পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র: সন্তোষজনক সম্পর্ক by ড. জাফর নওয়াজ জসপাল
প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের তিন দিনের ওয়াশিংটন সফরটি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উজ্জীবিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প,
অর্থনৈতিক জার, প্রবাসী পাকিস্তানি ও মিডিয়ার সাথে তার বৈঠকগুলো দেশের
ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে, পৃষ্ঠপোষক-অনুগত রাষ্ট্র সম্পর্কের বদলে
পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আরো উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক
সৃষ্টির আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।
তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে তার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছেন, যৌক্তিকভাবে বলেছেন, আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলো কাশ্মির বিরোধের সমাধান ও সংলাপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে একটি সঠিক মাত্রার প্রর্বতন করেছেন।
গত ২৩ জুলাই ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসে বক্তৃতাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ততার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমরা পারস্পরিক আস্থা, সাম্য, বন্ধু হিসেবে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাই। পাকিস্তান সাহায্য চাইবে, এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে।
অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর নৃশংসতাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মর্মাহত করেছে। তিনি কাশ্মির বিরোধ সমাধানের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে সহায়তার প্রস্তাব দেন ইমরান খানকে। তিনি বলেন, আমি সাহায্য করতে পারলে মধ্যস্ততাকারী হতে চাইব।… আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি, তা আমাকে জানান। তিনি মিডিয়াকে জানান যে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সহিংসতা অবসানে তার সহায়তা কামনা করেছেন মোদি।
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনি কি মধ্যস্ততাকারী হতে রাজি আছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কোনো ইতস্ততা না করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তিপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। অবশ্য ভারতীয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাজনক।
ট্রাম্পের খোলামেলা মধ্যস্ততার প্রস্তাবটি ভারতে ঝড়ের সৃষ্টি করেছে। ভারতের ক্ষমতাসীন এলিট ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অনুরোধ করা হলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে প্রস্তুত। আমি হাউসকে সুস্পষ্টভাবে আশ্বস্ত করতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি। আমি আবারো বলছি, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।
ভারতীয়দের প্রত্যাখ্যান বোধগম্য। কারণ তারা সবসময় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততার বিরোধিতা করে আসছে। তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবে দেখছে কাশ্মির সমস্যাকে।
অবশ্য, তারা পাকিস্তানের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না বা গ্রহণ করতে পারছে না।
ইমরানের সফরে আফগানিস্তান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিরাজ করে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন যে সামরিক পদ্ধতির বদলে সংলাপই হলো আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, আফগানিস্তানের জন্য একটিমাত্র সমাধানই রয়েছে এবং সেটা হলো তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেন, তিনি আফগান সঙ্কটের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করেন, যাতে আমেরিকান ও ন্যাটো সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া যায়। এই প্রেক্ষাপটে তিনি পাকিস্তানের কাছ থেকে আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন। বস্তুত, শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান পাকিস্তানের স্বার্থের অনুকূল।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকান ও সেইসাথে প্রবাসী পাকিস্তানিদেরকেও পাকিস্তানে বিনিয়োগের সুযোগগুলো অবহিত করেন। তাদের প্রতিক্রিয়াও ছিল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বলেন, পাকিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশের মধ্যে বিরাট বাণিজ্য সম্পর্কও তিনি দেখতে চান বলে জানান। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের শীর্ষ ৫ বিনিয়োগকারীর একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র।
সবশেষে বলা যায়, ইমরান খান ও তার কূটনৈতিক দলটি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজমান অবিশ্বাস দূর করতে সফল হয়েছেন।
>>>লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, কায়েদে আযম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ
তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে তার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছেন, যৌক্তিকভাবে বলেছেন, আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলো কাশ্মির বিরোধের সমাধান ও সংলাপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে একটি সঠিক মাত্রার প্রর্বতন করেছেন।
গত ২৩ জুলাই ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসে বক্তৃতাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ততার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমরা পারস্পরিক আস্থা, সাম্য, বন্ধু হিসেবে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাই। পাকিস্তান সাহায্য চাইবে, এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে।
অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর নৃশংসতাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মর্মাহত করেছে। তিনি কাশ্মির বিরোধ সমাধানের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে সহায়তার প্রস্তাব দেন ইমরান খানকে। তিনি বলেন, আমি সাহায্য করতে পারলে মধ্যস্ততাকারী হতে চাইব।… আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি, তা আমাকে জানান। তিনি মিডিয়াকে জানান যে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সহিংসতা অবসানে তার সহায়তা কামনা করেছেন মোদি।
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনি কি মধ্যস্ততাকারী হতে রাজি আছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কোনো ইতস্ততা না করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তিপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। অবশ্য ভারতীয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাজনক।
ট্রাম্পের খোলামেলা মধ্যস্ততার প্রস্তাবটি ভারতে ঝড়ের সৃষ্টি করেছে। ভারতের ক্ষমতাসীন এলিট ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অনুরোধ করা হলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে প্রস্তুত। আমি হাউসকে সুস্পষ্টভাবে আশ্বস্ত করতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি। আমি আবারো বলছি, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।
ভারতীয়দের প্রত্যাখ্যান বোধগম্য। কারণ তারা সবসময় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততার বিরোধিতা করে আসছে। তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবে দেখছে কাশ্মির সমস্যাকে।
অবশ্য, তারা পাকিস্তানের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না বা গ্রহণ করতে পারছে না।
ইমরানের সফরে আফগানিস্তান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিরাজ করে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন যে সামরিক পদ্ধতির বদলে সংলাপই হলো আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, আফগানিস্তানের জন্য একটিমাত্র সমাধানই রয়েছে এবং সেটা হলো তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেন, তিনি আফগান সঙ্কটের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করেন, যাতে আমেরিকান ও ন্যাটো সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া যায়। এই প্রেক্ষাপটে তিনি পাকিস্তানের কাছ থেকে আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন। বস্তুত, শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান পাকিস্তানের স্বার্থের অনুকূল।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকান ও সেইসাথে প্রবাসী পাকিস্তানিদেরকেও পাকিস্তানে বিনিয়োগের সুযোগগুলো অবহিত করেন। তাদের প্রতিক্রিয়াও ছিল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বলেন, পাকিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশের মধ্যে বিরাট বাণিজ্য সম্পর্কও তিনি দেখতে চান বলে জানান। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের শীর্ষ ৫ বিনিয়োগকারীর একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র।
সবশেষে বলা যায়, ইমরান খান ও তার কূটনৈতিক দলটি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজমান অবিশ্বাস দূর করতে সফল হয়েছেন।
>>>লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, কায়েদে আযম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ
No comments