পণ্য পরিবহনের ট্রাক খাতে প্রতিযোগিতার অভাব আছে
দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক খাত এবং ভোজ্যতেল খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ দুটি খাতে নতুন প্রতিযোগীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে রাখা হয়েছে।
এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে রপ্তানি ও আমদানি পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি থাকছে।
এ অবস্থায় রপ্তানি-সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার কার্যকর করতে এসব খাতের প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা বাড়ানো: ভোজ্যতেল ও ট্রাক (পরিবহন) খাতের ওপর সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
বিনিয়োগ পরিবেশবিষয়ক তহবিল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ডের (বিআইসিএফ) সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। বিআইসিএফের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দ আখতার মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান।
সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো পরিচালিত যথাক্রমে ট্রাক খাত ও ভোজ্যতেল খাতের ওপর দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
উন্নয়ন সমন্বয় পরিচালিত গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রায়হান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণাটি উপস্থান করেন একই বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম।
সেলিম রায়হান তাঁর গবেষণায় দেখান, বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে ট্রাক খাত একটি অপরিহার্য বিষয়। একই সঙ্গে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এ খাতের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাঁর মতে, এ খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই।
এতে বলা হয়, নতুন ট্রাকমালিকেরা এ খাতে প্রবেশ করতে গেলে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। অবশ্য বিভিন্ন রুটে এ প্রতিযোগিতার ধরন ভিন্ন। এ ছাড়া এ খাতে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। দেশের চারটি প্রধান রুটের ট্রাকমালিকদের সমিতি ও পরিবহন ব্যবহারকারীদের ওপর ২০০৮ সালে চালানো এক জরিপের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় দুই টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ছয় টাকার মতো, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণার এ তথ্য তুলে ধরে সেলিম রায়হান বলেন, ‘এর ফলে রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে। রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহন এর চেয়ে সস্তা হলেও পরিবহন ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির কারণে সড়কপথে ট্রাককেই বেশি পছন্দ করেন।’
এ জন্য ক্ষুদ্র ট্রাকমালিকদের ঋণসুবিধাসহ নীতিগত সহায়তা দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এম এ তসলিমের গবেষণায় দেখানো হয়, ভোজ্যতেলের বাজার অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করেন। ভোজ্যতেলের স্থানীয় বাজারমূল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সম্পর্কও রয়েছে। কিন্তু এ থেকে প্রমাণিত হয় না যে, ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরা জোট বেঁধে বা সিন্ডিকেট করে মূল্য নির্ধারণ করেন। প্রকৃতপক্ষে, তেলের বাজারে সিন্ডিকেটের ভূমিকা স্পষ্ট নয়।
তসলিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারে তেলের দাম বাড়ে। তবে কমলে সেই অনুপাতে কমে না। এর একটা বড় কারণ হতে পারে মূল্য বৃদ্ধির প্রত্যাশা। তা ছাড়া আগের ক্রয়মূল্য ও বিক্রেতাদের সুবিধাবাদও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি প্রতিযোগিতা আইন চালু ও তা প্রয়োগের ওপর জোর দেন।
তবে সেমিনারে উপস্থিত বেশির ভাগ বক্তাই সিন্ডিকেটের অনুপস্থিতির ব্যাপারে এম এ তসলিমের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাঁরা বলেন, পরিশোধনাগার রয়েছে এমন মাত্র নয়জন আমদানিকারক তেল আমদানি করে থাকেন। ফলে এখানে সিন্ডিকেটের বড় ধরনের সুযোগ রয়ে গেছে। এ ছাড়া সরবরাহ আদেশ (ডিও) নিয়েও বড় ধরনের কারসাজি হয়।
এর আগে সেলিম রায়হানের গবেষণার সূত্র ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি রয়েছে এটা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার জানার আগ্রহ চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্যে কতটুকু প্রভাব পড়ছে। এটা যদি বোঝা যায় তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু গবেষণায় সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। একইভাবে ট্রাকমালিকদের ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হয়, সেটিও উল্লেখ করা হয়নি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে মোট কতগুলো ট্রাক রয়েছে, আরও কত ট্রাক দরকার, সে ব্যাপারেও গবেষণায় কিছু বলা হয়নি।
এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে রপ্তানি ও আমদানি পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি থাকছে।
এ অবস্থায় রপ্তানি-সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার কার্যকর করতে এসব খাতের প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা বাড়ানো: ভোজ্যতেল ও ট্রাক (পরিবহন) খাতের ওপর সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
বিনিয়োগ পরিবেশবিষয়ক তহবিল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ডের (বিআইসিএফ) সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। বিআইসিএফের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দ আখতার মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান।
সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো পরিচালিত যথাক্রমে ট্রাক খাত ও ভোজ্যতেল খাতের ওপর দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
উন্নয়ন সমন্বয় পরিচালিত গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রায়হান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণাটি উপস্থান করেন একই বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম।
সেলিম রায়হান তাঁর গবেষণায় দেখান, বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে ট্রাক খাত একটি অপরিহার্য বিষয়। একই সঙ্গে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এ খাতের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাঁর মতে, এ খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই।
এতে বলা হয়, নতুন ট্রাকমালিকেরা এ খাতে প্রবেশ করতে গেলে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। অবশ্য বিভিন্ন রুটে এ প্রতিযোগিতার ধরন ভিন্ন। এ ছাড়া এ খাতে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। দেশের চারটি প্রধান রুটের ট্রাকমালিকদের সমিতি ও পরিবহন ব্যবহারকারীদের ওপর ২০০৮ সালে চালানো এক জরিপের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় দুই টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ছয় টাকার মতো, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণার এ তথ্য তুলে ধরে সেলিম রায়হান বলেন, ‘এর ফলে রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে। রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহন এর চেয়ে সস্তা হলেও পরিবহন ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির কারণে সড়কপথে ট্রাককেই বেশি পছন্দ করেন।’
এ জন্য ক্ষুদ্র ট্রাকমালিকদের ঋণসুবিধাসহ নীতিগত সহায়তা দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এম এ তসলিমের গবেষণায় দেখানো হয়, ভোজ্যতেলের বাজার অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করেন। ভোজ্যতেলের স্থানীয় বাজারমূল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সম্পর্কও রয়েছে। কিন্তু এ থেকে প্রমাণিত হয় না যে, ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরা জোট বেঁধে বা সিন্ডিকেট করে মূল্য নির্ধারণ করেন। প্রকৃতপক্ষে, তেলের বাজারে সিন্ডিকেটের ভূমিকা স্পষ্ট নয়।
তসলিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারে তেলের দাম বাড়ে। তবে কমলে সেই অনুপাতে কমে না। এর একটা বড় কারণ হতে পারে মূল্য বৃদ্ধির প্রত্যাশা। তা ছাড়া আগের ক্রয়মূল্য ও বিক্রেতাদের সুবিধাবাদও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি প্রতিযোগিতা আইন চালু ও তা প্রয়োগের ওপর জোর দেন।
তবে সেমিনারে উপস্থিত বেশির ভাগ বক্তাই সিন্ডিকেটের অনুপস্থিতির ব্যাপারে এম এ তসলিমের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাঁরা বলেন, পরিশোধনাগার রয়েছে এমন মাত্র নয়জন আমদানিকারক তেল আমদানি করে থাকেন। ফলে এখানে সিন্ডিকেটের বড় ধরনের সুযোগ রয়ে গেছে। এ ছাড়া সরবরাহ আদেশ (ডিও) নিয়েও বড় ধরনের কারসাজি হয়।
এর আগে সেলিম রায়হানের গবেষণার সূত্র ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি রয়েছে এটা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার জানার আগ্রহ চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্যে কতটুকু প্রভাব পড়ছে। এটা যদি বোঝা যায় তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু গবেষণায় সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। একইভাবে ট্রাকমালিকদের ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হয়, সেটিও উল্লেখ করা হয়নি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে মোট কতগুলো ট্রাক রয়েছে, আরও কত ট্রাক দরকার, সে ব্যাপারেও গবেষণায় কিছু বলা হয়নি।
No comments