আনুগত্যের পরীক্ষায় ফেল করেছেন বরুণ
ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহর দলে তারুণ্যের প্রাধান্য, অথচ সেখানে জায়গা হলো না বরুণ গান্ধীর। এ নিয়ে দলের বাইরে কিছু টিপ্পনী শোনা গেলেও দল সেই অর্থে নিস্তরঙ্গ। দল ও সংগঠনের ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর যোগ্য শিষ্য অমিত শাহর কবজা এখন কতখানি—এই একটি ঘটনাই তার প্রমাণ। একজন ব্যক্তির উপেক্ষিত হওয়ার চেয়েও তাই এ মুহূর্তে বেশি আলোচিত হচ্ছে মোদি-শাহর টিমের ‘কম্পোজিশন’, যেখানে সংগঠনের অনেক ভাবনা-চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। গত শনিবার দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন অমিত শাহ। তাঁর ‘টিমে’ যাঁরা জায়গা পেলেন তাঁদের মধ্যে ১১ জন সহসভাপতি, আটজন সাধারণ সম্পাদক, চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১৪ জন সম্পাদক ও ১০ জন মুখপাত্র। শাহর রাজনৈতিক গুরু মোদি যখন তাঁর মন্ত্রিসভা গড়লেন, পঁচাত্তরোর্ধ্ব কাউকে সেখানে রাখেননি। বার্তাটা ছিল, অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিয়ে সরকার পরিচালনা। শিষ্যের ‘টিমের’ ৬০ শতাংশের বয়সও পঞ্চাশের নিচে। গুরু-শিষ্যের চিন্তাধারার সাযুজ্যটা এতেই প্রমাণিত।
এই ভাবনা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মস্তিষ্কপ্রসূত। ফুটবলের পরিভাষায় সেই ভাবনার মূল কথা হলো ‘সাপ্লাই লাইন’ ঠিকঠাক রাখা। বাজপেয়ি-আদভানিদের আমলে সংঘ পরিবার এই সাপ্লাই লাইন ঠিক রেখেছিল। সে সময় ‘টিম আদভানির’ সদস্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, ভেঙ্কাইয়া নাইডু, রাজনাথ সিং এবং প্রয়াত প্রমোদ মহাজন ও গোপীনাথ মুন্ডে। সেই ‘টিমটাই’ এখন মোদির নেতৃত্বে দেশের ক্ষমতায়। এঁরা প্রত্যেকেই ষাটোর্ধ্ব। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব সঁপে দেওয়ার কাজটা তাই সংঘ পরিবার আবার শুরু করল। বরুণ অবশ্যই সেই দলে শামিল হতে পারতেন। যোগ্যতাও তাঁর আছে। কিন্তু মোদি-শাহ জুটির কাছে এক শ ভাগ আনুগত্যের পরীক্ষায় বরুণ পাস করতে পারলেন না। নির্বাচনের সময় মোদির ওপর ভরসা না রেখে নিজের ক্ষমতার ওপরেই বিশ্বাস রেখেছিলেন বরুণ। রাজনাথ সিংয়ের ‘টিমে’ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়গা পেলেও তাঁকে ছেঁটে ফেলতে শাহর হাত কাঁপেনি। তাঁর কাছে দল মানে আনুগত্যের নিরঙ্কুশ অধিকার।
No comments