দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গ্রহণে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প স্থাপনের
মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গ্রহণে বীমা কোম্পনিগুলোর প্রতি আহবান
জানিয়ে বলেছেন, এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
তিনি
বলেন, ‘একটি দেশের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বীমাশিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বীমার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গ্রহণ
করা যেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা এবং হতদরিদ্র জনগণের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও ক্ষুদ্র বীমার প্রচলন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেব।’
তিনি শনিবার এখানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রথম সার্ক বীমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
ফেডারেশন অব স্টেট অর্গানাইজেশন অব সার্ক কান্ট্রিজের সহযোগিতায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হল-‘বৈশ্বিক বাস্তবতার নিরীখে করণীয়।’
আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সার্ক মহাসচিব আহমাদ সালিমের পক্ষে সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক ইবরাহীম গফুরী বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব যথাক্রমে মো. ফজলুল করিম ও এবিএম নুরুল হক বক্তৃতা করেন।
বীমা সংস্থাসমূহ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের জিম্মাদার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে দাবি নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত সুরাহা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বীমা কোম্পানিগুলো যাতে সংগৃহীত অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে এবং দাবি উত্থাপিত হলে যাতে দ্রুত তা নিষ্পত্তি করা যায় সেদিকে বীমা নিয়ন্ত্রককে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়নে বীমা ক্ষেত্রে সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদিও প্রত্যেক দেশ তার নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এই প্রচেষ্টা আরও বেগবান হতে পারে যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীমা এরকমই একটি ক্ষেত্র যেখানে সার্কভূক্ত দেশসমূহ পরস্পরের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধন করতে পারে।’
বীমাশিল্পকে টেকসই এবং লাভজনক করতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশসমূহ পারস্পরিক সহযোগিতার আহবান জানান।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্কভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত এবং তারাও নিজ নিজ দেশে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধন করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের দুর্দশা লাঘব, সামাজিক কল্যাণ সাধন এবং শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ঝুঁকি নিরসনে বীমা খাতের অবদান অপরিসীম। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মূলধন সংগ্রহেও বীমার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, ‘যে দেশের বীমাশিল্প যত উন্নত ও নিয়ন্ত্রিত, সে দেশের অর্থনীতিও তত মজবুত।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের বীমাশিল্পের উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর পরই ১৯৩৮ সালের বীমা আইন বাতিল করে নতুন বীমা আইন ২০১০ প্রবর্তন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ এর মাধ্যমে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স এর পরিবর্তে একটি অধিকতর ক্ষমতাসম্পন্ন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
তিনি বীমাশিল্পের উন্নয়নে আইডিআরএ ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের বীমাশিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় মডেল। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে এখন স্টার পারফরমার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘গত চার বছরে দেশের ৫ কোটি মানুষ দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কভুক্ত দেশসমূহ কমবেশি একই ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বলেন, ‘এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগাযোগ, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শেখ হাসিনা, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বীমাশিল্পে একটি নবযুগের সূচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বীমা নিয়ন্ত্রকদের এই পদক্ষেপ এ অঞ্চলের বীমা খাতকে আরো এগিয়ে নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।সূত্র: বাসস।
No comments