মিশরের গণতন্ত্র ও ষড়যন্ত্র: মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব by সানাউল হক
মিশরের তাহরীর স্কোয়ারের আন্দোলনের মুখে
ক্ষমতাসীন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রেসিডেন্ট মোর্সিকে ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনার
প্রতি কেন যেন এক কাকতলীয়, বায়বীয়, অথচ শক্তিশালী এক কলকাঠি নাড়ার গন্ধ
পাওয়া যাচ্ছে। কোথায় যেন একটা মিল। মনে হচ্ছে নেপথ্যের খেলার ছক আবর্তিত
হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে চলেছে। যথেষ্ট সন্দেহ ও জিঘাংসা এই কারণে,
পেছনের ইতিহাস আর আজকের বাস্তবতা, যেমন করে বেনজীর ভূট্টোকে হটিয়ে সামরিক
উর্দি পরা সেনাশাসনের আড়ালে বেসামরিক সরকারের লেবাসের সাথে, সেদিনকার
বাংলাদেশের সামরিক সরকারের বেসামরিকীকরণের আলামতকে অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য
সহকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, অথচ বাস্তবে কিন্তু বেনজীর সরকার পতনের সাথে
সেদিনকার সরকারের অনেক মিল ছিলো এবং উৎসাহিত হয়েছিলো, আজকের বহু বছর পরে
যোজন-যোজন দূরে মিশরের মোর্সি সরকারের পতনের সাথে কেন জানি বাংলাদেশের
পর্দার অন্তরালের খেলার রাজনীতির সেই দাবার চালের কথাই বার বার মনে পড়ছে।
বিশেষ করে এই ক’দিনের রাজনৈতিক ঘটনা।
প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে কার্যত দেশটি ফিরে গেছে সামরিক শাসনে। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে। স্থগিত করা হয়েছে সংবিধান। নতুন যে সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে দৃশ্যত এর নেপথ্যে ক্ষমতার চাবি রয়েছে সেনাবাহিনী, বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি। ফলে আগামী দিনগুলোতে মিশরের ভবিষ্যৎ কি তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী, মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি মারাত্মক এক আঘাত হেনেছে। এখন অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই সংগঠনটি বাধ্য হয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। যদি তারা তা-ই করে তাহলে মিশরে অস্থিরতা কমবে না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করেন, মিশরের সেনাবাহিনী ভয়াবহ একটি বিষয়ে হাত দিয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র জেহাদ আল হাদ্দাদ বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত মোহাম্মদ মুরসিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার সরকারে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে করা হয়েছে আটক। এর মধ্যে রয়েছেন জেহাদ হাদ্দাদের পিতা এসাম আল হাদ্দাস, মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখার প্রধান সাদ আল তাকাতনি। রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্র আল আহরাম বলেছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ও সদস্য মিলে প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মুরসি বিরোধী ও তার সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলমান বিক্ষোভের পর সেনাবাহিনী ৩রা জুলাই বুধবার গভীর রাতে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ঘোষণা দেন, মুরসি এখন মিশরের কোন নেতা নন। তিনি দেশের জনগণের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অন্তর্বতী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় মিশরের সুপ্রিম কনস্টিটিউশনাল কোর্টের প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুরের। যথারীতি তাকে শপথ পড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সরকারের যাত্রা হলো মিশরে। ২৯ শে জুন এই বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মুরসি। কিন্তু নিয়তির বিধান অনুসারে এখন তিনিই মুরসির স্থান দখল করলেন। ওদিকে মুরসি আর মিশরের প্রেসিডেন্ট নন- সেনাপ্রধানের এমন ঘোষণা দেয়ার পর ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ার আনন্দে ফেটে পড়ে। রাতের তাহরির স্কয়ার আলোয় আলোয় ঝলসে যায়। আতশবাজির আলোয়, লেসার রশ্মিতে অন্য এক আবহ সৃষ্টি করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ছিল অনেকটা আগে থেকেই। অনেক দিন ধরেই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার বাসনা সেনাপ্রধান জেনারেল সিসির মনে ছিল। তিনি ৩রা জুলাই বুধবার রাতে সংবিধান স্থগিত করে মুরসিকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার করা হয় মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকর্মীকে। বন্ধ করে দেয়া হয় কয়েকটি ইসলামী টেলিভিশন চ্যানেল।
২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মিশরে ও ঐ অঞ্চলে মুসলিম ব্রাদারহুড বেশ ভাল করছিল। এর কারণ, এ সংগঠনটি অত্যন্ত সুসংগঠিত। তাদের রয়েছে সততার সুনাম। ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে তারা এগিয়ে গেছে। কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে সংঘাত তৈরি হলো এর সমাধান কোথায় বা কতদিন পরে মিটবে নাকি আদৌ মিটবে না- এ প্রশ্নের কোন উত্তর আপাতত নেই। ওদিকে মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের ১ম বর্ষপূর্তি ছিল ৩০শে জুন। এ উপলক্ষে তার সমর্থকরা মাঠে নামে। মাঠে নামে বিরোধী পক্ষও। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। এ অবস্থায় ১লা জুলাই সেনাবাহিনী মুরসিকে সঙ্কট সমাধানের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। তারা বলে, ওই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে তারা দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে। মুরসি এ সময়সীমাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করেন না। কেউ তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। ৩রা জুলাই স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে চারটায় শেষ হয় সেনাবাহিনীর সময়সীমা। এরপরই সেনাবাহিনীর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা ও যুব সমাজের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেনারেলরা। তখনই গুজব ছড়িয়ে পড়ে মিশরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে যাচ্ছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতারা বলে দেন, অভ্যুত্থান প্রক্রিয়া চলছে। ততক্ষণে রাজপথে নেমেছে সেনা সদস্যরা। নামানো হয় ট্যাংক। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সামনে মোতায়েন করা হয় সেনা ও ট্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল দর্শকদের টেনে নিয়ে যায় মিশরে, তাহরির স্কয়ারে। তারা নিয়মিত সম্প্রচার বাদ দিয়ে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে একটানা মিশরের সংবাদ পরিবেশন করতে থাকেন। বাংলাদেশে গভীর রাত পর্যন্ত বলা হয়, সেনাবাহিনী অল্পক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেবে। আরও গভীর রাতে দেখানো হয়, সেনাপ্রধান সিসি বিবৃতি দিচ্ছেন। সেখানে তিনি ঘোষণা করছেন, মুরসি এখন আর মিশরের কোন নেতা নন। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন ভবিষ্যতের রোডম্যাপ। বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুরকে অন্তরবর্তী সরকারের সময়ে দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি এ কাজ করবেন যতদিন নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট না আসেন। সুপ্রিম কনস্টিটিউশনাল কোর্ট প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজন করবে। একটি ‘সম্মান সনদ’ তৈরি করে তা জাতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হবে। জেনারেল সিসির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সাঁজোয়া যান রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছুটতে শুরু করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের টেলিভিশন স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মিশরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সেবার ক্ষমতাচ্যুত হন প্রায় ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক। তার প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। তিনি ক্ষমতায় আসেন ২০১২ সালের ৩০শে জুন। কিন্তু এক বছর ক্ষমতায় থাকায় তাকেও সেনাদের রোষানলে পড়তে হলো। ঘটলো অভ্যুত্থান।
মুরসিকে কেন সরে যেতে হলো
গত বছর জুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোহাম্মদ মুরসি ইসলামের মহান শাসক হজরত আবু বকর সিদ্দিকের একটি উক্তি উদ্ধৃত করে দেশবাসীকে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ আমি ন্যায়পরায়ণ থাকব, আমি আল্লাহর দাসত্ব করব, ততক্ষণ আমাকে সহায়তা করবেন। আল্লাহর দাসত্ব না করলে আমার কথা শুনবেন না। ডঃ মুরসী কেবল প্রেসিডেন্ট ছিলেন না, তিনি একজন হাফেজে কোরান। গত বছর তিনি রমজানের তারাবী নামাজের ইমামতি করেছিলেন।
ভাগ্যের পরিহাস, মিসরের জনগণের একাংশ তার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেন। ইসলামের ওপর অবিচল থাকার জন্য। মিসরের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসি চেয়েছিলেন, ইসলামের ঐহিত্যবাহী এই দেশটি পরিচালিত হবে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনেছিলেন তিনি। সম্ভবত এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ‘রাজনৈতিক ইসলামের’ শত্রুরা তাকে মেনে নিতে পারেননি।
তাই ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কথিত বিক্ষোভের অজুহাতে অবাধ নির্বাচনে জয়ী একজন প্রেসিডেন্টকে বন্দুকের নলের মাথায় সরিয়ে দিয়ে তাকে বন্দি করা হয়েছে। যারা গণতন্ত্রের কথা জোরেশোরে বলে বেড়ায়, তারা প্রকাশ্যেই এই গণতন্ত্রবিনাশী তৎপরতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মুরসির অপরাধ কী?
তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে আমরা শাসকদের দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কথা খুব শুনি। কিন্তু মুরসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নেই মোটেই। শাসকরা অন্য যে কারণে জনগণের বিরাগভাজন হন, তার একটি হলো ব্যর্থতা। তবে পাহাড়সমান সমস্যা নিয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা একটি দেশের শাসকের সাফল্য ব্যর্থতা মূল্যায়নে এক বছরই কি যথেষ্ট? অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ২০১১ সালের বিশ্বকাঁপানো এক বিপ্লবের মাধ্যমে মিসরবাসী স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু মুরসি হয়তো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
মোবারকবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে মিসরীয় অর্থনীতির অন্যতম খাত পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি তিনি। আইএমএফের ৪৮০ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। আশা করা হয়েছিল এই অর্থটা পেলে মিসরীয় অর্থনীতিতে কিছুটা গতি ফিরবে। মুরসি দায়িত্ব নেয়ার পর আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও তখনও চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ওই ঋণ পেতে হলে জ্বালানিতে ভর্তুকি বিপুলহারে কমানো হতো। ফলে এতে জনগণের ওপর তাৎক্ষণিক কষ্টের বোঝা চাপত। তাই হয়তো ধীরে চলার কৌশল নিয়েছিলেন মুরসি।
তবে অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়েও মুরসিবিরোধী বিক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক ইসলাম। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন ব্রাদারহুডের এই নেতা চেয়েছিলেন ইসলামী মূল্যবোধ দ্বারা শাসিত হবে তার দেশ। কিন্তু কয়েক যুগের কথিত ধর্মনিরপেক্ষতায় অভ্যস্ত মিসরের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগ মুরসির এই নীতি মেনে নিতে পারেনি। তাছাড়া মুরসি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তাতে সেনাবাহিনীর দাপট দিন দিনই কমে আসছিল। অথচ গত ৬০ বছর ধরে কার্যত এই সেনাবাহিনীই মিসর শাসন করেছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মিসরের পতিত স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক আমলের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা পদে পদে মুরসিকে বাধা দিয়েই আসছিল। শেষ পর্যন্ত এসব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা কেড়ে নেয় সেনাবাহিনী। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মুরসিবিরোধী বিক্ষোভ ছিল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের নীল নকশারই অংশ।
দৃশ্যত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে প্ররোচিত করেছেন মিসরের মোবারক ও বামপন্থী নেতাকর্মীরা। তবে তাদের মোহ হয়তো অচিরেই কেটে যাবে।
দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, যে কোনো বিচারে একটি বৈধ সরকারকে উৎখাত করে অস্ত্রের মুখে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলেও পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশিরভাগ দেশই এর নিন্দা করেনি। সৌদি বাদশাহ তো কার্যত একে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওবামা ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করলেও এই অভ্যুত্থানকে অভ্যুত্থান বা ক্যু বলে উল্লেখ করেননি।
একই পথের যাত্রী যুক্তরাজ্য সরকারও। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকরাও মুরসির বিদায়ে উল্লসিত। তারা চায়নি মিসরে ইসলামী ব্রাদারহুডের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের দেশেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটুক। সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ মুরসির বিদায়ে ‘রাজনৈতিক ইসলামের’ সমাপ্তি দেখছেন। তবে এ ঘটনাকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক আর সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে তিউনিসিয়া।
অনেকেরই ধারণা, আরব দুনিয়ায় রাজতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা এবং তাদের সহযোগীরা চায়নি মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী ব্রাদারহুডের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি ইসলামী শক্তির বিকাশ ঘটুক। এতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অস্তিত্ব সঙ্কট তৈরিসহ মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা স্বার্থ দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই মিসরে নবীন গণতন্ত্রকে কবর দেয়ার যাত্রায় সহযোগীর ভূমিকা নিয়েছে মিসরের আদালত।
তবে মিসরের বহু জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ। এর প্রমাণ দেখা যায়, মুরসির সমর্থনে মিসরে লাখো জনতা সমাবেশ করেছে। তবে এসব খবর তেমন গুরুত্ব পায়নি পশ্চিমা গণমাধ্যমে। মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হয়নি সেনাবাহিনী, তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে। কোনো কারণ ছাড়াই তার দল ইসলামী ব্রাদারহুডের নেতাদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিসরের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ মুসলিম বিশ্বের উদীয়মান শক্তি তুরস্কের গত শতাব্দীর শেষের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। সেখানে একটি ইসলামপন্থী সরকারকে বারবার সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের অবিচারের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত জনগণের ইচ্ছারই জয় হয়েছে। তুরস্কের একে পার্টি আজ দেশটির অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি। তুরস্ককে তারা বিশ্ব রাজনীতির নেতৃত্বে নিয়ে এসেছে। নানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে মিসরে তুরস্কের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হবে। সেজন্য কত সময় লাগে আর কত রক্ত ঝরাতে হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশরের সদস্যপদ স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছে কায়রো। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসি’কে ক্ষমতাচ্যুত করার কারণে আফ্রিকান ইউনিয়ন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিষদ এ সংস্থার কর্মকান্ডে আমাদের অংশগ্রহণ স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কায়রো গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে।” এর আগে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) শুক্রবার সকালে সংস্থাটিতে মিশরের সদস্যপদ স্থগিত করে। মিশরে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার হাত বদল হওয়ার কারণে এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানায় সংস্থাটি। ইথিউপিয়ার রাজধানীতে এইউ’র শান্তি ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা সংবিধান পরিপন্থী। এইউ কমিশনের প্রধান দালামিনি যুমা সাংবাদিকদের বলেছেন, মিশরে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশটির সদস্যপদ স্থগিত থাকবে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি নীতি হলো, জোটভুক্ত কোনো দেশে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার হাত বদল হতে পারবে না। সংবিধান মেনেই সব কিছু করতে হবে। এর আগে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটায় সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সদস্যপদ স্থগিত করে এই জোট। জাপান সরকারের মুখপাত্র মিশরের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাপান সরকার পরিস্থিতির উপর সতর্ক নজর রাখছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী পরিষদসচিব ইয়োশিহিদে সুগা সাংবাদিকদেরকে বলেন জাপান সকল পক্ষকে সহিংসতা এড়িয়ে, সর্বোত্তম সংযম প্রদর্শন করে দায়িত্বশীল আচরন করার আহ্বান জানাচ্ছে। তিনি বলেন, জাপান আশা করে শিগগিরই গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতার দায়িত্ব নেবে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া এবং নিন্দা
মোহাম্মদ মুরসিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করাকে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশ স্বাগত জানালেও এ ব্যাপারে অন্যান্য দেশে শোক, অস্বস্থি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। নিজেদের মুরসির ব্যর্থতার সাথে সম্পৃক্ত না করে উদারপন্থী ইসলামি দলগুলো এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। তুরস্কের বর্তমান সরকার এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, মোহাম্মদ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে যে অভ্যুত্থান হয়েছে তা অবৈধ। মিসরের চলমান ঘটনাবলির ব্যাপারে গত ১১ জুলাই মন্তব্য করতে গিয়ে এরদোগান বলেন, তুরস্কের দৃষ্টিতে যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থান অবৈধ। তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক অভ্যুত্থান যে দেশে যে কারণে এবং যে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই হোক না কেন তা সেই দেশের গণতন্ত্র, জনগণ ও ভবিষ্যৎকে হত্যা করে। কাজেই আমাদের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, তুরস্কে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী বারবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছিল। তারা নির্বাচিত ইসলামপন্থী সরকারকে কয়েকবার ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু এরদোগানের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসলামপন্থী সরকার রাজনীতিতে নাক গলানোর জন্য সেনাবাহিনীকে এমনভাবে শায়েস্তা করেছে, মনে হয় তারা আর ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের দুঃসাহস দেখাবে না।
সিরিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডও মিসরে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। সিরিয়ার চলমান সংঘাতে বাশার আল আসাদের পতন ঘটলে মুসলিম ব্রাদারহুডই দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে। তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের পর দু’বছর আগে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আননাহাদা পার্টির প্রধান রশিদ ঘানুশি মিসরে সেনা-অভ্যুত্থানের পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, তার দলের নীতি মুরসির দলের মত না। তবে তিউনিসিয়া সামারিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। সালাফি ও চরমপন্থীদের সাথে তুলনা করে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে ব্যালট বাক্সের সাথে চরমপন্থীদের দীর্ঘ বিরোধের বিষয় ইঙ্গিত করে সিরিয়ান ইসলামি ফ্রন্টের নেতা টুইটারে বলেন, ‘গণতন্ত্র আমাদেরকে ইসলাম অথবা আল্লাহর আইন দেবে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ অবশ্য মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করাকে অভিনন্দিত করেন। তিনি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করাকে রাজনৈতিক ইসলামের মৃত্যু বলে স্বাগত জানান। বাশার আল আসাদ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে সেকুলার সরকার ও চরমপন্থীদের মধ্যকার সঙ্ঘাত বলে উল্লেখ করেন। এ দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সেকুলার জাতীয়তাবাদী ফিলিস্তিনি অংশ মুরসির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকে অনুমোদন দিয়েছে।
অপর দিকে গাজার হামাস প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি। উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক আরব রাষ্ট্রগুলো মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের সংগঠিত শক্তি ও উত্থানকে ভয় পায়। কারণ তারা মনে করে ব্রাদারহুডের গণতান্ত্রিক আন্দোলন তাদের রাজতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং একদিন তারা রাজতন্ত্রকে উৎখাত করবে। এই জুজু থেকে তারা ব্রাদারহুড ও মুরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সৌদি আরব মুরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এ কারণে। সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে মিসরের অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে মুরসিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছবি সম্প্রচার করা হয়। একই কারণে বাহরাইন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার ও শাসকেরা মিসরের অন্তর্বতী প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুরকে দাায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুত অভিনন্দন জানিয়েছে। কাতার অধিকতর সতর্কতার সাথে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। কাতার ওই অঞ্চলের ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের পর মিসরের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য কাতার মিসরকে অন্তত ৮০০ কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করে। কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেল মুরসি সমর্থকদের বিক্ষোভ সমাবেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করে। কাতারের শাসকেরা ইসলামি আদর্শকে প্রমোট করার চেয়ে তাদের আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখার ওপর জোর দিচ্ছে। অবশ্য আগে তারা ইসলামি আদর্শকে প্রমোট করার ব্যাপারে উৎসাহব্যঞ্জক ভূমিকা পালন করেছে।
কাতারের বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির নতুন আমির শেখ তামিম আদলি মনসুরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন; তুরস্ক, তিউনিসিয়া, ইরান মিসরের অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলো একটি দুর্বল ও অনুগত মিসর চায়। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের ইমিলি হোফারেস এ কথা বলেন। ইরান সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে; তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা তাদের স্বার্থের অনুকূলে যেটা হয় সে দিকেই তাদের সমর্থন জানাচ্ছে। এক বছর আগে মুরসি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন তিনি ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় খুলে দিয়ে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। বাশার আল আসাদের প্রভাব ইসলামি আল ওয়াাভি বংশধারার শিয়া পরিবারের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এ কারণে ইরান তার প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরানি মিডিয়াগুলো মুরসির বিরুদ্ধে ক্যুকে স্বাগত জানালেও তেহরানের সরকারি পক্ষ নীরব ছিল। পাঁচ দিন পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মিসরের ‘রাজপথের গণতন্ত্রের’ সমালোচনা করে। গার্ডিয়ানের কলামিস্ট আইয়ান ব্ল্যাকের মতে, সৌদিরা চায় মিসর ইরানের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হোক এবং আমেরিকার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুক। এ দিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ব্রাদারহুডকে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে রাজনৈতিকভাবে পরাজয়ে বাধ্য করা হলে চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই চরমপন্থা হচ্ছে গণতন্ত্র বা নির্বাচনবিরোধী অবস্থান। নাদিম শিহাদি বলেন, মুরসি ও ব্রাদারহুডকে যে দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে তারা এখন জুলুমের শিকার। এতে করে চরমপন্থার দিকেই মানুষের সমর্থন বৃদ্ধি পাবে।
মুরসির মুক্তি চাইল ইউরোপীয় ইউনিয়ন
মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের অব্যাহত আন্দোলনের মধ্যে এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মুক্তি চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কায়রো সফররত ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন বুধবার খোলাখুলিভাবেই মিশরের সেনা সমর্থিত সরকারের কাছে মুরসিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। গত ৩ জুলাই সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিশরের আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়েছে। অ্যাস্টন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি তাকে মুক্তি দেয়া উচিত। আমাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে তিনি ভালো আছেন। আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারলে খুশি হতাম।’ অ্যাস্টন ব্রাদারহুড নেতা আমর দারাগ, মুরসির প্রধানমন্ত্রী হিশাম কান্দিলসহ ব্রাদারহুড নেতাদের সঙ্গে ৪৫ মিনিট ব্যাপী বৈঠক করেন। সাক্ষাৎ শেষে দারাগ বলেন, ‘অ্যাস্টন মিশরের সংকট সমাধানের কোনো প্রস্তাব দেননি। আমরা কারো কাছে সাহায্যও চাই না। আমরা আমাদের ওপর নির্ভর করি। প্রভাবশালী ইইউ মুরসিকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানোর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজপথে বিক্ষোভ করেছিলেন মুরসি সমর্থকরা। এদিকে, ব্রাদারহুড নেতাদের ওপর নিপীড়নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আম্মান সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। জার্মান, আমেরিকা যদিও ডঃ মুরসির মুক্তি চেয়েছে।
শেষ কথা
মিশর হচ্ছে আমেরিকার সর্বোচ্চ সামরিক সহায়তা গ্রহণকারী দেশ। ১৯৪৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত আমেরিকার কাছ থেকে ৭,০০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা পেয়েছে কায়রো। এই সামরিক সহায়তা সাধারণত আমেরিকার মতাদর্শের বা পছন্দের বাইরের কোন রাষ্ট্রকে দেয়া হয় না। মিশরে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এই কথাটি বিশ্বাস করলে স্বয়ংক্রীয়ভাবে মিশরের সাথে আমেরিকার সামরিক সম্পর্ক ছিণœ হবার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়। এছাড়া মিশরের সাথে আমেরিকার এই সম্পর্ককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কায়রো। সুতরাং আমেরিকার দেয়া বিবৃতি নিশ্চয়ই ভারসাম্যতা মেনে হবে এমনটাই মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমরবিদগণ।
আমরা যে কোন মূল্যে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কোন দল বা গোষ্ঠীর অনৈতিক অশুভ ক্ষমতার দাপট সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ কামনা করে না। বিশ্ব শান্তির এই পথপরিক্রমায় মুক্তিকামী মানুষ যুগে যুগে গণতন্ত্রের পথেই হেঁটেছে। ৫২ শতাংশ ভোটারের ভোটে যে দল ক্ষমতায় এসেছিল সেই দলকে তার পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দেয়া উচিৎ ছিল। আমরা আশাকরি মিশরের জনগণ দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে একটি সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক ধারার মধ্য দিয়ে। তা না হলে মিশরকে গণতন্ত্রের জন্য আবারও অনেক মুল্য দিতে হবে।
নানান সমীকরণে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব কষছে ইহুদী রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলো, সেই সাথে যোগ হয়েছে আরবের ধনী রাজতন্ত্রের ধারক ও বাহকেরা, সময়ই বলে দিবে মিশর সহ সিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, লেবালন, ইরান, ইরাকের ভাগ্য কোন দিকে।
No comments