সাগরপাড়ের জাদুঘরে টাইটানিক দেখা by রবিউল ইসলাম
সাউদাম্পটনের সি সিট মিউজিয়াম |
বন্দরনগরী সাউদাম্পটনে পা রেখে জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক’ ছবির
চেনা দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছিল। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া এই দৈত্যাকৃতির
জাহাজটি নিয়ে অনেকের মতো আমারও আগ্রহ ব্যাপক। শহরটিতে পৌঁছানোর আগেই
জানতাম, এবার টাইটানিককে কাছ থেকে দেখা হবে। জাহাজের ক্রুদের সঙ্গেও পরিচয়
ঘটবে। তাই সাউদাম্পটনে এসে অন্যরকম রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম।
টাইটানিককে ঘিরে জেমস ক্যামেরনের ছবিটি (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও-কেট
উইন্সলেট) বহুবার দেখেছি। এই ট্র্যাজেডি নিয়ে বহু বই পড়েছি। হয়তো এজন্য
সাউদাম্পটন শহরে পা রাখতেই এত শিহরণ জেগেছে। হোটেলে রাতটুকু থেকে পরদিন
সকাল হতেই টাইটানিকে চড়তে বেরিয়ে পড়ি! প্রায় ১০০ বছর আগে যে জাহাজ সাগরের
অতলে ডুবে গেছে, তাতে কি ভ্রমণ সম্ভব? অথচ সাউদাম্পটনের সি সিটি মিউজিয়ামে
(সাগরপাড়ের জাদুঘর) আমরা তিনজন দিব্যি ঘণ্টাদেড়েকের মতো টাইটানিকে
বেড়ালাম! সেখানে নাবিকের মতো জাহাজের স্টিয়ারিং হুইল চালিয়ে গেমস
খেলে টাইটানিককে ঠিকই বন্দরে নেওয়া যায়।
আগের
রাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ জুন সকাল ১০টায় হ্যাভলোক রোডে অবস্থিত সি সিটি
মিউজিয়ামের উদ্দেশে রওনা হই। জাদুঘরের সামনে যেতেই শিহরিত হলাম!
ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইসাম মোহাম্মদ টিকিট কাটলেন। জনপ্রতি খরচ ৮
পাউন্ড। পুরো জাদুঘর সাজানো গোছানো। শুধু টাইটানিক নয়, অন্য অনেক হারিয়ে
যাওয়া জাহাজের তথ্যও রয়েছে এখানকার অডিটোরিয়ামগুলোতে।
সি
সিটি মিউজিয়ামে ঢুকতেই টাইটানিকের ক্রুদের সঙ্গে দেখা! তাদের সঙ্গে পরিচয়
পর্ব শেষে একটু একটু করে এগিয়ে জাহাজের কম্পার্টমেন্টে ঢুকলাম। আমাদের
পাশাপাশি বড় একটি গ্রুপকে জাদুঘরে ঘুরতে দেখা গেলো। তাদের পেছনে ফেলে সামনে
এগোতেই টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ ও ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম
ম্যাকমাস্টার মারডক থেকে শুরু করে ফিফথ অফিসার হ্যারল্ড লো সামনে পড়লেন!
তাদের সঙ্গে আছেন চিফ অফিসার হেনরি টিঙ্গেল ওয়াইল্ড ও সেকেন্ড অফিসার
চার্লস হার্বার্ট লাইটোলার। সবাই আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন! একে একে সবার
সঙ্গে পরিচিত হলাম। জানা হলো তাদের পরিচয় ও টাইটানিক জাহাজের কোন কোন
দায়িত্বে ছিলেন তারা। আরেকটু এগোতেই মনটা বিষণ্ন হয়ে গেলো। জাহাজডুবিতে
মৃত্যুবরণ করা মানুষদের ছবি আর পরিচয়সহ দেয়ালে বিস্তারিত তথ্য টানানো।
খানিকটা
সামনে জাহাজের গ্র্যান্ড সিঁড়ি। এখান দিয়ে প্রথম শ্রেণির যাত্রীরা ওপরে
উঠেছিলেন কিংবা নেমেছিলেন। একটি বিশাল কারুকার্যময় কাঁচের গম্বুজ পুরো
জায়গাটিকে আলোকিত করে রেখেছে। বাঁ-দিকে সলিল সমাধি হওয়া জাহাজের ক্রু ও
যাত্রীদের ব্যবহৃত সামগ্রী। সেগুলো কাচের ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেইসব
দেখে রোমাঞ্চিত না হয়ে উপায় কী!
জাহাজের
প্রথম শ্রেণির কেবিনে ওঠার মুহূর্ত দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে।
ফ্লোরটির এক কোণে কাচের ঘরে শোভা পাচ্ছে টাইটানিক জাহাজের নোঙরের কয়েকটি
অংশ। এর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না আমরা কেউই।
দেয়ালের
উল্টো পাশে টাইটানিক জাহাজ অঙ্কন করে কোন অংশে কী আছে আর কে কোথায় ও
কীভাবে দায়িত্ব পালন করতেন সেসব দেখানো হয়েছে। সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট
টেলিগ্রাফিস্ট হ্যারল্ড সিডনি ব্রাইড, ল্যাম্প ট্রিমার স্যামুয়েল হেমিং,
রেস্তোরাঁ ম্যানেজার লুইজি গ্যাত্তিসহ বিভিন্ন অফিসারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
হলো। কোথায় কোন ফ্লোর, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর কেবিনসহ সবকিছু লেখা আছে।
পুরো জাহাজের ডায়াগ্রাম মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
কক্ষটি
ছেড়ে একটু এগোলে চোখে পড়ে পুরনো পত্রিকায় সাজানো দেয়াল। এখানে দুর্ঘটনার
সময়কার খবরগুলো রয়েছে যত্নে। প্রথম দিন খবর প্রকাশিত হয়েছিল, ‘টাইটানিক
ডুবেছে। তবে কেউ মারা যাননি।’ দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পর নিউ ইয়র্ক টাইমস ৭৫
পাতা জুড়ে শুধু টাইটানিকেরই খবর ছেপেছিল। হ্যাম্পশায়ার ক্রনিকল পত্রিকার
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টাইটানিক দুর্ঘটনায় সাউদাম্পটনের প্রায় ১০০০
পরিবার সরাসরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পত্রিকাটির মতে, তাদের মধ্যে ৫০০
পরিবার কমপক্ষে নিজেদের পরিবারের একজনকে হারিয়েছিল। এছাড়া আরও সব চমকপ্রদ
তথ্য রয়েছে পুরনো খবরগুলোতে।
একটি হলঘরে ভিডিওর মাধ্যমে জাহাজডুবির বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল নিউইয়র্কের উদ্দেশে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দর
ছাড়ে টাইটানিক। কিন্তু সেটাই যে শেষ যাত্রা হবে তা ঘুণাক্ষরেও কেউ বুঝতে
পারেনি। ১৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা থাকা ইংল্যান্ডের সেরা কমান্ডার এডওয়ার্ড
জন স্মিথের নেতৃত্বে টাইটানিক যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু চতুর্থ দিনের
মাথায় নিস্তব্ধ সমুদ্রের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিরও নিচে নেমে যায়। আকাশ
পরিষ্কার থাকলেও রাতে চাঁদ দেখা যাচ্ছিল না। ফার্স্ট অফিসার মারডক
আকস্মিকভাবে বাঁ-দিকে মোড় নেওয়ার নির্দেশ দিলেও টাইটানিককে অক্ষত রাখা
যায়নি। ডানদিকে আইসবার্গের সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে জাহাজের প্রায় ৯০
মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয়।
হতবাক
করার মতো ব্যাপার হলো, সেদিন দুপুরে আমেরিকা নামের একটি জাহাজ সামনে
আইসবার্গ আছে এমন সতর্কবার্তা পাঠানোর পরও টাইটানিকের রেডিও যোগাযোগের
দায়িত্বে থাকা জ্যাক ফিলিপস ও হ্যারল্ড সিডনি ব্রাইড তাতে গুরুত্ব দেননি।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাইটানিকের নাবিকরা সামনে সেই বরফখণ্ড দেখতে পান।
কিন্তু ততক্ষণে কিছুই করার নেই। ভিডিওতে এভাবেই টাইটানিকের দুর্ঘটনায় পড়ার
বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এসব দেখতে দেখতে সঙ্গী ইয়াসিন হাসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ফেলে হতাশার সুরে বললেন, ‘এত সুন্দর একটি জাহাজ কীভাবে দায়িত্বহীনতার কারণে
ডুবে গেলো।’
প্ল্যাটফর্মটি শেষ করে সামনে গিয়ে পাওয়া গেলো চমকপ্রদ তথ্য। অন্ধকার
একটি ঘরে আদালতের মতো কক্ষ। সেখানে মূলত টাইটানিকের ডুবে যাওয়া নিয়ে তদন্ত
রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। জাহাজডুবির কারণ হিসেবে ‘অ্যাক্ট অব গড’ বা
আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু আইরিশ সাংবাদিক সেনান
মলোনির মতে, শুধু ‘অ্যাক্ট অব গড’ নয়; আগুন, বরফ ও অপরাধমূলক অবহেলাই
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার জন্য দায়ী। তার মতে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট
ছাড়ার পরই জাহাজের একটি বয়লারে আগুন লেগে যায়। কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই চেপে
রাখা হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এ ঘটনা খোদ স্মিথ জানতেন।
কিন্তু জাহাজের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হোয়াইট স্টার লাইনের চেয়ারম্যান জোসেফ
ব্রুস ইজমে’র কড়া নির্দেশে বিষয়টি চেপে রাখতে বাধ্য হন ক্যাপ্টেন!
ওই
রিপোর্টে বলা হয়, পাঁচ-ছয় দিন ধরে জ্বলন্ত বয়লার নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে চলতে
গিয়ে হিতে বিপরীত হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বয়লার রুমে। বয়লার সেকশন-সংলগ্ন
জাহাজের ধাতব দেয়াল প্রচণ্ড উত্তাপে (আনুমানিক ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
এমনিতেই নরম হয়ে পড়েছিল। এ কারণে বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সহজেই ফেটে
গিয়েছিল টাইটানিক। পুরো ঘটনার জন্য ক্যাপ্টেনকে দোষী বিবেচনা করা হয়।
জাদুঘরের একেকটি ধাপ পেরোচ্ছি আর টাইটানিক সম্পর্কিত সব তথ্য পাচ্ছি। এর
মধ্যে অনেক নতুন তথ্যও জানা হলো। মনে পড়ে, জাহাজ ডুবতে থাকার সময়
মিউজিশিয়ানরা ক্রমাগত বেহালা বাজিয়ে গিয়েছিলেন? বাস্তবেও তেমনটাই ঘটেছিল।
জাদুঘরে এর কিছু প্রমাণ পাওয়া গেলো। এছাড়া আরও কিছু চমকপ্রদ খবর আছে।
টাইটানিকের চিফ বেকার, অর্থাৎ বেকারির দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি দুই ঘণ্টা
সাগরের হিমশীতল জলে ভাসার পরেও বেঁচে গিয়েছিলেন। কারণ অতিরিক্ত মদ্যপানে
তার শরীর ছিল গরম! জাহাজের বেশিরভাগ লাইফবোটেই জায়গা ফাঁকা ছিল। কিন্তু
কোনও অজানা কারণে সেগুলোতে যাত্রীদের তোলা হয়নি।
অনেক
রুম অতিক্রমের পর অবশেষে টাইটানিকের দেখা পেলাম। কাচের ঘরে রাখা হয়েছে এই
বিশাল জাহাজ। আমাদের মতো অনেকেই বিস্ময় চোখে টাইটানিক দেখছিল। এখানে ছবি
তোলার লোভ সামলাতে পারে কে! সবাই মিলে বিভিন্ন ঢঙে টাইটানিকের সঙ্গে
ক্যামেরাবন্দি হলাম। সামনে আরও জাহাজ ছিল। কিন্তু সেগুলো আমাদের তেমন একটা
আগ্রহ নেই।
একনজরে টাইটানিক
সৌন্দর্য আর চাকচিক্যের দিক থেকে তখনকার সব জাহাজকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল টাইটানিক। এটি একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩৫৪৭ জন যাত্রী ও ক্রু বহন করতে পারতো। এর ভেতরে ছিল সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াশ কোর্ট, তুর্কি বাথ, ব্যয়বহুল ক্যাফে। ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাসের যাত্রীদের জন্য ছিল আলাদা বিশাল লাইব্রেরি। তখনকার সময়ের সব আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছিল এই নৌযানে। স্বাভাবিকভাবে টাইটানিকের ফার্স্টক্লাস প্যাকেজ ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল। জাহাজটির প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে আটলান্টিক মহাসাগর একবার অতিক্রম করার ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার ৩৫০ ডলার।
সৌন্দর্য আর চাকচিক্যের দিক থেকে তখনকার সব জাহাজকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল টাইটানিক। এটি একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩৫৪৭ জন যাত্রী ও ক্রু বহন করতে পারতো। এর ভেতরে ছিল সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াশ কোর্ট, তুর্কি বাথ, ব্যয়বহুল ক্যাফে। ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাসের যাত্রীদের জন্য ছিল আলাদা বিশাল লাইব্রেরি। তখনকার সময়ের সব আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছিল এই নৌযানে। স্বাভাবিকভাবে টাইটানিকের ফার্স্টক্লাস প্যাকেজ ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল। জাহাজটির প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে আটলান্টিক মহাসাগর একবার অতিক্রম করার ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার ৩৫০ ডলার।
টাইটানিকের যাত্রা
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল। সকাল সাড়ে ৯টা। যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশনে অন্য সবদিনের চেয়ে ওই দিনটিতে ভিড় খানিকটা বেশি ছিল। মানুষের একটি দীর্ঘ লাইন স্টেশন থেকে সাউদাম্পটন ডকের দিকে চলে গেছে। সেখানেই ৪ নম্বর গেটের ৪৪-বার্থে অবস্থান করে টাইটানিক। এর প্রথম শ্রেণীর বেশিরভাগেই ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণীর লোকজন ছিলেন। বেশ কয়েকজন কোটিপতিও ছিলেন এই দলে। সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের মূল আকর্ষণ তাদের ঘিরে। ক্যাপ্টেন স্মিথ প্রথম শ্রেণির ডেকের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। সেদিন দুপুর আনুমানিক ১২টায় নিউইয়র্কের উদ্দেশে টাইটানিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল। সকাল সাড়ে ৯টা। যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশনে অন্য সবদিনের চেয়ে ওই দিনটিতে ভিড় খানিকটা বেশি ছিল। মানুষের একটি দীর্ঘ লাইন স্টেশন থেকে সাউদাম্পটন ডকের দিকে চলে গেছে। সেখানেই ৪ নম্বর গেটের ৪৪-বার্থে অবস্থান করে টাইটানিক। এর প্রথম শ্রেণীর বেশিরভাগেই ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণীর লোকজন ছিলেন। বেশ কয়েকজন কোটিপতিও ছিলেন এই দলে। সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের মূল আকর্ষণ তাদের ঘিরে। ক্যাপ্টেন স্মিথ প্রথম শ্রেণির ডেকের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। সেদিন দুপুর আনুমানিক ১২টায় নিউইয়র্কের উদ্দেশে টাইটানিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
দুর্ঘটনার কবলে টাইটানিক
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। রাত ১১টা ৪০ মিনিট। টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষণকারীরা সামনে বিশাল এক বরফখণ্ড দেখতে পান। যদিও আগে বহুবার সতর্ক করা হলেও বিষয়টি আমলে নেননি তারা। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মারডক আকস্মিকভাবে বাঁ-দিকে মোড় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েও জাহাজটিকে রক্ষা করতে পারেননি। টাইটানিকের ডানদিক আইসবার্গের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘর্ষণে প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে ফেটে যায়। জাহাজটি সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে থাকতে পারতো। কিন্তু পানিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল পাঁচটি কম্পার্টমেন্ট। এগুলোর ওজনের কারণে সামনের অংশ ধীরে ধীরে পানিতে ডুবতে থাকে। টাইটানিকের বিপদসংকেত পেয়ে এসএস মাউন্ট টেম্পল, এসএস ক্যালিফোর্নিয়ান ও টাইটানিকের সহোদর জাহাজ অলিম্পিক উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। রাত ১১টা ৪০ মিনিট। টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষণকারীরা সামনে বিশাল এক বরফখণ্ড দেখতে পান। যদিও আগে বহুবার সতর্ক করা হলেও বিষয়টি আমলে নেননি তারা। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মারডক আকস্মিকভাবে বাঁ-দিকে মোড় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েও জাহাজটিকে রক্ষা করতে পারেননি। টাইটানিকের ডানদিক আইসবার্গের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘর্ষণে প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে ফেটে যায়। জাহাজটি সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে থাকতে পারতো। কিন্তু পানিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল পাঁচটি কম্পার্টমেন্ট। এগুলোর ওজনের কারণে সামনের অংশ ধীরে ধীরে পানিতে ডুবতে থাকে। টাইটানিকের বিপদসংকেত পেয়ে এসএস মাউন্ট টেম্পল, এসএস ক্যালিফোর্নিয়ান ও টাইটানিকের সহোদর জাহাজ অলিম্পিক উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
টাইটানিকের ডুবে যাওয়া
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। রাত সাড়ে ১২টার কিছুক্ষণ পর টাইটানিকের পেছনের অংশ সামনের অংশ থেকে ভেঙে যায়। জাহাজের সম্মুখভাগ সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে চলে যায়। এ কারণে জাহাজের পেছনের অংশ ধীরে ধীরে খাড়া হতে হতে একেবারে লম্বালম্বি হয়ে যায়। বায়ুজনিত কারণে এই অংশ কিছুক্ষণ ভেসে থাকে। রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে ধীরে ধীরে জাহাজের বাকি অংশও সমুদ্রের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। মাত্র দুটি লাইফবোট ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে ফিরে এসেছিল। এর মধ্যে লাইফবোট-৪ পাঁচজন যাত্রীকে উদ্ধার করেছিল। তাদের মধ্যে দুইজন পরবর্তী সময়ে মারা যান। একঘণ্টার মধ্যে লাইফবোট-১৪ ফিরে এসে আরও চারজনকে উদ্ধার করে। তাদের একজন পরে মারা যান। ভোর ৪টার দিকে কারপেথিয়া জাহাজ এসে পৌঁছায় ও বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে নামে। ২২২৩ জন যাত্রীর মধ্যে বেঁচে গিয়েছিল মাত্র ৭০৬ জন। জাহাজডুবিতে প্রাণ হারান প্রায় ১৫১৭ জন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে তাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছিল।
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। রাত সাড়ে ১২টার কিছুক্ষণ পর টাইটানিকের পেছনের অংশ সামনের অংশ থেকে ভেঙে যায়। জাহাজের সম্মুখভাগ সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে চলে যায়। এ কারণে জাহাজের পেছনের অংশ ধীরে ধীরে খাড়া হতে হতে একেবারে লম্বালম্বি হয়ে যায়। বায়ুজনিত কারণে এই অংশ কিছুক্ষণ ভেসে থাকে। রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে ধীরে ধীরে জাহাজের বাকি অংশও সমুদ্রের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। মাত্র দুটি লাইফবোট ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে ফিরে এসেছিল। এর মধ্যে লাইফবোট-৪ পাঁচজন যাত্রীকে উদ্ধার করেছিল। তাদের মধ্যে দুইজন পরবর্তী সময়ে মারা যান। একঘণ্টার মধ্যে লাইফবোট-১৪ ফিরে এসে আরও চারজনকে উদ্ধার করে। তাদের একজন পরে মারা যান। ভোর ৪টার দিকে কারপেথিয়া জাহাজ এসে পৌঁছায় ও বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে নামে। ২২২৩ জন যাত্রীর মধ্যে বেঁচে গিয়েছিল মাত্র ৭০৬ জন। জাহাজডুবিতে প্রাণ হারান প্রায় ১৫১৭ জন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে তাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছিল।
সমুদ্রের বুকে শায়িত টাইটানিক
১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া জাহাজটি সাইড-স্ক্যান সোনার পদ্ধতিতে ১৯৮৫ সালে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ ফুট বা ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে নীরবে শায়িত আছে টাইটানিক। হয়তো এভাবেই থাকবে চিরকাল। জাহাজডুবির পর থেকে প্রচণ্ড পানির চাপ ও ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকা বিভিন্ন অনুজীব বা জীবাণুগুলো টাইটানিকের স্টিল সাবাড় করছে। এখনও তা অব্যাহত আছে।
১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া জাহাজটি সাইড-স্ক্যান সোনার পদ্ধতিতে ১৯৮৫ সালে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ ফুট বা ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে নীরবে শায়িত আছে টাইটানিক। হয়তো এভাবেই থাকবে চিরকাল। জাহাজডুবির পর থেকে প্রচণ্ড পানির চাপ ও ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকা বিভিন্ন অনুজীব বা জীবাণুগুলো টাইটানিকের স্টিল সাবাড় করছে। এখনও তা অব্যাহত আছে।
No comments