পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দরে হামলার পর সরকারি ও জঙ্গিবাহিনী উভয়ই সাফল্য দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে পরাস্ত হয়েছে খোদ পাকিস্তান৷ সন্ত্রাস-নাশকতার কবল থেকে পাকিস্তানের মানুষের মুক্তি যে এখনো দূরে, এ ঘটনা সেটিই জানিয়ে গেল৷ গত রোববার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত করাচি বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী আক্রমণ প্রতিরোধের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ১০ জন জঙ্গিবাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ৷ জিঙ্গদের হত্যার মাধ্যমে অধিকতর ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করাকে সাফল্য হিসেবে দাবি করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী৷ পাশাপাশি পাকিস্তানের তালেবান সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সুরক্ষিত বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর অংশে হানা দেওয়াকে তাদের সাফল্য বলে দাবি করেছে৷ বলার অপেক্ষা রাখে না, একসময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আফগানিস্তানের সোভিয়েত-সমর্থক সরকারকে উচ্ছেদ করার সাফল্যে গর্বিত ছিল পাকিস্তানের সেনা এস্টাবলিশমেন্ট৷ আবার তারাই বিভিন্ন সময়ে তালেবানদের হত্যা ও দমনকে সফলতা বলে বর্ণনা করে৷ একে বলা হয় বিল্ড-অপারেট-ডেস্ট্রয় পদ্ধতির ‘সাফল্য’৷ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সঙ্গে মিলে তালেবান তৈরি ও নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করেছে৷ কিন্তু ৯/১১–এর পর যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সম্মিলিতভাবে তালেবান-আল–কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন থেকেই তারা পাকিস্তান এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী অভিযান ও গুপ্ত হামলা চালাতে থাকে৷ করাচির এই সন্ত্রাসী হামলা ঘটল তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার সময়৷ পাকিস্তানি সমাজের একটা অংশ মনে করে,
তালেবানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই শক্তিটিকে বশে রাখা সম্ভব৷ করাচির হামলার পরে এই আলোচনার সুযোগ আরও সংকীর্ণ হয়ে গেল৷ তাই সেনাবাহিনী করাচির জঙ্গিদের হত্যায় যতই সাফল্য দাবি করুক, পাকিস্তান সরকারের জন্য এটি ব্যর্থতাও বটে৷ একদিকে জঙ্গিবাদ দমনের ব্যর্থতার দায়ভার সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে, অন্যদিকে চাইলেও তালেবান প্রশ্নে সেনাবাহিনীর হিসাব-নিকাশের বাইরে যাওয়ার অবস্থা সরকারের নেই৷ পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের শেখার আছে এটাই যে, আগুন নিয়ে খেলতে নেই৷ রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বা যেকোনো কারণেই জিঙ্গবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া আত্মধ্বংসী পরিণতি পেতে বাধ্য৷ পাশাপাশি বিমানবন্দর, তথা এ ধরনের স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়েও ভাবা প্রয়োজন৷ ভারতে ক্ষমতার পালাবদল, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রস্থানের পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ দেশেও জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ এ ব্যাপারে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দূরদর্শিতাও প্রয়োজন৷ প্রথমত, কোনো ধরনের স্থানীয় চরমপন্থী কার্যকলাপকে হালকাভাবে নেওয়া চলবে না৷ দ্বিতীয়ত, সমাজের কোনো অংশকে এমনভাবে অসন্তুষ্ট ও কোণঠাসা করে তোলা যাবে না, যাতে তারা উপায়ান্তর না পেয়ে জঙ্গিবাদী পথ গ্রহণ করে৷ তৃতীয়ত, অন্য কোনো দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীর বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকতে হবে৷ বাংলাদেশের সমাজের জঙ্গিবাদবিরোধী সহিষ্ণু ধারাকে সবল করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷
No comments