সিসিইউতে মান্না- ফোনকারী সেই ব্যক্তিকে চিনেন না by রুদ্র মিজান
ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন নাগরিক ঐক্যের
আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তিনি। আগে থেকেই ছিল
পিঠের ব্যথা। ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার
রাতে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের
কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে
রয়েছেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তির পর ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা
হয়। ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয়
ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়া হয়েছে মান্নাকে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানান
তিনি।
রিমান্ডে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। তারা তার সঙ্গেও কথা বলেন। তার সঙ্গে দেখা করা একটি সূত্র জানিয়েছে, মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার মতো কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই। অযথাই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। ১৪ দিনের রিমান্ডে তাকে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে- কোন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তার কোন বৈঠক হয়েছে কি-না? এছাড়াও বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি-না এসব বিষয়েও তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। মান্না বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার কোন বৈঠক দূরে থাক, কোন কথা হয়নি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ফোনে কথা বলেন। তারা জানতে চান, এই অচলাবস্থার অবসান হবে কবে, শিগগিরই এর সমাধান হবে কি-না? ঠিক সেভাবেই একজন লোক তাকে ফোন দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি কে মান্না তা জানেন না। ওই ব্যক্তিই সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। নিজেই নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মান্না তার কথাগুলো শুনেছেন। এ বিষয়ে তিনি ডিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার সঙ্গেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হলে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো কিনা সে সম্পর্কে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানতে চাইলে আমি বলেছি, কথা বলতে রাজি আছি। আমি রাজনীতি করি। তাই সবার সঙ্গেই আমাকে কথা বলতে হয়। এটা থেকে সামরিক ক্যু-এর ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার হয় কীভাবে? প্রশ্ন রেখে তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার এ সবই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়ায় এই ষড়যন্ত্র ডাল-পালা বিস্তার করে। ডিবি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বারবার বলেছেন, সেনাবাহিনীর কারও সঙ্গে তার কোন বৈঠক হয়নি। এমনকি টেলিফোনেও কথা হয়নি। এই বাহিনীর সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। যে কোন সময় টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মান্না। মান্না তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, টিএফআই সেল কি? কেন তারা সেখানে আমাকে নেবে আমি জানি না। তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
গত ২৪শে ফেব্রয়ারি রাজধানীর বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মান্নাকে আটক করা হয়। পরদিন গভীর রাতে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহে উস্কানি ও প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা গুলশান থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই রাতে তাকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় মান্নাকে। গত ৭ই মার্চ দ্বিতীয় দফা ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হলে তিনি মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে যান। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, মান্নাকে মানসিক বা শারীরিক কোন নির্যাতন করা হয়নি। আইনানুগভাবে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় সে প্রক্রিয়াতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আজ এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
‘মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুুদুর রহমান মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলেছেন, মান্না তার কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাকে রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে আর কোন তথ্য বের করার প্রয়োজন নেই। রিমান্ডের নামে তার ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। যে কথপোকথনের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে এতে কোন প্রকার বেআইনি কিছু নেই। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ সংহতি প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে। কিন্তু সেটা মঙ্গলজনক হবে না। দেশে গণতন্ত্রই থাকতে হবে। মানবাধিকার কমিশন ও আইন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা কিভাবে মানুষের বুকে গুলি করতে বলে। তারা কিভাবে একজন মানুষকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। এজন্য সাধারণ মানুষকে মানবাধিকার কমিশন ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান তিনি। মান্নাকে ২০ ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, হাইকোর্টের উচিত সুয়োমটো দিয়ে এ রহস্যের উদঘাটন করা। বৃটিশ আমলেও পুলিশ রাতে কারও বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার করত না। সারা রাত বাসা ঘিরে রাখত। সকালে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। জনগণকে রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত না জনগণ ন্যূনতম সাহস অর্জন করতে পারবে ততদিন সরকার যা খুশি তাই করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ-র্যাব কেউ অন্যায় করলে রেহাই পাবে না। জনগণ একদিন সকল অনাচারের প্রতিশোধ নেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মান্না পরিষ্কার ইমেজের মানুষ। তাকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করতে দেয়নি। মান্নার কথোপকথনে বেআইনি কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, মান্না ক্যাম্পাসে ছাত্রদের আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপি নেতা খোকাকে পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হলে তা করতে বলেছেন। এটা রাজনীতিবিদরা হরহামেশাই বলে থাকেন। মিডিয়া তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। উনি লাশ চাননি। সরকার তাকে গ্রেপ্তারের পথ প্রশস্ত করার জন্য মিডিয়া ট্রায়াল করেছে। সরকার একতরফা ৪৮ ঘণ্টা মান্নার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা যে ব্যক্তি কথা বলেছেন তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যারা সরকারের কাজের সমালোচনা করেন তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে আসিফ নজরুল বলেন, তিন মাস থেকে তার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। মান্না ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরকার সবই জানে অথচ তাকে আটকের পর ২০ ঘণ্টার জন্য উধাও করে দেয়া হয়েছিল। এখন টানা ২০দিন রিমান্ডে রেখে তাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে হল দখল করে রেখেছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করে লাশ ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার এ কৌশল নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, দেশ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। মান্না এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার কণ্ঠরোধ করতেই মামলা দেয়া হয়েছে। মান্নার বিরুদ্ধে এ মামলা ষড়যন্ত্রমূলক। মান্নার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য সরকার মান্নার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মান্না রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললে এতে সরকারের সমস্যা কোথায়। মান্না ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য মান্নার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, ইফতেখার আহমেদ বাবু, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান প্রমুখ।
রিমান্ডে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। তারা তার সঙ্গেও কথা বলেন। তার সঙ্গে দেখা করা একটি সূত্র জানিয়েছে, মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার মতো কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই। অযথাই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। ১৪ দিনের রিমান্ডে তাকে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে- কোন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তার কোন বৈঠক হয়েছে কি-না? এছাড়াও বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি-না এসব বিষয়েও তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। মান্না বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার কোন বৈঠক দূরে থাক, কোন কথা হয়নি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ফোনে কথা বলেন। তারা জানতে চান, এই অচলাবস্থার অবসান হবে কবে, শিগগিরই এর সমাধান হবে কি-না? ঠিক সেভাবেই একজন লোক তাকে ফোন দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি কে মান্না তা জানেন না। ওই ব্যক্তিই সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। নিজেই নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মান্না তার কথাগুলো শুনেছেন। এ বিষয়ে তিনি ডিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার সঙ্গেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হলে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো কিনা সে সম্পর্কে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানতে চাইলে আমি বলেছি, কথা বলতে রাজি আছি। আমি রাজনীতি করি। তাই সবার সঙ্গেই আমাকে কথা বলতে হয়। এটা থেকে সামরিক ক্যু-এর ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার হয় কীভাবে? প্রশ্ন রেখে তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার এ সবই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়ায় এই ষড়যন্ত্র ডাল-পালা বিস্তার করে। ডিবি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বারবার বলেছেন, সেনাবাহিনীর কারও সঙ্গে তার কোন বৈঠক হয়নি। এমনকি টেলিফোনেও কথা হয়নি। এই বাহিনীর সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। যে কোন সময় টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মান্না। মান্না তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, টিএফআই সেল কি? কেন তারা সেখানে আমাকে নেবে আমি জানি না। তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
গত ২৪শে ফেব্রয়ারি রাজধানীর বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মান্নাকে আটক করা হয়। পরদিন গভীর রাতে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহে উস্কানি ও প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা গুলশান থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই রাতে তাকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় মান্নাকে। গত ৭ই মার্চ দ্বিতীয় দফা ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হলে তিনি মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে যান। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, মান্নাকে মানসিক বা শারীরিক কোন নির্যাতন করা হয়নি। আইনানুগভাবে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় সে প্রক্রিয়াতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আজ এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
‘মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুুদুর রহমান মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলেছেন, মান্না তার কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাকে রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে আর কোন তথ্য বের করার প্রয়োজন নেই। রিমান্ডের নামে তার ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। যে কথপোকথনের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে এতে কোন প্রকার বেআইনি কিছু নেই। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ সংহতি প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে। কিন্তু সেটা মঙ্গলজনক হবে না। দেশে গণতন্ত্রই থাকতে হবে। মানবাধিকার কমিশন ও আইন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা কিভাবে মানুষের বুকে গুলি করতে বলে। তারা কিভাবে একজন মানুষকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। এজন্য সাধারণ মানুষকে মানবাধিকার কমিশন ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান তিনি। মান্নাকে ২০ ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, হাইকোর্টের উচিত সুয়োমটো দিয়ে এ রহস্যের উদঘাটন করা। বৃটিশ আমলেও পুলিশ রাতে কারও বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার করত না। সারা রাত বাসা ঘিরে রাখত। সকালে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। জনগণকে রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত না জনগণ ন্যূনতম সাহস অর্জন করতে পারবে ততদিন সরকার যা খুশি তাই করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ-র্যাব কেউ অন্যায় করলে রেহাই পাবে না। জনগণ একদিন সকল অনাচারের প্রতিশোধ নেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মান্না পরিষ্কার ইমেজের মানুষ। তাকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করতে দেয়নি। মান্নার কথোপকথনে বেআইনি কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, মান্না ক্যাম্পাসে ছাত্রদের আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপি নেতা খোকাকে পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হলে তা করতে বলেছেন। এটা রাজনীতিবিদরা হরহামেশাই বলে থাকেন। মিডিয়া তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। উনি লাশ চাননি। সরকার তাকে গ্রেপ্তারের পথ প্রশস্ত করার জন্য মিডিয়া ট্রায়াল করেছে। সরকার একতরফা ৪৮ ঘণ্টা মান্নার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা যে ব্যক্তি কথা বলেছেন তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যারা সরকারের কাজের সমালোচনা করেন তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে আসিফ নজরুল বলেন, তিন মাস থেকে তার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। মান্না ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরকার সবই জানে অথচ তাকে আটকের পর ২০ ঘণ্টার জন্য উধাও করে দেয়া হয়েছিল। এখন টানা ২০দিন রিমান্ডে রেখে তাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে হল দখল করে রেখেছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করে লাশ ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার এ কৌশল নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, দেশ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। মান্না এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার কণ্ঠরোধ করতেই মামলা দেয়া হয়েছে। মান্নার বিরুদ্ধে এ মামলা ষড়যন্ত্রমূলক। মান্নার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য সরকার মান্নার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মান্না রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললে এতে সরকারের সমস্যা কোথায়। মান্না ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য মান্নার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, ইফতেখার আহমেদ বাবু, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান প্রমুখ।
No comments