‘সেনা শাসন’ প্রত্যাহার ও সেটেলারদের সম্মানজনক পুনর্বাসন করতে হবে by এ কে এম জাকারিয়া
পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার জন্ম ১৯৪২ সালে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ারচর থানার মহাপুরং গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এম এ পাস করার পর তিনি তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। এরপর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি জড়িয়ে পড়েন। একসময় চলে আসেন নেতৃত্বে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য জনসংহতি সমিতির পক্ষে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন তিনি। বর্তমানে এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কিছু অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পসহ এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : সাধারণভাবে এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে কিছু অস্থায়ী ক্যাম্প ছাড়া পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহার বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু হচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করার কথা। সরকার বলেছে, চুক্তির পরপর বেশ কিছু অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে এর প্রয়োজনীয় তথ্য নেই। বর্তমানে যে প্রত্যাহার করা হচ্ছে সে ব্যাপারেও আমরা তেমন কিছু জানি না। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।
প্রথম আলো : আপনি পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান। আপনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি?
সন্তু লারমা : আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। আমরা পত্র-পত্রিকায় কিছু অস্থায়ী ক্যাম্পসহ সেনা প্রত্যাহারের খবর দেখেছি। কীভাবে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সে ব্যাপারেও আমরা কিছু জানি না। কারণ ক্যাম্প প্রত্যাহারের আগে জমিটি কার, তা চিহ্নিত করে হেডম্যানের মাধ্যমে মূল মালিককে ফেরত দেওয়া প্রয়োজন। মূল মালিক না পাওয়া গেলে জেলা পরিষদের কাছে জমি হস্তান্তর করা প্রয়োজন। এ ধরনের প্রক্রিয়া মেনে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এ ব্যাপারে কিছু জানানো হচ্ছে না।
প্রথম আলো : কিন্তু ক্যাম্প তো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কোন দিন কোন ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
সন্তু লারমা : দেখুন, ৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প বা এক ব্রিগেড সেনা হয়তো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনামুক্ত থাকছে। যে সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সে অঞ্চলগুলো অন্য ব্রিগেডের আওতায় চলে আসবে। আসল কথা হচ্ছে, অপারেশন উত্তরণের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সেনা শাসন চলছে, এর অবসান ঘটাতে হবে। আর তা করলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ চুক্তির পর এই অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সেনা উপস্থিতি ও সেনা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর প্রায় ১১ বছর চলে গেলেও সেনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আগের মতোই রয়ে গেছে। অপারেশন উত্তরণের অবসান না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো : কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলের।
সন্তু লারমা : পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পার্বত্য অঞ্চলকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে। সে জন্য কি সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে? যারা এ ধরনের কথা বলে তারা বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা কথা বলে থাকে। তারা পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে বিভিন্ন গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই তারা সক্রিয় রয়েছে।
প্রথম আলো : কারা এ ধরনের কাজ করছে?
সন্তু লারমা : দেখুন, ইউপিডিএফ নামের একটি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতাকারী এই শক্তিকে একটি বিশেষ মহল সৃষ্টি করেছে, যারা পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে। ইউপিডিএফ পার্বত্য অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে কার্যত সেখানে খুন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছে। এ পর্যন্ত তারা শতাধিক লোককে হত্যা করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশিদের অপহরণের সঙ্গেও তারা জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী সেখানে রয়েছে কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে সেনা উপস্থিতি যে তাদের কার্যক্রম দমাতে পারছে তা নয়। আসল কথা হচ্ছে, এ ধরনের অপশক্তিকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সেটা করলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
প্রথম আলো : মানে সেনা নিয়ন্ত্রণ ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের কার্যক্রমও বন্ধ করতে বলছেন আপনি?
সন্তু লারমা : পার্বত্য অঞ্চলে ইউপিডিএফের সন্ত্রাস ছাড়া আর কোনো সন্ত্রাস নেই। তাদের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে লোকজন আত্মরক্ষার্থে নানা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই সন্ত্রাস ছাড়া পার্বত্য অঞ্চল ঢাকার চেয়েও শান্তিপূর্ণ। আমার প্রশ্ন, যারা এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেনা উপস্থিতি বা অন্য কোনো উদ্যোগ কিছুই কাজে দেবে না। তাদের তত্পরতার সুযোগে বরং একটি মহল পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বর্তমানে কিছু অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প ও এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের যে কার্যক্রম চলছে, এর বিরোধিতা করছে সেখানকার বাঙালি সেটেলাররা। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা তাদের ওপর হামলার আশঙ্কা করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : সেটেলারদের সরকার এখানে এনে জোর করে বসিয়েছে। এই সেটেলারদের কোনো দোষ নেই। যেসব জায়গায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেগুলো পাহাড়িদের জমি। পার্বত্য চট্টগ্রামে খাসজমি বলে কিছু নেই। সেখানকার ভূমিব্যবস্থ্যা দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা। কোনো মৌজায় যারা বসবাস করে তারা যৌথভাবে সেখানকার জমির মালিক। তাই বাইরে থেকে যাদের নিয়ে জোর করে বসানো হয়েছে, তা পাহাড়িদের জায়গা দখল করেই বসানো হয়েছে। আমরা মনে করি, সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এখন সেনা প্রত্যাহারের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতাকারী শক্তি কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতির পক্ষে তা কাজে লাগানো হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা অতীতে অনেক ঘটানো হয়েছে। সামনেও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বাইরে অনেক স্থায়ী বাঙালি বাসিন্দাও রয়েছে।
সন্তু লারমা : স্থায়ী বাসিন্দাদের ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই। তারা বৈধভাবেই সেখানে রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে সেটেলার বাঙালিদের নিয়ে। পাহাড়িদের জমিতে তাদের বসানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেহেতু খাসজমির কোনো ব্যাপার নেই, তাই জরিপ করা হলে দেখা যাবে সেটেলাররা অবৈধভাবে পাহাড়িদের জমিতে বসবাস করছে। তাই তাদের সরে যেতেই হবে।
প্রথম আলো : কিন্তু সেটেলারদের সরিয়ে নেওয়ার কাজটি খুব সহজ নয়। বিকল্প জমির ব্যবস্থা করা এবং এ জন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন পড়বে।
সন্তু লারমা : আমরা মনে করি না যে কাজটি খুব জটিল। দেশে অনেক খাসজমি রয়েছে, যেখানে তাদের সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। আর অর্থের যে বিষয়টি বললেন তার উত্তরে বলতে চাই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্বত্য চুক্তির পর সেখান থেকে সেটেলারদের সরিয়ে পুনর্বাসনের পুরো খরচ দিতে রাজি ছিল। সরকার তখন বলেছিল যে প্রয়োজনে নিজের অর্থেই কাজটি করা হবে। আমি মনে করি না যে অর্থ এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হবে। সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : আপনি পার্বত্য অঞ্চলে ইউপিডিএফের নানা তত্পরতার কথা বললেন। কিন্তু আপনার সংগঠন জনসংহতি সমিতিতেও বিভক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি রাঙামাটিতে কথা প্রসঙ্গে এক পাহাড়ি জানালেন, জনসংহতি সমিতির দুই পক্ষ ও ইউপিডিএফ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। আপনার মন্তব্য কী?
সন্তু লারমা : জনসংহতি সমিতিতে কোনো বিভক্তি নেই। নানা ইস্যুতে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। বিগত জরুরি অবস্থার সময় পার্বত্য অঞ্চলে কার্যত বিভীষিকার পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল। একদিকে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনা শাসন, অন্যদিকে জরুরি অবস্থা। ওই সময় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এমন শক্তির সঙ্গে দালালি করে জনসংহতি সমিতির কিছু সদস্য নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। সেটাকেই হয়তো কেউ কেউ বিভক্তি হিসেবে দেখার চেষ্টা করছেন, যা সঠিক নয়। ২০০৬ সালে দলের যে কংগ্রেস হয়েছে সে অনুযায়ী সংগঠন চলছে। আগে পাঁচ বছর পর কংগ্রেস হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান গঠনতন্ত্রে তিন বছর পর কংগ্রেস আয়োজনের বিধান করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এ বছর নতুন কংগ্রেস হবে। দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে।
প্রথম আলো : বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করেছিল। আবার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের তরফ থেকে কিছু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : বর্তমান সরকার একটি নির্বাচিত সরকার। সরকারের আওয়ামী লীগের বাইরেও কয়েকটি দল রয়েছে। বলা হয় মহাজোট সরকার। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছে, চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি পরিবীক্ষন ও বাস্তবায়ন কমিটি হয়েছে, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আদিবাসী থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কিছু কাজ হয়েছে। তাই আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক কিছু হচ্ছে বলেই মনে হয়। কিন্তু কার্যকর অগ্রগ্রতি হয়েছে এমন বলা যাবে না। যেমন—ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কমিশনের কোনো দপ্তর নেই, লোকবল নেই। তাহলে কীভাবে চলবে? শুধু নিয়োগ দিলে তো চলবে না।
প্রথম আলো : সরকারের কাছ থেকে এখনই করা প্রয়োজন—এমন কী ধরনের উদ্যোগ আশা করছেন?
সন্তু লারমা : পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো কার্যবিধিমালা নেই। আমি মনে করি, বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে এই পরিষদগুলোর কার্যবিধিমালা চূড়ান্ত করা।
প্রথম আলো : কিছু অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, বর্তমান সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ—সবকিছু মিলিয়ে আপনি কি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছেন?
সন্তু লারমা : আগেই বলেছি, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আমি ইতিবাচক বলে মনে করি। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তা সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর নামে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সেটেলারদের সন্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। এবং তৃতীয়ত, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সরকার যদি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে শুরু করে তবে নিশ্চয় আশাবাদী হওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কিছু অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পসহ এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : সাধারণভাবে এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে কিছু অস্থায়ী ক্যাম্প ছাড়া পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহার বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু হচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করার কথা। সরকার বলেছে, চুক্তির পরপর বেশ কিছু অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে এর প্রয়োজনীয় তথ্য নেই। বর্তমানে যে প্রত্যাহার করা হচ্ছে সে ব্যাপারেও আমরা তেমন কিছু জানি না। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।
প্রথম আলো : আপনি পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান। আপনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি?
সন্তু লারমা : আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। আমরা পত্র-পত্রিকায় কিছু অস্থায়ী ক্যাম্পসহ সেনা প্রত্যাহারের খবর দেখেছি। কীভাবে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সে ব্যাপারেও আমরা কিছু জানি না। কারণ ক্যাম্প প্রত্যাহারের আগে জমিটি কার, তা চিহ্নিত করে হেডম্যানের মাধ্যমে মূল মালিককে ফেরত দেওয়া প্রয়োজন। মূল মালিক না পাওয়া গেলে জেলা পরিষদের কাছে জমি হস্তান্তর করা প্রয়োজন। এ ধরনের প্রক্রিয়া মেনে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এ ব্যাপারে কিছু জানানো হচ্ছে না।
প্রথম আলো : কিন্তু ক্যাম্প তো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কোন দিন কোন ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
সন্তু লারমা : দেখুন, ৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প বা এক ব্রিগেড সেনা হয়তো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনামুক্ত থাকছে। যে সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সে অঞ্চলগুলো অন্য ব্রিগেডের আওতায় চলে আসবে। আসল কথা হচ্ছে, অপারেশন উত্তরণের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সেনা শাসন চলছে, এর অবসান ঘটাতে হবে। আর তা করলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ চুক্তির পর এই অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সেনা উপস্থিতি ও সেনা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর প্রায় ১১ বছর চলে গেলেও সেনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আগের মতোই রয়ে গেছে। অপারেশন উত্তরণের অবসান না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো : কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলের।
সন্তু লারমা : পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পার্বত্য অঞ্চলকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে। সে জন্য কি সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে? যারা এ ধরনের কথা বলে তারা বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা কথা বলে থাকে। তারা পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে বিভিন্ন গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই তারা সক্রিয় রয়েছে।
প্রথম আলো : কারা এ ধরনের কাজ করছে?
সন্তু লারমা : দেখুন, ইউপিডিএফ নামের একটি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতাকারী এই শক্তিকে একটি বিশেষ মহল সৃষ্টি করেছে, যারা পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে। ইউপিডিএফ পার্বত্য অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে কার্যত সেখানে খুন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছে। এ পর্যন্ত তারা শতাধিক লোককে হত্যা করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশিদের অপহরণের সঙ্গেও তারা জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী সেখানে রয়েছে কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে সেনা উপস্থিতি যে তাদের কার্যক্রম দমাতে পারছে তা নয়। আসল কথা হচ্ছে, এ ধরনের অপশক্তিকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সেটা করলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
প্রথম আলো : মানে সেনা নিয়ন্ত্রণ ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের কার্যক্রমও বন্ধ করতে বলছেন আপনি?
সন্তু লারমা : পার্বত্য অঞ্চলে ইউপিডিএফের সন্ত্রাস ছাড়া আর কোনো সন্ত্রাস নেই। তাদের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে লোকজন আত্মরক্ষার্থে নানা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই সন্ত্রাস ছাড়া পার্বত্য অঞ্চল ঢাকার চেয়েও শান্তিপূর্ণ। আমার প্রশ্ন, যারা এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেনা উপস্থিতি বা অন্য কোনো উদ্যোগ কিছুই কাজে দেবে না। তাদের তত্পরতার সুযোগে বরং একটি মহল পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বর্তমানে কিছু অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প ও এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের যে কার্যক্রম চলছে, এর বিরোধিতা করছে সেখানকার বাঙালি সেটেলাররা। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা তাদের ওপর হামলার আশঙ্কা করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : সেটেলারদের সরকার এখানে এনে জোর করে বসিয়েছে। এই সেটেলারদের কোনো দোষ নেই। যেসব জায়গায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেগুলো পাহাড়িদের জমি। পার্বত্য চট্টগ্রামে খাসজমি বলে কিছু নেই। সেখানকার ভূমিব্যবস্থ্যা দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা। কোনো মৌজায় যারা বসবাস করে তারা যৌথভাবে সেখানকার জমির মালিক। তাই বাইরে থেকে যাদের নিয়ে জোর করে বসানো হয়েছে, তা পাহাড়িদের জায়গা দখল করেই বসানো হয়েছে। আমরা মনে করি, সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এখন সেনা প্রত্যাহারের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতাকারী শক্তি কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে সেনা উপস্থিতির পক্ষে তা কাজে লাগানো হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা অতীতে অনেক ঘটানো হয়েছে। সামনেও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথম আলো : পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বাইরে অনেক স্থায়ী বাঙালি বাসিন্দাও রয়েছে।
সন্তু লারমা : স্থায়ী বাসিন্দাদের ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই। তারা বৈধভাবেই সেখানে রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে সেটেলার বাঙালিদের নিয়ে। পাহাড়িদের জমিতে তাদের বসানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেহেতু খাসজমির কোনো ব্যাপার নেই, তাই জরিপ করা হলে দেখা যাবে সেটেলাররা অবৈধভাবে পাহাড়িদের জমিতে বসবাস করছে। তাই তাদের সরে যেতেই হবে।
প্রথম আলো : কিন্তু সেটেলারদের সরিয়ে নেওয়ার কাজটি খুব সহজ নয়। বিকল্প জমির ব্যবস্থা করা এবং এ জন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন পড়বে।
সন্তু লারমা : আমরা মনে করি না যে কাজটি খুব জটিল। দেশে অনেক খাসজমি রয়েছে, যেখানে তাদের সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। আর অর্থের যে বিষয়টি বললেন তার উত্তরে বলতে চাই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্বত্য চুক্তির পর সেখান থেকে সেটেলারদের সরিয়ে পুনর্বাসনের পুরো খরচ দিতে রাজি ছিল। সরকার তখন বলেছিল যে প্রয়োজনে নিজের অর্থেই কাজটি করা হবে। আমি মনে করি না যে অর্থ এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হবে। সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : আপনি পার্বত্য অঞ্চলে ইউপিডিএফের নানা তত্পরতার কথা বললেন। কিন্তু আপনার সংগঠন জনসংহতি সমিতিতেও বিভক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি রাঙামাটিতে কথা প্রসঙ্গে এক পাহাড়ি জানালেন, জনসংহতি সমিতির দুই পক্ষ ও ইউপিডিএফ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। আপনার মন্তব্য কী?
সন্তু লারমা : জনসংহতি সমিতিতে কোনো বিভক্তি নেই। নানা ইস্যুতে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। বিগত জরুরি অবস্থার সময় পার্বত্য অঞ্চলে কার্যত বিভীষিকার পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল। একদিকে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনা শাসন, অন্যদিকে জরুরি অবস্থা। ওই সময় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এমন শক্তির সঙ্গে দালালি করে জনসংহতি সমিতির কিছু সদস্য নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। সেটাকেই হয়তো কেউ কেউ বিভক্তি হিসেবে দেখার চেষ্টা করছেন, যা সঠিক নয়। ২০০৬ সালে দলের যে কংগ্রেস হয়েছে সে অনুযায়ী সংগঠন চলছে। আগে পাঁচ বছর পর কংগ্রেস হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান গঠনতন্ত্রে তিন বছর পর কংগ্রেস আয়োজনের বিধান করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এ বছর নতুন কংগ্রেস হবে। দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে।
প্রথম আলো : বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করেছিল। আবার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের তরফ থেকে কিছু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সন্তু লারমা : বর্তমান সরকার একটি নির্বাচিত সরকার। সরকারের আওয়ামী লীগের বাইরেও কয়েকটি দল রয়েছে। বলা হয় মহাজোট সরকার। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছে, চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি পরিবীক্ষন ও বাস্তবায়ন কমিটি হয়েছে, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আদিবাসী থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কিছু কাজ হয়েছে। তাই আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক কিছু হচ্ছে বলেই মনে হয়। কিন্তু কার্যকর অগ্রগ্রতি হয়েছে এমন বলা যাবে না। যেমন—ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কমিশনের কোনো দপ্তর নেই, লোকবল নেই। তাহলে কীভাবে চলবে? শুধু নিয়োগ দিলে তো চলবে না।
প্রথম আলো : সরকারের কাছ থেকে এখনই করা প্রয়োজন—এমন কী ধরনের উদ্যোগ আশা করছেন?
সন্তু লারমা : পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো কার্যবিধিমালা নেই। আমি মনে করি, বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে এই পরিষদগুলোর কার্যবিধিমালা চূড়ান্ত করা।
প্রথম আলো : কিছু অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, বর্তমান সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ—সবকিছু মিলিয়ে আপনি কি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছেন?
সন্তু লারমা : আগেই বলেছি, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আমি ইতিবাচক বলে মনে করি। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তা সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর নামে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সেটেলারদের সন্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। এবং তৃতীয়ত, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সরকার যদি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে শুরু করে তবে নিশ্চয় আশাবাদী হওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে।
No comments