পবিত্র কোরআনের আলো-যাকে চান সাম্রাজ্য দিতে পারেন, যাকে চান অপমানিত করতে পারেন by মোস্তফা হোসেইন
২৬. ক্বুলিল্লা-হুম্মা মা-লিকাল মুলকি তু'তিল মুল্কা মান্ তাশা-উ ওয়াতানযিউ'ল মুলকা মিম্মান তাশা-উ; ওয়াতুয়ি'য্যু মান তাশা-উ ওয়াতুযিল্লু মান তাশা-উ বিইয়াদিকাল খাইর; ইন্নাকা আ'লা-কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর। ২৭. তূলিজুল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়াতূলিজু ন্নাহা-রা ফিল লাইলি, ওয়াতুখরিজুল হাইয়া মিনাল মায়্যিতি ওয়াতুখরিজুল মাইয়েতা মিনাল হাইয়ি, ওয়াতারযুক্বু মান তাশা-উ বিগাইরি হিছাব।
২৮. লা-ইয়াত্তাখিযিল মু'মিনূনাল কা-ফিরীনা আউলিয়া-আ মিন দূনিল মু'মিনীন; ওয়া মান ইয়াফআ'ল যা-লিকা ফালাইছা মিনাল্লাহি ফী শাইয়িন ইল্লা-আন তাত্তাক্বূ মিনহুম তুক্বা-তান; ওয়া ইউহায্যিরুকুমুল্লাহু নাফছাহূ; ওয়া ইলাল্লাহিল মাসীর। [সূরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৬-২৮]
অনুবাদ
২৬. (হে নবী!) আপনি বলুন, হে মহান আল্লাহ, তুমি যাকে ইচ্ছা সাম্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও সাম্রাজ্য কেড়ে নাও, যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত করো, সব রকমের কল্যাণ তোমারই হাতে নিবদ্ধ। নিশ্চয়ই তুমি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।
২৭. তুমি রাতকে দিনের ভেতর ঢুকিয়ে দাও এবং আবার দিনকে রাতের ভেতর। প্রাণহীন বস্তু থেকে তুমি প্রাণের আবির্ভাব ঘটাও এবং প্রাণবন্ত জীব থেকে প্রাণহীন বস্তু এবং যাকে তুমি চাও বিনা হিসাবে রিজিক দান করো।
২৮. ইমানদার ব্যক্তিরা কখনো ইমানদারদের বদলে কাফেরদের নিজেদের বন্ধু বানিয়ো না, যদি তোমাদের কেউ তা করে তবে আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে হ্যাঁ, তাদের কাছ থেকে কোনো আশঙ্কা থাকলে বা নিজেদের বাঁচানোর প্রয়োজন হলে তা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তায়ালা তো বরং তার নিজ সত্তার ব্যাপারেই তোমাদের সাবধান করছেন।
ব্যাখ্যা
২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। ২৬ নম্বর আয়াতে মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান সাম্রাজ্য দান করেন আবার যার কাছ থেকে চান সাম্রাজ্য কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন, আবার যাকে চান অপমানিত করেন, সব কল্যাণ তাঁর কাছে। তবে আল্লাহর এই অসীম ক্ষমতা তাঁর সৃষ্ট কার্যকারণ নিয়মের ভেতর দিয়ে চলে। অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টি করা নিয়মের ভেতর দিয়ে ন্যায় ও যুক্তির ভিত্তিতে তিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সব কিছুই পারেন। তবে মানুষ নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কর্মকাণ্ড করে এর ভিত্তিতে তিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর প্রকৃতির রাজ্য তথা তাঁর ইচ্ছা, ন্যায় ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে চলে। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তবে তিনি ন্যায় ও কল্যাণের প্রতিভূ।
২৭ নম্বর আয়াতে প্রকৃতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বপ্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভেতর ঢোকান। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে দিন বড় হয়ে রাতের কিছু অংশ দিনের ভেতর ঢুকে যায় এবং শীতকালে রাত বড় হয়ে দিনের কিছু অংশ রাতের ভেতর ঢুকে যায়। এটা আল্লাহর প্রকৃতির এক অনুপম শৃঙ্খলা। এ আয়াতে আল্লাহর ক্ষমতার আরো একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রাণহীন বস্তু থেকে তিনি প্রাণের আবির্ভাব ঘটান এবং প্রাণ বস্তু জীব থেকে প্রাণহীন বস্তু জন্ম দেন, আর তিনি যাকে চান বিনা হিসাবে রিজিক দান করেন। আমরা আল্লাহর প্রকৃতির প্রতি লক্ষ করলে এই ধারার হাজার হাজার উদাহরণ দেখতে পাই। প্রাণহীন বস্তু বলতে এখানে দৃশ্যত প্রাণহীন অর্থাৎ যার মধ্যে প্রাণ গুপ্ত আছে, দৃশ্যত প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যায় না, এমন বস্তুকেও বোঝানো হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে এসব বস্তুকে প্রাণহীন মনে করত সাধারণ মানুষ।
২৮ নম্বর আয়াতে মোমেন বান্দাদের কাফেরদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যা করার আগে কাফের শব্দের অর্থ পরিষ্কার করতে হবে। অমুসলিম মানেই কাফের নয়, কাফের হচ্ছে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ। যুদ্ধের সময় কাফেরদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব অবশ্যই পরিহার করে চলা উচিত। অন্যথায় সত্যের পথে সংগ্রাম ব্যাহত হবে এবং মোমেনের ইমানী ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বিনষ্ট হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য এরূপ বন্ধুত্ব ও সাহচর্য আরো বেশি আপত্তিকর ও দোষণীয়। তবে বন্ধুত্ব ও সাহচর্যের সঙ্গত কিছু কারণ এই আয়াতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ
২৬. (হে নবী!) আপনি বলুন, হে মহান আল্লাহ, তুমি যাকে ইচ্ছা সাম্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও সাম্রাজ্য কেড়ে নাও, যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত করো, সব রকমের কল্যাণ তোমারই হাতে নিবদ্ধ। নিশ্চয়ই তুমি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।
২৭. তুমি রাতকে দিনের ভেতর ঢুকিয়ে দাও এবং আবার দিনকে রাতের ভেতর। প্রাণহীন বস্তু থেকে তুমি প্রাণের আবির্ভাব ঘটাও এবং প্রাণবন্ত জীব থেকে প্রাণহীন বস্তু এবং যাকে তুমি চাও বিনা হিসাবে রিজিক দান করো।
২৮. ইমানদার ব্যক্তিরা কখনো ইমানদারদের বদলে কাফেরদের নিজেদের বন্ধু বানিয়ো না, যদি তোমাদের কেউ তা করে তবে আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে হ্যাঁ, তাদের কাছ থেকে কোনো আশঙ্কা থাকলে বা নিজেদের বাঁচানোর প্রয়োজন হলে তা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তায়ালা তো বরং তার নিজ সত্তার ব্যাপারেই তোমাদের সাবধান করছেন।
ব্যাখ্যা
২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। ২৬ নম্বর আয়াতে মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান সাম্রাজ্য দান করেন আবার যার কাছ থেকে চান সাম্রাজ্য কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন, আবার যাকে চান অপমানিত করেন, সব কল্যাণ তাঁর কাছে। তবে আল্লাহর এই অসীম ক্ষমতা তাঁর সৃষ্ট কার্যকারণ নিয়মের ভেতর দিয়ে চলে। অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টি করা নিয়মের ভেতর দিয়ে ন্যায় ও যুক্তির ভিত্তিতে তিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সব কিছুই পারেন। তবে মানুষ নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কর্মকাণ্ড করে এর ভিত্তিতে তিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর প্রকৃতির রাজ্য তথা তাঁর ইচ্ছা, ন্যায় ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে চলে। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তবে তিনি ন্যায় ও কল্যাণের প্রতিভূ।
২৭ নম্বর আয়াতে প্রকৃতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বপ্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভেতর ঢোকান। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে দিন বড় হয়ে রাতের কিছু অংশ দিনের ভেতর ঢুকে যায় এবং শীতকালে রাত বড় হয়ে দিনের কিছু অংশ রাতের ভেতর ঢুকে যায়। এটা আল্লাহর প্রকৃতির এক অনুপম শৃঙ্খলা। এ আয়াতে আল্লাহর ক্ষমতার আরো একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রাণহীন বস্তু থেকে তিনি প্রাণের আবির্ভাব ঘটান এবং প্রাণ বস্তু জীব থেকে প্রাণহীন বস্তু জন্ম দেন, আর তিনি যাকে চান বিনা হিসাবে রিজিক দান করেন। আমরা আল্লাহর প্রকৃতির প্রতি লক্ষ করলে এই ধারার হাজার হাজার উদাহরণ দেখতে পাই। প্রাণহীন বস্তু বলতে এখানে দৃশ্যত প্রাণহীন অর্থাৎ যার মধ্যে প্রাণ গুপ্ত আছে, দৃশ্যত প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যায় না, এমন বস্তুকেও বোঝানো হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে এসব বস্তুকে প্রাণহীন মনে করত সাধারণ মানুষ।
২৮ নম্বর আয়াতে মোমেন বান্দাদের কাফেরদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যা করার আগে কাফের শব্দের অর্থ পরিষ্কার করতে হবে। অমুসলিম মানেই কাফের নয়, কাফের হচ্ছে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ। যুদ্ধের সময় কাফেরদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব অবশ্যই পরিহার করে চলা উচিত। অন্যথায় সত্যের পথে সংগ্রাম ব্যাহত হবে এবং মোমেনের ইমানী ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বিনষ্ট হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য এরূপ বন্ধুত্ব ও সাহচর্য আরো বেশি আপত্তিকর ও দোষণীয়। তবে বন্ধুত্ব ও সাহচর্যের সঙ্গত কিছু কারণ এই আয়াতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments