অভিশপ্ত মাদক: যে কারণে ইউরোপ ও আমেরিকা ইসলামি ইরানের কাছে ঋণী
মাদক
পাচার রোধে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। তবে এর
জন্য ইরানকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি জানমালের
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দফতরের প্রধান ইস্কান্দার মোমেনি বলেছেন, "ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরান গত ৪০ বছর ধরে মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে। ইরানের এ পদক্ষেপে অন্য দেশগুলো নিশ্চিন্ত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইরানের একার পক্ষে এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে ইরান মাদক পাচারের রুটগুলো খোলা রাখবে। বরং দেশটি মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে ইরানের এ কঠোর অবস্থানের গুরুত্ব কতখানি সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বিশ্বে প্রধান তিনটি মাদক চোরাচালান রুটের অন্যতম হচ্ছে ইরান। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ভারত পর্যন্ত বিশাল এলাকা মাদক উৎপাদনের কেন্দ্র।
মাদক চোরাচালানের দ্বিতীয় পথ হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকা ও তৃতীয় পথ হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ো অঞ্চল। বিশ্বের এই তিন অঞ্চল মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে মাদক উৎপাদনের পরিমাণ বছরে চার হাজার টনের বেশি যার সিংহভাগ ইরান হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় পাচার হয়। তুরস্কের খ্যাতনামা বিশ্লেষক ও লেখক সুনের পুলাত এক নিবন্ধে লিখেছেন, ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান দখলের পর ওই দেশটির কৃষিভূমি মাদক উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "আফগানিস্তানে মাদক চাষের পরিমাণ ৫০ গুণ বেড়েছে।"
আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে উৎপাদিত হেরোইনের ৯৩ শতাংশ আসে আফগানিস্তানের তিন লাখ আট হাজার হেক্টর জমি থেকে।
বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ায় তৎপর উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে মাদক পাচার।
গত কয়েক শতাব্দি ধরে ইরান সরকার মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ায় বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা ইরানের কাছে ঋণী। কিন্তু তারপরও মাদক চোরাচালান রোধের জন্য ইরানকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে না উন্নত দেশগুলো। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ মোকাবেলা বিষয়ক দফতরের প্রতিনিধি অ্যান্থনিও দালাইয়ু মনে করেন, "ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্বের অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় রয়েছে। মাদক চোরাকারবারিদের জন্য ইরান গুরুত্বপূর্ণ রুট। তাই এ ক্ষেত্রে ইরানের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে ইরানের ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসার যোগ্য।"
যাইহোক, যেসব দেশে মাদক উৎপাদন ও পাচার হয়ে থাকে সেসব দেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়। এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে প্রাণহানী ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এসব দেশকে।
মাদক বিরোধী অভিযানে ইরান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল অভিযান, কাঁটা তারের ব্যবস্থা, টানেল তৈরি, অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম মোতায়েন প্রভৃতির মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ইরান। মাদক পাচার রোধ করতে গিয়ে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ইরানের বহু নিরাপত্তা কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তারপরও ইরান থেমে নেই। বিশেষ করে ইরানে ইসলামি শরীয়ত বলবত থাকায় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া ইরান সরকারের ধর্মীয় দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় কড়াকড়ি সত্বেও মাদক আসছে। এসব মাদক দায়েশ সন্ত্রাসীদের আয়ের প্রধান উৎস। আর অর্থ লেনদেন হচ্ছে দায়েশ সমর্থক সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি দেশের মাধ্যমে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চোরাচালানিদের কাছ থেকে ইরানে সবচেয়ে বেশি মাদক উদ্ধার করা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় এ দেশটি মাদক বিরোধী অভিযানে অত্যন্ত আন্তরিক ও কঠোর। বিশ্বে বছরে যে পরিমাণে মাদক উদ্ধার করা হয় তার মধ্যে শুধু ইরানেই উদ্ধার করা হয় প্রায়৭৬ শতাংশ আফিম এবং ৬৭ শতাংশ মরফিন।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম হোসেন দেহকানি বলেছেন, "ভৌগোলিক দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ইরান মাদক পাচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে ইরান সরকারও সতর্ক থাকে এবং মাদক চোরাচালান রোধের জন্য বছরে ১৫ কোটির বেশি ইউরো ব্যয় হয়।" ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মাদক বিরোধী দফতরের নির্বাহী প্রধান ইউরি ফেদেতোভের সঙ্গে এক সাক্ষাতে রাজনৈতিক কারণে ইরানের মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিশ্বের অর্থ সহায়তাকারী দেশগুলোর অসহযোগিতা এবং মার্কিন চাপ সৃষ্টির নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এর ফলে মাদক চোরাচালান রোধে ইরানের আন্তরিক প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে যে পরিমাণে মাদক উদ্ধার করা হয় তার সিংহভাগ ইরান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিভিন্ন ধরনের ১২শ' টন মাদক ইরানে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতালির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'স্পারসো'র এক প্রতিবেদনে মাদকবিরোধী অভিযানে ইরান সরকারের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ইরান সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।"
রুশ মিডিয়ার ফরাসি ভাষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান মাদক পাচার ঠেকানোর জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জাম মোতায়েনের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। ইরানের এ কঠোর অবস্থানের ফলে আফগানিস্তান থেকে ইরানে হেরোইন পাচার কমে গেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক বিরোধী সংগ্রামে ইরান প্রথম সারিতে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইরান বছরে প্রায় ৮০ কোটি ডলার ব্যয় করে। অথচ জাতিসংঘ মাত্র এক কোটি ৫০ ডলার সাহায্য দেয় ইরানকে। ইরানের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দফতরের প্রধান ইস্কান্দার মোমেনি বলেছেন, মাদক পাচার রোধের জন্য ইরানকে দেয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। ইউরোপীয়রা দাবি করছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ক্ষেত্রে তারা ইরানকে সহায়তা দিতে পারছেনা। (মিউজিক)
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউরোপীয়রা হয়তো এটা ভুলে গেছে যে, ওই দেশগুলোতে ছয় হাজার কোটি ডলার অর্থ লেনদেন হয় কেবল মাদক কেনাবেচা বাবদ। বলতে গেলে ইরান একাই মাদক বিরোধী অভিযানে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং এর সুফল ইউরোপীয়রাও পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও মাদক ইস্যুতে ইউরোপীয়রা ইরানকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত নয়। অবশ্য ইউরোপের এ আচরণে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ যারা পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে না তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ইরানের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দফতরের প্রধান ইস্কান্দার মোমেনি বলেছেন, "ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরান গত ৪০ বছর ধরে মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে। ইরানের এ পদক্ষেপে অন্য দেশগুলো নিশ্চিন্ত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইরানের একার পক্ষে এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে ইরান মাদক পাচারের রুটগুলো খোলা রাখবে। বরং দেশটি মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে ইরানের এ কঠোর অবস্থানের গুরুত্ব কতখানি সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বিশ্বে প্রধান তিনটি মাদক চোরাচালান রুটের অন্যতম হচ্ছে ইরান। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ভারত পর্যন্ত বিশাল এলাকা মাদক উৎপাদনের কেন্দ্র।
মাদক চোরাচালানের দ্বিতীয় পথ হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকা ও তৃতীয় পথ হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ো অঞ্চল। বিশ্বের এই তিন অঞ্চল মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে মাদক উৎপাদনের পরিমাণ বছরে চার হাজার টনের বেশি যার সিংহভাগ ইরান হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় পাচার হয়। তুরস্কের খ্যাতনামা বিশ্লেষক ও লেখক সুনের পুলাত এক নিবন্ধে লিখেছেন, ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান দখলের পর ওই দেশটির কৃষিভূমি মাদক উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "আফগানিস্তানে মাদক চাষের পরিমাণ ৫০ গুণ বেড়েছে।"
আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে উৎপাদিত হেরোইনের ৯৩ শতাংশ আসে আফগানিস্তানের তিন লাখ আট হাজার হেক্টর জমি থেকে।
বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ায় তৎপর উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে মাদক পাচার।
গত কয়েক শতাব্দি ধরে ইরান সরকার মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ায় বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা ইরানের কাছে ঋণী। কিন্তু তারপরও মাদক চোরাচালান রোধের জন্য ইরানকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে না উন্নত দেশগুলো। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ মোকাবেলা বিষয়ক দফতরের প্রতিনিধি অ্যান্থনিও দালাইয়ু মনে করেন, "ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্বের অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় রয়েছে। মাদক চোরাকারবারিদের জন্য ইরান গুরুত্বপূর্ণ রুট। তাই এ ক্ষেত্রে ইরানের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে ইরানের ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসার যোগ্য।"
যাইহোক, যেসব দেশে মাদক উৎপাদন ও পাচার হয়ে থাকে সেসব দেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়। এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে প্রাণহানী ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এসব দেশকে।
মাদক বিরোধী অভিযানে ইরান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল অভিযান, কাঁটা তারের ব্যবস্থা, টানেল তৈরি, অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম মোতায়েন প্রভৃতির মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ইরান। মাদক পাচার রোধ করতে গিয়ে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ইরানের বহু নিরাপত্তা কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তারপরও ইরান থেমে নেই। বিশেষ করে ইরানে ইসলামি শরীয়ত বলবত থাকায় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া ইরান সরকারের ধর্মীয় দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় কড়াকড়ি সত্বেও মাদক আসছে। এসব মাদক দায়েশ সন্ত্রাসীদের আয়ের প্রধান উৎস। আর অর্থ লেনদেন হচ্ছে দায়েশ সমর্থক সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি দেশের মাধ্যমে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চোরাচালানিদের কাছ থেকে ইরানে সবচেয়ে বেশি মাদক উদ্ধার করা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় এ দেশটি মাদক বিরোধী অভিযানে অত্যন্ত আন্তরিক ও কঠোর। বিশ্বে বছরে যে পরিমাণে মাদক উদ্ধার করা হয় তার মধ্যে শুধু ইরানেই উদ্ধার করা হয় প্রায়৭৬ শতাংশ আফিম এবং ৬৭ শতাংশ মরফিন।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম হোসেন দেহকানি বলেছেন, "ভৌগোলিক দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ইরান মাদক পাচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে ইরান সরকারও সতর্ক থাকে এবং মাদক চোরাচালান রোধের জন্য বছরে ১৫ কোটির বেশি ইউরো ব্যয় হয়।" ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মাদক বিরোধী দফতরের নির্বাহী প্রধান ইউরি ফেদেতোভের সঙ্গে এক সাক্ষাতে রাজনৈতিক কারণে ইরানের মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিশ্বের অর্থ সহায়তাকারী দেশগুলোর অসহযোগিতা এবং মার্কিন চাপ সৃষ্টির নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এর ফলে মাদক চোরাচালান রোধে ইরানের আন্তরিক প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে যে পরিমাণে মাদক উদ্ধার করা হয় তার সিংহভাগ ইরান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিভিন্ন ধরনের ১২শ' টন মাদক ইরানে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতালির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'স্পারসো'র এক প্রতিবেদনে মাদকবিরোধী অভিযানে ইরান সরকারের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ইরান সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।"
রুশ মিডিয়ার ফরাসি ভাষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান মাদক পাচার ঠেকানোর জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জাম মোতায়েনের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। ইরানের এ কঠোর অবস্থানের ফলে আফগানিস্তান থেকে ইরানে হেরোইন পাচার কমে গেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক বিরোধী সংগ্রামে ইরান প্রথম সারিতে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইরান বছরে প্রায় ৮০ কোটি ডলার ব্যয় করে। অথচ জাতিসংঘ মাত্র এক কোটি ৫০ ডলার সাহায্য দেয় ইরানকে। ইরানের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দফতরের প্রধান ইস্কান্দার মোমেনি বলেছেন, মাদক পাচার রোধের জন্য ইরানকে দেয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। ইউরোপীয়রা দাবি করছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ক্ষেত্রে তারা ইরানকে সহায়তা দিতে পারছেনা। (মিউজিক)
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউরোপীয়রা হয়তো এটা ভুলে গেছে যে, ওই দেশগুলোতে ছয় হাজার কোটি ডলার অর্থ লেনদেন হয় কেবল মাদক কেনাবেচা বাবদ। বলতে গেলে ইরান একাই মাদক বিরোধী অভিযানে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং এর সুফল ইউরোপীয়রাও পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও মাদক ইস্যুতে ইউরোপীয়রা ইরানকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত নয়। অবশ্য ইউরোপের এ আচরণে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ যারা পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে না তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না।
No comments