ঢাবি’র গণরুম যেন কয়েদখানা by পিয়াস সরকার
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নয়, যেন ডিজিটাল বস্তি। বাবা কদিন আগে এসেছিলেন ঢাকায়।
আমি হলের সামনে আনলেও রুমে নিয়ে যাইনি। মিথ্যা বলেছি, রুমে বাইরের লোক
প্রবেশ নিষেধ। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের
শিক্ষার্থী ইমরান হাসান। ইমরান থাকেন ছোট্ট একটা রুমে। যেখানে ভালোভাবে ২
জন থাকা দায়। মাথার উপরে ঘুরছে একটিমাত্র ফ্যান।
সেই ফ্যানের বয়সও কম নয়। ঠিক ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়েও বাতাস অনুপস্থিত। এমন একটি রুমে থাকতে হয় ২২ জন শিক্ষার্থীকে। অনেক সময় ঘুমাতে হয় পালা করে। জানালা বিহীন এসব রুমে দম বন্ধ করা পরিবেশ। মেঝেতে শুধুই তোশক বিছানো।
এই দৃশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের। এখানে আছে ৬টি গণরুম। এসব রুমে থাকতে হয় কোন রকমভাবে। নেই জিনিসপত্র রাখার স্থান। তাই ট্রাঙ্কগুলোর স্থান হয়েছে বারান্দায়। আর দেয়ালে হ্যাংগার জুড়ে ঝুলছে শুধুই কাপড়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। ঘিঞ্জি এক বারান্দায় লম্বা করে বিছানো চৌকি। এক চৌকিতেই কোন রকম বাস তাদের। মাথার উপরে একটিও ফ্যান নেই। অনেকে ব্যবস্থা করতে পেরেছেন ব্যক্তিগত ফ্যান। আর যারা পারেননি তারা এভাবেই থাকছেন। বারান্দা হওয়ায় উন্মুক্ত স্থান দিয়ে আসে রোদ। বৃষ্টি হলে সব ভিজে যায়। আর প্রায়ই প্লাস্টার খসে পড়ে। সরজমিন দেখা যায়, এসব ক্ষত স্থানে সদ্য লাগানো হয়েছে প্লাস্টার। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এভাবেই প্লাস্টার প্রায়শই খসে পড়ে। কয়েকবার অভিযোগ জানানোর পর সারানো হয় এসব ক্ষত।
সাজিদ হাসান। ঢাবির সমাজ বিজ্ঞাণ অনুষদের শিক্ষার্থী। অনেক স্বপ্ন আর পরিশ্রমের ফল স্বরুপ সুযোগ মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তার বর্তমান থাকার স্থান মাস্টার দ্য সূর্য সেন হলে। তিনি বলেন, আমরা দাসপ্রথায় বাস করছি। আমার মনে হয়, দাসপ্রথার সময়েও দাসদের এরথেকে ভালো স্থানে রাখা হতো। ভালো ব্যবহার করা হতো। প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আসি মনে হচ্ছিল এযেন স্বপ্ন দেখছি। যে রুমে আমি একদিন থাকার কথা চিন্তা করতে পারিনা। সেই রুমে প্রথম দিন থাকতে হলো ১৬ জনকে। সময়টা ছিলো শীতকাল। তারপরেও প্রথমদিনেই গা ঘেমে সর্দি লেগে যায়। পরদিন আরো ৮ জন আসলো থাকার জন্য। তিনি আরো বলেন, এটাকে থাকা বলে না। যখন ঘুমাই তখন একজনের পায়ের সঙ্গে আরেকজনের মাথা লেগে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হলেই রয়েছে গণরুমের উপস্থিতি। গণরুমে ওঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা শুরু করেন রোগের সঙ্গে যাত্রা। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে প্রায় প্রতিটি রুমের কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সূর্য সেন হলের দুই রুমে থাকেন প্রায় ৪০ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩ জন।
এছাড়া প্রতিটি হলে ছেয়ে গেছে ছারপোকা মারার ওষুধের বিজ্ঞাপণে। প্রতিটি হলের গণরুমের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত ছারপোকার সমস্যায়। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের জোবাইদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এত মানুষ একসঙ্গে থাকলে তো ছারপোকা আসবেই। জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন আগে ছারপোকার স্প্রে করি। ৩ দিন কেউ রুমে ছিলাম না। কিছু দিন ভালো ছিলাম এরপর আবার আগের মতোই। ছারপোকার পাশাপাশি আছে মশা, তেলাপোকার সমস্যা।
প্রথম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীদের বাথরুমে যাওয়া নিয়েও আছে বিড়ম্বনা। তারা সাধারণত গোসল সারেন ভোরে কিংবা রাতে। অন্য সময় বড় ভাইয়েরা গোসল করে। নবীনরা থাকলেও যাওয়ার সাহস হয় না তাদের। সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের জরুরী প্রয়োজনে বাথরুমে গিয়ে বড় ভাই দেখলে তাকে আগে যেতে দিতে হয়। অনেক সময় এটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী নীলয় দেব নাথ বলেন, দিন রাত সজাগ থাকতে হয়। কখন কোন বড় ভাই ডাকেন। সঙ্গে সঙ্গে যেতে হবে। দেরি হলেই কথা শুনতে হয়। কবি জসিমউদ্দীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, মিনি গেস্ট রুম না থাকলেও কোন দলীয় অনুষ্ঠানে, মিছিলে যেতে না পারলে ডেকে নেয়া হয়। গুরুতর না হলেও চড় থাপ্পড় দেয় বড় ভাইয়েরা। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, একবার হলের বাথরুম থেকে পানি আনতে গিয়ে এক বড় ভাইয়ের গায়ে পড়েছিলাম। সেই ভাই আমার গায়ে হাত উঠায়। অনিচ্ছাকৃত পড়েছে বলায় ফের আঘাত করে। মুখে মুখে তর্ক করি বলে গেস্ট রুমে চলে প্রায় ৬ ঘণ্টা শাস্তি।
এসব হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেখাশুনা করার কথা থাকলেও তাদের উপস্থিতি নেই। অধিকাংশই জানেন না কোন শিক্ষক তাদের দায়িত্বে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, দায়িত্বরত শিক্ষকদের দেখা যায় শুধু মাত্র টাকার প্রশ্ন যখন আসে। রমজান মাসে ইফতার করানোর বাজেট আসলে তাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পহেলা বৈশাখের খাবারের সময়টাতেও দেখা গিয়েছিলো তাদের। আর বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডেঙ্গুর সময় ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিলো চারদিকে। এই সময়টাতেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশে পাইনি।
সেই ফ্যানের বয়সও কম নয়। ঠিক ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়েও বাতাস অনুপস্থিত। এমন একটি রুমে থাকতে হয় ২২ জন শিক্ষার্থীকে। অনেক সময় ঘুমাতে হয় পালা করে। জানালা বিহীন এসব রুমে দম বন্ধ করা পরিবেশ। মেঝেতে শুধুই তোশক বিছানো।
এই দৃশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের। এখানে আছে ৬টি গণরুম। এসব রুমে থাকতে হয় কোন রকমভাবে। নেই জিনিসপত্র রাখার স্থান। তাই ট্রাঙ্কগুলোর স্থান হয়েছে বারান্দায়। আর দেয়ালে হ্যাংগার জুড়ে ঝুলছে শুধুই কাপড়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। ঘিঞ্জি এক বারান্দায় লম্বা করে বিছানো চৌকি। এক চৌকিতেই কোন রকম বাস তাদের। মাথার উপরে একটিও ফ্যান নেই। অনেকে ব্যবস্থা করতে পেরেছেন ব্যক্তিগত ফ্যান। আর যারা পারেননি তারা এভাবেই থাকছেন। বারান্দা হওয়ায় উন্মুক্ত স্থান দিয়ে আসে রোদ। বৃষ্টি হলে সব ভিজে যায়। আর প্রায়ই প্লাস্টার খসে পড়ে। সরজমিন দেখা যায়, এসব ক্ষত স্থানে সদ্য লাগানো হয়েছে প্লাস্টার। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এভাবেই প্লাস্টার প্রায়শই খসে পড়ে। কয়েকবার অভিযোগ জানানোর পর সারানো হয় এসব ক্ষত।
সাজিদ হাসান। ঢাবির সমাজ বিজ্ঞাণ অনুষদের শিক্ষার্থী। অনেক স্বপ্ন আর পরিশ্রমের ফল স্বরুপ সুযোগ মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তার বর্তমান থাকার স্থান মাস্টার দ্য সূর্য সেন হলে। তিনি বলেন, আমরা দাসপ্রথায় বাস করছি। আমার মনে হয়, দাসপ্রথার সময়েও দাসদের এরথেকে ভালো স্থানে রাখা হতো। ভালো ব্যবহার করা হতো। প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আসি মনে হচ্ছিল এযেন স্বপ্ন দেখছি। যে রুমে আমি একদিন থাকার কথা চিন্তা করতে পারিনা। সেই রুমে প্রথম দিন থাকতে হলো ১৬ জনকে। সময়টা ছিলো শীতকাল। তারপরেও প্রথমদিনেই গা ঘেমে সর্দি লেগে যায়। পরদিন আরো ৮ জন আসলো থাকার জন্য। তিনি আরো বলেন, এটাকে থাকা বলে না। যখন ঘুমাই তখন একজনের পায়ের সঙ্গে আরেকজনের মাথা লেগে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হলেই রয়েছে গণরুমের উপস্থিতি। গণরুমে ওঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা শুরু করেন রোগের সঙ্গে যাত্রা। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে প্রায় প্রতিটি রুমের কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সূর্য সেন হলের দুই রুমে থাকেন প্রায় ৪০ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩ জন।
এছাড়া প্রতিটি হলে ছেয়ে গেছে ছারপোকা মারার ওষুধের বিজ্ঞাপণে। প্রতিটি হলের গণরুমের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত ছারপোকার সমস্যায়। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের জোবাইদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এত মানুষ একসঙ্গে থাকলে তো ছারপোকা আসবেই। জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন আগে ছারপোকার স্প্রে করি। ৩ দিন কেউ রুমে ছিলাম না। কিছু দিন ভালো ছিলাম এরপর আবার আগের মতোই। ছারপোকার পাশাপাশি আছে মশা, তেলাপোকার সমস্যা।
প্রথম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীদের বাথরুমে যাওয়া নিয়েও আছে বিড়ম্বনা। তারা সাধারণত গোসল সারেন ভোরে কিংবা রাতে। অন্য সময় বড় ভাইয়েরা গোসল করে। নবীনরা থাকলেও যাওয়ার সাহস হয় না তাদের। সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের জরুরী প্রয়োজনে বাথরুমে গিয়ে বড় ভাই দেখলে তাকে আগে যেতে দিতে হয়। অনেক সময় এটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী নীলয় দেব নাথ বলেন, দিন রাত সজাগ থাকতে হয়। কখন কোন বড় ভাই ডাকেন। সঙ্গে সঙ্গে যেতে হবে। দেরি হলেই কথা শুনতে হয়। কবি জসিমউদ্দীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, মিনি গেস্ট রুম না থাকলেও কোন দলীয় অনুষ্ঠানে, মিছিলে যেতে না পারলে ডেকে নেয়া হয়। গুরুতর না হলেও চড় থাপ্পড় দেয় বড় ভাইয়েরা। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, একবার হলের বাথরুম থেকে পানি আনতে গিয়ে এক বড় ভাইয়ের গায়ে পড়েছিলাম। সেই ভাই আমার গায়ে হাত উঠায়। অনিচ্ছাকৃত পড়েছে বলায় ফের আঘাত করে। মুখে মুখে তর্ক করি বলে গেস্ট রুমে চলে প্রায় ৬ ঘণ্টা শাস্তি।
এসব হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেখাশুনা করার কথা থাকলেও তাদের উপস্থিতি নেই। অধিকাংশই জানেন না কোন শিক্ষক তাদের দায়িত্বে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, দায়িত্বরত শিক্ষকদের দেখা যায় শুধু মাত্র টাকার প্রশ্ন যখন আসে। রমজান মাসে ইফতার করানোর বাজেট আসলে তাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পহেলা বৈশাখের খাবারের সময়টাতেও দেখা গিয়েছিলো তাদের। আর বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডেঙ্গুর সময় ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিলো চারদিকে। এই সময়টাতেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশে পাইনি।
No comments