আওয়ামী নেতা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের স্ত্রী রেবেকা সুলতানার হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। দিনাজপুরে যানবাহনে পেট্রলবোমা ছুড়তে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি উজ্জ্বল ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের। পরে আওয়ামী নেতাদের তদবিরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাজধানীর কদমতলী থেকে পেট্রলবোমা ও ককটেলসহ ধরা পড়ে ছাত্রলীগ নেতা নূর হোসেন ও তার ভাই কামাল হোসেন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে চারটি পেট্রলবোমা ও পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করে। হয়তো এতণে তারাও মুক্তি পেয়ে আরেক দফা পেট্রলবোমা ফাটানোর আয়োজন করছে। কারণ ওরা ছাত্রলীগ, ওরা এখন রীবাহিনীর মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে দেশে দখলদারদের সহায়ক শক্তি। তাদের ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক কদমও এগোতে পারে না। আবার রাজনৈতিক আদর্শের দেউলিয়া এই ছাত্রলীগ যুবলীগসহ আওয়ামী লীগও একটি কর্মসূচি পালন করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন হারাচ্ছে তাদের বিশ্বাস ও গৌরব, তেমনি আওয়ামী রাজনীতি হারিয়েছে তার নীতি আর আদর্শ। আওয়ামী নৌরাজ্যকারীদের জন্য সাত খুন মাপ কেন? তাদের হুকুমদাতা আর অর্থের জোগানদাতাদের সিএস, আরএস খোঁজা হয় না কেন? ধরা পড়লে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কেন? তাহলে এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি শুধু একটি দলের রক? এই দখলদারদের হাতে কি সব বিরোধী মত প্রকাশের সুযোগ বিলীন হয়ে যাচ্ছে? আত্মরার জন্য আইনের আশ্রয় নয়, গৃহযুদ্ধ কি অনিবার্য?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের পালপাড়ার জজমিয়া ও আফিয়া বেগমের মেয়ে জুঁই গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় নিজের বাড়িতে মোমবাতির আগুনে দগ্ধ হয়। তাকে প্রথমে হরষপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে পরে তাকে তার দাদী-চাচী মিলে ঢাকায় এনে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। জঙ্গি ইস্যুটিকে বাজারজাত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী চোখের জল ফেলবেন এমন হৃদয়বিদারক পরিবেশ দেশ-বিদেশকে দেখানোর জন্য শিশুটিকে পেট্রলবোমার আহতদের মধ্যে দেখানো হয়েছে। মতায় থাকার জন্য বিদেশের অনুকম্পা পাওয়ার জন্য মানুষ পোড়ানোর পুঁজি বিনিয়োগের কৌশল শুধু ঝানু আওয়ামী পলিটিশিয়ানদের দিয়েই সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তা ব্ঝুতে পারে সরকার কী চাচ্ছে, কেন চাচ্ছে? তাই কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য, কেউ সরকারকে খুশি করে প্রমোশনের জন্য, কেউ উপরি টাকা কামাইয়ের জন্য, বিএনপির নেতাকর্মীদের বা সাধারণ মানুষকে ধরে এনে কাক্সিত টাকা না পেলে হাতেনাতে ধরা পড়েছে লিখে মামলা করে দিচ্ছেন। গুলি করে মেরে বলছে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামে নসিমনচালক জিল্লুর রহমানের নসিমনটি পুলিশ বিপ্লব কুমার নাথ ও কিছু মুখোশধারী আওয়ামী অক্সিলারি ফোর্স ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নাকি ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের মিছিলে নিয়ে গেছে। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী যানবাহন চালাতে গিয়ে তিগ্রস্তদের নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন, অন্য দিকে পুলিশ ও মুখোশধারী আওয়ামী অক্সিলারি ফোর্স পুড়িয়ে দিচ্ছে জিল্লুরের নসিমন। সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ! প্রতিদিন এটাই এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ নিজেদের মতায় টিকে থাকার অযৌক্তিক দাবি কার্যকর করার জন্য কখনো করবে দলীয় সন্ত্রাস, কখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, কখনো লগি-বৈঠার আন্দোলনের সন্ত্রাস, কখনো জঙ্গি হামলার সূচনা করে বিরোধী দলকে দিচ্ছে জঙ্গি অপবাদ। আওয়ামী লীগ কি এখনো বুঝতে পারছে না যে, এই ইস্যুকে বাজারজাত করার নাটক এখন ফপ করেছে। জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, পাকিস্তানিরা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল জনগণের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই সঠিক গণতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়, সঠিক একটি নির্বাচন চায়, চায় নিজেদের ও আগামী প্রজন্মের জন্য সত্য ও বিবেকের আশ্রয়।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
একইভাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের কাছে পুলিশ ও শত শত মানুষের সামনে অভিজিৎকে হত্যা করল, তার স্ত্রী রাফহিদা আহমেদ বন্যাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করল, বিশ্বজিতের মতো অভিজিৎও কোনো সাহায্য পায়নি পুলিশের। হয়তো এরা ভেবেছিল আওয়ামী সমর্থক কেউ শিবির কিংবা বিএনপিকে কোপাচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরে চাকরি হারাতে যাবে কোন দুঃখে? এ দেশের মানুষের কপাল মন্দ বলেই আওয়ামী এই গোষ্ঠীর প্রায় সবাই চোখ থাকতে অন্ধ।
এ দেশকে একটি অকার্যকর জঙ্গি রাষ্ট্র এবং জোট সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণের জন্য ২০০১-০৬ সালেও সঙ্ঘবদ্ধভাবে তারা এক দিকে যেমন নেমেছিলেন বাকযুদ্ধে, তেমনি তাদের সাথে স্বগোত্রীয় একদল সুশীলও নেমেছিল কলমযুদ্ধে। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শের ঘাটতির কারণে তারা রাজনীতি করেন পরের ঘাড়ে বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে। বিনা ভোটে ঘোষণা দিয়ে ১৫৪ জন, এরশাদ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও অগণতান্ত্রিকভাবে তার দলের পছন্দের লোকদের বাঁদরের পিঠাভাগের মতো লোভ আর লাভ দেখিয়ে নির্বাচনে জিতিয়ে আনা, সর্ববৃহৎ একটি দল বিএনপিকে নানা কৌশলে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে যে প্রহসনের নির্বাচন তারা করেছে তা নিয়ে পাঁচ বছর মতায় টিকে থাকতে চাইলে তাদের পে সঠিক কোনো কথা বলা সম্ভব নয়।
এ দেশে জঙ্গি বিষয়টি যে আওয়ামী সম্পৃক্ত তার আরো সত্যতা মিলে সেই সময়কার বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে। সেই সফরকে তিনি ধর্মীয় সফর তথা আজমির শরিফ জেয়ারত বললেও মূলত তিনি সেখানে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ সেই সময়কালের মতাসীন ব্যক্তিদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করেন। সেই সময় ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল, এই সফরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার বিস্তারিত তথ্য মনমোহন সিংকে অবহিত করেন। তিনি যদি নিজে অবগত না থাকতেন তাহলে এ বিষয়ে অন্যকে অবহিত করেন কিভাবে? এগুলো কি প্রমাণ করে না যে, জঙ্গিবাদের সব পরিকল্পনা এদের দিয়েই সংঘটিত এবং সে সম্পর্কে তারা অবহিত ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে গ্রেনেড বিস্ফোরণে প্রথম সারির নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন জীবন হারিয়েছেন, আরো অনেকেই গুরুতর আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী সমর্থকেরা একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেয়, কর্তব্যরত রেলওয়ে গার্ড হুমায়ুন কবির আগুনে পুড়ে নিহত হন। সে সময়কার ডাকা হরতালের আগের সন্ধ্যায় একটি রাষ্ট্রীয় ডাবল ডেকার বাসে আগুন লাগিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ যাত্রীকে হত্যা করা হয়। বোমা হামলার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করে বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তথাপি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন, চিঠি লিখে বিরোধী দলের নেত্রীকে সহানুভূতি ও সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এ ধরনের সন্ত্রাস বন্ধের জন্য তার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সব কিছুই নাকচ করে সবার আগে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছিলেন। বিএনপি সরকার ২১ আগস্টের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য গঠন করেছিলেন বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন, আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা ইন্টারপুলকে ডেকে আনা হয়েছিল সে সময়। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রতিনিধিরাও এসেছিল। অপরাধীদের খোঁজ দেয়ার বিনিময়ে কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল সেদিন। কিন্তু সে দিনের বিরোধী দল এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কোনো সহযোগিতাই করেনি, উপরন্তু একটি মহল এর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে, প্রতিরা বাহিনীকে বিতর্কে ঠেলে দিয়ে দুর্বল করতে চেয়েছিল তারা। সে দিন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্তে এসে অনেক কিছুই জেনে গিয়েছিল। সে কারণে সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলকে চিঠি দিয়ে বলেছিল, বিরোধী দলের অসহযোগিতার কারণে গ্রেনেড হামলায় তিগ্রস্ত নেত্রীর গাড়িটি এফবিআই পরীা-নিরীা করতে না পারায় তারা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারেনি। অথচ সে দিন ঘটনাটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ না করলে সবাই মিলে সত্যিকারের অপরাধীদের খুঁজে বের করে এ দেশ থেকে চিরদিনের মতো সন্ত্রাস নির্মূল করা যেত।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে যখন পুরো দেশের আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রিয় মানুষের সহযোগিতায় দেশব্যাপী পরিচালিত চিরুনি অভিযানে একে একে ধরা পড়ে জেএমবি ও হুজির বহু নেতাকর্মী এবং জেএমবির মজলিসে শূরার সাত সদস্য। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৫ ধরা পড়ে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম এমপির বেয়াই আতাউর রহমান সানী, ১৮ নভেম্বর ধরা পড়ল ভাগ্নিজামাই আব্দুল আওয়াল, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ধরা পড়ে হাফেজ মোহাম্মদ। সর্বশেষ ২ মার্চ ২০০৬ সিলেটের পূর্ব শাপলাবাগ থেকে ধরা পড়ে তার ভগ্নিপতি জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান। জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই আটক হন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে। বাংলাভাই ও আবদুর রহমানের ফাঁসি হয় ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় অনেক নেতাকর্মীর। নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানও গ্রেফতার হয় বিএনপির আমলেই। তার পর থেকে এ দেশে বড় কোনো জঙ্গি তৎপরতা দেখা যায়নি। এসব থেকে এটা পরিষ্কার যে, জঙ্গি দমন নয় এ দেশের জামায়াত, হেফাজত শুধু নয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বা সুশীলসমাজ যারাই তাদের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণের সাহস করবে তাদেরই জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে দমন করা হবে, এটাই তাদের কূটকৌশল, টিকে থাকার পদ্ধতি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধীদের অনুকম্পা পাওয়ার অপরাজনীতি মাত্র। বিএনপির সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা মির্জা আজমের পরম আত্মীয় জঙ্গি এই বাংলাভাই ও শায়খ বাহিনীকে গ্রেফতার করা, বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো।
আওয়ামী লীগের প থেকে সেই সময় বলা হলো, এদের জীবিত ধরা হবে না কারণ তারা জোট সরকারের সম্পৃক্ততার কথা বলে দেবে। কিন্তু যখন সত্যিই জনগণের সহযোগিতায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অকান্ত পরিশ্রমে জীবিত ধরা হলো তখন আওয়ামী লীগের প থেকে বলা হলো এটা নাটক। এদের বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছিল জঙ্গিরা জামায়াত কিংবা বিএনপি কারো আত্মীয়স্বজন নয় বরং আত্মীয় আওয়ামী লীগের। কোটি কোটি জনতার ইসলাম ও জোট সরকার জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না, অধিকন্তু জঙ্গিবাদকে বর্জন করে আর কঠোরহস্তে বিচার করে।
‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি অপবাদে আজ আবার বাংলাদেশ আক্রান্ত। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ধরা পড়লেও এরা ছাড়া পেয়ে যায় ওপরওয়ালার নির্দেশে। বগুড়ায় ঘরে রাখা ককটেল বিস্ফোরণে আওয়ামী নেতা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের স্ত্রী রেবেকা সুলতানার হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। দিনাজপুরে যানবাহনে পেট্রলবোমা ছুড়তে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি উজ্জ্বল ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের। পরে আওয়ামী নেতাদের তদবিরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাজধানীর কদমতলী থেকে পেট্রলবোমা ও ককটেলসহ ধরা পড়ে ছাত্রলীগ নেতা নূর হোসেন ও তার ভাই কামাল হোসেন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে চারটি পেট্রলবোমা ও পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করে। হয়তো এতণে তারাও মুক্তি পেয়ে আরেক দফা পেট্রলবোমা ফাটানোর আয়োজন করছে। কারণ ওরা ছাত্রলীগ, ওরা এখন রীবাহিনীর মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে দেশে দখলদারদের সহায়ক শক্তি। তাদের ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক কদমও এগোতে পারে না। আবার রাজনৈতিক আদর্শের দেউলিয়া এই ছাত্রলীগ যুবলীগসহ আওয়ামী লীগও একটি কর্মসূচি পালন করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন হারাচ্ছে তাদের বিশ্বাস ও গৌরব, তেমনি আওয়ামী রাজনীতি হারিয়েছে তার নীতি আর আদর্শ। আওয়ামী নৌরাজ্যকারীদের জন্য সাত খুন মাপ কেন? তাদের হুকুমদাতা আর অর্থের জোগানদাতাদের সিএস, আরএস খোঁজা হয় না কেন? ধরা পড়লে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কেন? তাহলে এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি শুধু একটি দলের রক? এই দখলদারদের হাতে কি সব বিরোধী মত প্রকাশের সুযোগ বিলীন হয়ে যাচ্ছে? আত্মরার জন্য আইনের আশ্রয় নয়, গৃহযুদ্ধ কি অনিবার্য?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের পালপাড়ার জজমিয়া ও আফিয়া বেগমের মেয়ে জুঁই গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় নিজের বাড়িতে মোমবাতির আগুনে দগ্ধ হয়। তাকে প্রথমে হরষপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে পরে তাকে তার দাদী-চাচী মিলে ঢাকায় এনে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। জঙ্গি ইস্যুটিকে বাজারজাত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী চোখের জল ফেলবেন এমন হৃদয়বিদারক পরিবেশ দেশ-বিদেশকে দেখানোর জন্য শিশুটিকে পেট্রলবোমার আহতদের মধ্যে দেখানো হয়েছে। মতায় থাকার জন্য বিদেশের অনুকম্পা পাওয়ার জন্য মানুষ পোড়ানোর পুঁজি বিনিয়োগের কৌশল শুধু ঝানু আওয়ামী পলিটিশিয়ানদের দিয়েই সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তা ব্ঝুতে পারে সরকার কী চাচ্ছে, কেন চাচ্ছে? তাই কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য, কেউ সরকারকে খুশি করে প্রমোশনের জন্য, কেউ উপরি টাকা কামাইয়ের জন্য, বিএনপির নেতাকর্মীদের বা সাধারণ মানুষকে ধরে এনে কাক্সিত টাকা না পেলে হাতেনাতে ধরা পড়েছে লিখে মামলা করে দিচ্ছেন। গুলি করে মেরে বলছে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামে নসিমনচালক জিল্লুর রহমানের নসিমনটি পুলিশ বিপ্লব কুমার নাথ ও কিছু মুখোশধারী আওয়ামী অক্সিলারি ফোর্স ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নাকি ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের মিছিলে নিয়ে গেছে। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী যানবাহন চালাতে গিয়ে তিগ্রস্তদের নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন, অন্য দিকে পুলিশ ও মুখোশধারী আওয়ামী অক্সিলারি ফোর্স পুড়িয়ে দিচ্ছে জিল্লুরের নসিমন। সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ! প্রতিদিন এটাই এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ নিজেদের মতায় টিকে থাকার অযৌক্তিক দাবি কার্যকর করার জন্য কখনো করবে দলীয় সন্ত্রাস, কখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, কখনো লগি-বৈঠার আন্দোলনের সন্ত্রাস, কখনো জঙ্গি হামলার সূচনা করে বিরোধী দলকে দিচ্ছে জঙ্গি অপবাদ। আওয়ামী লীগ কি এখনো বুঝতে পারছে না যে, এই ইস্যুকে বাজারজাত করার নাটক এখন ফপ করেছে। জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, পাকিস্তানিরা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল জনগণের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই সঠিক গণতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়, সঠিক একটি নির্বাচন চায়, চায় নিজেদের ও আগামী প্রজন্মের জন্য সত্য ও বিবেকের আশ্রয়।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
No comments