এনএসজি সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা by ড. জাফর নওয়াজ জসপাল
ভারত
ও পাকিস্তান ২০১৬ সালের জুন থেকে পরমাণু সরবরাহ গ্রুপের (এনএসজি) সদস্য
হওয়ার চেষ্টা করছে। উভয় দেশই বেসামরিক ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু
জ্বালানি সংস্থার (আইএইএ) তদারকিতে পরমাণু প্রযুক্তি ও সামগ্রী রফতানিতে
আগ্রহী। কিন্তু তারা পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি (এনটিপি) বা ব্যাপকভিত্তিক
পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তিতে (সিটিবিটি) সই না করায় গ্রুপের সদস্য হতে পারেনি।
তাছাড়া তারা জেনেভার নিরস্ত্রবিষয়ক ফিসাইল ম্যাটেরিয়াল কাট অফ ট্রিটিতেও
সই করেনি। এটি ৪৮টি দেশের গ্রুপ।
১৯৭৪ সালে ভারতের ‘স্মাইলিং বুদ্ধা’ ছদ্মনামের পরমাণু পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রুপের জন্ম হয়। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য হচ্ছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলারাস, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফিনল্যান্ড, কানাডা, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, লাতভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
কাজাখস্তানের আস্তানায় (বর্তমান নাম নুর সুলতান) গত ২০-২১ জুন এনএসজি প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। লাতভিয়ার কাছ থেকে গ্রুপের চেয়ারম্যান পদটি লাভ করে কাজাখস্তান। বৈঠকে তাদের কারিগরি, আইনগত ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বর্তমানে এর সদস্যপদ দিতে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এনএসজির নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা, রফতানি নিয়ন্ত্রণ নিদের্শনা অনুসরণের সামর্থ্য, পরমাণু প্রযুক্তির বিস্তাররোধের শর্তাবলী পালন করা, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের কার্যক্রমে সহায়তা করা। এসব শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণেই ভারত বা পাকিস্তানের কেউই এনএসজির সদস্যপদ লাভ করতে পারেনি।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে পরমাণু অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র আছে। ভারত ১৯৭৪ সালে শান্তিপূর্ণ পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়, তারপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপাদান দিয়ে ওই বোমা বানিয়েছিল। ফলে তারা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিল। আর পাকিস্তান নিজস্বভাবে তৈরি উপাদান দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
পাকিস্তান কখনো সরবরাহকারী দেশ ও আইএইএর সাথে করা কোনো চুক্তি লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনা দেশগুলো ভারতকে এই গ্রুপের সদস্য করার জন্য চেষ্টা করলেও পাকিস্তানের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করছে। এ প্রেক্ষাপটে সদস্য করার অভিন্ন নীতি প্রণয়নের দাবি ওঠেছে।
অবশ্য কয়েকটি সদস্য দেশ যেমন বেলারাস, কাজাখস্তান, চীন, নিউ জিল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রিয়া নীতিগতভাবে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করছে।
তারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্য বৈষম্যহীন ও পক্ষপাতমুক্ত নীতিতে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার পক্ষে। তারা ভারতকে সদস্যপদ দেয়ার জন্য বিশেষ ছাড় দেয়ার পক্ষপাতী নয়। তারা মনে করে, কোনো বিশেষ দেশকে সুবিধা দেয়া হলে তা এনএসজিকে আরো দুর্বল করে ফেলবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই এনএসজির সদস্য পাওয়ার জন্য খুবই উপযুক্ত। কারণ তাদের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি কারিগরিভাবে খুবই উন্নত। তারা এনএসজি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় থাকা বেশ কিছু আইটেম উৎপাদন করে এবং তারা আগ্রহী দেশে তা রফতানি করতে সক্ষম।
আবার পাকিস্তান কখনো আইএইএ সুরক্ষা বা এ জাতীয় কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু ভারত করেছে। তাই ভারতের চেয়ে পাকিস্তানই এনএসজির পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য বেশি উপযুক্ত।
>>>লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, কায়েদে আযম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ
১৯৭৪ সালে ভারতের ‘স্মাইলিং বুদ্ধা’ ছদ্মনামের পরমাণু পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রুপের জন্ম হয়। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য হচ্ছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলারাস, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফিনল্যান্ড, কানাডা, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, লাতভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
কাজাখস্তানের আস্তানায় (বর্তমান নাম নুর সুলতান) গত ২০-২১ জুন এনএসজি প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। লাতভিয়ার কাছ থেকে গ্রুপের চেয়ারম্যান পদটি লাভ করে কাজাখস্তান। বৈঠকে তাদের কারিগরি, আইনগত ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বর্তমানে এর সদস্যপদ দিতে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এনএসজির নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা, রফতানি নিয়ন্ত্রণ নিদের্শনা অনুসরণের সামর্থ্য, পরমাণু প্রযুক্তির বিস্তাররোধের শর্তাবলী পালন করা, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের কার্যক্রমে সহায়তা করা। এসব শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণেই ভারত বা পাকিস্তানের কেউই এনএসজির সদস্যপদ লাভ করতে পারেনি।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে পরমাণু অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র আছে। ভারত ১৯৭৪ সালে শান্তিপূর্ণ পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়, তারপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপাদান দিয়ে ওই বোমা বানিয়েছিল। ফলে তারা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিল। আর পাকিস্তান নিজস্বভাবে তৈরি উপাদান দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
পাকিস্তান কখনো সরবরাহকারী দেশ ও আইএইএর সাথে করা কোনো চুক্তি লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনা দেশগুলো ভারতকে এই গ্রুপের সদস্য করার জন্য চেষ্টা করলেও পাকিস্তানের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করছে। এ প্রেক্ষাপটে সদস্য করার অভিন্ন নীতি প্রণয়নের দাবি ওঠেছে।
অবশ্য কয়েকটি সদস্য দেশ যেমন বেলারাস, কাজাখস্তান, চীন, নিউ জিল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রিয়া নীতিগতভাবে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করছে।
তারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্য বৈষম্যহীন ও পক্ষপাতমুক্ত নীতিতে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার পক্ষে। তারা ভারতকে সদস্যপদ দেয়ার জন্য বিশেষ ছাড় দেয়ার পক্ষপাতী নয়। তারা মনে করে, কোনো বিশেষ দেশকে সুবিধা দেয়া হলে তা এনএসজিকে আরো দুর্বল করে ফেলবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই এনএসজির সদস্য পাওয়ার জন্য খুবই উপযুক্ত। কারণ তাদের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি কারিগরিভাবে খুবই উন্নত। তারা এনএসজি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় থাকা বেশ কিছু আইটেম উৎপাদন করে এবং তারা আগ্রহী দেশে তা রফতানি করতে সক্ষম।
আবার পাকিস্তান কখনো আইএইএ সুরক্ষা বা এ জাতীয় কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু ভারত করেছে। তাই ভারতের চেয়ে পাকিস্তানই এনএসজির পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য বেশি উপযুক্ত।
>>>লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, কায়েদে আযম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ
No comments