মাদার তেরেসা’র বিরুদ্ধে যত অভিযোগ! by নাফিস নাদভী
আমাদের
ইতিহাসে মাদার তেরেসা এক কিংবদন্তীর নাম। আমরা তাকে জানি মানবতার মূর্ত
প্রতীক হিসেবে, সেবা ও মমতার দৃষ্টান্ত হিসেবে। মাদার তেরেসার গল্প শুনতে
শুনতে আমাদের মনে তার পরিশুদ্ধ রুপের এক স্থায়ী চিত্র আঁকা হয়ে গিয়েছে সেই
ছোটবেলা থেকেই।
আমাদের এই স্থায়ী ভাবনায় যদি কেউ আঘাত করে? যদি কেউ এসে বলে, না, আমরা যা দেখছি তার পুরোটা সত্য নয় অথবা পুরোটা সত্য আমরা দেখছি না? পর্দার আড়ালে কিছু গল্প লুকিয়ে আছে, যা মাদার তেরেসার ভাবমূর্তির মত এতটা উজ্জ্বল নয়? পাঠক, আজকে আমরা এমনই কিছু কথা তুলে ধরব।
মাদার তেরেসার মূল নাম ছিল আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। তিনি ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট বর্তমান ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপিয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি মিশনারী হবার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করে “সিস্টার অফ লরেটো” নামক একটি সংস্থায় যোগ দেন। সংস্থার কাজে ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। ১৯৫০ সালে রোগাক্রান্ত ও দরিদ্র মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন “মিশনারিজ অফ চ্যারিটি” নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার এবং ১৯৮০ সালের ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “ভারতরত্ন” লাভ করেন।
মাদার তেরেসা আজীবন দুঃস্থ মানুষের সেবা করেছেন, এই কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে অভিযোগটা আরেকটু গভীরে। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, তার সেবাদানের উদ্দেশ্য ও প্রণালী খালি চোখে যতটা মনে হয়, ঠিক ততটা মানবতাবাদী নয়।
ডাক্তার-লেখক অরুপ চট্যোপাধ্যায় এর লেখা “Mother Teresa: The Final Verdict” নামে বইটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়, যাতে মাদার তেরেসার সেবা-পদ্ধতি ও আরও নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একইভাবে, তার কর্মপদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স (লেখক-কলামিস্ট), মাইকেল প্যারেন্টি (রাষ্ট্রবিজ্ঞানী), বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত ব্যক্তি ও সংস্থা।
আমাদের এই স্থায়ী ভাবনায় যদি কেউ আঘাত করে? যদি কেউ এসে বলে, না, আমরা যা দেখছি তার পুরোটা সত্য নয় অথবা পুরোটা সত্য আমরা দেখছি না? পর্দার আড়ালে কিছু গল্প লুকিয়ে আছে, যা মাদার তেরেসার ভাবমূর্তির মত এতটা উজ্জ্বল নয়? পাঠক, আজকে আমরা এমনই কিছু কথা তুলে ধরব।
মাদার তেরেসার মূল নাম ছিল আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। তিনি ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট বর্তমান ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপিয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি মিশনারী হবার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করে “সিস্টার অফ লরেটো” নামক একটি সংস্থায় যোগ দেন। সংস্থার কাজে ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। ১৯৫০ সালে রোগাক্রান্ত ও দরিদ্র মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন “মিশনারিজ অফ চ্যারিটি” নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার এবং ১৯৮০ সালের ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “ভারতরত্ন” লাভ করেন।
মাদার তেরেসা আজীবন দুঃস্থ মানুষের সেবা করেছেন, এই কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে অভিযোগটা আরেকটু গভীরে। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, তার সেবাদানের উদ্দেশ্য ও প্রণালী খালি চোখে যতটা মনে হয়, ঠিক ততটা মানবতাবাদী নয়।
ডাক্তার-লেখক অরুপ চট্যোপাধ্যায় এর লেখা “Mother Teresa: The Final Verdict” নামে বইটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়, যাতে মাদার তেরেসার সেবা-পদ্ধতি ও আরও নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একইভাবে, তার কর্মপদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স (লেখক-কলামিস্ট), মাইকেল প্যারেন্টি (রাষ্ট্রবিজ্ঞানী), বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত ব্যক্তি ও সংস্থা।
শৈশবে মাদার তেরেসা। |
মাদার
তেরেসার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি সেবা গ্রহণ করতে আসা অসহায় দুঃস্থ
মানুষদের খৃস্টধর্মে দীক্ষিত হতে চাপ দিতেন। ডঃ অরুপ চট্যোপাধ্যায় বলেছেন,
১৯৯২ সালে মাদার তেরেসা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রায় ২৯ হাজার
লোককে মৃত্যুকালে তাদের না জানিয়ে খৃস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেছেন। তার
বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা দাবী করে, মাদার তেরেসা
হিন্দুধর্মকে শয়তানের ধর্ম বলে চিহ্নিত করেন। যদিও একজন মানুষের অজান্তে
কিভাবে তাকে “ধর্মান্তরিত” করা যায়- এ ব্যাপারটিই প্রশ্নবিদ্ধ।
মিশনারিজ অফ চ্যারিটি এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করে। এ
ব্যাপারে মাদার তেরেসার মুখপাত্র ও সহকর্মী সুনিতা কুমারের উদ্ধৃতি তুলে
দিচ্ছি-
- *“তিনি ধর্মের অনেক ঊর্ধ্বে ছিলেন – ফলে তার কাউকে ধর্মান্তরিত করার প্রশ্নও ওঠে না। সেটা কখনোই তার উদ্দেশ্য ছিল না, আর তাই যদি হত আমার তো মনে হয় গোটা ভারত এতদিনে খ্রিষ্টান হয়ে যেত।”
মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে, তিনি শারীরিক কষ্টকে ঈশ্বরের
নৈকট্যলাভের পথ বলে বিশ্বাস করতেন বলে অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ
প্রদান করতেন না। বরং তিনি রোগমুক্তির জন্য রোগীকে যিশুর কাছে প্রার্থনা
করার উপদেশ দিতেন।
ব্যাপারটা সহজভাবে
বোঝানোর চেষ্টা করি। ধরুন, একজন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রেসক্রাইবড ওষুধ
আপনার কাছে আছে। কিন্তু আপনি তাকে ওষুধ না খাইয়ে কেবল সেবা করে গেলেন,
সারারাত জেগে তার পাশে বসে রইলেন, মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিলেন এই ভেবে যে,
অসুখ ভালো করার মালিক আল্লাহ- আপনার সেবাপদ্ধতি কি ঠিক?
অভিযোগগুলো তলিয়ে দেখলে, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মানবতার মোড়কের আড়ালে ধর্ম বিক্রি করে গেছেন মাদার তেরেসা- এমন একটা দৃশ্যই আঁকা হয়ে যায়। মাদার তেরেসার “নিরাময় কেন্দ্র” এর পরিবেশ নিয়েছে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। বলা হয়, এর পরিবেশ ছিল অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগের প্রকোপ কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যেত, আর সহজেই ছড়িয়ে পড়ত ছোঁয়াচে রোগগুলো। একাধিক ব্যক্তির জন্য একই সিরিঞ্জ ও অন্যান্য স্পর্শকাতর সরঞ্জাম ব্যবহার করা হত।
শুনে মনে হতে পারে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার জন্যই হয়তো সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা সম্ভব হত না। ব্যাপারটা তেমন না। মাদার তেরেসা বিভিন্ন উৎস থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক অনুদান পেতেন সেবাকর্মের জন্য। বিখ্যাত পত্রিকা গার্ডিয়ান সুজান শিল্ডের (মিশনারিজের তৎকালীন কর্মী) উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করে যে, অনুদানের অধিকাংশ টাকা দুঃস্থদের সেবায় ব্যয় হবার পরিবর্তে ব্যাংকেই পড়ে থাকত। এখানে অভিযোগটা অসততার নয়, অবহেলার।
এই অনুদান সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ হল, তিনি কিছু অসৎ ও অনৈতিক উৎস থেকে অনুদান গ্রহণ করেছেন। যেমন, হাইতির কুখ্যাত স্বৈরশাসক ডুভালিয়ার পরিবার, লিংকন সেভিংস অ্যান্ড লোন কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত চার্লস কীটিং।
মাদার তেরেসা ছিলেন গর্ভপাত ও জন্মনিরোধকের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ। গর্ভপাত ও জন্মনিরোধকের ব্যবহারকে তিনি অনৈতিক ও অমঙ্গলজনক বলে মনে করতেন। গর্ভপাত নারীর জন্মগত অধিকার, নানা পারিপার্শ্বিক কারণে সে গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জনবহুল অঞ্চলে নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। অথচ, এই দু’টিকে মাদার তেরেসা ঈশ্বরের ইচ্ছার পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করতেন এবং এদের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করতেন, এমনই ঘোর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। নোবেল শান্তি পুরষ্কার গ্রহণের সময় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন,
অভিযোগগুলো তলিয়ে দেখলে, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মানবতার মোড়কের আড়ালে ধর্ম বিক্রি করে গেছেন মাদার তেরেসা- এমন একটা দৃশ্যই আঁকা হয়ে যায়। মাদার তেরেসার “নিরাময় কেন্দ্র” এর পরিবেশ নিয়েছে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। বলা হয়, এর পরিবেশ ছিল অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগের প্রকোপ কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যেত, আর সহজেই ছড়িয়ে পড়ত ছোঁয়াচে রোগগুলো। একাধিক ব্যক্তির জন্য একই সিরিঞ্জ ও অন্যান্য স্পর্শকাতর সরঞ্জাম ব্যবহার করা হত।
শুনে মনে হতে পারে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার জন্যই হয়তো সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা সম্ভব হত না। ব্যাপারটা তেমন না। মাদার তেরেসা বিভিন্ন উৎস থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক অনুদান পেতেন সেবাকর্মের জন্য। বিখ্যাত পত্রিকা গার্ডিয়ান সুজান শিল্ডের (মিশনারিজের তৎকালীন কর্মী) উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করে যে, অনুদানের অধিকাংশ টাকা দুঃস্থদের সেবায় ব্যয় হবার পরিবর্তে ব্যাংকেই পড়ে থাকত। এখানে অভিযোগটা অসততার নয়, অবহেলার।
এই অনুদান সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ হল, তিনি কিছু অসৎ ও অনৈতিক উৎস থেকে অনুদান গ্রহণ করেছেন। যেমন, হাইতির কুখ্যাত স্বৈরশাসক ডুভালিয়ার পরিবার, লিংকন সেভিংস অ্যান্ড লোন কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত চার্লস কীটিং।
মাদার তেরেসা ছিলেন গর্ভপাত ও জন্মনিরোধকের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ। গর্ভপাত ও জন্মনিরোধকের ব্যবহারকে তিনি অনৈতিক ও অমঙ্গলজনক বলে মনে করতেন। গর্ভপাত নারীর জন্মগত অধিকার, নানা পারিপার্শ্বিক কারণে সে গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জনবহুল অঞ্চলে নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। অথচ, এই দু’টিকে মাদার তেরেসা ঈশ্বরের ইচ্ছার পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করতেন এবং এদের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করতেন, এমনই ঘোর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। নোবেল শান্তি পুরষ্কার গ্রহণের সময় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন,
- *“গর্ভপাত হচ্ছে পৃথিবীর শান্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।”
এ ভাষণে তিনি বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন “জন্ম না নেওয়া মানবশিশুর প্রতি
সহিংসতা” হিসেবে। তবে জন্ম নেওয়া একটি শিশু মানবেতর জীবন যাপন করলে সে
ব্যাপারে কি করণীয় সে ব্যাপারে তেমন বাস্তবিক কোন দিকনির্দেশনা দেননি তিনি,
বরং পুরো বিষয়টি ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।
ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার “The Missionary Position: Mother Teresa in Theory and Practice” প্রবন্ধে মাদার তেরেসা সম্পর্কে বলেছেন-
- *“একজন ধর্মীয় মৌলবাদী, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় একজন ব্যক্তি, সেকেলে ধর্মোপদেশ দানকারী এবং পার্থিব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির অনুচর।”
মাদার তেরেসা সাধুও হতে পারেন, শয়তানও হতে পারেন। একেকজন হয়তো একেকভাবে
ব্যাখ্যা করবেন। তবে, আমরা সাদা চোখে যা দেখি, তা সবসময় পুরোপুরি সত্য
না-ও হতে পারে, এই বিষয়টি স্মরণে রাখাও বাঞ্চনীয়।
No comments