সরকারি সংস্থার গাফিলতি, হুমকির মুখে জনজীবন-বিষাক্ত কারখানার উপদ্রব

ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি রাসায়নিক কারখানা সরানোর দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভের ঘটনা আবাসিক এলাকায় শিল্প স্থাপন নিয়ে সমস্যাকে নতুন করে সামনে এনেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিষাক্ত রাসায়নিক কারখানার জন্য এলাকার গাছপালা ও গবাদিপশু মরে যাচ্ছে। আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যাটি জ্বলন্ত। সমাধানে এলাকাবাসী যে পথ নিয়েছে, তা-ও কম জ্বলন্ত নয়।


তারা সড়ক অবরোধ করেছে এবং কারখানার ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অনেক দিনের এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কেন নিষ্ক্রিয় ছিলেন, কেন জনসাধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত মানসিকতা নিয়ে রাস্তায় নামতে হলো?
পুরান ঢাকার নিমতলীর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। সেখানেও আগুন লেগেছিল রাসায়নিকের গুদাম থেকে। আর কেরানীগঞ্জের সমস্যা খোদ রাসায়নিকের কারখানা। এই কারখানায় সোডা ও ব্লিচিং পাউডার উৎপাদিত হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কারখানাটিতে গত এক বছরে কয়েকবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। নিঃসৃত গ্যাসে এলাকার পরিবেশও বিষিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষই কর্ণপাত করেনি। ভীত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখন রাস্তায় প্রতিবাদের পথে সমাধান খুঁজছে।
গত শনিবারের প্রথম আলোর সংবাদে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রসহ নিয়মানুযায়ী সব অনুমতিই রয়েছে। কেরানীগঞ্জের মতো জনাকীর্ণ এলাকায় কীভাবে এ রকম পরিবেশবিনাশী কারখানার অনুমতি দেওয়া হলো? পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংসদ পর্যন্ত সবারই দায়িত্ব ছিল এর সুষ্ঠু বিহিত করা। পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক কলকারখানা ঢাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই কথা রাখেননি!
জনবসতির মধ্যে কলকারখানা ও বাণিজ্যিক কারবার ঢুকে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় নগরের অন্যতম সমস্যা। প্রমাণিত হয়েছে, কেবল পরিবেশের ক্ষতিই নয়, এসব কারখানা জীবনেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এর সমাধানের দায়িত্ব মুখ্যত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের। প্রতিকারের আইন যুগোপযোগী করার দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের। এসব প্রস্তুতি থাকুক বা না থাকুক, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি মানুষের দুরবস্থা দেখে এগিয়ে না আসেন, তাহলে সবাই গরল ভেল হতে বাধ্য। আমাদের যেমন পরিবেশ বাঁচাতে হবে, তেমনি উৎপাদনও চালিয়ে যেতে হবে। তার জন্য এ ধরনের সব কারখানা ঢাকার বাইরে ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
কেরানীগঞ্জের অধিবাসীরা কর্তাব্যক্তিদের জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে। আশা করি, তাঁদের কর্ণকুহরে তুলা গোঁজা নেই।

No comments

Powered by Blogger.