যুক্তরাষ্ট্রবিহীন এশিয়ার নিরাপত্তা কতোটা বিপজ্জনক হবে?

২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। এরপর জাপানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও বার বার একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আজকের ইউক্রেন হবে আগামী দিনের পূর্ব-এশিয়া’। তিনি হয় তো বুঝাতে চেয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে দখল করতে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে চীন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প যখন ইউক্রেনের দিকে ঘুরে গেছেন, তখন এই বাক্যটি অন্যভাবে দেখা যেতে পারে। তা হলো যদি যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তার বন্ধু ও মিত্রদের ত্যাগ করে তাতে কী রকম ঝুঁকি সৃষ্টি হবে? এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইকোনমিস্ট।  ইউরোপিয়ানরা এরই মধ্যে সবাই এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎপদসরণের ঝুঁকি আরও বেশি মনে হচ্ছে। চীনকে যদি যুক্তরাষ্ট্র একটি হুমকি হিসেবে দেখে, তাহলে এশিয়ার অংশীদারদের বিচ্ছিন্ন করার সামর্থ্য তার থাকবে না। এ মাসের শুরুর দিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক ত্যাগ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বৈদেশিক যে সহায়তা বাতিল করে সেক্ষেত্রে তাইওয়ান এবং ফিলিপাইন ছিল আলাদা। অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সহায়তা বাতিল করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাসাই কেনিচিরো বলেন, ইউরোপের চেয়ে এখানে পরিস্থিতি জটিল। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বড় রকমের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে চীন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জোটের কাঠামো ভেঙে ফেলতে চান তাহলে তার জন্য প্রয়োজন হবে কংগ্রেসের অনুমোদন। কিন্তু সেটা আদায় করা কঠিন হতে পারে। এশিয়ার বন্ধু দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন ঘাঁটি আছে। তাতে অবস্থান করছে প্রায় ৯০ হাজার সেনা। ইউরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প অপ্রচলিত কূটনীতি অবলম্বন করেছেন। তা সত্ত্বেও, এশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অপদস্ত করার দু’দিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বহনকারী একটি ক্যারিয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরে পূর্বনির্ধারিত উপস্থিতি জানান দেয়।

তা সত্ত্বেও ট্রাম্পিয়ান আমেরিকার সঙ্গে এশিয়ার একটি নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হচ্ছে। জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে যে অবস্থা দেখা গেছে ওভাল অফিসে তাতে দেখা যায় যে, দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে যেকোনো সময় আপস হতে পারে। এমনটা মনে করেন দক্ষিণ কোারিয়ার রক্ষণশীল ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি আহন চিওল-সু। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে উদগ্রিব ট্রাম্প। এর ফলে এই ধারণা আসতে পারে যে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অথবা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে একই রকম সমঝোতায় আসতে পারেন ট্রাম্প। তার এই যে লেনাদেনা এ থেকে এশিয়ার মিত্ররাও রেহাই পাবেন বলে মনে হয় না। এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক বাধার বিরুদ্ধে র‌্যালিতে অংশ নেন তিনি। অভিযোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের জোট অন্যায্য। ইউনিভার্সিটি অব টোকিও’র ফুজিওয়ারা কিচি বলেন, শুধু ইউরোপিয়ান দেশগুলোই নয়। জাপানও একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়তে বাধ্য হবে, যখন তারা দেখবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর নির্ভর করা যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে এশিয়ার মিত্ররা কী করতে পারেন? একটি জবাব হতে পারে ডনাল্ড ট্রাম্পের সুদৃষ্টিতে থাকা। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিনিয়োগ করার মধ্য দিয়ে সমঝোতা হতে পারে। ট্রাম্প চাইছেন আলাস্কা থেকে বড় আকারের নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস  নেয়া শুরু করুক জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। জাহাজ তৈরি থেকে অর্ধপরিবাহীর কারখানা হিসেবে এশিয়ার মিত্রদের বেশ কিছু সুবিধা আছে। তারাও বৈচিত্র্যকরণের ঝুঁকি শুরু করতে পারে।

কিন্তু ইউরোপের চেয়ে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য কঠিন হবে। টোকিওর গাকুশুইন ইউনিভার্সিটির হিকোতানি তাকাকো বলেন, আমরা যদি নিজেরা আরও অনেক কিছু করি, তার মানে এই নয় যে, আমরা নিজেরা ঠিক থাকবো। যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ রাখলে ন্যাটোর বাকি মিত্রদের প্রতিরক্ষা খরচ হবে রাশিয়ার তিনগুণ। অন্যদিকে এশিয়ায় (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ড) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় চীনের প্রায় অর্ধেক।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.