ফতোয়া ও দোররা
আলোচনায় আবারও ফতোয়া। ফতোয়াবাজদের দোররার আঘাতে শরীয়তপুরের কিশোরী হেনার মৃত্যুর পর আবারও যেন নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, একুশ শতকে এসেও এ কোন অন্ধকারে বসবাস আমাদের? এখনো সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করা যাচ্ছে না কেন? ফতোয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের একটি ঐতিহাসিক রায়ও আছে।
সে রায় এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফতোয়ার নামে বছরের পর বছর একঘরে করে রাখা হচ্ছে। দোররা মারা হচ্ছে। পিটিয়ে মেরেও ফেলা হচ্ছে। ফতোয়া দেওয়া যে আইনবিরুদ্ধ কাজ, তার জন্য কী সাজা হবে_আমাদের দণ্ডবিধিতে এসবের উল্লেখ নেই। ফলে ফতোয়াবাজরা জঘন্য অপরাধ করলেও তাদের সাজা দেওয়া যাচ্ছে না।
ফতোয়াবাজির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ কিছু সময় তৎপর থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা মামলা করে না। মামলা করলেও পরে আপস করতে বাধ্য হয়। সব মিলে শেষ পর্যন্ত ফতোয়াবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফতোয়া দেওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত কারো বিচার হয়নি। তবে ফতোয়ার কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে কেবল সেই মৃত্যুর বিচারের কয়েকটি উদাহরণ আছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ফতোয়াবাজির ঘটনা ঘটেছে ৬৬৫টি। ২০১১ সালের এক মাসে তিনটি ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে ৩৯টি, ২০০৯ সালে ৪৮টি, ২০০৮ কিছুটা কম ছিল অর্থাৎ ২১টি, ২০০৭ সালে ফতোয়ার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি ৭৭টি, ২০০৬ সালে ঘটে ৬৬টি, এর আগে ২০০৫ সালে ৬৯টি, ২০০৪ সালে ৫৯টি, ২০০৩ সালে ৪৪টি এবং ২০০২ সালে ৩৯টি ফতোয়ার ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১৫ বছরে পাঁচ শতাধিক ফতোয়ার ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭টি। ফতোয়াবাজির কারণে মৃত্যু ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় হয়েছিল ২০০১ সালে। কিন্তু সেই রায় কার্যকর করা যায়নি। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুই ধর্মীয় নেতা আপিল করলে গত ১০ বছরেও সে আপিলের শুনানি হয়নি।
এর পাশাপাশি নতুন আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। ফতোয়ার রায়ে দেওয়া দোররার আঘাতে কারো মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তে ভিন্ন রিপোর্ট দিয়ে অনেক সময় মামলা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় মামলা আদালতে গিয়ে টেকে না। শরীয়তপুরে হেনার মৃত্যুর পর এমনটি ঘটেছে। হেনার মৃত্যুর পর প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশে হেনার মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এবারে মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। দুই ময়নাতদন্তের রিপোর্টের এই ফারাকে বিস্মিত উচ্চ আদালতও। এখানেই সমাজের প্রভাবশালীদের কারসাজি চোখে পড়ে। স্থানীয়ভাবে করা ময়নাতদন্তে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের অনুকূলে রিপোর্ট করিয়ে নেয়। ফলে আদালতে গিয়ে অনেক সময় অপরাধ প্রমাণ করা যায় না। এর পাশাপাশি আছে পুলিশের রহস্যময় ভূমিকা। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই এমন সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে, যা মামলার জন্য কোনো কাজে আসে না। হেনার মৃত্যুর পর পুলিশের তৈরি সুরতহাল রিপোর্ট নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছেন।
আমাদের সমাজ থেকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা যেমন দূর করা যাচ্ছে না, তেমনি দূর করা যাচ্ছে না ফতোয়া ও দোররার মতো বিষয়গুলো। সমাজের শরীরে পচন ধরা ক্ষতের মতো লেগে আছে ফতোয়া ও দোররা। সমাজকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন যথাযথ আইন প্রণয়ন এবং সে আইনের কঠোর প্রয়োগ। কিন্তু সেটি করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা সে ব্যাপারে যেন একেবারেই উদাসীন। এই উদাসীনতা দূর না হলে সমাজকে এই অভিশাপ থেকেও মুক্ত করা যাবে না।
ফতোয়াবাজির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ কিছু সময় তৎপর থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা মামলা করে না। মামলা করলেও পরে আপস করতে বাধ্য হয়। সব মিলে শেষ পর্যন্ত ফতোয়াবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফতোয়া দেওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত কারো বিচার হয়নি। তবে ফতোয়ার কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে কেবল সেই মৃত্যুর বিচারের কয়েকটি উদাহরণ আছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ফতোয়াবাজির ঘটনা ঘটেছে ৬৬৫টি। ২০১১ সালের এক মাসে তিনটি ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে ৩৯টি, ২০০৯ সালে ৪৮টি, ২০০৮ কিছুটা কম ছিল অর্থাৎ ২১টি, ২০০৭ সালে ফতোয়ার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি ৭৭টি, ২০০৬ সালে ঘটে ৬৬টি, এর আগে ২০০৫ সালে ৬৯টি, ২০০৪ সালে ৫৯টি, ২০০৩ সালে ৪৪টি এবং ২০০২ সালে ৩৯টি ফতোয়ার ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১৫ বছরে পাঁচ শতাধিক ফতোয়ার ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭টি। ফতোয়াবাজির কারণে মৃত্যু ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় হয়েছিল ২০০১ সালে। কিন্তু সেই রায় কার্যকর করা যায়নি। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুই ধর্মীয় নেতা আপিল করলে গত ১০ বছরেও সে আপিলের শুনানি হয়নি।
এর পাশাপাশি নতুন আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। ফতোয়ার রায়ে দেওয়া দোররার আঘাতে কারো মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তে ভিন্ন রিপোর্ট দিয়ে অনেক সময় মামলা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় মামলা আদালতে গিয়ে টেকে না। শরীয়তপুরে হেনার মৃত্যুর পর এমনটি ঘটেছে। হেনার মৃত্যুর পর প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশে হেনার মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এবারে মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। দুই ময়নাতদন্তের রিপোর্টের এই ফারাকে বিস্মিত উচ্চ আদালতও। এখানেই সমাজের প্রভাবশালীদের কারসাজি চোখে পড়ে। স্থানীয়ভাবে করা ময়নাতদন্তে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের অনুকূলে রিপোর্ট করিয়ে নেয়। ফলে আদালতে গিয়ে অনেক সময় অপরাধ প্রমাণ করা যায় না। এর পাশাপাশি আছে পুলিশের রহস্যময় ভূমিকা। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই এমন সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে, যা মামলার জন্য কোনো কাজে আসে না। হেনার মৃত্যুর পর পুলিশের তৈরি সুরতহাল রিপোর্ট নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছেন।
আমাদের সমাজ থেকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা যেমন দূর করা যাচ্ছে না, তেমনি দূর করা যাচ্ছে না ফতোয়া ও দোররার মতো বিষয়গুলো। সমাজের শরীরে পচন ধরা ক্ষতের মতো লেগে আছে ফতোয়া ও দোররা। সমাজকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন যথাযথ আইন প্রণয়ন এবং সে আইনের কঠোর প্রয়োগ। কিন্তু সেটি করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা সে ব্যাপারে যেন একেবারেই উদাসীন। এই উদাসীনতা দূর না হলে সমাজকে এই অভিশাপ থেকেও মুক্ত করা যাবে না।
No comments