না'গঞ্জে কাউন্সিলরসহ সাতজন অপহরণ- সবাই চুপ, সবাই আতঙ্কে by গোলাম মর্তুজা ও আসিফ হোসেন
আট কিলোমিটার লম্বা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে দিনে-রাতে যান চলাচলের
কোনো বিরাম নেই। দিনদুপুরে এই ব্যস্ত রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেল দুটি গাড়িসহ
সাতজন মানুষ। পরে দুটি গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় মিললেও লোকগুলোর খোঁজ
মেলেনি ২৪ ঘণ্টায়ও। এক গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও
প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজন। আরেক গাড়িতে আইনজীবী চন্দনকুমার ও তাঁর
গাড়িচালক।
>>নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিঙ্ক রোড এলাকায় বিক্ষোভ । ছবি: ফোকাস বাংলা
এই রাস্তার পাশেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত, জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কার্যালয়।
প্রকাশ্য রাস্তায় ঘটনাটি ঘটলেও কেউ তা দেখেছে বলেও স্বীকার করছে না। সবাই
চুপ, সবার মধ্যে আতঙ্ক।
গত রোববার দুপুরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সারা দিন এই এলাকায় ঘুরে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের দপ্তরেও ঢুঁ মারতে হয়েছে। কিন্তু বিকেলে এসে যা তথ্য দাঁড়াল তা হলো—অপহরণের ঘটনাস্থলটি ঠিক শনাক্ত করা গেল না। লিংক রোড বলা হলেও এর কোন জায়গা থেকে লোকগুলো অপহূত হলো, তা নির্দিষ্ট করা গেল না। কারণ, কেউ কথা বলছে না এ বিষয়ে। সবচেয়ে নিরাশ হওয়ার মতো তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়ায় অপহরণের বিষয়টিই তারা নিশ্চিত নয়। এখন নিখোঁজ ধরে নিয়েই তদন্ত চলছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন ও লিটন নামে পাঁচজন গাড়িসহ ‘নিখোঁজ’ হন। ওই দিন রাতেই নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রায় একই সময়ে একই রাস্তা থেকে গাড়িসহ ‘নিখোঁজ’ হন জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ষাটোর্ধ্ব চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম।
এই ‘নিখোঁজ’দের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-সহকর্মী ও অনুসারীরা গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের অভিযোগ, নজরুলের প্রতিপক্ষ আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন তাঁকে অপহরণ করিয়েছেন। অপহরণকারীরা র্যাব পরিচয়ে সহযোগীসহ তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা আছে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাউন্সিলর নূর হোসেনের সঙ্গে নজরুলের বিবাদ দীর্ঘদিনের। এলাকার চাঁদাবাজি, কাঁচপুর সেতুর নিচে নদী দখল করে নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে এই বিরোধ বলে সূত্রগুলো দাবি করছে। তবে নূর হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগের জবাব দেবেন বলে গতকাল জানিয়েছেন। আর আইনজীবী চন্দন সরকারের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়ে পরিবার কোনো কিছুই ধারণা করতে পারছে না। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলছেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন। তদন্ত চলছে। তবে চন্দন সরকারের সঙ্গে নজরুল ইসলামের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ।
তবে জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চন্দন সরকার আর নজরুলের ব্যবহূত গাড়ি দুটি দেখতে একই রকমের, শুধু রং আলাদা (টয়োটা করোলা)। এ দুটি গাড়ি প্রায় একই সময়ে আদালত থেকে বের হয়েছিল রোববার। এ কারণে ভুল করে আইনজীবী চন্দন সরকারকে ‘ধরে’ নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অথবা এমন হতে পারে, ঘটনা দেখে ফেলায় তাঁকেও ‘তুলে’ নেওয়া হয়েছে।
সবাই চুপ: সড়কের ঠিক কোন জায়গা থেকে এ দুটি গাড়িভর্তি লোকদের ধরে নেওয়া হয়েছে, তারও কোনো হদিস পায়নি পুলিশ। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা বলছেন, শিবু মার্কেট মোড় থেকে তাঁর স্বামীকে ধরে নেওয়া হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে তাঁদের ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকায় ঘুরে কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে পাওয়া যায়নি। এলাকার ব্যবসায়ী, মোটর গ্যারেজের কর্মী, চা দোকানদার, স্কুটারচালক—এমন অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। জিজ্ঞেস করলেই লোকজন ‘জানি না’ বলে এড়িয়ে গেছেন। বেশির ভাগই বলেছেন, ‘আমি তখন দোকানে আছিলাম না।’
নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে শিবু মার্কেট মোড়ের দূরত্ব এক কিলোমিটার। এর পরই স্টেডিয়াম, তারপর জালকুঁড়ি, তারপর ভুঁইগড়, এরপর সাইনবোর্ড মোড় (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে মিলেছে)। আইনজীবী চন্দনের বাসা জালকুঁড়িতে। আদালত থেকে গাাড়িতে তাঁর বাসায় যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। এর মধ্যেই কোথাও থেকে তাঁকে ‘তুলে নেওয়া’ হয়েছে।
এই সড়কেরই ভুঁইগড় থেকে ১৬ এপ্রিল অপহূত হন পরিবেশ আইনবিদ রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। ৩৫ ঘণ্টা পর তিনি অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তি পেলেও এখনো জানা যায়নি কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল। তবে ওই অপহরণের ঘটনাটির একজন (মোটর মেকানিক) প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। ছিলেন আবু বকর সিদ্দিকের গাড়ির চালকও।
স্থানীয় এক চা-বিক্রেতা বললেন, ‘ওই ব্যাডায় ঘটনা দেইখ্যা বিপদে পড়ছে। একবার সাম্বাদিকেরা হ্যারে টানে, আরেকবার পুলিশ-র্যাবে টানে। হেই ভয়ে আমরা এহন কিছুই দেহি না।’ এই পরিস্থিতিতে এই সাতজনকে কারা, কীভাবে ধরে নিয়ে গেল, তার প্রত্যক্ষ বর্ণনা এখন পর্যন্ত পাওয়া গেল না।
অপহরণ নয়, নিখোঁজ: গতকাল দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক গোলাম ফারুক ‘ঘটনাস্থলে’ যান। অপহূত ব্যক্তিদের পরিবার ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখান থেকে নজরুলকে ধরে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর স্ত্রী দাবি করছেন, সেই জায়গা আমরা পরিদর্শন করেছি। তবে তাঁদের অপহরণ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তাই তাঁরা অপহূত হয়েছেন, সে বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। তাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, এমনটা ধরে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। নিখোঁজদের পরিবারের দেওয়া তথ্যগুলোও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সন্দেহজনক লোকটি কে?: একই মামলায় নজরুলসহ ১৫ জন গত রোববার আদালতে হাজিরা দিতে যান। এ সময় নজরুলের আরও কিছু সহযোগী-শিষ্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এই পর্যায়ে তাঁরা সন্দেহের বশে পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ও দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে ধরে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
আদালত পুলিশ ও আইনজীবী সূত্র জানায়, নজরুলের লোকজন ওই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের হাতে দিলেও তিনি নিজেকে অভিজাত একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। তবে জানতে চাইলে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি স্বীকার করেনি। এখন প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরাও নিজেদের নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না। এমনকি তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে নজরুলের সহযোগীদের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য মেলেনি। তবে কয়েকজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নজরুলের গাড়ির পেছনে সাদা রঙের একটি বড় মাইক্রোবাস যেতে দেখেছেন। তাঁদের সন্দেহ, ওটিই ছিল অপহরণকারীদের গাড়ি।
কতজন প্রয়োজন: ‘নিখোঁজ’দের স্বজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, সাতজনকে দুটি গাড়িসহ তুলে নিয়ে যেতে কতজন লোক প্রয়োজন? বাংলাদেশে এমন দুর্ধর্ষ অপহরণকারীরা ঘুরে বেড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে?
এর আগে ধরে নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর পরিচয় ব্যবহার করা হলেও এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা কেউ জানে না। তাঁদের ক্ষোভ, তবু সরকার কীভাবে বলছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো?
বিক্ষোভ-আতঙ্ক: নজরুল ইসলামসহ ‘নিখোঁজ’ পাঁচজনের সন্ধান এবং অভিযুক্ত নূর হোসেনসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন নজরুলের সমর্থকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার ও গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।
মামলা: সহযোগীসহ নজরুল ইসলামকে অপহরণের ঘটনায় সোমবার রাত সোয়া নয়টায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এজাহারে আসামি হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, ইকবাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের নাম রয়েছে। কাউন্সিলর নূর হোসেন ও ইয়াসিন সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হককে। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, শত্রুতার জের ধরে আসামিরা র্যাব পরিচয়ে তাঁর স্বামীকে গাড়ির চালক ও অপর তিন সহযোগীসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়।
অপহূত নজরুলের ছোট ভাই আবদুস সালাম জানান, তাঁরা ঘটনার দিন বিকেলেই মামলা করতে ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের ‘ধৈর্য ধরে অপেক্ষা’ করতে বলে ফিরিয়ে দেয়। গতকাল দুপুরে এসপির কার্যালয়ে বিষয়টি অতিরিক্ত ডিআইজিকে জানালে তিনি মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর তাঁরা বিকেলে থানায় গেলে ওসি নেই জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। রাত সোয়া নয়টার দিকে ওসি থানায় গেলে মামলা করা হয়।
চন্দন সরকার: জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে জেলা বারের আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেন। এক ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। আইনজীবী নেতারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। পরে আইনজীবী সমিতির একটি প্রতিনিধিদল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করলে তাঁর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। চন্দন সরকারকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটও সমাবেশ করেছে। চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে মাতম চলছে। স্ত্রী অর্চনা সরকার, মেয়ে সুস্মিতা সরকারসহ স্বজনেরা চরম আতঙ্কিত ও অসহায় হয়ে পড়েছেন।
অর্চনা সরকার বলেন, তাঁর স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। তিনি সিভিল মামলা পরিচালনা করেন। তিনি রোজ দুপুরে বাড়িতে খেতে যান। এরপর নারায়ণগঞ্জ শহরে চেম্বারে বসেন। এর বাইরে কোথাও তাঁর যাতায়াত নেই। স্বামীকে ফেরত পেতে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক মঈনুর রহমান গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে জানান, ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকায় আইনজীবী চন্দন সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। গুলশান থানার পুলিশ বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে জানায়।
পাঁচ বছরে অপহরণ
২০১৪: ৫৩ জন
২০১৩: ৬৮ জন
২০১২: ৫৬ জন
২০১১: ৫৯ জন
২০১০: ৪৬ জন
সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র
গত রোববার দুপুরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সারা দিন এই এলাকায় ঘুরে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের দপ্তরেও ঢুঁ মারতে হয়েছে। কিন্তু বিকেলে এসে যা তথ্য দাঁড়াল তা হলো—অপহরণের ঘটনাস্থলটি ঠিক শনাক্ত করা গেল না। লিংক রোড বলা হলেও এর কোন জায়গা থেকে লোকগুলো অপহূত হলো, তা নির্দিষ্ট করা গেল না। কারণ, কেউ কথা বলছে না এ বিষয়ে। সবচেয়ে নিরাশ হওয়ার মতো তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়ায় অপহরণের বিষয়টিই তারা নিশ্চিত নয়। এখন নিখোঁজ ধরে নিয়েই তদন্ত চলছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন ও লিটন নামে পাঁচজন গাড়িসহ ‘নিখোঁজ’ হন। ওই দিন রাতেই নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রায় একই সময়ে একই রাস্তা থেকে গাড়িসহ ‘নিখোঁজ’ হন জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ষাটোর্ধ্ব চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম।
এই ‘নিখোঁজ’দের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-সহকর্মী ও অনুসারীরা গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের অভিযোগ, নজরুলের প্রতিপক্ষ আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন তাঁকে অপহরণ করিয়েছেন। অপহরণকারীরা র্যাব পরিচয়ে সহযোগীসহ তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা আছে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাউন্সিলর নূর হোসেনের সঙ্গে নজরুলের বিবাদ দীর্ঘদিনের। এলাকার চাঁদাবাজি, কাঁচপুর সেতুর নিচে নদী দখল করে নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে এই বিরোধ বলে সূত্রগুলো দাবি করছে। তবে নূর হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগের জবাব দেবেন বলে গতকাল জানিয়েছেন। আর আইনজীবী চন্দন সরকারের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়ে পরিবার কোনো কিছুই ধারণা করতে পারছে না। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলছেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন। তদন্ত চলছে। তবে চন্দন সরকারের সঙ্গে নজরুল ইসলামের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ।
তবে জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চন্দন সরকার আর নজরুলের ব্যবহূত গাড়ি দুটি দেখতে একই রকমের, শুধু রং আলাদা (টয়োটা করোলা)। এ দুটি গাড়ি প্রায় একই সময়ে আদালত থেকে বের হয়েছিল রোববার। এ কারণে ভুল করে আইনজীবী চন্দন সরকারকে ‘ধরে’ নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অথবা এমন হতে পারে, ঘটনা দেখে ফেলায় তাঁকেও ‘তুলে’ নেওয়া হয়েছে।
সবাই চুপ: সড়কের ঠিক কোন জায়গা থেকে এ দুটি গাড়িভর্তি লোকদের ধরে নেওয়া হয়েছে, তারও কোনো হদিস পায়নি পুলিশ। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা বলছেন, শিবু মার্কেট মোড় থেকে তাঁর স্বামীকে ধরে নেওয়া হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে তাঁদের ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকায় ঘুরে কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে পাওয়া যায়নি। এলাকার ব্যবসায়ী, মোটর গ্যারেজের কর্মী, চা দোকানদার, স্কুটারচালক—এমন অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। জিজ্ঞেস করলেই লোকজন ‘জানি না’ বলে এড়িয়ে গেছেন। বেশির ভাগই বলেছেন, ‘আমি তখন দোকানে আছিলাম না।’
নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে শিবু মার্কেট মোড়ের দূরত্ব এক কিলোমিটার। এর পরই স্টেডিয়াম, তারপর জালকুঁড়ি, তারপর ভুঁইগড়, এরপর সাইনবোর্ড মোড় (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে মিলেছে)। আইনজীবী চন্দনের বাসা জালকুঁড়িতে। আদালত থেকে গাাড়িতে তাঁর বাসায় যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। এর মধ্যেই কোথাও থেকে তাঁকে ‘তুলে নেওয়া’ হয়েছে।
এই সড়কেরই ভুঁইগড় থেকে ১৬ এপ্রিল অপহূত হন পরিবেশ আইনবিদ রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। ৩৫ ঘণ্টা পর তিনি অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তি পেলেও এখনো জানা যায়নি কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল। তবে ওই অপহরণের ঘটনাটির একজন (মোটর মেকানিক) প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। ছিলেন আবু বকর সিদ্দিকের গাড়ির চালকও।
স্থানীয় এক চা-বিক্রেতা বললেন, ‘ওই ব্যাডায় ঘটনা দেইখ্যা বিপদে পড়ছে। একবার সাম্বাদিকেরা হ্যারে টানে, আরেকবার পুলিশ-র্যাবে টানে। হেই ভয়ে আমরা এহন কিছুই দেহি না।’ এই পরিস্থিতিতে এই সাতজনকে কারা, কীভাবে ধরে নিয়ে গেল, তার প্রত্যক্ষ বর্ণনা এখন পর্যন্ত পাওয়া গেল না।
অপহরণ নয়, নিখোঁজ: গতকাল দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক গোলাম ফারুক ‘ঘটনাস্থলে’ যান। অপহূত ব্যক্তিদের পরিবার ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখান থেকে নজরুলকে ধরে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর স্ত্রী দাবি করছেন, সেই জায়গা আমরা পরিদর্শন করেছি। তবে তাঁদের অপহরণ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তাই তাঁরা অপহূত হয়েছেন, সে বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। তাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, এমনটা ধরে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। নিখোঁজদের পরিবারের দেওয়া তথ্যগুলোও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সন্দেহজনক লোকটি কে?: একই মামলায় নজরুলসহ ১৫ জন গত রোববার আদালতে হাজিরা দিতে যান। এ সময় নজরুলের আরও কিছু সহযোগী-শিষ্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এই পর্যায়ে তাঁরা সন্দেহের বশে পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ও দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে ধরে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
আদালত পুলিশ ও আইনজীবী সূত্র জানায়, নজরুলের লোকজন ওই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের হাতে দিলেও তিনি নিজেকে অভিজাত একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। তবে জানতে চাইলে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি স্বীকার করেনি। এখন প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরাও নিজেদের নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না। এমনকি তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে নজরুলের সহযোগীদের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য মেলেনি। তবে কয়েকজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নজরুলের গাড়ির পেছনে সাদা রঙের একটি বড় মাইক্রোবাস যেতে দেখেছেন। তাঁদের সন্দেহ, ওটিই ছিল অপহরণকারীদের গাড়ি।
কতজন প্রয়োজন: ‘নিখোঁজ’দের স্বজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, সাতজনকে দুটি গাড়িসহ তুলে নিয়ে যেতে কতজন লোক প্রয়োজন? বাংলাদেশে এমন দুর্ধর্ষ অপহরণকারীরা ঘুরে বেড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে?
এর আগে ধরে নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর পরিচয় ব্যবহার করা হলেও এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা কেউ জানে না। তাঁদের ক্ষোভ, তবু সরকার কীভাবে বলছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো?
বিক্ষোভ-আতঙ্ক: নজরুল ইসলামসহ ‘নিখোঁজ’ পাঁচজনের সন্ধান এবং অভিযুক্ত নূর হোসেনসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন নজরুলের সমর্থকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার ও গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।
মামলা: সহযোগীসহ নজরুল ইসলামকে অপহরণের ঘটনায় সোমবার রাত সোয়া নয়টায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এজাহারে আসামি হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, ইকবাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের নাম রয়েছে। কাউন্সিলর নূর হোসেন ও ইয়াসিন সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হককে। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, শত্রুতার জের ধরে আসামিরা র্যাব পরিচয়ে তাঁর স্বামীকে গাড়ির চালক ও অপর তিন সহযোগীসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়।
অপহূত নজরুলের ছোট ভাই আবদুস সালাম জানান, তাঁরা ঘটনার দিন বিকেলেই মামলা করতে ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের ‘ধৈর্য ধরে অপেক্ষা’ করতে বলে ফিরিয়ে দেয়। গতকাল দুপুরে এসপির কার্যালয়ে বিষয়টি অতিরিক্ত ডিআইজিকে জানালে তিনি মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর তাঁরা বিকেলে থানায় গেলে ওসি নেই জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। রাত সোয়া নয়টার দিকে ওসি থানায় গেলে মামলা করা হয়।
চন্দন সরকার: জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে জেলা বারের আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেন। এক ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। আইনজীবী নেতারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। পরে আইনজীবী সমিতির একটি প্রতিনিধিদল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করলে তাঁর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। চন্দন সরকারকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটও সমাবেশ করেছে। চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে মাতম চলছে। স্ত্রী অর্চনা সরকার, মেয়ে সুস্মিতা সরকারসহ স্বজনেরা চরম আতঙ্কিত ও অসহায় হয়ে পড়েছেন।
অর্চনা সরকার বলেন, তাঁর স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। তিনি সিভিল মামলা পরিচালনা করেন। তিনি রোজ দুপুরে বাড়িতে খেতে যান। এরপর নারায়ণগঞ্জ শহরে চেম্বারে বসেন। এর বাইরে কোথাও তাঁর যাতায়াত নেই। স্বামীকে ফেরত পেতে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক মঈনুর রহমান গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে জানান, ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকায় আইনজীবী চন্দন সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। গুলশান থানার পুলিশ বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে জানায়।
পাঁচ বছরে অপহরণ
২০১৪: ৫৩ জন
২০১৩: ৬৮ জন
২০১২: ৫৬ জন
২০১১: ৫৯ জন
২০১০: ৪৬ জন
সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র
No comments