হজের প্রধান লক্ষ্য ও শিক্ষা আল্লাহর জিকির
মোমিন
ভাইয়েরা, এভাবেই হজে ও হজের পরে জিকিরের মর্যাদা প্রতিভাত হয়। বস্তুত
ইসলামে সব ধরনের ইবাদতই চালু করা হয়েছে আল্লাহর জিকির বাস্তবায়নের জন্য। আর
জিকির সবচেয়ে সহজ ইবাদত। সবচেয়ে মহৎ ও মর্যাদাবান ইবাদত। জিকির সবচেয়ে বড়।
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জিকির সর্বশ্রেষ...।
হজের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ও প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর জিকির প্রতিষ্ঠা করা। জিকির এক মহান ইবাদত। জিকিরের মতো অন্য কিছু দিয়ে আল্লাহর নৈকট্যশীলরা এত নৈকট্য লাভ করেন না। হজে জিকিরের মতো অন্য কিছুর জন্য এত ইবাদত প্রবর্তন করা হয়নি। প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ এবং জামারায় পাথর নিক্ষেপ ও পশু জবাই বিধিবদ্ধই করা হয়েছে শুধু আল্লাহ তায়ালার জিকির প্রতিষ্ঠার জন্য।
হাজীরা যখন হজের আনুষ্ঠানিকতা থেকে মুক্ত হন, তখন জিকিরকেই বানানো হয়েছে তাদের সমাপনী আমল। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে লোকেরা হজ মৌসুমে দাঁড়িয়ে একে একে বলত- আমার বাবা খাবার খাওয়াতেন, অপরের বোঝা বহন করতে, মুক্তিপণ আদায় করে দিতেন ইত্যাদি। তাদের মুখে বাপ-দাদার কীর্তি ছাড়া কোনো জিকির ছিল না।’ এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল করেন- ‘আর অতঃপর যখন হজের যাবতীয় অনুষ্ঠান ক্রিয়াদি সমাপ্ত করে ফেলবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদের; বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ করবে।’ (সূরা বাকারা : ২০০)।
মোমিন ভাইয়েরা, এভাবেই হজে ও হজের পরে জিকিরের মর্যাদা প্রতিভাত হয়। বস্তুত ইসলামে সব ধরনের ইবাদতই চালু করা হয়েছে আল্লাহর জিকির বাস্তবায়নের জন্য। আর জিকির সবচেয়ে সহজ ইবাদত। সবচেয়ে মহৎ ও মর্যাদাবান ইবাদত। বরং জিকির সবচেয়ে বড়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)।
আল্লাহ জিকিরের প্রতিদান বানিয়েছেন নিজের কাছে জিকিরকারীদের জিকির তথা স্মরণ করা। তিনি বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা বাকারা : ১৫২)।
যারা জিকিরের গুণে উদ্ভাসিত, আল্লাহ স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জিকির করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সব পবিত্রতা তোমারই, আমাদের তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)।
আল্লাহর বান্দারা, জিকির হলো জান্নাতের তৃণলতা। জান্নাতিরা প্রতিটি নিঃশ্বাসে জিকির করবে। যেমন সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসরার (মেরাজের) রাতে ইবরাহিম (আ.) এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ, তোমার উম্মতকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে আর তাদের বলবে যে- জান্নাতের মাটি সুগন্ধিযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট আর এটি সমতল এবং এর তৃণ হলো, সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।’
জিকিরই ছিল সাহাবিদের উদ্দেশে আল্লাহর রাসুলের অসিয়ত। সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে- একদা একজন সাহাবি আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের বিধিবিধান আমার জন্য বেশি হয়ে গেছে। অতএব আপনি আমাকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দিন, যার ওপর আমি রীতিমতো আমল করতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জিকির দ্বারা তোমার জিহ্বা যেন সব সময় তরতাজা থাকে।’
একদা নবী করিম (সা.) মুয়াজ (রা.) এর হাত ধরে বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে ভালোবাসি। হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে অসিয়ত করছিÑ প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি তুমি অবশ্যই বলবে, কখনও ছাড়বে না : আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমার জিকির করার, তোমার কৃতজ্ঞতা আদায় করার এবং সুন্দরভাবে তোমার ইবাদত করার তৌফিক আমাকে দান কর। (বর্ণনায় আবু দাউদ)।
যে কেউ কোরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যগুলোতে চোখ রাখবে, যাবতীয় কল্যাণকে আল্লাহর জিকিরের মধ্যেই দেখতে পাবে। জিকির দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর করে। রিজিক, আনন্দ ও প্রফুল্লতা আনয়ন করে। জিকিরকারীকে ব্যক্তিত্ব ও উজ্জ্বলতার পোশাকে শোভিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর শান্তি পায়।’ (সূরা রাদ : ২৮)।
সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দেব না যা তোমাদের আমলগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম আর তোমাদের প্রভুর কাছেও পবিত্রতম? যা তোমাদের মর্যাদা সর্বাধিক উন্নতকারী এবং তোমাদের জন্য (আল্লাহর রাস্তায়) সোনা-রুপা ব্যয়ের চেয়েও উত্তম। এমনকি যা তোমাদের শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তাদের গর্দানে আঘাত করা এবং তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়েও উত্তম?’ সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ‘অবশ্যই বলে দিন।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন, ‘তা হলো আল্লাহর জিকির।’
কোরআন তেলাওয়াতের পর সর্বোত্তম জিকির হলোÑ সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। এগুলোই চিরস্থায়ী নেককাজ।
যে ব্যক্তি একদিনে একশতবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পড়বে তার সমূহ গোনাহ ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। আর ‘লা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ হলো জান্নাতের অন্যতম ভা-ার। বোখারিতে রয়েছে, ‘দুটি বাক্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয়, উচ্চারণে খুব সহজ অথচ মিজানের পাল্লায় ভারী ও দয়াময় : সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’
যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির থেকে উদাসীন ও উন্নাসিক আল্লাহ রব্বুল আলামিনও তার থেকে উদাসীন হন তথা মুখ ফিরিয়ে নেন। জিকির থেকে বান্দা যতটুকু দূরে যায় সে আল্লাহর থেকে ততটুকু দূরে সরে যায়। উদাসীন ব্যক্তি আর আল্লাহর মাঝের নির্জনতা ও পরিচয়হীনতা দূর করার একমাত্র মাধ্যম আল্লাহর জিকির।
আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতগুলো এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।’ (সূরা ত-হা : ১২৪-১২৬)।
>>>১৫ জিলহজ ১৪৪০ হিজরি মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত।
>>ভাষান্তর আলী হাসান তৈয়ব
হজের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ও প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর জিকির প্রতিষ্ঠা করা। জিকির এক মহান ইবাদত। জিকিরের মতো অন্য কিছু দিয়ে আল্লাহর নৈকট্যশীলরা এত নৈকট্য লাভ করেন না। হজে জিকিরের মতো অন্য কিছুর জন্য এত ইবাদত প্রবর্তন করা হয়নি। প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ এবং জামারায় পাথর নিক্ষেপ ও পশু জবাই বিধিবদ্ধই করা হয়েছে শুধু আল্লাহ তায়ালার জিকির প্রতিষ্ঠার জন্য।
হাজীরা যখন হজের আনুষ্ঠানিকতা থেকে মুক্ত হন, তখন জিকিরকেই বানানো হয়েছে তাদের সমাপনী আমল। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে লোকেরা হজ মৌসুমে দাঁড়িয়ে একে একে বলত- আমার বাবা খাবার খাওয়াতেন, অপরের বোঝা বহন করতে, মুক্তিপণ আদায় করে দিতেন ইত্যাদি। তাদের মুখে বাপ-দাদার কীর্তি ছাড়া কোনো জিকির ছিল না।’ এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল করেন- ‘আর অতঃপর যখন হজের যাবতীয় অনুষ্ঠান ক্রিয়াদি সমাপ্ত করে ফেলবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদের; বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ করবে।’ (সূরা বাকারা : ২০০)।
মোমিন ভাইয়েরা, এভাবেই হজে ও হজের পরে জিকিরের মর্যাদা প্রতিভাত হয়। বস্তুত ইসলামে সব ধরনের ইবাদতই চালু করা হয়েছে আল্লাহর জিকির বাস্তবায়নের জন্য। আর জিকির সবচেয়ে সহজ ইবাদত। সবচেয়ে মহৎ ও মর্যাদাবান ইবাদত। বরং জিকির সবচেয়ে বড়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)।
আল্লাহ জিকিরের প্রতিদান বানিয়েছেন নিজের কাছে জিকিরকারীদের জিকির তথা স্মরণ করা। তিনি বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা বাকারা : ১৫২)।
যারা জিকিরের গুণে উদ্ভাসিত, আল্লাহ স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জিকির করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সব পবিত্রতা তোমারই, আমাদের তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)।
আল্লাহর বান্দারা, জিকির হলো জান্নাতের তৃণলতা। জান্নাতিরা প্রতিটি নিঃশ্বাসে জিকির করবে। যেমন সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসরার (মেরাজের) রাতে ইবরাহিম (আ.) এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ, তোমার উম্মতকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে আর তাদের বলবে যে- জান্নাতের মাটি সুগন্ধিযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট আর এটি সমতল এবং এর তৃণ হলো, সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।’
জিকিরই ছিল সাহাবিদের উদ্দেশে আল্লাহর রাসুলের অসিয়ত। সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে- একদা একজন সাহাবি আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের বিধিবিধান আমার জন্য বেশি হয়ে গেছে। অতএব আপনি আমাকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দিন, যার ওপর আমি রীতিমতো আমল করতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জিকির দ্বারা তোমার জিহ্বা যেন সব সময় তরতাজা থাকে।’
একদা নবী করিম (সা.) মুয়াজ (রা.) এর হাত ধরে বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে ভালোবাসি। হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে অসিয়ত করছিÑ প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি তুমি অবশ্যই বলবে, কখনও ছাড়বে না : আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমার জিকির করার, তোমার কৃতজ্ঞতা আদায় করার এবং সুন্দরভাবে তোমার ইবাদত করার তৌফিক আমাকে দান কর। (বর্ণনায় আবু দাউদ)।
যে কেউ কোরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যগুলোতে চোখ রাখবে, যাবতীয় কল্যাণকে আল্লাহর জিকিরের মধ্যেই দেখতে পাবে। জিকির দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর করে। রিজিক, আনন্দ ও প্রফুল্লতা আনয়ন করে। জিকিরকারীকে ব্যক্তিত্ব ও উজ্জ্বলতার পোশাকে শোভিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর শান্তি পায়।’ (সূরা রাদ : ২৮)।
সুনান তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দেব না যা তোমাদের আমলগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম আর তোমাদের প্রভুর কাছেও পবিত্রতম? যা তোমাদের মর্যাদা সর্বাধিক উন্নতকারী এবং তোমাদের জন্য (আল্লাহর রাস্তায়) সোনা-রুপা ব্যয়ের চেয়েও উত্তম। এমনকি যা তোমাদের শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তাদের গর্দানে আঘাত করা এবং তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়েও উত্তম?’ সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ‘অবশ্যই বলে দিন।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন, ‘তা হলো আল্লাহর জিকির।’
কোরআন তেলাওয়াতের পর সর্বোত্তম জিকির হলোÑ সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। এগুলোই চিরস্থায়ী নেককাজ।
যে ব্যক্তি একদিনে একশতবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পড়বে তার সমূহ গোনাহ ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। আর ‘লা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ হলো জান্নাতের অন্যতম ভা-ার। বোখারিতে রয়েছে, ‘দুটি বাক্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয়, উচ্চারণে খুব সহজ অথচ মিজানের পাল্লায় ভারী ও দয়াময় : সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’
যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির থেকে উদাসীন ও উন্নাসিক আল্লাহ রব্বুল আলামিনও তার থেকে উদাসীন হন তথা মুখ ফিরিয়ে নেন। জিকির থেকে বান্দা যতটুকু দূরে যায় সে আল্লাহর থেকে ততটুকু দূরে সরে যায়। উদাসীন ব্যক্তি আর আল্লাহর মাঝের নির্জনতা ও পরিচয়হীনতা দূর করার একমাত্র মাধ্যম আল্লাহর জিকির।
আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতগুলো এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।’ (সূরা ত-হা : ১২৪-১২৬)।
>>>১৫ জিলহজ ১৪৪০ হিজরি মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত।
>>ভাষান্তর আলী হাসান তৈয়ব
No comments