চীনা ‘ঋণের ফাঁদে’ বাংলাদেশ? by যোবায়ের আহমেদ
বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক
আরও শক্তিশালী করতে দৃশ্যত সফল হয়েছে। এই সফরে উভয় পক্ষ বহু চুক্তি সম্পাদন
করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে প্রায় ১৭০০ কোটি ডলারের
ঋণ প্রদানের দু’টি চুক্তি। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর
(বিসিআইএমইসি) প্রকল্প সংক্রান্ত কাজ ত্বরান্বিত করতেও দুই দেশ আগ্রহ
প্রকাশ করেছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো, ৩০০ কোটি জনসংখ্যা বিশিষ্ট এই চার
দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।
২০১৬ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত আংশীদারিত্বে পরিণত করে চীন ও বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চীনা বিনিয়োগ বেড়েছে হু হু করে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে বেইজিং ও ঢাকা ২১৫০ কোটি ডলারের বিভিন্ন চুক্তি সই করেছে, যার আওতায় রয়েছে বহু জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রকল্প। এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশে বিআরআই-সংক্রান্ত প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮০০ কোটি ডলার বলে অনুমান করছে বৃটিশ ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।
গত কয়েক বছরে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীন বাংলাদেশে বেশি অর্থ প্রবাহিত করেছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে রেকর্ড হারে। ওই বছর দেশটিতে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি। এই অংকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই অবশ্য চীনের একার, যা ১০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি।
২০২২ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের যেই উচ্চাবিলাশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ, তা পূরণে চীনা অর্থের ওপর ক্রমবর্ধমনভাবে নির্ভর করছে দেশটি। পদ্মা নদীর ওপর বৃহৎ সড়ক-রেল প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মান করছে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সেতুর সঙ্গে থাকা রেল সংযোগ নির্মানে ৩০০ কোটি ডলার দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।
ঢাকা-ভিত্তিক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এস মনসুর বলেন, ‘চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুখবর। কারণ, এতে করে অর্থায়নের নতুন উৎস সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশের মতো বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের প্রচলিত উৎসসমূহ যথেষ্ট নয়।’ মনসুর বলেন, চীনা বিনিয়োগের অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। তার ভাষ্য, ‘এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে করে জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলোও এগিয়ে এসে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হয়।’
২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। অনেক চীনা কোম্পানি এসব অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী। যেমন, চট্টগ্রামের পাশে এমন একটি অঞ্চলে জিন্ডুন প্রেসার ভেসেল কো লিমিটেড প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ঋণের ফাঁদ?
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর চীনা বিনিয়োগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রহীতা হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এই পরিস্থিতি নিয়ে সবাই আশাবাদী নন। অনেকেই সতর্ক করে বলছেন যে, চীনা অর্থের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভবরতা ঢাকাকে বেইজিং-এর আজ্ঞাবহ করে তুলবে। সমালোচকরা এক্ষেত্রে শ্রীলংকার প্রসঙ্গ তুলে আনেন। দেশটিতে সরকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে হাম্বানটোটা নামে বন্দরের দায়িত্ব ৯৯ বছরের জন্য চীনকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে মনসুর বলেন, চীন থেকে ঋণ অর্থায়নের বদলে সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই বাংলাদেশের জন্য বেশি লাভজনক। মনসুর বলেন, চীনা বিনিয়োগ ইকুইটি ও ঋণ, দুইভাবেই আসছে। বর্তমানে অবকাঠামো প্রকল্পসমূহ মূলত ঋণ অর্থায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু আমি ঋণ নয়, ইকুইটি নিয়ে বেশি আগ্রহী হব।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশ ঋণের জালে পড়ছে, এমনটা বলার সময় এখনও আসেনি। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের সামগ্রিক বহিঃঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩১০ কোটি ডলার। কিন্তু সেই হিসাবে চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের অংশ তেমন বড় নয়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশকে চীনের দেওয়া ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ।’ তবে তিনি বলেন, কী শর্ত মোতাবেক ঋণ প্রদান করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। চীনা অর্থনীতিকে ‘ঋণের ফাঁদ’ বলতেও রাজি হননি তিনি। তার ভাষ্য, ‘এই ঋণের ঝুঁকি ও সুযোগ দুইই আছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে এখন পর্যন্ত, সেই অনুযায়ী ঋণের ফাঁদের মতো অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।’
তবে সংশয়বাদীরা বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যে কারণে ভারত উদ্বিগ্ন
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বাণিজ্য ও বিনিয়োগই সবসময় শেষ কথা নয়। ২০১৬ সালে, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মানে চীনের প্রস্তাব নীরবেই নিষ্ক্রিয় করে দেয় সরকার। নয়াদিল্লি ওই প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বিপপুঞ্জের কাছে চীনা উপস্থিতি তৈরি হতো।
কিন্তু তারপরও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব নয়াদিল্লির জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। ব্রাসেল-ভিত্তিক সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের গবেষণা পরিচালক সিগফ্রায়েড ওলফের মতে, ভারতের জন্য এই চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত কারণে। ওলফ বলেন, ‘শ্রীলংকায় বন্দর রয়েছে চীনের। পাকিস্তানের গাদার-এ রয়েছে। মিয়ানমারেও বন্দর নির্মান করছে। এতে করে ভারতের মনে হচ্ছে যে, চীন চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলছে। এটি হলো ভারতীয় উদ্বেগের সামরিক দিক।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলছেন, বিনিয়োগ প্রবাহিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তার করছে চীন। তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ সরকারের ওপর চীন প্রভাব বিস্তার করতে পারার বিষয়টিই ভারতের জন্য একটি হুমকি।’ এই প্রভাবের অর্থনৈতিক দিকও থাকতে পারে। ওলফ বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে চীন অন্যান্য দেশকে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এখন আফ্রিকার দেশগুলোতে ফরাসি ও জার্মান কোম্পানিগুলোর জন্য কোনো কাজ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’
>>>(জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইট থেকে অনূদিত।)
২০১৬ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত আংশীদারিত্বে পরিণত করে চীন ও বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চীনা বিনিয়োগ বেড়েছে হু হু করে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে বেইজিং ও ঢাকা ২১৫০ কোটি ডলারের বিভিন্ন চুক্তি সই করেছে, যার আওতায় রয়েছে বহু জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রকল্প। এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশে বিআরআই-সংক্রান্ত প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮০০ কোটি ডলার বলে অনুমান করছে বৃটিশ ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।
গত কয়েক বছরে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীন বাংলাদেশে বেশি অর্থ প্রবাহিত করেছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে রেকর্ড হারে। ওই বছর দেশটিতে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি। এই অংকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই অবশ্য চীনের একার, যা ১০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি।
২০২২ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের যেই উচ্চাবিলাশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ, তা পূরণে চীনা অর্থের ওপর ক্রমবর্ধমনভাবে নির্ভর করছে দেশটি। পদ্মা নদীর ওপর বৃহৎ সড়ক-রেল প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মান করছে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সেতুর সঙ্গে থাকা রেল সংযোগ নির্মানে ৩০০ কোটি ডলার দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।
ঢাকা-ভিত্তিক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এস মনসুর বলেন, ‘চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুখবর। কারণ, এতে করে অর্থায়নের নতুন উৎস সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশের মতো বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের প্রচলিত উৎসসমূহ যথেষ্ট নয়।’ মনসুর বলেন, চীনা বিনিয়োগের অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। তার ভাষ্য, ‘এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে করে জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলোও এগিয়ে এসে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হয়।’
২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। অনেক চীনা কোম্পানি এসব অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী। যেমন, চট্টগ্রামের পাশে এমন একটি অঞ্চলে জিন্ডুন প্রেসার ভেসেল কো লিমিটেড প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ঋণের ফাঁদ?
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর চীনা বিনিয়োগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রহীতা হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এই পরিস্থিতি নিয়ে সবাই আশাবাদী নন। অনেকেই সতর্ক করে বলছেন যে, চীনা অর্থের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভবরতা ঢাকাকে বেইজিং-এর আজ্ঞাবহ করে তুলবে। সমালোচকরা এক্ষেত্রে শ্রীলংকার প্রসঙ্গ তুলে আনেন। দেশটিতে সরকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে হাম্বানটোটা নামে বন্দরের দায়িত্ব ৯৯ বছরের জন্য চীনকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে মনসুর বলেন, চীন থেকে ঋণ অর্থায়নের বদলে সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই বাংলাদেশের জন্য বেশি লাভজনক। মনসুর বলেন, চীনা বিনিয়োগ ইকুইটি ও ঋণ, দুইভাবেই আসছে। বর্তমানে অবকাঠামো প্রকল্পসমূহ মূলত ঋণ অর্থায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু আমি ঋণ নয়, ইকুইটি নিয়ে বেশি আগ্রহী হব।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশ ঋণের জালে পড়ছে, এমনটা বলার সময় এখনও আসেনি। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের সামগ্রিক বহিঃঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩১০ কোটি ডলার। কিন্তু সেই হিসাবে চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের অংশ তেমন বড় নয়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশকে চীনের দেওয়া ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ।’ তবে তিনি বলেন, কী শর্ত মোতাবেক ঋণ প্রদান করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। চীনা অর্থনীতিকে ‘ঋণের ফাঁদ’ বলতেও রাজি হননি তিনি। তার ভাষ্য, ‘এই ঋণের ঝুঁকি ও সুযোগ দুইই আছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে এখন পর্যন্ত, সেই অনুযায়ী ঋণের ফাঁদের মতো অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।’
তবে সংশয়বাদীরা বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যে কারণে ভারত উদ্বিগ্ন
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বাণিজ্য ও বিনিয়োগই সবসময় শেষ কথা নয়। ২০১৬ সালে, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মানে চীনের প্রস্তাব নীরবেই নিষ্ক্রিয় করে দেয় সরকার। নয়াদিল্লি ওই প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বিপপুঞ্জের কাছে চীনা উপস্থিতি তৈরি হতো।
কিন্তু তারপরও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব নয়াদিল্লির জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। ব্রাসেল-ভিত্তিক সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের গবেষণা পরিচালক সিগফ্রায়েড ওলফের মতে, ভারতের জন্য এই চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত কারণে। ওলফ বলেন, ‘শ্রীলংকায় বন্দর রয়েছে চীনের। পাকিস্তানের গাদার-এ রয়েছে। মিয়ানমারেও বন্দর নির্মান করছে। এতে করে ভারতের মনে হচ্ছে যে, চীন চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলছে। এটি হলো ভারতীয় উদ্বেগের সামরিক দিক।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলছেন, বিনিয়োগ প্রবাহিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তার করছে চীন। তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ সরকারের ওপর চীন প্রভাব বিস্তার করতে পারার বিষয়টিই ভারতের জন্য একটি হুমকি।’ এই প্রভাবের অর্থনৈতিক দিকও থাকতে পারে। ওলফ বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে চীন অন্যান্য দেশকে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এখন আফ্রিকার দেশগুলোতে ফরাসি ও জার্মান কোম্পানিগুলোর জন্য কোনো কাজ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’
>>>(জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইট থেকে অনূদিত।)
No comments