চলচ্চিত্রের দুর্দশার জন্য আসলে দায় কাদের by কাজী হায়াত
‘ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির নিষেধাজ্ঞা’ শিরোনামে ৬ মে প্রথম আলোয় মশিউল আলমের একটি লেখা ছাপা হয়েছে। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ওই লেখার বিরুদ্ধাচরণ করা নয়। ওই লেখাটিতে কিছু ভুল তথ্য আছে আর লেখক দুর্দশাগ্রস্ত চলচ্চিত্রের জন্য যাদের দায়ী করেছেন, তারা আসলে কতটুকু দায়ী সে প্রসঙ্গে কিছু বলতেই এই লেখা।
প্রথমেই যে তথ্যটি সম্পর্কে আমি বলতে চাই তা হলো, তিনি বলেছেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬০০। ২০১০ সালে ওই সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০তে। এই তথ্যটি একেবারেই সঠিক নয়। বাংলাদেশে কখনোই এক হাজার ২০০-এর বেশি সিনেমা হল ছিল না এবং বর্তমানে সিনেমা হলের সংখ্যা ৭২০। তবে আশির দশকের শুরুতে যখন বাংলাদেশে প্রথম ভিসিআর আসে, তখন ঢাকার বেগম বাজারে তৈরি হয়েছিল কিছু মিনি সিনেমা প্রদর্শনকেন্দ্র; যেখানে অবৈধভাবে প্রদর্শিত হতো বোম্বাই সিনেমা এবং পশ্চিমা পর্নো ছবি। তারই ধারাবাহিকতায় এখন বাংলাদেশে গ্রামগঞ্জে, হাটবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক মিনি সিনেমা প্রদর্শনকেন্দ্র। সেখানেও বাংলা, হিন্দি সিনেমা ছাড়া গরম গরম মিউজিক ভিডিও এবং পশ্চিমা ও দেশীয় পর্নো ছবি দর্শনীর বিনিময়ে অবাধে প্রদর্শিত হয়। সেগুলোকে সিনেমা হল বিবেচনা করার কোনো কারণ নেই। সারা দেশে এসব প্রদর্শনকেন্দ্রই হবে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার।
সিনেমা হল বাঁচাতে মশিউল আলম ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, কিন্তু আমার ধারণা, সিনেমা হলের মালিকদের অনেক দৌরাত্ম্যের কথাই তাঁর অজানা। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে আশির দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ দেশের সিনেমা চালাতে পরিবেশককে হল-মালিকদের হাউস প্রটেকশন দিতে হতো। সেই দিনগুলো ছিল এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের একটি কালো অধ্যায়। সেই সময়ের ৩০-৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সিনেমা মুক্তি দিয়ে অনেক সময় হল থেকে একটি টাকাও শেয়ার মানি পাওয়া যেত না; যার ফলে এ দেশের নির্মাতারা তখন শিল্পমানসম্পন্ন সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবতেই পারতেন না। যদি কখনো কারও মনের তাগিদে অথবা সরকারি অনুদানে দু-একটি সিনেমা তৈরি হতো, সেসব সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে নির্মাতাগোষ্ঠীকে অনেক নাকানি-চুবানি খেতে হতো। যদি কখনো হল-মালিকেরা দয়া করে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুমতি দিতেন, এরপর হলে দর্শকদের উপস্থিতি যদি একটু কম হতো, মাত্র দু-এক দিন চালিয়েই হল-মালিক কাউকে কিছু না বলে ওই সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ করে দিতেন এবং প্রটেকশন অর্থাৎ হল চালানোর খরচ বাবদ টাকা দাবি করতেন। সেই টাকা দিতে না পারলে চলচ্চিত্রের প্রিন্টটি আটকে রাখতেন সিনেমা হলের স্টোরে। এমনিভাবে আটকে থাকত অনেক ভালো চলচ্চিত্রের প্রিন্ট, যা আর কখনোই কোথাও প্রদর্শিত হতো না।
জনাব মশিউল আলমের ধারণা, চলচ্চিত্রশিল্পের নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী ও অর্থলগ্নিকারীরা যদি এমন চলচ্চিত্র তৈরি অব্যাহত রাখেন (এখন যা হচ্ছে), তাহলে সিনেমা হলগুলো অলাভজনক, এমনকি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়বে। হলের মালিকেরা উপায়ান্তর না দেখে হলগুলো ভেঙে ফেলে অন্য কিছু করবেন। একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে আমাদের এই চলচ্চিত্রশিল্প। এ তথ্য এবং ধারণাটিও সত্য নয়। দেশে এখনো অনেক নতুন সিনেমা হল তৈরি হচ্ছে, তবে তার অধিকাংশই জেলা শহরগুলোতে নয়। জেলা শহরের মালিকেরা সিনেমা হল ভেঙে মার্কেট অথবা ফ্ল্যাটবাড়ি করছেন—কথাটি সত্য, কিন্তু সিনেমা চালিয়ে তাঁদের লোকসান হচ্ছে সে কারণে এমনটি হচ্ছে তা নয়। কারণটি হলো, জায়গাটি শহরের মধ্যস্থলে হওয়ার কারণে সেখানে মার্কেট অথবা ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি করে এককালীন তাঁরা অনেক টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। একটি তথ্য জানাই, আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে সাভারে মাত্র দুটি সিনেমা হল ছিল আর সেই সাভার এবং তার আশপাশের এলাকায় এখন ১০টিরও বেশি সিনেমা হল হয়েছে। এটা ভালো ব্যবসার কারণেই হয়েছে।
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার সিনেমাকে অনেক উন্নত করেছে। চলচ্চিত্রের শব্দ ডলবি ডিজিটাল হয়েছে। সিনেমাস্কোপ হয়ে চলচ্চিত্রের পর্দাটি অনেক বড় হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প একেবারেই বঞ্চিত। এর জন্য কোনোভাবেই আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নিকারী, শিল্পী ও কলাকুশলীরা দায়ী নন। সিনেমাস্কোপ বা ডিজিটাল শব্দ—এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সিনেমা তৈরি করার মতো অর্থ ও মেধার কোনো কমতি নেই। দেশে এ ধরনের সুযোগ না থাকায় আমাদের অনেক নির্মাতা বিদেশে গিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রযুক্তিগতভাবে এসব উন্নতমানের সিনেমা প্রদর্শনের জন্য ঢাকায় মাত্র তিনটি সিনেমা হল আছে। এ ছাড়া সারা দেশে আর কোনো সিনেমা হল নেই। আপনার কাছে প্রশ্ন, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প আধুনিক ও উন্নতমানের না হওয়ার জন্য দায়ী কারা? নির্মাতারা, না সিনেমা হলের মালিকেরা?
সিনেমা হলে একটি গল্পের চিত্রায়ণ দেখাই এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের সংস্কৃতি ছিল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে রিকশা অথবা গাড়িতে করে যাওয়ার আগে সাজগোজ করে প্রস্তুতি, এরপর সিনেমা হলের লবিতে বসে আড্ডা, বাদাম, চিপস, চকলেট অথবা এক কাপ গরম কফি কিংবা চা খাওয়ার মধ্যেও আনন্দ ছিল, বিনোদন ছিল, তা কি আজ আছে? এর জন্য দায়ী কারা? শিল্পী ও কলাকুশলী, নাকি হল-মালিকেরা? এ দেশের অধিকাংশ সিনেমা হলের মালিকেরা তাঁদের টিকিট এখন আর কাউন্টারে বিক্রি করেন না। কমিশনের ভিত্তিতে শো শুরুর অনেক আগেই সব টিকিট দিয়ে দেন একশ্রেণীর কালোবাজারির হাতে। মশিউল আলমের কাছে আমরা প্রশ্ন, সিনেমা হলগুলোর বাথরুম এবং দর্শকদের জন্য বসার আসনসহ কয়টি সিনেমা হলের পরিবেশ আপনি দেখেছেন? এর জন্য দায়ী কারা—চলচ্চিত্রের নির্মাতারা, না হল কর্তৃপক্ষ?
পরিশেষে বলতে চাই, এক দশক ধরে এ দেশে অশ্লীল চলচ্চিত্রের যে জোয়ার শুরু হয়েছিল, যার ফলে সিনেমা হল থেকে বিতাড়িত হয়েছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও নারীসমাজ, তার জন্য মূলত কারা দায়ী তা অনুধাবন করতে হবে। বুঝতে হবে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কারা এসব অপকর্ম করত? কারা বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে ইংরেজি পর্নো চলচ্চিত্রের রিল চালাত? চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলীরা, না হল-মালিকেরা?
চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীদের আন্দোলনের পর যখন চলচ্চিত্র থেকে অশ্লীলতা চলে গেছে, বছরে ১০ থেকে ১৫টি শিল্পমানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হচ্ছে, যখন প্রতিবছর আমাদের সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার নিয়ে আসছে, যখন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত দর্শক আবার সিনেমা হলে ফিরে এসেছে; তখন মশিউল আলমের মতো সমাজসচেতন ব্যক্তিদের বলিউডের সিনেমা আমাদানির পক্ষে অবস্থান নিতে দেখে আমরা এ দেশের সিনেমাওয়ালারা সত্যিই অবাক হই।
কাজী হায়াত: চলচ্চিত্র পরিচালক।
প্রথমেই যে তথ্যটি সম্পর্কে আমি বলতে চাই তা হলো, তিনি বলেছেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬০০। ২০১০ সালে ওই সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০তে। এই তথ্যটি একেবারেই সঠিক নয়। বাংলাদেশে কখনোই এক হাজার ২০০-এর বেশি সিনেমা হল ছিল না এবং বর্তমানে সিনেমা হলের সংখ্যা ৭২০। তবে আশির দশকের শুরুতে যখন বাংলাদেশে প্রথম ভিসিআর আসে, তখন ঢাকার বেগম বাজারে তৈরি হয়েছিল কিছু মিনি সিনেমা প্রদর্শনকেন্দ্র; যেখানে অবৈধভাবে প্রদর্শিত হতো বোম্বাই সিনেমা এবং পশ্চিমা পর্নো ছবি। তারই ধারাবাহিকতায় এখন বাংলাদেশে গ্রামগঞ্জে, হাটবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক মিনি সিনেমা প্রদর্শনকেন্দ্র। সেখানেও বাংলা, হিন্দি সিনেমা ছাড়া গরম গরম মিউজিক ভিডিও এবং পশ্চিমা ও দেশীয় পর্নো ছবি দর্শনীর বিনিময়ে অবাধে প্রদর্শিত হয়। সেগুলোকে সিনেমা হল বিবেচনা করার কোনো কারণ নেই। সারা দেশে এসব প্রদর্শনকেন্দ্রই হবে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার।
সিনেমা হল বাঁচাতে মশিউল আলম ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, কিন্তু আমার ধারণা, সিনেমা হলের মালিকদের অনেক দৌরাত্ম্যের কথাই তাঁর অজানা। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে আশির দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ দেশের সিনেমা চালাতে পরিবেশককে হল-মালিকদের হাউস প্রটেকশন দিতে হতো। সেই দিনগুলো ছিল এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের একটি কালো অধ্যায়। সেই সময়ের ৩০-৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সিনেমা মুক্তি দিয়ে অনেক সময় হল থেকে একটি টাকাও শেয়ার মানি পাওয়া যেত না; যার ফলে এ দেশের নির্মাতারা তখন শিল্পমানসম্পন্ন সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবতেই পারতেন না। যদি কখনো কারও মনের তাগিদে অথবা সরকারি অনুদানে দু-একটি সিনেমা তৈরি হতো, সেসব সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে নির্মাতাগোষ্ঠীকে অনেক নাকানি-চুবানি খেতে হতো। যদি কখনো হল-মালিকেরা দয়া করে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুমতি দিতেন, এরপর হলে দর্শকদের উপস্থিতি যদি একটু কম হতো, মাত্র দু-এক দিন চালিয়েই হল-মালিক কাউকে কিছু না বলে ওই সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ করে দিতেন এবং প্রটেকশন অর্থাৎ হল চালানোর খরচ বাবদ টাকা দাবি করতেন। সেই টাকা দিতে না পারলে চলচ্চিত্রের প্রিন্টটি আটকে রাখতেন সিনেমা হলের স্টোরে। এমনিভাবে আটকে থাকত অনেক ভালো চলচ্চিত্রের প্রিন্ট, যা আর কখনোই কোথাও প্রদর্শিত হতো না।
জনাব মশিউল আলমের ধারণা, চলচ্চিত্রশিল্পের নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী ও অর্থলগ্নিকারীরা যদি এমন চলচ্চিত্র তৈরি অব্যাহত রাখেন (এখন যা হচ্ছে), তাহলে সিনেমা হলগুলো অলাভজনক, এমনকি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়বে। হলের মালিকেরা উপায়ান্তর না দেখে হলগুলো ভেঙে ফেলে অন্য কিছু করবেন। একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে আমাদের এই চলচ্চিত্রশিল্প। এ তথ্য এবং ধারণাটিও সত্য নয়। দেশে এখনো অনেক নতুন সিনেমা হল তৈরি হচ্ছে, তবে তার অধিকাংশই জেলা শহরগুলোতে নয়। জেলা শহরের মালিকেরা সিনেমা হল ভেঙে মার্কেট অথবা ফ্ল্যাটবাড়ি করছেন—কথাটি সত্য, কিন্তু সিনেমা চালিয়ে তাঁদের লোকসান হচ্ছে সে কারণে এমনটি হচ্ছে তা নয়। কারণটি হলো, জায়গাটি শহরের মধ্যস্থলে হওয়ার কারণে সেখানে মার্কেট অথবা ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি করে এককালীন তাঁরা অনেক টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। একটি তথ্য জানাই, আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে সাভারে মাত্র দুটি সিনেমা হল ছিল আর সেই সাভার এবং তার আশপাশের এলাকায় এখন ১০টিরও বেশি সিনেমা হল হয়েছে। এটা ভালো ব্যবসার কারণেই হয়েছে।
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার সিনেমাকে অনেক উন্নত করেছে। চলচ্চিত্রের শব্দ ডলবি ডিজিটাল হয়েছে। সিনেমাস্কোপ হয়ে চলচ্চিত্রের পর্দাটি অনেক বড় হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প একেবারেই বঞ্চিত। এর জন্য কোনোভাবেই আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নিকারী, শিল্পী ও কলাকুশলীরা দায়ী নন। সিনেমাস্কোপ বা ডিজিটাল শব্দ—এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সিনেমা তৈরি করার মতো অর্থ ও মেধার কোনো কমতি নেই। দেশে এ ধরনের সুযোগ না থাকায় আমাদের অনেক নির্মাতা বিদেশে গিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রযুক্তিগতভাবে এসব উন্নতমানের সিনেমা প্রদর্শনের জন্য ঢাকায় মাত্র তিনটি সিনেমা হল আছে। এ ছাড়া সারা দেশে আর কোনো সিনেমা হল নেই। আপনার কাছে প্রশ্ন, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প আধুনিক ও উন্নতমানের না হওয়ার জন্য দায়ী কারা? নির্মাতারা, না সিনেমা হলের মালিকেরা?
সিনেমা হলে একটি গল্পের চিত্রায়ণ দেখাই এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের সংস্কৃতি ছিল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে রিকশা অথবা গাড়িতে করে যাওয়ার আগে সাজগোজ করে প্রস্তুতি, এরপর সিনেমা হলের লবিতে বসে আড্ডা, বাদাম, চিপস, চকলেট অথবা এক কাপ গরম কফি কিংবা চা খাওয়ার মধ্যেও আনন্দ ছিল, বিনোদন ছিল, তা কি আজ আছে? এর জন্য দায়ী কারা? শিল্পী ও কলাকুশলী, নাকি হল-মালিকেরা? এ দেশের অধিকাংশ সিনেমা হলের মালিকেরা তাঁদের টিকিট এখন আর কাউন্টারে বিক্রি করেন না। কমিশনের ভিত্তিতে শো শুরুর অনেক আগেই সব টিকিট দিয়ে দেন একশ্রেণীর কালোবাজারির হাতে। মশিউল আলমের কাছে আমরা প্রশ্ন, সিনেমা হলগুলোর বাথরুম এবং দর্শকদের জন্য বসার আসনসহ কয়টি সিনেমা হলের পরিবেশ আপনি দেখেছেন? এর জন্য দায়ী কারা—চলচ্চিত্রের নির্মাতারা, না হল কর্তৃপক্ষ?
পরিশেষে বলতে চাই, এক দশক ধরে এ দেশে অশ্লীল চলচ্চিত্রের যে জোয়ার শুরু হয়েছিল, যার ফলে সিনেমা হল থেকে বিতাড়িত হয়েছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও নারীসমাজ, তার জন্য মূলত কারা দায়ী তা অনুধাবন করতে হবে। বুঝতে হবে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কারা এসব অপকর্ম করত? কারা বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে ইংরেজি পর্নো চলচ্চিত্রের রিল চালাত? চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলীরা, না হল-মালিকেরা?
চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীদের আন্দোলনের পর যখন চলচ্চিত্র থেকে অশ্লীলতা চলে গেছে, বছরে ১০ থেকে ১৫টি শিল্পমানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হচ্ছে, যখন প্রতিবছর আমাদের সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার নিয়ে আসছে, যখন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত দর্শক আবার সিনেমা হলে ফিরে এসেছে; তখন মশিউল আলমের মতো সমাজসচেতন ব্যক্তিদের বলিউডের সিনেমা আমাদানির পক্ষে অবস্থান নিতে দেখে আমরা এ দেশের সিনেমাওয়ালারা সত্যিই অবাক হই।
কাজী হায়াত: চলচ্চিত্র পরিচালক।
No comments