‘রীতি’ মানেন না যে বিচারপতি!
শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য ভাঙলেন মাদ্রাজ
হাইকোর্টের বিচারপতি কে চান্দ্রু । দীর্ঘ কর্মজীবনের পর তার অবসরে যাওয়া
উপলক্ষে কোনো বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন না করার অনুরোধ করলেন ভারপ্রাপ্ত
প্রধান বিচারক আর কে আগ্রাওয়ালকে।
একইসঙ্গে কোনো বিশেষ ডিনার বা ফটোসেশন করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। গত ৮ মার্চ ছিল তার শেষ কর্মদিবস।
এর আগে মাদ্রাজ হাইকোর্টে সংবর্ধনা না নিয়েই বিদায় নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ১৯২৯ সালে, বিচারপতি এম জি এইচ জ্যাকসনের বিদায়ের সময়।
অবশ্য বিচারপতি হিসেবে চান্দ্রু এমনিতেই আনুষ্ঠানিকতা পরিহার ও সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি নিজের যাবতীয় সম্পত্তির বিবরণ দিয়ে প্রধান বিচারক এইচ এল গোখলের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন। এর আগে কোনো বিচারপতি এমন কাজ করেননি। এছাড়া বিচারপতিদের আর্দালি পরিবিষ্ট হয়ে আদালতে বা নিজ চেম্বারে যাওয়ার রীতিও শুরুতেই বাদ দেন চান্দ্রু; বাতিল করেন তার জন্য বরাদ্দ লাল-টুপি ও মুগুর হাতে আর্দালিদের। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রীতি অনুযায়ী একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হলেও তাকেও বাদ দেন তিনি।
তিনি আইনজীবীদের তাকে ‘মাই লর্ড’ বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করে বলেন, শুধু স্যার বললেই চলবে। অবশ্য অনেক আইনজীবী তার এ নিষেধ মানেননি।
হাইকোর্টের ৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৯৬ হাজার মামলার নিষ্পত্তি করেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে নিষ্পত্তি করেছেন দেড় হাজার মামলার। এক লাখে পৌঁছাতে না পারায় কোনো আফসোস আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৭ বছরে ৯৬ হাজার নিষ্পত্তিও খারাপ নয়।
নববর্ষসহ অন্যান্য উৎসব ও ছুটির দিনে তার গ্রিনওয়ে রোডের বাসার গেট বন্ধ থাকে। গেটের বাইরে একটি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, যাতে লেখা- ‘এখানে কোনো দেব-দেবী নেই, তাই ফুলের প্রয়োজন নেই; কেউ ক্ষুধার্ত নয়, মিষ্টির প্রয়োজন নেই; কেউ শীতে কাঁপছে না, শালের প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু শুভকামনা চাই।’
রিটায়ারমেন্টের পর তাহলে কী করার চিন্তা করছেন? এর উত্তরে চান্দ্রু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের প্র্যাকটিস বা আদালতের উচ্চপদ নয়, এটা নিশ্চিত। যাদের আমার সেবা প্রয়োজন, তাদের পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করছি আমি। এছাড়া প্রচুর পড়াশোনা ও লেখালেখি করবো। আইনের বই ও জার্নাল সম্পাদনা করার ইচ্ছা আছে। আশা করি এই অফিস ছাড়ার পর এখনকার চেয়ে বেশিই ব্যস্ত থাকবো।”
গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি আগ্রাওয়ালকে দেওয়া পত্রে তিনি লিখেছেন, “অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় দেওয়া এই আদালতের ঐতিহ্যগত রীতি। সেখানে আইনজীবীরা একটি বিদায়ী বক্তব্য রাখেন, সেই বিচারপতি তার উত্তর দেন। এরপর হয় চা পান ও ফটোসেশন। অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ী বিচারপতিকে স্মারক দেওয়া হয়। এরকম বিদায়ী সংবর্ধনার রীতি অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন। আমি আপনাকে এরকম কোনো সংবর্ধনার অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ করছি। আমি খুশি হবো, যদি ৮ মার্চ দিনটি আমার জন্য এই আদালতের অন্যান্য দিনের মতোই কাটে।”
ভারতের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল মতিলাল সি শেতলবাদের ‘মাই লাইফ: ল অ্যান্ড আদার থিংস’ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে চান্দ্রু বলেন, “বারের পক্ষ থেকে বিদায়ী বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়ার রীতি বন্ধ করতে হবে। ওই বিচারপতি সম্পর্কে বারের মনোভাব যা-ই হোক না কেন, যিনি বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বিদায়ী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, তিনি মিষ্টি-মধুর শব্দ ব্যবহার করে বিচারপতির প্রশংসা ও গুণাগুণ করতে বাধ্য। অথচ ওই বিচারপতি দায়িত্বপালনকালে সত্যিই সেসব করেছেন কিনা, তা জানার কোনো সুযোগ বারের নেই।”
কলেজে পড়ার সময় থেকেই চান্দ্রু সব রকম আনুষ্ঠানিকতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। শ্রমিক অধিকার আদায়সহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেসময় ভারতের সমাজতান্ত্রিক পার্টির (সিপিএম) ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭৬ সালে আইন পড়া শেষ করে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরবর্তীতে রাও অ্যান্ড রেড্ডি ল ফার্মে যোগ দেন। ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন। ২০০৯ সালের নভেম্বর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
সম্প্রতি অন্ধ প্রদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি ভি ভি রাও মন্তব্য করেছেন, ভারতের আদালতগুলোয় যে সোয়া ৩ কোটির বেশি মামলা জমে আছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করতে ৩২০ বছরের বেশি সময় লাগবে। কে চারুর মতো আরও কয়েকজন বিচারপতি থাকলে হয়তো কয়েক দশকের মধ্যেই এগুলোর নিষ্পত্তি হয়ে যেতো।
অবশ্য বিচারপতি হিসেবে চান্দ্রু এমনিতেই আনুষ্ঠানিকতা পরিহার ও সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি নিজের যাবতীয় সম্পত্তির বিবরণ দিয়ে প্রধান বিচারক এইচ এল গোখলের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন। এর আগে কোনো বিচারপতি এমন কাজ করেননি। এছাড়া বিচারপতিদের আর্দালি পরিবিষ্ট হয়ে আদালতে বা নিজ চেম্বারে যাওয়ার রীতিও শুরুতেই বাদ দেন চান্দ্রু; বাতিল করেন তার জন্য বরাদ্দ লাল-টুপি ও মুগুর হাতে আর্দালিদের। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রীতি অনুযায়ী একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হলেও তাকেও বাদ দেন তিনি।
তিনি আইনজীবীদের তাকে ‘মাই লর্ড’ বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করে বলেন, শুধু স্যার বললেই চলবে। অবশ্য অনেক আইনজীবী তার এ নিষেধ মানেননি।
হাইকোর্টের ৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৯৬ হাজার মামলার নিষ্পত্তি করেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে নিষ্পত্তি করেছেন দেড় হাজার মামলার। এক লাখে পৌঁছাতে না পারায় কোনো আফসোস আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৭ বছরে ৯৬ হাজার নিষ্পত্তিও খারাপ নয়।
নববর্ষসহ অন্যান্য উৎসব ও ছুটির দিনে তার গ্রিনওয়ে রোডের বাসার গেট বন্ধ থাকে। গেটের বাইরে একটি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, যাতে লেখা- ‘এখানে কোনো দেব-দেবী নেই, তাই ফুলের প্রয়োজন নেই; কেউ ক্ষুধার্ত নয়, মিষ্টির প্রয়োজন নেই; কেউ শীতে কাঁপছে না, শালের প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু শুভকামনা চাই।’
রিটায়ারমেন্টের পর তাহলে কী করার চিন্তা করছেন? এর উত্তরে চান্দ্রু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের প্র্যাকটিস বা আদালতের উচ্চপদ নয়, এটা নিশ্চিত। যাদের আমার সেবা প্রয়োজন, তাদের পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করছি আমি। এছাড়া প্রচুর পড়াশোনা ও লেখালেখি করবো। আইনের বই ও জার্নাল সম্পাদনা করার ইচ্ছা আছে। আশা করি এই অফিস ছাড়ার পর এখনকার চেয়ে বেশিই ব্যস্ত থাকবো।”
গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি আগ্রাওয়ালকে দেওয়া পত্রে তিনি লিখেছেন, “অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় দেওয়া এই আদালতের ঐতিহ্যগত রীতি। সেখানে আইনজীবীরা একটি বিদায়ী বক্তব্য রাখেন, সেই বিচারপতি তার উত্তর দেন। এরপর হয় চা পান ও ফটোসেশন। অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ী বিচারপতিকে স্মারক দেওয়া হয়। এরকম বিদায়ী সংবর্ধনার রীতি অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন। আমি আপনাকে এরকম কোনো সংবর্ধনার অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ করছি। আমি খুশি হবো, যদি ৮ মার্চ দিনটি আমার জন্য এই আদালতের অন্যান্য দিনের মতোই কাটে।”
ভারতের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল মতিলাল সি শেতলবাদের ‘মাই লাইফ: ল অ্যান্ড আদার থিংস’ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে চান্দ্রু বলেন, “বারের পক্ষ থেকে বিদায়ী বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়ার রীতি বন্ধ করতে হবে। ওই বিচারপতি সম্পর্কে বারের মনোভাব যা-ই হোক না কেন, যিনি বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বিদায়ী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, তিনি মিষ্টি-মধুর শব্দ ব্যবহার করে বিচারপতির প্রশংসা ও গুণাগুণ করতে বাধ্য। অথচ ওই বিচারপতি দায়িত্বপালনকালে সত্যিই সেসব করেছেন কিনা, তা জানার কোনো সুযোগ বারের নেই।”
কলেজে পড়ার সময় থেকেই চান্দ্রু সব রকম আনুষ্ঠানিকতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। শ্রমিক অধিকার আদায়সহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেসময় ভারতের সমাজতান্ত্রিক পার্টির (সিপিএম) ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭৬ সালে আইন পড়া শেষ করে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরবর্তীতে রাও অ্যান্ড রেড্ডি ল ফার্মে যোগ দেন। ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন। ২০০৯ সালের নভেম্বর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
সম্প্রতি অন্ধ প্রদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি ভি ভি রাও মন্তব্য করেছেন, ভারতের আদালতগুলোয় যে সোয়া ৩ কোটির বেশি মামলা জমে আছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করতে ৩২০ বছরের বেশি সময় লাগবে। কে চারুর মতো আরও কয়েকজন বিচারপতি থাকলে হয়তো কয়েক দশকের মধ্যেই এগুলোর নিষ্পত্তি হয়ে যেতো।
No comments