কেউ ভারতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না
অভিষেকের পর গতকাল শনিবার মুম্বাইয়ে নৌবাহিনীর এক ঘাঁটিতে ভিড়িয়ে রাখা আইএনএস কলকাতা। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম সজ্জিত ১৬৩ মিটার দীর্ঘ এ যুদ্ধজাহাজটি ঘণ্টায় ৩০ নট গতিতে চলতে পারে। ছবি: রয়টার্স |
দেশে তৈরি অত্যাধুনিক রণপোত ‘আইএনএস কলকাতা’ যুক্ত হলো ভারতীয় নৌবহরে। গতকাল শনিবার মুম্বাইয়ে ছয় হাজার ৮০০ টনের এই যুদ্ধজাহাজ দেশবাসীকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটি চালু হওয়ার পর কেউ ভারতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এমন উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে কেউ চোখ তুলে তাকাতে না পারে। মুম্বাইয়ের ম্যাজাগাঁও ডকইয়ার্ডে ১১ বছর ধরে এই ‘ডেস্ট্রয়ারটি’ তৈরি হয়েছে। এ রকম আরও দুটি রণতরি আইএনএস কোচি ও আইএনএস চেন্নাই তৈরি হচ্ছে এখন। ২০০৩ সালে এই তিন রণপোত তৈরির মোট খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৬০০ কোটি রুপি, ২০১১ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি রুপিতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ অবস্থায়ই শনিবার এই ডেস্ট্রয়ারটি ‘কমিশনড’ হলো নৌবাহিনীতে। কমিশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা আধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সবাই সমীহ করে। সেই দেশকে কেউ অযথা ঘাঁটাতে সাহস করবে না। ‘আইএনএস কলকাতা’ ভারতের কারিগরি সামর্থ্যের চমৎকার নজির হিসেবে উল্লেখ করে মোদি বলেন, এটি সারা বিশ্বে একটি বার্তা পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে অভিষেক করলেও আইএনএস কলকাতায় দুটি প্রধান অস্ত্র এখনো দেওয়া যায়নি। দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ‘বারাক-এনজি’ এবং ডুবোজাহাজ শনাক্তকারী ‘অ্যাকটিভ টোড অ্যারে সোনার’। বারাক-এনজি ভারত ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এই ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপক বা ‘লঞ্চার’ব্যবস্থা রণপোতে প্রস্তুত। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র লাগানো সম্ভব হয়নি। প্রথমবার ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার কথা ছিল আজ থেকে দুই মাস আগে।
কিন্তু গাজায় যুদ্ধ করতে ব্যস্ত থাকায় ইসরায়েল সেই সহযোগিতা করতে পারেনি। সেই পরীক্ষা দেশটি করবে সেপ্টেম্বরে। ডুবোজাহাজ শনাক্তকারী ‘সোনার’ব্যবস্থা কেনার কথা ছিল জার্মানির এক কোম্পানি থেকে। কিন্তু সেই কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি এখনো ঝুলে রয়েছে। অবশ্য এই ডেস্ট্রয়ারে ‘ব্রাহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়েছে। ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রাহ্মোস দিয়ে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুম্বাইয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর কে ধোয়ান। অরুণ জেটলি বলেন, ‘এটি ভারত ও এর জনগণের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আমার প্রত্যাশা এ জাহাজ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।’ ক্ষেপণাস্ত্রসহ নানা বৈশিষ্ট্যের জন্য আইএনএস কলকাতা অন্য সহযোগী জাহাজবহরের সহায়তা ছাড়াই কাজ করতে পারবে। বর্তমানে ১৪০টি জাহাজ থাকা ভারতীয় নৌবাহিনীতে ব্যাপক সম্প্রসারণ চলছে। বলা হচ্ছে, নতুন জাহাজটির অভিষেক ভারতের জাহাজ নির্মাতাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। এ মুহূর্তে ভারতের শিপইয়ার্ডগুলোতে নানা আকার ও ধরনের জাহাজ নির্মাণ চলছে। ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষেত্রে সম্প্রতি বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের হার ২৬ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে মোদি বলেন, এখন পর্যন্ত ভারত অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরসম্ভার বিদেশ থেকে আমদানি করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত একদিন দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলবে। তিনি বলেন, যুবসমাজের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় ভর করে একদিন ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরসম্ভার রপ্তানি করবে।
No comments