ভাঙনের দ্বীপে সাফল্যের আলো by মাসুদ মিলাদ
২০০৭
সালে মুরগির খামার (লেয়ার জাত) দিয়ে শুরু। পুঁজি এক লাখ টাকা। পরের বছর
মুনাফার টাকায় পুকুর খনন, শুরু মাছ চাষ। এবার বছর গড়াতে যুক্ত হলো গরু
পালন। দিনে দিনে বাড়ল পরিধি। এদিকে বিপত্তিও কম নয়। মুরগির খামারের
বিষ্ঠা নিয়ে পড়লেন বিপদে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেটাও ফেলনা হতে দিলেন না।
গড়ে তুললেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এত কিছু ঘটে গেল আট বছরের মধ্যে। আর আট
বছরে এক লাখ টাকার বিনিয়োগ গিয়ে দাঁড়াল চার কোটিতে। এই সাফল্যের গল্প
সন্দ্বীপ উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা যুবক ফেরদৌস আহমেদের। দেশের
অন্যান্য এলাকার চেয়ে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের আর্থসামাজিক
অবস্থা একটু ভিন্ন। এখানে প্রতি বাড়িতে আছে প্রবাসী। বিদেশ থেকে পাঠানো
টাকায় চলে সিংহভাগ পরিবারের সংসার। উদ্যোক্তা হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁদের
বিনিয়োগ প্রবাসে কিংবা সন্দ্বীপের বাইরে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকা
এবং দ্বীপে ভাঙনের কারণে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের হারও খুব কম। ফলে
এলাকাকেন্দ্রিক নতুন উদ্যোক্তা চোখে পড়ে না। এখানেই ব্যতিক্রম ফেরদৌস।
ফেরদৌসের পরিবারেরও সিংহভাগ সদস্য থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁরও যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে সেখানে থাকার আগ্রহ নেই তাঁর; বরং জন্মস্থানে নতুন উদ্যোগ গড়ে তুলে পথ দেখাতে চান উদ্যমী যুবকদের। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতিমধ্যে অনেকে বাড়ির আশপাশে এ ধরনের খামার গড়ে তুলছেন। এমনই একজন আবুল হাশেম। পড়াশোনার পাশাপাশি হারামিয়া ইউনিয়নের কাছিয়াপাড় গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন খামার।
হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরদৌসের সাফল্য দেখে আগ্রহী হই। খামার শুরু করেছি ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। পুকুর খনন করে মাছ চাষও করছি। পর্যায়ক্রমে বহুমুখী খামারে পরিণত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
সন্দ্বীপে নিজের এলাকায় কিছু একটা করার ভাবনা থেকে ফেরদৌস মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন। প্রথমে সন্দ্বীপ, এরপর চট্টগ্রাম এবং সবশেষে ঢাকায় কলেজের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০০৬ সালে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে চলে আসেন সন্দ্বীপে। ২০০৭ সালে খামার গড়ে তোলার পর মুনাফার সব টাকা থেকে লাভ নিতেন না। সব টাকাই বিনিয়োগ করতে থাকেন। খামারে মুরগির সংখ্যা বাড়ার পর এই বিপুল পরিমাণ বিষ্ঠা কোথায় রাখা হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। এর পরই কয়েকজনের পরামর্শে এই বিষ্ঠা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করতে হয় কাঠ। এখন এ চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক ফেরদৌস। পরিবেশসম্মত সবুজ জ্বালানি হিসেবে পরিচিত তাঁর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের কল্যাণে উপজেলার অনেক পরিবারের চুলা জ্বলছে।
সন্দ্বীপের এনাম নাহার মোড়ে একটি বাড়িতে দেখা যায়, বায়োগ্যাসে রান্না হচ্ছে। বাড়ির গৃহবধূ অনিমা রানী রায় প্রথম আলোকে জানান, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন। তাই আগে মাটির চুলায় রান্না করতে কষ্ট হতো। এখন যখন ইচ্ছে তখন রান্না করা যায়। ময়লা লাগে না। ফলে এখন মোটামুটি ঝামেলামুক্ত।
ফেরদৌস জানান, গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা পাইপের সাহায্যে আশপাশের এলাকায় তাঁর প্ল্যান্ট থেকে এই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন ৭০টি পরিবারের চুলা জ্বলছে বায়োগ্যাসে। বায়োগ্যাসের উপজাত প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া চলছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় মূল সড়কের পাশে চোখে পড়ে সাদা ফটক। ফটকে লেখা মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ। তিনতলা মুরগির খামার। খামারে মুরগির বিষ্ঠা পাইপের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হচ্ছে বায়োগ্যাস স্থাপনার মূল ট্যাংকে। এরপর একটি চেম্বারে গ্যাস জমা হয়। পাইপলাইনের সাহায্যে এই গ্যাস নেওয়া হয়েছে অন্তত চার হাজার ফুট এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। বায়োগ্যাস সরবরাহ করার তিন মাসের মাথায় আরও অন্তত ৩০০ পরিবার থেকে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব পেয়েছেন ফেরদৌস। প্রস্তাব পাওয়ার পর খামার সম্প্রসারণের উদ্যোগও নিচ্ছেন তিনি।
মুরগির খামার করে বসে থাকেননি এই তরুণ উদ্যোক্তা। পালাক্রমে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম। এখন ফার্মে ২৪টি গরু আছে। আবার খামার এলাকায় এ পর্যন্ত ১১ পুকুর খনন করেছেন। এসব পুকুরে চলছে মাছের চাষ।
ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় দুই হাজার শতক জমিতে খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এক ইঞ্চি জায়গাও অব্যবহৃত রাখতে চাইনি। তাই এক খামারেই এত আয়োজন। এখন অনেকেই আমার খামার দেখতে আসছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকে। যাঁরাই আসছেন তাঁদের সহযোগিতা করছি।’
ফেরদৌসের খামার শুরুর আগে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে সন্দ্বীপে ফার্মের ডিম এনে চাহিদা মেটাতে হতো। এখন এই খামার থেকে দিনে গড়ে ২০ হাজার ডিম পাওয়া যায়। তাঁর এক খামার থেকেই উপজেলার ব্রয়লার মুরগির ডিমের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ মেটানো হচ্ছে। ফেরদৌস আশা করছেন, আরও কিছুদিন পর এক খামার থেকেই সন্দ্বীপে ব্রয়লার মুরগির ডিমের চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাবে।
ফেরদৌসের পরিবারেরও সিংহভাগ সদস্য থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁরও যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে সেখানে থাকার আগ্রহ নেই তাঁর; বরং জন্মস্থানে নতুন উদ্যোগ গড়ে তুলে পথ দেখাতে চান উদ্যমী যুবকদের। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতিমধ্যে অনেকে বাড়ির আশপাশে এ ধরনের খামার গড়ে তুলছেন। এমনই একজন আবুল হাশেম। পড়াশোনার পাশাপাশি হারামিয়া ইউনিয়নের কাছিয়াপাড় গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন খামার।
হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরদৌসের সাফল্য দেখে আগ্রহী হই। খামার শুরু করেছি ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। পুকুর খনন করে মাছ চাষও করছি। পর্যায়ক্রমে বহুমুখী খামারে পরিণত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
সন্দ্বীপে নিজের এলাকায় কিছু একটা করার ভাবনা থেকে ফেরদৌস মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন। প্রথমে সন্দ্বীপ, এরপর চট্টগ্রাম এবং সবশেষে ঢাকায় কলেজের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০০৬ সালে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে চলে আসেন সন্দ্বীপে। ২০০৭ সালে খামার গড়ে তোলার পর মুনাফার সব টাকা থেকে লাভ নিতেন না। সব টাকাই বিনিয়োগ করতে থাকেন। খামারে মুরগির সংখ্যা বাড়ার পর এই বিপুল পরিমাণ বিষ্ঠা কোথায় রাখা হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। এর পরই কয়েকজনের পরামর্শে এই বিষ্ঠা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করতে হয় কাঠ। এখন এ চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক ফেরদৌস। পরিবেশসম্মত সবুজ জ্বালানি হিসেবে পরিচিত তাঁর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের কল্যাণে উপজেলার অনেক পরিবারের চুলা জ্বলছে।
সন্দ্বীপের এনাম নাহার মোড়ে একটি বাড়িতে দেখা যায়, বায়োগ্যাসে রান্না হচ্ছে। বাড়ির গৃহবধূ অনিমা রানী রায় প্রথম আলোকে জানান, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন। তাই আগে মাটির চুলায় রান্না করতে কষ্ট হতো। এখন যখন ইচ্ছে তখন রান্না করা যায়। ময়লা লাগে না। ফলে এখন মোটামুটি ঝামেলামুক্ত।
ফেরদৌস জানান, গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা পাইপের সাহায্যে আশপাশের এলাকায় তাঁর প্ল্যান্ট থেকে এই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন ৭০টি পরিবারের চুলা জ্বলছে বায়োগ্যাসে। বায়োগ্যাসের উপজাত প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া চলছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় মূল সড়কের পাশে চোখে পড়ে সাদা ফটক। ফটকে লেখা মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ। তিনতলা মুরগির খামার। খামারে মুরগির বিষ্ঠা পাইপের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হচ্ছে বায়োগ্যাস স্থাপনার মূল ট্যাংকে। এরপর একটি চেম্বারে গ্যাস জমা হয়। পাইপলাইনের সাহায্যে এই গ্যাস নেওয়া হয়েছে অন্তত চার হাজার ফুট এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। বায়োগ্যাস সরবরাহ করার তিন মাসের মাথায় আরও অন্তত ৩০০ পরিবার থেকে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব পেয়েছেন ফেরদৌস। প্রস্তাব পাওয়ার পর খামার সম্প্রসারণের উদ্যোগও নিচ্ছেন তিনি।
মুরগির খামার করে বসে থাকেননি এই তরুণ উদ্যোক্তা। পালাক্রমে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম। এখন ফার্মে ২৪টি গরু আছে। আবার খামার এলাকায় এ পর্যন্ত ১১ পুকুর খনন করেছেন। এসব পুকুরে চলছে মাছের চাষ।
ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় দুই হাজার শতক জমিতে খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এক ইঞ্চি জায়গাও অব্যবহৃত রাখতে চাইনি। তাই এক খামারেই এত আয়োজন। এখন অনেকেই আমার খামার দেখতে আসছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকে। যাঁরাই আসছেন তাঁদের সহযোগিতা করছি।’
ফেরদৌসের খামার শুরুর আগে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে সন্দ্বীপে ফার্মের ডিম এনে চাহিদা মেটাতে হতো। এখন এই খামার থেকে দিনে গড়ে ২০ হাজার ডিম পাওয়া যায়। তাঁর এক খামার থেকেই উপজেলার ব্রয়লার মুরগির ডিমের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ মেটানো হচ্ছে। ফেরদৌস আশা করছেন, আরও কিছুদিন পর এক খামার থেকেই সন্দ্বীপে ব্রয়লার মুরগির ডিমের চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাবে।
No comments