একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রশ্ন by মাহফুজ রহমান
মহাখালীর
মুক্তিযোদ্ধা কলোনির সামনে ব্যাপক হট্টগোল! ওদিকে চায়ের দোকানে ধুমসে
বাংলা সিনেমার গান বাজছে। মাথার ওপর মধ্যদুপুরের গনগনে সূর্যের চনমনে রোদ।
হট্টগোল উপলক্ষে চায়ের দোকানের বিক্রিবাট্টাও হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আর
চেঁচামেচির সঙ্গে সঙ্গে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দও বেড়ে চলেছে সমানতালে।
উৎসাহী লোকজন উঁকি দিয়ে যাচ্ছে, হট্টগোলের উপলক্ষ কী, তা আবিষ্কার করতে।
সেখান থেকে খানিক দূরে একজন মধ্যবয়সী দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর কাছে আশ্রাব আলী জমাদ্দারের ঠিকানা জানতে চাই, কোথায় থাকেন তিনি? প্রশ্ন শুনে আপাদমস্তক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন মধ্যবয়সী সেই ভদ্রলোক,‘আশ্রাব ভাইয়ের কাছে আসছেন? আরে সে তো আমার খুব কাছের মানুষ! আসেন আসেন বলে কলোনির ভেতরে নিয়ে যান তিনি। ঘিঞ্জি কলোনির টিনের ছাপরামতো ঘরগুলোর মধ্যে সংকীর্ণ একটা গলি। তার মাঝেই ঘর-গেরস্থালি। বাচ্চাদের খেলাধুলা। এখানে-সেখানে বেড়ে উঠেছে পুঁইয়ের ডগা। দুটো বাঁক নিতেই প্রথম ঘরটার সামনে গিয়ে ভদ্রলোক থেমে যান, বলেন, ‘এই হইল আশ্রাব ভাইয়ের ঘর, চলেন ভেতরে যাই।’
১০ ফুট বাই ১২ ফুটের মতো ছোট্ট একটা ঘর। একটা চৌকি আর টেবিল ঘরটার পুরোটা দখল করে আছে। মাথার ওপর একটা ফ্যান হেলিকপ্টারের মতো বোঁ বোঁ করে যত না ঘুরছিল, তার থেকে শব্দই করছিল বেশি। একটা জানালা, তার ওপরে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো, ষাট পাওয়ারের একটা বাল্বের আলোতেও ছবিটা বেশ জ্বলজ্বল করছিল। ঘরের জীর্ণতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর ছবিটার মতোই জানালার পাশে বালিশে ঠেস দিয়ে বসে থাকা একজন দীর্ঘদেহী বৃদ্ধকেও বেশ উজ্জ্বল লাগছিল। বোঝাই যায়, তিনিই আশ্রাব আলী জমাদ্দার। একজন মুক্তিযোদ্ধা।
‘গ্রামের সবচেয়ে দুরন্ত মানুষ ছিলাম। খেলাধুলা বলেন, হইচই বলেন, কোথায় ছিলাম না! আর ছিলাম গিয়া পালাগানের আসরে। এই ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল ছিল। দিন-রাত পালাগানের আসর জমায়া রাখতাম গান গাইয়া।’ বলে খানিক বিশ্রাম নেন আশ্রাব আলী জমাদ্দার। দুই-দুবার স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর, টানা কথা বা কোনো রকমের ভারী কাজ করতে পারেন না এখন। তবে মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই সবকিছু ভুলে যান। যেন রক্তে ঢেউ জাগে তাঁর। উত্তাল সেই দিনগুলোর কথাই বলেন তিনি, ‘২৫ মার্চের রাতের ঘটনার পর আমাদের গ্রামে, তখনকার বৃহত্তর বরিশাল আর এখনকার বরগুনার বেতাগী উপজেলার সোপখালী গ্রামেও উত্তেজনা ছড়ায়া পড়ছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনছি সবাই। একসময় শোনা গেল, বরিশালে মিলিটারি আইসা পড়ছে। গ্রামেও আসি আসি করে। এর মধ্যেই রাজাকারেরাও শান্তি কমিটি বানাইল। মিলিটারি ঢুইকা পড়ল গ্রামে। স্কুলঘরে বানাইল ক্যাম্প। আমরা তো বইসা থাকতে পারি না। ক্যাপ্টেন আলতাফ হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল গঠন করলাম আমরা। গ্রামের সাধারণ জনগণই এই দলের সদস্য, কোনো ট্রেনিং নাই, অস্ত্র বলতে লাঠি-সড়কি।’ টানা দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন আশ্রাব আলী, ঢক ঢক করে গ্লাসের পুরো পানি গিলে ফের শুরু করেন তাঁর কথা, ‘এরপর আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হইল, ভারতে গিয়া মোটামুটি পোক্ত হইল আমাদের হাত-পাও। পরিশ্রম তো করতে পারত সবাই, কিন্তু সামরিক বিদ্যাটা তো ছিল না। সেই বিদ্যা আয়ত্ত হওয়ার পর দরকার অস্ত্রের। সেটারও ব্যবস্থা হইল ধীরে ধীরে। অনেক নতুন লোকজনও দলে যোগ দিল। ৫ জুন তারিখে সর্বপ্রথম খুব বড় একটা অপারেশনে নামলাম আমরা। মির্জাগঞ্জের দেউলিগ্রামে। ১১ জন পাকিস্তানি আর্মি মারা পড়ছিল সেই অপারেশনে। এরপর আবারও নতুন অপারেশনের অপেক্ষায় রইলাম আমরা। এর মধ্যে গোয়েন্দার ভূমিকায় নামছি আমি। গ্রামে সবাই আমারে পালাগানের শিল্পী বইলা চেনে। ধারণাও করতে পারে নাই, আমার উদ্দেশ্য কী। একদিন বাজারে ঘুইরা খবর পাইলাম কুখ্যাত রাজাকার মহারাজ মিয়া জইশার বাজারে কার্তিক কর্মকারের দোকান লুটপাট করছে। এরপর যাইতাছে দোকলাখালীতে ঘরামী বাড়ি লুট করতে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠাইলাম আমাদের দলের কাছে। সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়া জায়গামতো ওত পাইতা থাকলাম। নদী পার হইয়া দোকলাখালীতে আসতে হইত, রাজাকারেরাও নৌকায় কইরা আসতে লাগল। পারে নৌকা ভিড়তে না ভিড়তেই আমরা আক্রমণ করলাম। সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র না থাকলেও লাঠি-সড়কি, বৈঠা নিয়াই ঝাঁপায়া পড়লাম কোনো রকম তোয়াক্কা না করে। রাজাকারেরাও গোলাগুলি শুরু করল, গুলিতে ওরাই মারা পড়ল, লাঠির আঘাতেও কয়েকজন কুপোকাত হইছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ আমার মাথায় একটা লাঠির আঘাত লাগে। সাথে সাথে জ্ঞান হারাই ফালাই।’ এতটুকু বলে মাথা নিচু করে সেই দিনের আঘাতের চিহ্নটা দেখান তিনি। গভীর একটা ক্ষতচিহ্ন। এখনো মাঝে মাঝে সেই আঘাতের ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে জানালেন আশ্রাব আলী। দেখালেন আরেকটা ক্ষতচিহ্ন, পায়ের গোড়ালিতে, গুলি লেগেছিল সেখানে। ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের কথা সেটা, বাবনা গ্রামে একটা সম্মুখযুদ্ধে গুলিটা লাগছিল। এরপর দীর্ঘদিন ঘরে পইড়া থাকছি। এখন হাঁটতে কষ্ট হয়, ভর দিয়া হাঁটাহাঁটি করি। এরপর কাইটা গেছে সময়, আরও কতগুলো দুর্ধর্ষ যুদ্ধ শেষে আমাদের এলাকায় ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আসে স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করছিলাম আমরা। মনে আছে, বঙ্গবন্ধু আমার কাঁধে হাত রাইখা বলছিলেন,“শাবাশ! তোমরা দুরন্ত-বীর।” এরপর কাজ দেওয়ার আশ্বাসও পাইছিলাম, কিন্তু বাস্তবে তা হইল না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে ঢাকায় চইলা আসি কাজের খোঁজে। মেকানিকের কাজ শুরু করি। ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার যাচাই-বাছাই শুরু হয়। আমার নামও তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ভাতাও পাইছিলাম, কিন্তু ২০০২ সাল থেকে সেই ভাতাটা বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে আমার নামটা তুলে দেওয়া হয়। নিজে এখন কাজ করতে পারি না। ঘরে তিন ছেলে, তাদের কোনো কর্মসংস্থানও করে দেয় নাই সরকার। কলোনিতে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইছি। তবে অনেক চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রমাণপত্রসহ আবারও নামটা তালিকায় ওঠানোর চেষ্টা করেছিল আমার ছেলেরা। নাম উঠলেও এখনো ভাতা পাই নাই। সরকার কি এই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার দিকে একবারও তাকাবে না?’ মুক্তিযোদ্ধা আশ্রাব আলী জমাদ্দারের এই প্রশ্ন আমাদেরও, আমাদের আশা, আশ্রাব আলীর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মিলবে শিগগিরই।
সেখান থেকে খানিক দূরে একজন মধ্যবয়সী দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর কাছে আশ্রাব আলী জমাদ্দারের ঠিকানা জানতে চাই, কোথায় থাকেন তিনি? প্রশ্ন শুনে আপাদমস্তক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন মধ্যবয়সী সেই ভদ্রলোক,‘আশ্রাব ভাইয়ের কাছে আসছেন? আরে সে তো আমার খুব কাছের মানুষ! আসেন আসেন বলে কলোনির ভেতরে নিয়ে যান তিনি। ঘিঞ্জি কলোনির টিনের ছাপরামতো ঘরগুলোর মধ্যে সংকীর্ণ একটা গলি। তার মাঝেই ঘর-গেরস্থালি। বাচ্চাদের খেলাধুলা। এখানে-সেখানে বেড়ে উঠেছে পুঁইয়ের ডগা। দুটো বাঁক নিতেই প্রথম ঘরটার সামনে গিয়ে ভদ্রলোক থেমে যান, বলেন, ‘এই হইল আশ্রাব ভাইয়ের ঘর, চলেন ভেতরে যাই।’
১০ ফুট বাই ১২ ফুটের মতো ছোট্ট একটা ঘর। একটা চৌকি আর টেবিল ঘরটার পুরোটা দখল করে আছে। মাথার ওপর একটা ফ্যান হেলিকপ্টারের মতো বোঁ বোঁ করে যত না ঘুরছিল, তার থেকে শব্দই করছিল বেশি। একটা জানালা, তার ওপরে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো, ষাট পাওয়ারের একটা বাল্বের আলোতেও ছবিটা বেশ জ্বলজ্বল করছিল। ঘরের জীর্ণতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর ছবিটার মতোই জানালার পাশে বালিশে ঠেস দিয়ে বসে থাকা একজন দীর্ঘদেহী বৃদ্ধকেও বেশ উজ্জ্বল লাগছিল। বোঝাই যায়, তিনিই আশ্রাব আলী জমাদ্দার। একজন মুক্তিযোদ্ধা।
‘গ্রামের সবচেয়ে দুরন্ত মানুষ ছিলাম। খেলাধুলা বলেন, হইচই বলেন, কোথায় ছিলাম না! আর ছিলাম গিয়া পালাগানের আসরে। এই ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল ছিল। দিন-রাত পালাগানের আসর জমায়া রাখতাম গান গাইয়া।’ বলে খানিক বিশ্রাম নেন আশ্রাব আলী জমাদ্দার। দুই-দুবার স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর, টানা কথা বা কোনো রকমের ভারী কাজ করতে পারেন না এখন। তবে মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই সবকিছু ভুলে যান। যেন রক্তে ঢেউ জাগে তাঁর। উত্তাল সেই দিনগুলোর কথাই বলেন তিনি, ‘২৫ মার্চের রাতের ঘটনার পর আমাদের গ্রামে, তখনকার বৃহত্তর বরিশাল আর এখনকার বরগুনার বেতাগী উপজেলার সোপখালী গ্রামেও উত্তেজনা ছড়ায়া পড়ছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনছি সবাই। একসময় শোনা গেল, বরিশালে মিলিটারি আইসা পড়ছে। গ্রামেও আসি আসি করে। এর মধ্যেই রাজাকারেরাও শান্তি কমিটি বানাইল। মিলিটারি ঢুইকা পড়ল গ্রামে। স্কুলঘরে বানাইল ক্যাম্প। আমরা তো বইসা থাকতে পারি না। ক্যাপ্টেন আলতাফ হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল গঠন করলাম আমরা। গ্রামের সাধারণ জনগণই এই দলের সদস্য, কোনো ট্রেনিং নাই, অস্ত্র বলতে লাঠি-সড়কি।’ টানা দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন আশ্রাব আলী, ঢক ঢক করে গ্লাসের পুরো পানি গিলে ফের শুরু করেন তাঁর কথা, ‘এরপর আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হইল, ভারতে গিয়া মোটামুটি পোক্ত হইল আমাদের হাত-পাও। পরিশ্রম তো করতে পারত সবাই, কিন্তু সামরিক বিদ্যাটা তো ছিল না। সেই বিদ্যা আয়ত্ত হওয়ার পর দরকার অস্ত্রের। সেটারও ব্যবস্থা হইল ধীরে ধীরে। অনেক নতুন লোকজনও দলে যোগ দিল। ৫ জুন তারিখে সর্বপ্রথম খুব বড় একটা অপারেশনে নামলাম আমরা। মির্জাগঞ্জের দেউলিগ্রামে। ১১ জন পাকিস্তানি আর্মি মারা পড়ছিল সেই অপারেশনে। এরপর আবারও নতুন অপারেশনের অপেক্ষায় রইলাম আমরা। এর মধ্যে গোয়েন্দার ভূমিকায় নামছি আমি। গ্রামে সবাই আমারে পালাগানের শিল্পী বইলা চেনে। ধারণাও করতে পারে নাই, আমার উদ্দেশ্য কী। একদিন বাজারে ঘুইরা খবর পাইলাম কুখ্যাত রাজাকার মহারাজ মিয়া জইশার বাজারে কার্তিক কর্মকারের দোকান লুটপাট করছে। এরপর যাইতাছে দোকলাখালীতে ঘরামী বাড়ি লুট করতে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠাইলাম আমাদের দলের কাছে। সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়া জায়গামতো ওত পাইতা থাকলাম। নদী পার হইয়া দোকলাখালীতে আসতে হইত, রাজাকারেরাও নৌকায় কইরা আসতে লাগল। পারে নৌকা ভিড়তে না ভিড়তেই আমরা আক্রমণ করলাম। সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র না থাকলেও লাঠি-সড়কি, বৈঠা নিয়াই ঝাঁপায়া পড়লাম কোনো রকম তোয়াক্কা না করে। রাজাকারেরাও গোলাগুলি শুরু করল, গুলিতে ওরাই মারা পড়ল, লাঠির আঘাতেও কয়েকজন কুপোকাত হইছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ আমার মাথায় একটা লাঠির আঘাত লাগে। সাথে সাথে জ্ঞান হারাই ফালাই।’ এতটুকু বলে মাথা নিচু করে সেই দিনের আঘাতের চিহ্নটা দেখান তিনি। গভীর একটা ক্ষতচিহ্ন। এখনো মাঝে মাঝে সেই আঘাতের ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে জানালেন আশ্রাব আলী। দেখালেন আরেকটা ক্ষতচিহ্ন, পায়ের গোড়ালিতে, গুলি লেগেছিল সেখানে। ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের কথা সেটা, বাবনা গ্রামে একটা সম্মুখযুদ্ধে গুলিটা লাগছিল। এরপর দীর্ঘদিন ঘরে পইড়া থাকছি। এখন হাঁটতে কষ্ট হয়, ভর দিয়া হাঁটাহাঁটি করি। এরপর কাইটা গেছে সময়, আরও কতগুলো দুর্ধর্ষ যুদ্ধ শেষে আমাদের এলাকায় ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আসে স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করছিলাম আমরা। মনে আছে, বঙ্গবন্ধু আমার কাঁধে হাত রাইখা বলছিলেন,“শাবাশ! তোমরা দুরন্ত-বীর।” এরপর কাজ দেওয়ার আশ্বাসও পাইছিলাম, কিন্তু বাস্তবে তা হইল না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে ঢাকায় চইলা আসি কাজের খোঁজে। মেকানিকের কাজ শুরু করি। ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার যাচাই-বাছাই শুরু হয়। আমার নামও তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ভাতাও পাইছিলাম, কিন্তু ২০০২ সাল থেকে সেই ভাতাটা বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে আমার নামটা তুলে দেওয়া হয়। নিজে এখন কাজ করতে পারি না। ঘরে তিন ছেলে, তাদের কোনো কর্মসংস্থানও করে দেয় নাই সরকার। কলোনিতে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইছি। তবে অনেক চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রমাণপত্রসহ আবারও নামটা তালিকায় ওঠানোর চেষ্টা করেছিল আমার ছেলেরা। নাম উঠলেও এখনো ভাতা পাই নাই। সরকার কি এই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার দিকে একবারও তাকাবে না?’ মুক্তিযোদ্ধা আশ্রাব আলী জমাদ্দারের এই প্রশ্ন আমাদেরও, আমাদের আশা, আশ্রাব আলীর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মিলবে শিগগিরই।
No comments