প্রাথমিক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা -জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে
গত সপ্তাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শিক্ষাবর্ষ শেষে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে সারা দেশে একযোগে নেওয়া হবে সমাপনী পরীক্ষা। অর্থাত্ শিক্ষার্থীরা প্রথম পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখি হবে দশম নয়, পঞ্চম শ্রেণীতে। গত বুধবার প্রথম আলোয় এ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সন্দেহ নেই, সিদ্ধান্তটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন সিদ্ধান্তে চূড়ান্তভাবে পৌঁছার আগে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলে পর্যাপ্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের প্রয়োজন ছিল। তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে আমাদের জানা নেই। তবে এই নতুন ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক হবে বলে মনে হয়, যদি তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। প্রথমত, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গুণমান, যা নিরূপণের ব্যবস্থা বর্তমানে অনুপস্থিত, তা নিরূপিত হতে পারে এই সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়, আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার ঝক্কি-ঝামেলা দূর হবে তাতে। তা ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আরও ভালোভাবে শিক্ষাদানের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে, এই চিন্তা থেকে যে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের মধ্য দিয়ে তাদেরও একটা মূল্যায়ন হবে; শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, আরও ভালো করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে। তৃতীয়ত, বর্তমানে যে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে, এর প্রয়োজন আর থাকবে না। সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া হবে, যে ব্যবস্থা চালু আছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ পঞ্চম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে। এখন পঞ্চম শ্রেণীর মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, বিদ্যালয়গুলো তাদের প্রতিই বেশি মনোযোগী থাকে, বাকি ৬০ শতাংশ, অর্থাত্ সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীই অবহেলার শিকার হয়। এ বৈষম্য দূর হবে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় সমাপনী পরীক্ষাব্যবস্থা চালু হলে।
তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু বাস্তবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছরই নতুন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শুরু করবে। এটা ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। লক্ষ করার বিষয়, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দেশজুড়ে একযোগে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আগস্টের প্রায় মাঝামাঝি। অর্থাত্ হাতে আছে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময়। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন, একযোগে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফলের পদ্ধতি নির্ধারণ, তা প্রকাশ করাসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়ে যে একটি বিশদ ও সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন, তা তৈরি করা হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব।
কিন্তু আমাদের সংশয়, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন সব লেজেগোবরে হয়ে না যায়। এত চটজলদি এই ব্যবস্থা চালু করা কতটা জরুরি এবং তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা বিবেচনার দাবি রাখে। তা ছাড়া যুগোপযোগী করে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারিত হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তাই আমাদের মনে হয়, প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপনী পাবলিক পরীক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে তাড়াহুড়ো না করে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।
সন্দেহ নেই, সিদ্ধান্তটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন সিদ্ধান্তে চূড়ান্তভাবে পৌঁছার আগে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলে পর্যাপ্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের প্রয়োজন ছিল। তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে আমাদের জানা নেই। তবে এই নতুন ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক হবে বলে মনে হয়, যদি তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। প্রথমত, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গুণমান, যা নিরূপণের ব্যবস্থা বর্তমানে অনুপস্থিত, তা নিরূপিত হতে পারে এই সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়, আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার ঝক্কি-ঝামেলা দূর হবে তাতে। তা ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আরও ভালোভাবে শিক্ষাদানের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে, এই চিন্তা থেকে যে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের মধ্য দিয়ে তাদেরও একটা মূল্যায়ন হবে; শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, আরও ভালো করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে। তৃতীয়ত, বর্তমানে যে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে, এর প্রয়োজন আর থাকবে না। সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া হবে, যে ব্যবস্থা চালু আছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ পঞ্চম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে। এখন পঞ্চম শ্রেণীর মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, বিদ্যালয়গুলো তাদের প্রতিই বেশি মনোযোগী থাকে, বাকি ৬০ শতাংশ, অর্থাত্ সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীই অবহেলার শিকার হয়। এ বৈষম্য দূর হবে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় সমাপনী পরীক্ষাব্যবস্থা চালু হলে।
তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু বাস্তবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছরই নতুন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শুরু করবে। এটা ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। লক্ষ করার বিষয়, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দেশজুড়ে একযোগে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আগস্টের প্রায় মাঝামাঝি। অর্থাত্ হাতে আছে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময়। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন, একযোগে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফলের পদ্ধতি নির্ধারণ, তা প্রকাশ করাসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়ে যে একটি বিশদ ও সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন, তা তৈরি করা হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব।
কিন্তু আমাদের সংশয়, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন সব লেজেগোবরে হয়ে না যায়। এত চটজলদি এই ব্যবস্থা চালু করা কতটা জরুরি এবং তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা বিবেচনার দাবি রাখে। তা ছাড়া যুগোপযোগী করে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারিত হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তাই আমাদের মনে হয়, প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপনী পাবলিক পরীক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে তাড়াহুড়ো না করে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।
No comments