জীবনের শুরুতেই দুর্নীতি দর্শন!
দা ফেলে দিয়ে আছাড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করার মতো ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেল মতিঝিল বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়ায়। মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে সেখানে অপেক্ষমাণদের ১১৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আর নির্বাচিতদের তালিকায়ও অপেক্ষমাণদেরই স্থান দেওয়া হয়েছে নোটিশ বোর্ডে।
রাজধানীর একটি বিখ্যাত স্কুলের এ ঘটনাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? রাজধানীতে খ্যাতিমান স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে নানা ধরনের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়ে থাকে। দু-চারজন শিক্ষার্থী সেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পেয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উন্নয়ন ফির নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। সেসব স্কুল অবশ্য রশিদ ছাড়াই টাকা আদায় করে। কিন্তু এভাবে পুকুর চুরির মতো ঘটনা সহসা কোথাও ঘটেছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। শুধু তা-ই নয়, এত বড় একটি ঘটনার প্রতিকার চেয়েও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়েছে। কোনো প্রতিকার পাননি তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এটা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের শরণাপন্ন হতে হয়েছে ভর্তিবঞ্চিত শিশুদের অভিভাবকদের। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে। ফলে এ দুর্নীতির সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি কমিটির লোকজনের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসছে। পাশাপাশি স্কুলের বাইরেও কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তা না হলে এত বড় কাজটি একা স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে করা সম্ভব হতো না। তদন্তকালে সে দিকে নজর দিতে হবে। দেখতে হবে ১২১ জন শিক্ষার্থীর জীবনসংশ্লিষ্ট এ ঘটনাকেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কেন আমলে আনেনি। তারা হয়তো নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারে। এতে করেও কি দায় এড়ানো সম্ভব হবে তাদের পক্ষে? তাদের মাথায় আসেনি মেধা তালিকায় ৯০ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কোর করতে পেরেও কোনো শিক্ষার্থী যদি স্কুলে ভর্তি হতে না পারে তাহলে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোন নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। এভাবে ভর্তির লড়াইয়ের আয়োজন করে সেখানে বিজয়ীদের বাদ দিয়েই যদি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তাহলে এত ঘটা করে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা কেন? এই অর্থ লেনদেনের যে অভিযোগের কথা পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে তা-ও আমলে আনতে হবে। সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটি যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কারণ সরকারি তদন্ত কমিটিগুলো প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কখনো তা আলোর মুখ দেখে না। কিংবা সেই তদন্ত অনুযায়ী গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারেও মানুষ কখনো জানতে পারে না। অন্তত শিক্ষাসচিবের মন্তব্য অনুযায়ী বিষয়টিকে 'স্পর্শকাতর' হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হবে_এটাই প্রত্যাশা সবার।
No comments