মিয়ানমার-পরিবর্তনের অপরিহার্য শিখা by অং সান সু চি
আমাদের সময়ে পরিবর্তন কেন এত আকাঙ্ক্ষিত ও আনন্দ-জাগানিয়া বিষয় হয়ে উঠেছে? আজকের বার্মায় নিরন্তর বিতর্ক চলছে যে নতুন সরকার কি সত্যিকার পরিবর্তন আনবে, নাকি তা আসলে বেসামরিক লেবাসে পুরোনো সামরিক একনায়কতন্ত্রই থাকবে? প্রায় প্রতিদিনই মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, নতুন প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো কি কেবল বাইরের সাজসজ্জা বদল, নাকি তা সঠিক লক্ষ্যে খাঁটি পরিবর্তনের সংকেত? ২৩ বছরের কট্টর শাসনে বোধগম্য কারণেই পরিবর্তন পেতে ও দেখতে মানুষ অধীর। ২০১১ সালে বিশ্বজুড়ে ঘটা ঘটনাবলি এই চাওয়াকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
আরব বসন্তের রাজনৈতিক অভ্যুত্থান যে বিরাট মাত্রায় ঘটেছে, তাতে ২০১২ সালে আরব দুনিয়ায় অপরিবর্তনীয় ও মৌলিক পরিবর্তন এখন অতি প্রত্যাশিত। খুবই সম্ভব যে, অন্য জায়গাতেও একই রকম প্রভাব পড়বে। এ আশা পূরণ হবে কি না, তা আরও কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে নতুন ও সাহসী ভবিষ্যৎ সৃষ্টির সংকল্পও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমি আবেগ-উদ্দীপনাকেই সংকল্প হিসেবে বুঝছি, সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবার যেভাবে কোনো লক্ষ্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়াকে বুঝিয়েছেন।
তিউনিসিয়া, মিসর ও লিবিয়ার জনগণ কি দৃশ্যত অপ্রতিরোধ্য শাসনব্যবস্থাকে এ রকম আবেগের জোরেই উচ্ছেদ করেছে, নাকি তারা নিতান্তই ওয়েবারের ভাষায় ‘বন্ধ্যা উত্তেজনায়’ তাড়িত হয়েছে। যা থেকে এত বড় উথাল-পাথাল ঘটেছে, তাকে নিতান্তই বন্ধ্যা উত্তেজনা বলা কূটতর্ক বৈকি। তাহলেও তর্ক উঠতে পারে, আরব বসন্তের রসদ জুগিয়েছে যে আবেগ তা প্রতিরোধের প্রথম স্ফুলিঙ্গকে জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেই দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
প্রথম স্ফুলিঙ্গকে পূর্ণমাত্রায় ছড়িয়ে দিতে যদি সেই আদি তাড়নার দরকার হয়, তাহলে আরেকটি কার্যকর প্রভাবকও অবশ্যই থাকতে হয়। সেটা কি ক্ষমতা হতে পারে? জনগণের ক্ষমতা, অথবা প্রযুক্তির ক্ষমতা, অথবা বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সংহতির ক্ষমতা, অথবা পরিশেষে সামরিক ক্ষমতাই চূড়ান্ত, হয় তা প্রয়োগ করে কিংবা প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে? অন্যদিকে স্পর্ধার ক্ষমতারও প্রয়োজন সেই প্রাথমিক প্রেরণা, যা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদেরও যুগের পর যুগের ভয় বা স্বভাবজাত সতর্কতা সরিয়ে মাঠে নামতে সাহায্য করে? ক্ষমতা সুপ্তই থাকে, যতক্ষণ কোনো শক্তি তাকে চালিত না করে।
তাহলে বিষয়টা কি ‘আবেগ বনাম ক্ষমতা’? এর উল্টোটা কি হতে হয়? আবেগ ও ক্ষমতা কি স্বভাবজাতভাবেই বিপরীত?
মিসর ও তিউনিসিয়ার শাসকদের হাতে থাকা সব সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকাকে কি বিরত করেছিল? আর লিবিয়া ও সিরিয়ার শাসকদের কি প্ররোচিত করেছিল নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে?
তাহলে কি স্বৈরতন্ত্রের লৌহমুখোশের তলায় রক্তমাংসের মানবিক ইচ্ছাশক্তি বিরাজ করে? নাকি ওই জবরজং নিরস্ত্র জনতার মধ্যে থাকে সম্মিলিত জেদ, যারা চায় যেকোনো মূল্যে নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে। এবং এই জেদ বা ইচ্ছাশক্তি নিবিড়ভাবে ওই আবেগের সঙ্গে যুক্ত। এই ইচ্ছাশক্তি ও আবেগের মিলন হতে পারে তীব্র ও সাময়িক এবং যা হয়তো ওই ‘বন্ধ্যা উত্তেজনার’ বেশি কিছু নয়, অথবা তা কোনো নীতি বা লক্ষ্যের প্রতি দীর্ঘ মেয়াদে ক্রিয়াশীল এবং গভীরভাবে প্রোথিত হতে পারে; যা হয়তো মুক্তির মতো বিস্তৃত এবং আত্ম-সংরক্ষণের মতো সীমিত।
পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অহিংস পথে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত একজন হিসেবে আমি শিখেছি, সহকর্মী ও সমর্থকদের সংকল্পই অন্য সব কিছুর থেকে বড়। এবং এই সংকল্প আতশবাজি ফোটানোর কায়দায় প্রদর্শন করা যায় না, কিন্তু তা সব সময়ই থাকে। আমাদের আন্দোলনকে জাগিয়ে রাখার জন্য যে জরুরি স্ফুলিঙ্গটি দরকার, এটা দেয় তারই জোগান। এটা আবেগ এবং তা বন্ধ্যা নয়, বরং যা মানুষের মনকে চঞ্চল করে এবং সৃষ্টি করে ইতিহাস। এই আবেগই রূপান্তরিত হয় ক্ষমতায়। জনগণের আন্দোলনে এমন আবেগ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অকাট্য হাতিয়ার।
বার্মায় বারবার আমাদের দলের সবচেয়ে সক্রিয় এবং সবচেয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছে, তাদের নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মানুষও তাদের চেহারা প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু বারবারই তারা আবার উঠে এসেছে, তাদের ডাকে দুনিয়া সচকিত হয়েছে। ২০০২ সালে দ্বিতীয় দফায় গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর আমি সারা দেশ সফর করি। আমাদের কর্মীদের সংকল্পকে রূপান্তরিত হতে দেখি বিরাট বিরাট সমাবেশে। সেসব জমায়েত থেকেই ক্ষমতাসীনেরা আমাদের শক্তি ও আবেগ টের পায়। এই কিছুদিন হলো, আমাদের ইরাবতী নদীকে বাঁচানোর জন্য সর্বস্তরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়। সরকারের পরিকল্পিত বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র আবেগী আবেদন শুনতে বাধ্য হয় সরকার; বাঁধ প্রকল্পটি এই আমলের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
আবেগের ক্ষমতায় রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে কি উল্টোভাবে চালানো যায়? ক্ষমতা কি আবেগে পরিণত হতে পারে? যে ক্ষমতা রাজনৈতিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে, তাকে বিচ্ছিন্ন ক্ষমতা বলা যায় না? দলীয় ক্ষমতা, অর্থ ক্ষমতা, মিডিয়া ক্ষমতা, প্রেশার গ্রুপের ক্ষমতা এবং আরও অন্য অনেক ক্ষমতা রাজনৈতিক বিবর্তন ও বিপ্লবে ভূমিকা রাখে। তাই শাসকদের ক্ষমতার ভিত্তিতে থাকে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতাপ, তাকে অবশ্যই আবেগের বিপরীত হিসেবে দেখতে হবে। সে কারণেই স্বৈরতন্ত্রের ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক ক্ষমতার চরিত্র এক নয়।
সব প্রতিপত্তি সত্ত্বেও ক্ষমতা আবেগের থেকে কম স্বয়ংসম্পূর্ণ, আবেগ নিজেই নিজের ক্ষমতা সৃষ্টি করে। আবেগ নিজের মধ্যে এমন এক ক্ষমতা সৃষ্টি করে, যা তাকে আরও সক্ষম করে। অন্যদিকে, ক্ষমতার স্বভাবই হলো থিতু হওয়া। যখন কোনো ক্ষমতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে চালিত হয়, তখন তা হয় অপ্রতিরোধ্য বাইরের চাপে—তা হোক গণ-অভ্যুত্থান অথবা নির্বাচনী ভীতি।
ক্ষমতার থেকে আবেগই রাজনৈতিক পরিবর্তনে বেশি কার্যকর। অর্থবহ রাজনৈতিক পরিবর্তন মানে তাকে টেকসই হতে হবে। তার জন্য আবেগ ও ক্ষমতাকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে আপসে কাজ করতে হবে।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, কিন্তু তা যে হবে কিংবা তা যে কাঙ্ক্ষিতরূপে হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পথে সব সময়ই ঝুঁকি থাকবে, যখন আমরা অপরিচিত এলাকায় প্রবেশ করব। বার্মা ও আরব বসন্তের দেশগুলোর জন্য এবং ২০১২ সালে যারা এই পরিবর্তনের ফুল ও ফল ভোগ করতে চায়, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষমতা ও আবেগের মধ্যে বিচক্ষণ মেলবন্ধন ঘটানো, তারা উভয়ই যাতে সক্ষম হতে পারে, তার জন্য উভয়কেই হতে হবে কার্যকর ও সামগ্রিক।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
অং সান সু চি: মিয়ানমারের সামরিক শাসনবিরোধী অবিসংবাদী নেতা এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
তিউনিসিয়া, মিসর ও লিবিয়ার জনগণ কি দৃশ্যত অপ্রতিরোধ্য শাসনব্যবস্থাকে এ রকম আবেগের জোরেই উচ্ছেদ করেছে, নাকি তারা নিতান্তই ওয়েবারের ভাষায় ‘বন্ধ্যা উত্তেজনায়’ তাড়িত হয়েছে। যা থেকে এত বড় উথাল-পাথাল ঘটেছে, তাকে নিতান্তই বন্ধ্যা উত্তেজনা বলা কূটতর্ক বৈকি। তাহলেও তর্ক উঠতে পারে, আরব বসন্তের রসদ জুগিয়েছে যে আবেগ তা প্রতিরোধের প্রথম স্ফুলিঙ্গকে জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেই দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
প্রথম স্ফুলিঙ্গকে পূর্ণমাত্রায় ছড়িয়ে দিতে যদি সেই আদি তাড়নার দরকার হয়, তাহলে আরেকটি কার্যকর প্রভাবকও অবশ্যই থাকতে হয়। সেটা কি ক্ষমতা হতে পারে? জনগণের ক্ষমতা, অথবা প্রযুক্তির ক্ষমতা, অথবা বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সংহতির ক্ষমতা, অথবা পরিশেষে সামরিক ক্ষমতাই চূড়ান্ত, হয় তা প্রয়োগ করে কিংবা প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে? অন্যদিকে স্পর্ধার ক্ষমতারও প্রয়োজন সেই প্রাথমিক প্রেরণা, যা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদেরও যুগের পর যুগের ভয় বা স্বভাবজাত সতর্কতা সরিয়ে মাঠে নামতে সাহায্য করে? ক্ষমতা সুপ্তই থাকে, যতক্ষণ কোনো শক্তি তাকে চালিত না করে।
তাহলে বিষয়টা কি ‘আবেগ বনাম ক্ষমতা’? এর উল্টোটা কি হতে হয়? আবেগ ও ক্ষমতা কি স্বভাবজাতভাবেই বিপরীত?
মিসর ও তিউনিসিয়ার শাসকদের হাতে থাকা সব সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকাকে কি বিরত করেছিল? আর লিবিয়া ও সিরিয়ার শাসকদের কি প্ররোচিত করেছিল নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে?
তাহলে কি স্বৈরতন্ত্রের লৌহমুখোশের তলায় রক্তমাংসের মানবিক ইচ্ছাশক্তি বিরাজ করে? নাকি ওই জবরজং নিরস্ত্র জনতার মধ্যে থাকে সম্মিলিত জেদ, যারা চায় যেকোনো মূল্যে নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে। এবং এই জেদ বা ইচ্ছাশক্তি নিবিড়ভাবে ওই আবেগের সঙ্গে যুক্ত। এই ইচ্ছাশক্তি ও আবেগের মিলন হতে পারে তীব্র ও সাময়িক এবং যা হয়তো ওই ‘বন্ধ্যা উত্তেজনার’ বেশি কিছু নয়, অথবা তা কোনো নীতি বা লক্ষ্যের প্রতি দীর্ঘ মেয়াদে ক্রিয়াশীল এবং গভীরভাবে প্রোথিত হতে পারে; যা হয়তো মুক্তির মতো বিস্তৃত এবং আত্ম-সংরক্ষণের মতো সীমিত।
পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অহিংস পথে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত একজন হিসেবে আমি শিখেছি, সহকর্মী ও সমর্থকদের সংকল্পই অন্য সব কিছুর থেকে বড়। এবং এই সংকল্প আতশবাজি ফোটানোর কায়দায় প্রদর্শন করা যায় না, কিন্তু তা সব সময়ই থাকে। আমাদের আন্দোলনকে জাগিয়ে রাখার জন্য যে জরুরি স্ফুলিঙ্গটি দরকার, এটা দেয় তারই জোগান। এটা আবেগ এবং তা বন্ধ্যা নয়, বরং যা মানুষের মনকে চঞ্চল করে এবং সৃষ্টি করে ইতিহাস। এই আবেগই রূপান্তরিত হয় ক্ষমতায়। জনগণের আন্দোলনে এমন আবেগ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অকাট্য হাতিয়ার।
বার্মায় বারবার আমাদের দলের সবচেয়ে সক্রিয় এবং সবচেয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছে, তাদের নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মানুষও তাদের চেহারা প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু বারবারই তারা আবার উঠে এসেছে, তাদের ডাকে দুনিয়া সচকিত হয়েছে। ২০০২ সালে দ্বিতীয় দফায় গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর আমি সারা দেশ সফর করি। আমাদের কর্মীদের সংকল্পকে রূপান্তরিত হতে দেখি বিরাট বিরাট সমাবেশে। সেসব জমায়েত থেকেই ক্ষমতাসীনেরা আমাদের শক্তি ও আবেগ টের পায়। এই কিছুদিন হলো, আমাদের ইরাবতী নদীকে বাঁচানোর জন্য সর্বস্তরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়। সরকারের পরিকল্পিত বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র আবেগী আবেদন শুনতে বাধ্য হয় সরকার; বাঁধ প্রকল্পটি এই আমলের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
আবেগের ক্ষমতায় রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে কি উল্টোভাবে চালানো যায়? ক্ষমতা কি আবেগে পরিণত হতে পারে? যে ক্ষমতা রাজনৈতিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে, তাকে বিচ্ছিন্ন ক্ষমতা বলা যায় না? দলীয় ক্ষমতা, অর্থ ক্ষমতা, মিডিয়া ক্ষমতা, প্রেশার গ্রুপের ক্ষমতা এবং আরও অন্য অনেক ক্ষমতা রাজনৈতিক বিবর্তন ও বিপ্লবে ভূমিকা রাখে। তাই শাসকদের ক্ষমতার ভিত্তিতে থাকে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতাপ, তাকে অবশ্যই আবেগের বিপরীত হিসেবে দেখতে হবে। সে কারণেই স্বৈরতন্ত্রের ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক ক্ষমতার চরিত্র এক নয়।
সব প্রতিপত্তি সত্ত্বেও ক্ষমতা আবেগের থেকে কম স্বয়ংসম্পূর্ণ, আবেগ নিজেই নিজের ক্ষমতা সৃষ্টি করে। আবেগ নিজের মধ্যে এমন এক ক্ষমতা সৃষ্টি করে, যা তাকে আরও সক্ষম করে। অন্যদিকে, ক্ষমতার স্বভাবই হলো থিতু হওয়া। যখন কোনো ক্ষমতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে চালিত হয়, তখন তা হয় অপ্রতিরোধ্য বাইরের চাপে—তা হোক গণ-অভ্যুত্থান অথবা নির্বাচনী ভীতি।
ক্ষমতার থেকে আবেগই রাজনৈতিক পরিবর্তনে বেশি কার্যকর। অর্থবহ রাজনৈতিক পরিবর্তন মানে তাকে টেকসই হতে হবে। তার জন্য আবেগ ও ক্ষমতাকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে আপসে কাজ করতে হবে।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, কিন্তু তা যে হবে কিংবা তা যে কাঙ্ক্ষিতরূপে হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পথে সব সময়ই ঝুঁকি থাকবে, যখন আমরা অপরিচিত এলাকায় প্রবেশ করব। বার্মা ও আরব বসন্তের দেশগুলোর জন্য এবং ২০১২ সালে যারা এই পরিবর্তনের ফুল ও ফল ভোগ করতে চায়, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষমতা ও আবেগের মধ্যে বিচক্ষণ মেলবন্ধন ঘটানো, তারা উভয়ই যাতে সক্ষম হতে পারে, তার জন্য উভয়কেই হতে হবে কার্যকর ও সামগ্রিক।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
অং সান সু চি: মিয়ানমারের সামরিক শাসনবিরোধী অবিসংবাদী নেতা এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
No comments