ভর্তি, মান ও দক্ষ জনশক্তি
কিছুদিন আগে এইচএসসির ফল প্রকাশিত হলো। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে একেবারেই শ্রেষ্ঠ বিবেচিত এই জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫৮ হাজার ছাত্রের অনেকেই শুধু তাদের পছন্দের বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, গ্রহণযোগ্য মানের বিশ্ববিদ্যালয়েই যে ভর্তি হতে পারবে না, তা পরিসংখ্যান ছাড়াও বলা যায়। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নানা সমস্যার সমাধানে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হলো:
১. বর্তমান সরকার গত পাঁচ বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তি, আরও গোটা দুয়েক পাবলিক পরীক্ষা। অতিসম্প্রতি টিআইবির সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষার মতো বিশাল খাতে দুর্নীতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। তবে এর পরও শিক্ষার মানে যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা বলার সুযোগ নেই।
২. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে লটারিপদ্ধতি, তাকে শহরভিত্তিক সমন্বিত করা প্রয়োজন। যেমন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহরে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্রদের অভিভাবকেরা পছন্দের স্কুলগুলো সাজিয়ে দেবেন নিজের ঠিকানাসহ। একটি লটারির মাধ্যমে সব স্কুলের আসনগুলো বরাদ্দ করা হবে।
৩. স্কুলের ওপরের শ্রেণীতে কিংবা কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ভৌগোলিক অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা আমাদের দেশকে এমন সমৃদ্ধ করতে পারিনি যে সেখানে শত শত নটর ডেম কলেজ কিংবা ভিকারুননিসা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মতো ভালো কলেজ থাকবে। সুতরাং আমাদের ছেলেমেয়েরা সাধারণ স্কুলে পড়বে, এটাই বাস্তবতা। বরং এলাকাভিত্তিক ভর্তিব্যবস্থা চালু হলে নানা এলাকায় ভালো স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে স্কুল-কলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানজটও হ্রাস পাবে।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ প্রকৌশল, কৃষি ও অন্য বিষয়সমূহে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমন্বিত ভর্তি-পরীক্ষা গ্রহণের সময় এসেছে। শাহজালাল ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি-পরীক্ষা আয়োজন করে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও ভালো হবে যদি আমেরিকার স্যাট পরীক্ষার অনুরূপ একটি পরীক্ষার স্কোরকেও ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। সুতরাং পাবলিক পরীক্ষাসহ সমন্বিত কোনো ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি করাতে আপত্তির কিছু দেখি না।
৪. পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল আমাদের সমাজে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের মুখস্থনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলছে, সৃজনশীল করে নয়। যদিও সম্প্রতি সৃজনশীল প্রশ্ন দিয়ে আমাদের ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলাফলে ধাপের সংখ্যা (গ্রেডিং সিস্টেমের কল্যাণে) এবং ধাপের মানগুলো এতই সাধারণ যে ছেলেমেয়েরা সামান্য চেষ্টায়ই সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে যাচ্ছে। অফুরন্ত প্রাণশক্তির তরুণদের আমরা গ্রহণযোগ্য চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাদের দক্ষতাকে প্রশংসনীয় পরিমাণে বৃদ্ধি করতে পারছি না, যা মেধাস্থানসংবলিত শিক্ষাব্যবস্থা পারত। ছাপার হরফে লোভনীয় ও মর্যাদার সেই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ছাত্রদের যে প্রাণান্ত চেষ্টা এবং তার ফলে তাদের যে অর্জন, তা কিন্তু অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল, যার জন্য না রাষ্ট্র, না পরিবারকে বিনিয়োগ করতে হতো। ছেলেমেয়েদের সুপ্তশক্তির বিকাশের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে। চ্যালেঞ্জ না থাকলে তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকশিত হওয়ার কারণ নেই। আমাদের প্রবর্তিত জিপিএ সিস্টেম সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারছে না।
৫. আমেরিকা-কানাডাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল কিংবা স্যাট স্কোর ছাড়াও সামাজিক কাজে অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কিশোর তরুণদের মধ্যে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, দেশের প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম বিকশিত করতে দেশের সেবা করার নানা রকম কর্মসূচি রয়েছে। কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককেই দেশের জন্য কাজ করতে হয়। একজন মেধাবী স্নাতক হয়তো অনেক কম বেতনে দেশের জন্য গবেষণা করে এবং এটুকু ত্যাগের মাধ্যমে দেশের প্রতি তার ভালোবাসা দানা বাঁধে। আমাদের দেশে বয়স্কদের জন্য শিক্ষা, স্কুল-কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কিংবা রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কিংবা শ্রী বৃদ্ধিতে পাবলিক পরীক্ষার পর ছাত্রদের অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
৬. আমাদের শিক্ষার মানকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতা যেমন অলিম্পিয়াডের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত দেশের ভৌত অবকাঠামো কিংবা শিক্ষকদের দক্ষতা ও শিক্ষার সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। সুতরাং আমাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে আমাদের কোমলমতি তরুণ ছাত্রদের অফুরন্ত প্রাণশক্তিকে জ্ঞানান্বেষণে লাগানোর ব্যয়সাশ্রয়ী পদ্ধতি নেই। আমাদের ছাত্রদের সৃষ্টিশীল করতে চাই সৃজনশীল প্রশ্ন, যার জন্য আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। অবহেলিত জনপদ ও জনগোষ্ঠীর ছাত্ররাও যাতে করে ভালো শিক্ষা পায়, এর জন্য চাই চমৎকার বই এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে সময়সূচি করে টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান। একজন শিক্ষক পড়াবেন আর ১০ লাখ ছাত্র তা থেকে শিখবে, এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে?
৭. কম্পিউটার বিজ্ঞানে সিস্টেমের থেকে উপাত্তকে অধিক মূল্যবান মনে করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিজিটাল মিডিয়ায় থাকা এই উপাত্তের সর্বোত্তম ব্যবহার আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারছি না। পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় সংশ্লিষ্ট তথ্য সংরক্ষণ করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তথ্যের মধ্যে নানা সম্পর্ক আবিষ্কার করে তা একাধারে যেমন পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে পারি, অন্যদিকে ছাত্র ও অভিভাবকদের পড়ালেখার নানা সিদ্ধান্তে যেমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা কোনো বিষয়ে ভর্তির সম্ভাবনা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দান করা সম্ভব।
স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, বিশেষ করে শিক্ষার উন্নয়নে ডিজিটালসহ সব প্রযুক্তির জুতসই প্রয়োগে ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে দেশে উন্নত মানের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করলে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে যে শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের প্রয়োজন, তা আমরা তৈরি করতে পারব।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
১. বর্তমান সরকার গত পাঁচ বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তি, আরও গোটা দুয়েক পাবলিক পরীক্ষা। অতিসম্প্রতি টিআইবির সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষার মতো বিশাল খাতে দুর্নীতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। তবে এর পরও শিক্ষার মানে যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা বলার সুযোগ নেই।
২. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে লটারিপদ্ধতি, তাকে শহরভিত্তিক সমন্বিত করা প্রয়োজন। যেমন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহরে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্রদের অভিভাবকেরা পছন্দের স্কুলগুলো সাজিয়ে দেবেন নিজের ঠিকানাসহ। একটি লটারির মাধ্যমে সব স্কুলের আসনগুলো বরাদ্দ করা হবে।
৩. স্কুলের ওপরের শ্রেণীতে কিংবা কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ভৌগোলিক অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা আমাদের দেশকে এমন সমৃদ্ধ করতে পারিনি যে সেখানে শত শত নটর ডেম কলেজ কিংবা ভিকারুননিসা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মতো ভালো কলেজ থাকবে। সুতরাং আমাদের ছেলেমেয়েরা সাধারণ স্কুলে পড়বে, এটাই বাস্তবতা। বরং এলাকাভিত্তিক ভর্তিব্যবস্থা চালু হলে নানা এলাকায় ভালো স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে স্কুল-কলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানজটও হ্রাস পাবে।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ প্রকৌশল, কৃষি ও অন্য বিষয়সমূহে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমন্বিত ভর্তি-পরীক্ষা গ্রহণের সময় এসেছে। শাহজালাল ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি-পরীক্ষা আয়োজন করে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও ভালো হবে যদি আমেরিকার স্যাট পরীক্ষার অনুরূপ একটি পরীক্ষার স্কোরকেও ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। সুতরাং পাবলিক পরীক্ষাসহ সমন্বিত কোনো ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি করাতে আপত্তির কিছু দেখি না।
৪. পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল আমাদের সমাজে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের মুখস্থনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলছে, সৃজনশীল করে নয়। যদিও সম্প্রতি সৃজনশীল প্রশ্ন দিয়ে আমাদের ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলাফলে ধাপের সংখ্যা (গ্রেডিং সিস্টেমের কল্যাণে) এবং ধাপের মানগুলো এতই সাধারণ যে ছেলেমেয়েরা সামান্য চেষ্টায়ই সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে যাচ্ছে। অফুরন্ত প্রাণশক্তির তরুণদের আমরা গ্রহণযোগ্য চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাদের দক্ষতাকে প্রশংসনীয় পরিমাণে বৃদ্ধি করতে পারছি না, যা মেধাস্থানসংবলিত শিক্ষাব্যবস্থা পারত। ছাপার হরফে লোভনীয় ও মর্যাদার সেই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ছাত্রদের যে প্রাণান্ত চেষ্টা এবং তার ফলে তাদের যে অর্জন, তা কিন্তু অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল, যার জন্য না রাষ্ট্র, না পরিবারকে বিনিয়োগ করতে হতো। ছেলেমেয়েদের সুপ্তশক্তির বিকাশের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে। চ্যালেঞ্জ না থাকলে তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকশিত হওয়ার কারণ নেই। আমাদের প্রবর্তিত জিপিএ সিস্টেম সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারছে না।
৫. আমেরিকা-কানাডাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল কিংবা স্যাট স্কোর ছাড়াও সামাজিক কাজে অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কিশোর তরুণদের মধ্যে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, দেশের প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম বিকশিত করতে দেশের সেবা করার নানা রকম কর্মসূচি রয়েছে। কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককেই দেশের জন্য কাজ করতে হয়। একজন মেধাবী স্নাতক হয়তো অনেক কম বেতনে দেশের জন্য গবেষণা করে এবং এটুকু ত্যাগের মাধ্যমে দেশের প্রতি তার ভালোবাসা দানা বাঁধে। আমাদের দেশে বয়স্কদের জন্য শিক্ষা, স্কুল-কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কিংবা রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কিংবা শ্রী বৃদ্ধিতে পাবলিক পরীক্ষার পর ছাত্রদের অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
৬. আমাদের শিক্ষার মানকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতা যেমন অলিম্পিয়াডের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত দেশের ভৌত অবকাঠামো কিংবা শিক্ষকদের দক্ষতা ও শিক্ষার সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। সুতরাং আমাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে আমাদের কোমলমতি তরুণ ছাত্রদের অফুরন্ত প্রাণশক্তিকে জ্ঞানান্বেষণে লাগানোর ব্যয়সাশ্রয়ী পদ্ধতি নেই। আমাদের ছাত্রদের সৃষ্টিশীল করতে চাই সৃজনশীল প্রশ্ন, যার জন্য আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। অবহেলিত জনপদ ও জনগোষ্ঠীর ছাত্ররাও যাতে করে ভালো শিক্ষা পায়, এর জন্য চাই চমৎকার বই এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে সময়সূচি করে টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান। একজন শিক্ষক পড়াবেন আর ১০ লাখ ছাত্র তা থেকে শিখবে, এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে?
৭. কম্পিউটার বিজ্ঞানে সিস্টেমের থেকে উপাত্তকে অধিক মূল্যবান মনে করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিজিটাল মিডিয়ায় থাকা এই উপাত্তের সর্বোত্তম ব্যবহার আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারছি না। পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় সংশ্লিষ্ট তথ্য সংরক্ষণ করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তথ্যের মধ্যে নানা সম্পর্ক আবিষ্কার করে তা একাধারে যেমন পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে পারি, অন্যদিকে ছাত্র ও অভিভাবকদের পড়ালেখার নানা সিদ্ধান্তে যেমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা কোনো বিষয়ে ভর্তির সম্ভাবনা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দান করা সম্ভব।
স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, বিশেষ করে শিক্ষার উন্নয়নে ডিজিটালসহ সব প্রযুক্তির জুতসই প্রয়োগে ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে দেশে উন্নত মানের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করলে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে যে শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের প্রয়োজন, তা আমরা তৈরি করতে পারব।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
No comments