অবিলম্বে তফসিল ঘোষণা করা হোক
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেকোনো আইন পাস করতে পারেন। তবে সেই আইন নির্বাচনসংক্রান্ত হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অবশ্যই মতামত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করবেন, তাঁদের নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো গলদ না থাকে, সেটি দেখা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেই বিবেচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত, বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সরকারি দল যে সংশোধনী পাস করিয়ে নিয়েছে, তাতে ফুটবল খেলোয়াড়দের মতো রাজনীতিকদের জার্সি বদলের প্রবণতা বাড়বে। এ ব্যাপারেও কমিশন নীরব থাকতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী, ২৭ অক্টোবরের পর জনপ্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা। কিন্তু সেই কর্তৃত্ব গ্রহণে অনীহা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যেখানে প্রবল বিভক্তি রয়েছে,
সেখানে কমিশনের উচিত ছিল সেই বিভক্তি থেকে নিজেকে সযত্নে দূরে রাখা। কিন্তু তারা সেটি করতে সফল হয়েছে, সে কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকারের ইচ্ছাপূরণেই সচেষ্ট রয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনী আচরণবিধিতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা নেই; তবে তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার আগে মন্ত্রীরা সরকারি সুবিধা নিয়ে ভোট চেয়ে বেড়ালেও কমিশন তার রাশ টানার প্রয়োজন বোধ করছে না। ফলে জনমনে সন্দেহ বেড়েছে। কমিশনের উচিত ছিল ২৭ অক্টোবরেই জনপ্রশাসনের কর্তৃত্ব যথাসম্ভব নিজের হাতে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা। সমঝোতার স্বার্থে তাতে পরিবর্তন আনা যেত। এখনো সময় আছে, নির্বাচন কমিশনকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অধিকতর সজাগ ও সতর্ক হওয়ার। প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই তার নিরপেক্ষ অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সংবিধানপ্রদত্ত ক্ষমতার সদ্ব্যবহার কেন প্রতিষ্ঠানটি করবে না?
নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথা বললেও কীভাবে সেটি তৈরি হবে, এখনো তা বলেনি। যদি জনমনে এই ধারণা হয় যে ইসি সরকার বা কোনো মহলের মুখাপেক্ষী, তাহলে রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ার পরও তাদের পক্ষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা কঠিন হবে। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে যেমন কঠোরভাবে আইনি বিধিবিধান মেনে চলতে হয়, তেমনি জন-আস্থার বিষয়েও সদা সজাগ থাকতে হয়। এই জন-আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল বলেই ২০০৭ সালে এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল। দেশবাসী আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। কেবল কথায় নয়, আচরণেও নির্বাচন কমিশন কথাটি মনে রাখবে আশা করি।
No comments