রিহ্যাবের পকেট কমিটি
রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) কমিটি নির্বাচনের সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়, যদিও তিনি এই সংস্থার সাবেক সভাপতি৷ কিন্তু এখন তিনি যে পদে অধিষ্ঠিত আছেন, সেই পদে থেকে একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় নাক গলানো কেবল অন্যায় নয়, সংবিধানবিরুদ্ধও বটে৷ নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের কারণে বিষয়টি এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ আরও কৌতূহলের বিষয় হলো, এফবিসিসিআইয়ের আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা আপত্তি নিষ্পত্তির আগেই প্রতিমন্ত্রীর পছন্দসই ২৪ সদস্যের তালিকা নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিয়ে তাঁদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে৷ রিহ্যাব বা এ ধরনের যেকোনো সংগঠন বা সংস্থার কমিটি হতে হবে সেই সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী৷ কিন্তু রিহ্যাবের সাবেক সভাপতির পছন্দসই কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে সদস্যদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে৷ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৮২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেলেও প্রতিমন্ত্রীর পছন্দসই ২৪ জন ছাড়া বাকি সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়৷ যদিও তাঁদের অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি বলে নির্বাচন বোর্ডকে জানিয়েছেন৷ এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ওপর এই সংস্থার মালিকানা-স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না যে তিনি তাঁর খুশিমতো কমিটি গঠন করবেন৷ রিহ্যাবের কমিটি গঠনের এখতিয়ার ওই সংস্থার সদস্যদের; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নয়৷
এ ব্যাপারে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান অনিয়ম হলে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল দেখবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাও গ্রহণযোগ্য নয়৷ aসই জাল করে বা সাদা কাগজে সই নিয়ে মনোনয়নপত্রগুলো কারা বাতিল করিয়েছেন, সেটি পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব নির্বাচন বোর্ডের৷ একাধিক সদস্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন৷ রিহ্যাব সদস্যরা যে প্রতিমন্ত্রীর অন্যায্য হস্তক্ষেপ মেনে নেননি, এর প্রমাণ বঞ্চিত ব্যক্তিদের এফবিসিসিআইয়ের আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলকে পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা পেশাজীবী সংগঠন গড়তে তৎপর দেখা যায়৷ আর এ ক্ষেত্রে তাঁরা সরকারি প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেন না৷ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা ও শ্রমিক সংগঠনের পর এখন ক্ষমতাসীন দলটি রিহ্যাব নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে৷ এর আগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ সবকিছু দখল করার এই মানসিকতা নিন্দনীয়৷ প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে যদি নিজ মন্ত্রণালয়ের চেয়ে রিহ্যাবের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বই বড় মনে হয়, তাঁর উচিত মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে আবার সংস্থাটির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব গ্রহণের চেষ্টা করা৷ রিহ্যাবের তথাকথিত ঘোষিত কমিটি বাতিল করে গোপন ব্যালটে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনই সময়ের দাবি৷
No comments