পবিত্র কোরআনের আলো-যাবতীয় গুপ্ত তথ্যভাণ্ডারের খবর শুধু আল্লাহই জানেন

৬. ক্বুল ইন্নী নুহীতু আন আ'বুদাল্লাযীনা তাদঊ'না মিন দূনিল্লাহি; ক্বুল্ লা আত্তাবিউ' আহওয়া-আকুম; ক্বাদ দ্বালালতু ইযান ওয়া মা আনা মিনাল মুহতাদীন। ৫৭. ক্বুল ইন্নী আ'লা বায়্যিনাতিম্ মির্ রাব্বী ওয়া কায্যাবতুম বিহি; মা ই'নদী মা তাছতা'জিলূনা বিহি; ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহি; ইয়াক্বুস্সুল হাক্বা ওয়া হুয়া খাইরুল ফা-সিলীন।


৫৮. ক্বুল্ লাও আন্না ই'নদী মা তাছতা'জিলূনা বিহি লাক্বুদ্বিইয়াল আমরু বাইনী ওয়া বাইনাকুম; ওয়াল্লাহু আ'লামু বিয্যা-লিমীন।
৫৯. ওয়া ই'নদাহূ মাফা-তিহুল গাইবি লা-ইয়া'লামুহা ইল্লা হুয়া; ওয়া ইয়া'লামু মা ফিল বার্রি ওয়ালবাহ্রি; ওয়া মা তাছক্বুতু মিন ওয়ারাক্বাতিন ইল্লা ইয়া'লামুহা ওয়ালা- হাব্বাতিন ফী যুলুমা-তিল আরদ্বি ওয়ালা রাত্ববিন ওয়ালা- ইয়া-বিছিন ইল্লা ফী কিতা-বিম্ মুবীন। [সূরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৫৬-৫৯]

অনুবাদ
৫৬. (হে নবী!) আপনি এদের বলে দিন, 'আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, এক আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে তোমরা আর যাদের আনুগত্য করছ তাদের আনুগত্য করতে। আমি কখনো তোমাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করি না। সেটা করলে আমি তো পথভ্রষ্টই হয়ে যাব এবং আমি আর সত্যের অনুসারীদের মধ্যে থাকব না।
৫৭. আমি অবশ্যই আমার প্রভুর কাছ থেকে প্রেরিত প্রকাশ্য দলিল-প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি, আর সেই দলিল-প্রমাণগুলোই তোমরা অস্বীকার করছ। যা তোমরা এখনই দেখতে চাও তা আমার কাছে নেই। চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব তো একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি এ সত্যটি বর্ণনাও করে দিয়েছেন, আর তিনি হচ্ছেন উত্তম ফয়সালাকারী।
৫৮. আপনি বলুন, যে বিষয়টার জন্য তোমরা তাড়াহুড়া করছ (অর্থাৎ পরকালের শাস্তি দেখতে চাইছ), তা যদি আমার ক্ষমতার মধ্যে থাকত, তাহলে তোমাদের ও আমার মধ্যকার ফয়সালা এখনই হয়ে যেত। জালেমদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ভালো করেই জানেন।
৫৯. আর আল্লাহর কাছে আছে যাবতীয় গুপ্ত বস্তুর ভাণ্ডার। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তা জানেন না। আর তিনি সব কিছুই অবগত আছেন, যা কিছু স্থলে ও জলে রয়েছে। তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি পাতাও ঝরে না। মাটির অন্ধকারে একটি শস্যকণাও নেই_নেই কোনো তাজা সবুজ, কিংবা শুকনো কিছু, যার বিবরণ একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে মজুদ নেই।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে ইমানের মূল বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর মক্কার জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইসলামের প্রসার যখন কিছুটা ঘটে যাচ্ছিল, তখন কুরাইশরা রাসুলের কাছে নানা রকম প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতো। এসব প্রস্তাবের বেশির ভাগই হতো ধর্ম সম্পর্কে আপস ফর্মুলার প্রস্তাব। কখনো তারা প্রস্তাব করত বছরের ছয় মাস সবাই মিলে কুরাইশদের পূর্বপুরুষের ধর্ম মেনে চলবে আবার পরবর্তী ছয় মাস রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ধর্ম মেনে চলবে। আবার কখনো প্রস্তাব করত তাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি করা কোনো কোনো দেবতার প্রতি আনুগত্য অব্যাহত রেখে ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সবাই ঐকমত্যে পেঁৗছার। ইসলাম যে সত্যের চর্চা এবং আল্লাহতায়ালা যে এক এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, এটা কুরাইশরা বিশ্বাস করত না, এমনকি বুঝতেও চাইত না। ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুলের এই অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫৭ ও ৫৮ নম্বর আয়াতে 'তোমরা এখনই যা দেখতে চাও' বা 'তোমরা যে জন্য তাড়াহুড়া করছ' বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো, অবিশ্বাসী ও অবাধ্যদের জন্য প্রতিশ্রুত শাস্তি, যে শাস্তি তাদের পরকালে প্রদান করা হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। আসলে এই শাস্তি প্রত্যক্ষভাবে দেখানোর ক্ষমতা রাসুলের নেই, থাকার কথাও নয়, তা সম্ভবও নয়। যদি এমনই হতো তাহলে অবাধ্যদের ধ্বংস এবং মুমিনদের বিজয় তিনি নিশ্চিত করেই ফেলতে পারতেন। কিন্তু এটিই আসলে ফায়সালার পথ নয়, ফায়সালা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হাতে। ৫৯ নম্বর আয়াতে যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ের ভাণ্ডারের কথা বলা হয়েছে। মানুষের কাছে যা গুপ্ত এমন সব বিষয়ই আল্লাহর অবগতির মধ্যে রয়েছে। জগতের কোনো বিষয়ই তা যত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রই হোক না কেন, আল্লাহর কাছে অজ্ঞাত নয়। আল্লাহ সব কিছু জানেন, কিন্তু মানুষ অনেক কিছু জানে না। আল্লাহ তাঁর নবী ও ওলিদের কোনো কোনো বিষয় জানান।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.