আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪১৬ by পার্থ সরকার
রাজু ভাস্কর্যকে ডানে রেখে সোজা কিছুদূর এগোলেই বাংলা একাডেমীর বইমেলা। তবে তারও আগে টিএসসির তোরণে চোখ আটকাবেই। ছোট্ট কিন্তু সৌন্দর্যে ভরপুর তোরণটি জানান দিচ্ছে, টিএসসিতে চলছে চলচ্চিত্র উৎসব। আমার ভাষা, বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব।
সুস্থ চলচ্চিত্র, সুস্থ দর্শক—এই মূলমন্ত্রে এগিয়ে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে তারা আয়োজন করে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
২২ ফেব্রুয়ারি থেকে টিএসসি মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব ১৪১৭ চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সকাল ১০টা, দুপুর একটা, বিকেল চারটা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা প্রতিদিন চারটি করে মোট ২৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে এই উৎসবে। যার মধ্যে ১৬টি বাংলাদেশের এবং ১২টি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র।
উৎসবের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একেকজন একেক বিষয়ে পড়লেও সবার মধ্যেই একটা বিষয়ে প্রচণ্ড মিল। চলচ্চিত্র দেখতে এবং দেখাতে দারুণ পছন্দ করেন তাঁরা। গণযোগাযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমটাকেই তাঁরা তুলে নিতে চান নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) সদস্য রুদ্র রায়হান জানালেন, ‘আমরা এখানে শুধু চলচ্চিত্র দেখাচ্ছি না। সবার ভাবনার সলতেটাকে একটু উসকে দিতে চাচ্ছি।’ আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী জয় বললেন, ‘এত দিন ধরে ক্যাম্পাসে আছি। একটা অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব। ফেব্রুয়ারি মাস মানে একুশে ফেব্রুয়ারির নানা আয়োজন। তার মধ্যে এই উৎসবকে একটু আলাদাই লাগে।’
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মিতু সারা দিন ল্যাবরেটরিতে কাটিয়ে টিএসসিতে এসেছেন চলচ্চিত্র দেখবেন বলে। বললেন, ‘সারা দিন পর সিনেমা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। কম্পিউটারে চলচ্চিত্র দেখে এই ভালো লাগাটা কখনোই পাওয়া যায় না।’
টিএসসির প্রাচীরে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন অন্তু, সুষমা, লীনা ও আসিফ। সবাই অপেক্ষা করছেন পরবর্তী প্রদর্শনীর। সঙ্গে আছে বারেক মামার চা। লীনা বললেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি প্রিয় পরিচালকের চলচ্চিত্র দেখব বলে। ডিইউএফএস এ ধরনের উত্সবের আয়োজন না করলে এসব চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ আমাদের হয় না।’
চারুকলার শিক্ষার্থী স্বপ্ন চলচ্চিত্র দেখতে সঙ্গে এনেছেন ছোট ভাই উপলকে। প্রদর্শনী শেষে বের হতেই বললেন, ‘সারা দিন তো বাসায় কার্টুন আর হিন্দি চ্যানেল দেখে। এই সুযোগে ভালো বাংলা চলচ্চিত্র দেখিয়ে নিয়ে গেলাম। বইমেলা থেকে বইও কেনা হলো বেশ কিছু।’ উপল অবশ্য তখনো চিন্তা করছে চলচ্চিত্র নিয়ে, হাতে বাংলা বই। কেমন লেগেছে জিজ্ঞেস করতেই বিজ্ঞের মতো বলল, ‘ভালো। বইমেলায় আগেও এসেছি। তবে এখানে যে সিনেমা হল আছে, জানতাম না।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আফরিন এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। ভেবেছিলেন থ্রি ইডিয়টস, মাই নেম ইজ খান বা ইংরেজি অ্যাকশন ধরনের কোনো ছবি দেখবেন। তাই তো বাংলা ছবি দেখতে শুরুতে ঢুকতেই চাননি টিএসসিতে। কিন্তু ছবি দেখে বের হয়েই তাঁর মনোভাব একদম উল্টো। ‘সে রকম ধুমধাড়াক্কা কিছু নেই, প্রযুক্তির ছড়াছড়িও নেই। তার পরও গল্প, অভিনয়, সংলাপ সব মিলিয়ে দারুণ লাগল। নিজের ভাষার ছবি দেখার মজাই আলাদা।’
আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪১৬ নিয়ে ডিইউএফএসের সভাপতি নাহাদ উল কাসেম বললেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মতো করে বাংলাতে অনুভব করি। তারই প্রতিফলন এই উৎসবে। সবাইকে ভালো ভালো ছবি দেখাতে পারছি, এটাই আমাদের জন্য বিশাল পাওনা।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া পরিচালক মুরাদ পারভেজ বলেন, ‘আমার ছবি চন্দ্রগ্রহণ প্রদর্শিত হচ্ছে এ উৎসবে। এটা আমার জন্য আরও একটা সম্মান। আমি চাই এ ধরনের উৎসব নিয়মিত হোক। আরও বেশি মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ভালো ভালো বাংলা চলচ্চিত্র দেখুক।’
উৎসবের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি, নারায়ণ ঘোষ মিতার নীল আকাশের নীচে, আবু সাইয়ীদের শঙ্খনাদ, মুরাদ পারভেজের চন্দ্রগ্রহণ, গোলাম রব্বানী বিপ্লবের বৃত্তের বাইরে, এহেতশামের পীচ ঢালা পথ, বেলাল আহমেদের নয়নের আলো, জহির রায়হানের কাচের দেয়াল, আবদুল্লাহ আল মামুনের দুই জীবন, সত্যজিত্ রায়ের নায়ক, ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণ রেখা, গৌতম ঘোষের আবার অরণ্যে, অপর্ণা সেনের পরমা, রাজা সেনের দামু, তরুণ মজুমদারের চাঁদের বাড়ি, অঞ্জন দত্তের চলো, লেটস গো ইত্যাদি।
সুস্থ চলচ্চিত্র, সুস্থ দর্শক—এই মূলমন্ত্রে এগিয়ে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে তারা আয়োজন করে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
২২ ফেব্রুয়ারি থেকে টিএসসি মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব ১৪১৭ চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সকাল ১০টা, দুপুর একটা, বিকেল চারটা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা প্রতিদিন চারটি করে মোট ২৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে এই উৎসবে। যার মধ্যে ১৬টি বাংলাদেশের এবং ১২টি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র।
উৎসবের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একেকজন একেক বিষয়ে পড়লেও সবার মধ্যেই একটা বিষয়ে প্রচণ্ড মিল। চলচ্চিত্র দেখতে এবং দেখাতে দারুণ পছন্দ করেন তাঁরা। গণযোগাযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমটাকেই তাঁরা তুলে নিতে চান নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) সদস্য রুদ্র রায়হান জানালেন, ‘আমরা এখানে শুধু চলচ্চিত্র দেখাচ্ছি না। সবার ভাবনার সলতেটাকে একটু উসকে দিতে চাচ্ছি।’ আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী জয় বললেন, ‘এত দিন ধরে ক্যাম্পাসে আছি। একটা অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব। ফেব্রুয়ারি মাস মানে একুশে ফেব্রুয়ারির নানা আয়োজন। তার মধ্যে এই উৎসবকে একটু আলাদাই লাগে।’
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মিতু সারা দিন ল্যাবরেটরিতে কাটিয়ে টিএসসিতে এসেছেন চলচ্চিত্র দেখবেন বলে। বললেন, ‘সারা দিন পর সিনেমা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। কম্পিউটারে চলচ্চিত্র দেখে এই ভালো লাগাটা কখনোই পাওয়া যায় না।’
টিএসসির প্রাচীরে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন অন্তু, সুষমা, লীনা ও আসিফ। সবাই অপেক্ষা করছেন পরবর্তী প্রদর্শনীর। সঙ্গে আছে বারেক মামার চা। লীনা বললেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি প্রিয় পরিচালকের চলচ্চিত্র দেখব বলে। ডিইউএফএস এ ধরনের উত্সবের আয়োজন না করলে এসব চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ আমাদের হয় না।’
চারুকলার শিক্ষার্থী স্বপ্ন চলচ্চিত্র দেখতে সঙ্গে এনেছেন ছোট ভাই উপলকে। প্রদর্শনী শেষে বের হতেই বললেন, ‘সারা দিন তো বাসায় কার্টুন আর হিন্দি চ্যানেল দেখে। এই সুযোগে ভালো বাংলা চলচ্চিত্র দেখিয়ে নিয়ে গেলাম। বইমেলা থেকে বইও কেনা হলো বেশ কিছু।’ উপল অবশ্য তখনো চিন্তা করছে চলচ্চিত্র নিয়ে, হাতে বাংলা বই। কেমন লেগেছে জিজ্ঞেস করতেই বিজ্ঞের মতো বলল, ‘ভালো। বইমেলায় আগেও এসেছি। তবে এখানে যে সিনেমা হল আছে, জানতাম না।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আফরিন এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। ভেবেছিলেন থ্রি ইডিয়টস, মাই নেম ইজ খান বা ইংরেজি অ্যাকশন ধরনের কোনো ছবি দেখবেন। তাই তো বাংলা ছবি দেখতে শুরুতে ঢুকতেই চাননি টিএসসিতে। কিন্তু ছবি দেখে বের হয়েই তাঁর মনোভাব একদম উল্টো। ‘সে রকম ধুমধাড়াক্কা কিছু নেই, প্রযুক্তির ছড়াছড়িও নেই। তার পরও গল্প, অভিনয়, সংলাপ সব মিলিয়ে দারুণ লাগল। নিজের ভাষার ছবি দেখার মজাই আলাদা।’
আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪১৬ নিয়ে ডিইউএফএসের সভাপতি নাহাদ উল কাসেম বললেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মতো করে বাংলাতে অনুভব করি। তারই প্রতিফলন এই উৎসবে। সবাইকে ভালো ভালো ছবি দেখাতে পারছি, এটাই আমাদের জন্য বিশাল পাওনা।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া পরিচালক মুরাদ পারভেজ বলেন, ‘আমার ছবি চন্দ্রগ্রহণ প্রদর্শিত হচ্ছে এ উৎসবে। এটা আমার জন্য আরও একটা সম্মান। আমি চাই এ ধরনের উৎসব নিয়মিত হোক। আরও বেশি মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ভালো ভালো বাংলা চলচ্চিত্র দেখুক।’
উৎসবের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি, নারায়ণ ঘোষ মিতার নীল আকাশের নীচে, আবু সাইয়ীদের শঙ্খনাদ, মুরাদ পারভেজের চন্দ্রগ্রহণ, গোলাম রব্বানী বিপ্লবের বৃত্তের বাইরে, এহেতশামের পীচ ঢালা পথ, বেলাল আহমেদের নয়নের আলো, জহির রায়হানের কাচের দেয়াল, আবদুল্লাহ আল মামুনের দুই জীবন, সত্যজিত্ রায়ের নায়ক, ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণ রেখা, গৌতম ঘোষের আবার অরণ্যে, অপর্ণা সেনের পরমা, রাজা সেনের দামু, তরুণ মজুমদারের চাঁদের বাড়ি, অঞ্জন দত্তের চলো, লেটস গো ইত্যাদি।
No comments